বাহিরে তুমি নেই

শেখ জলিল
কবিতা
Bengali
বাহিরে তুমি নেই

সাঁতার জানি না আমি

তুমি ধন্যি বুনো সহচরি

জলে নেমে হয়ে যাও পরি

আমি ভয় পাই হাঁটু জলে

কখন জানি ডুবি অতলে

সাঁতার জানি না আমি!

 

কী উন্মত্ত এই দিবাযামী

মন্থনে মন্থনে ভরা ঢেউ

মাতাল চকোরী পিছে ফেউ

স্বপ্নে পরির উত্থান দেখি

সত্যিই জোয়ার নাকি মেকি?

 

নিকানো সৈকতে লেখালেখি

কবে তার সমাপ্তি জানে না

বেলাভূম সীমানা মানে না

চাঁদ ও চকোরে আনাগোনা

এ কী বাস্তব নাকি কল্পনা!

 

বুনো সঙ্গীত হয় নি শোনা

দ্বিধার সংকটে বাড়ে ঢেউ

আশেপাশে দেখছে কি কেউ

হাঁটু জলে হাঁটে জলপরি

ভাবছি ভুলে হাতটা ধরি।

 

তুমিই পাওনাদার, আমি শুধু ঋণী

না কোনো প্রেমিকাকে নিয়ে লিখবো না আজ

যার সৌন্দর্যে ব্রহ্মপুত্রের ঢেউ আছড়ে পড়েছিলো উন্মুক্ত পাড়ে

লিখবো না কোনো বিরহ রাতের কথাও

যখন পোষা পাখিটি উড়ে গিয়েছিলো দূরে খাগডহরের জঙ্গলে।

 

না কোনো বালিকাকে নিয়ে লিখবো না আজ

যার দর্শনে কৈশোরের দুরন্ত পথটাও দাঁড়িয়েছিলো থমকে

লিখবো না কোনো স্নিগ্ধ সকালের কথাও

যখন স্কুল টাইমে পরি হেঁটে যেতো ধোপাজানির মেঠো আল ধরে।

 

না কোনো বান্ধবীকে নিয়ে লিখবো না আজ

যার কণ্ঠ শুনে আমির খসরুর ইয়ামানও ঝরতো তানপুরায়

লিখবো না কোনো আবৃত্তি আসরের কথাও

যখন গভীর হয়ে যেতো রাত গাঢ় সন্ধ্যার আবির রাগে।

 

আজ লিখবো শুধুই সেই তোমার কথা

এতোটা বছর ধরে নিয়ে সুখ-দুঃখ, কষ্ট-ব্যথা

উড়ে যাও নি ভুলে তুমি পেয়েও আকাশ

এতো প্রেম বুকে তবু করো নি প্রকাশ

করে গেছো শুধুই ঋণী এই আমাকে

তুমিই পাওনাদার একা জীবনের বাঁকে!

 

 

বাহিরে তুমি নেই

বাহিরে তুমি নেই রয়েছো অন্দরমহলে

তবু সারাবিশ্ব তন্নতন্ন করি, ঘুরি পথেঘাটে

খুঁজি বনেবাদারে, নদীসাগরে, আকাশে, মেঘমালায়

খুঁজি নাট্যমঞ্চ, যাদুঘর, সিনেমা হলে, চিত্রমেলায়!

 

নদীর কুলুকুলু ধ্বনি শুনি, শুনি সাগরের গর্জন

বৃক্ষের সঙ্গীত শুনি, শুনি পাখিদের কলরব

হাট খোলা মাঠ, ধুধু মরুভুমির কাছেও যাই

তবু তোমাকে না পাই, তোমাকে না পাই!

 

আমি পরিব্রাজক তোমার খোঁজে

ঘুরে কি সান্ত্বনায় এ মন বোঝে?

বাহিরে তুমি নেই রয়েছো অন্দরমহলে

এই নিঃসঙ্গ জীবনে প্রেমের বিফলে

তবু খুঁজে যাই, তোমাকে না পাই

ভাগহত যাযাবর শুধুই হারাই।

 

এসো ফিরে ছায়াতলে

আপাতত একটি কথাই হতে পারে মর্মভেদী-

তুমি যে এমন জেদী

তাকালে না একটিবার বারেক ফিরে!

মনের খাঁচার ভিড়ে

যে সুদৃঢ় রাগ অভিমান রাখো পুষে

গিলছে সময় চুষে!

 

আপাতত একটি দৃষ্টিই হতে পারে নিরাময়-

খুব বেশি আবদার নয়

পাশ ফিরে দেখো সুখের দুয়ার আছে খোলা;

তবু তুমি আলাভোলা

কাটিয়ে দেবেই দিন?

বুকের মাঝে ভালোবাসার ঋণ

গুমরে ওঠে না

অনুভূতির ঢেউ ছোটে না

লক্ষ্য মোহনার পানে

অদৃশ্য মায়াবী টানে!

 

একদিন ভেঙে যাবে ঘুম

বসন্তে পড়বে ধুম

এসো ফিরে ছায়াতলে

সেই কথা যাও বলে

ভালোবাসি শুধু ভালোবাসি

রবো পাশাপাশি।

 

ঢেউ খেলে ভরা নদী

যৌবনের ভারে ভরা নদী

নাকি নদীর ভারে যৌবন

কোন্ টা ছুটছে নিরবধি

করে বুনো জলে সন্তরণ?

 

মোহনা সাগরে বুক ধূধূ

উথালি পাথালি করা ঢেউ

দেখছি আমিই এক শুধু

দেখেনি অপরে কাছে কেউ।

 

ঢেউ খেলে ভরা নদী

নদী খেলে ত্বরা ঢেউ

মৌসুমে মৌসুমে যদি

কেউ পিছে নেয় ফেউ।

 

আশির দশকের কবি ও গীতিকার। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা আট। বর্তমানে কানাডার এডমন্টন প্রবাসী।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ