বিচ্ছিন্ন অনুভূতিগুলো

ফারহানা রহমান
গল্প
Bengali
বিচ্ছিন্ন অনুভূতিগুলো

রমা! এই রমা তাড়াতাড়ি বেরো!

ধিঙ্গী একটা মাইয়া এখনো গোসল করতে গেলে হুস থাকেনা।  গজগজ করতে থাকে রমার মা।

এতো দরজা ধাক্কা দিতাছ  কেন? অসহ্য! সারাদিন পিছনে লাইগা থাকে বেটিটা।  রমার গলায় বিরক্তি ঝরে।

রমা আজকে খুব সাফসুরত হয়ে গোসল করছে। কোরবানির গরুকে যেমন খুব যত্ন করে সাফসুরত করে গোসল দেওয়া হয় ও আজকে নিজেকে সেভাবেই খুব যত্ন করে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন  করে।গোসলখানার আয়নাটা অনেকদিনের পুরনো কনা ভাঙ্গা আর মাঝখানেও চির পরা তবুও ওটাতেই রমা নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে।নিজের প্রতি ওর মুগ্ধতার শেষ নেই। আয়নাতে শুধু চেহারা আর বুকটা দেখা যায় তাই চেয়ার নিয়ে গোসল করতে ঢুকেছে ও আজকে। চেয়ারের উপরে উঠে অনেক্কখন ধরে বুক পেট নিতম্ব দেখে আর নিজে নিজেই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।  আজ গুনে গুনে ওর বয়স হয়েছে চোদ্দ বছর নয় মাস আটাশ দিন। ক্লাস নাইনে পরে ও কিন্তু দেখে বোঝার উপায় নেই কেমন সেয়ানা হয়ে উঠেছে মেয়েটা।  যেন সাক্ষাৎ দেবী প্রতিমা।  কি টানাটানা মায়াবী চোখদুটি, দুধে আলতা গায়ের রঙ আর কি ভরাট শরীরের গড়ন ঠিক মার মতই কিন্তু রূপে গুনে মাকে ছাড়িয়ে এক অপ্সরা হয়ে উঠেছে রীতিমত।  দীঘল কালো কোঁকড়ান চুল পিঠে ছড়িয়ে দিয়ে যখন হেটে বেড়ায় রমা ওর দিক থেকে চোখ ফেরানো দায় হয়ে যায়। রমার মা বুঝতে পারে আর দেরী করা ঠিক হবেনা।  কখন কি হয়ে যায় কে জানে? এবয়সি ছেলে মেয়েরা আবেগের বশবর্তী হয়ে কতকিছুই তো ঘটিয়ে ফেলছে।

আশেপাশের দশটা পরিবারের ছেলেমেয়েদের মত  কখনই খুব  সুস্থ স্বাভাবিক ছিলনা রমার বেড়ে ওঠা । তিন প্রজন্মের চার বিচিত্র অনেকটা বিকারগ্রস্ত রমণী আর পাছা ফুলিয়ে হেলেদুলে হেটে যাওয়া অপ্রকৃতস্থ মামা কে নিয়েই ওর জগত। এই মামাকে দেখেলেই ওর বন্ধুরা ওকে খেপাত।

রমা? তোর মামার পাছায় কি গু লেগে আছে নাকি রে?

উনি এভাবে পাছা উঁচু করে হাটে কেন?

শুধু ওর সেই রাইসু  মামাই না । বাসার সবাই  যেন এক একটা বিরাট চিড়িয়া। ছোট বেলা থেকেই দেখে এসেছে ওর ছুচিবাইগ্রস্ত  বৃদ্ধ নানী  গায়ে পরে থাকা  সাদা শাড়িটাকে কাছি মেরে পায়ের পাতার উপর ভর দিয়েদিয়ে শোয়ার ঘর থেকে রান্না ঘরের দিকে যেত আর মাছ তরকারী ধুতে ধুতে এমন অবস্থা করতযে ওর মনে পরেনা ও  একটি পুরো মাছের টুকরো দিয়ে কোনদিন ভাত খেয়েছে কিনা? ঝুড়ি মাছ বা মাংস আর অতি সেদ্ধ হয়ে যাওয়া অনেকটা ভত্তা গোছের তরকারী খেয়েই ওর বড় হয়ে ওঠা। শুনেছে ওর নানী হিন্দু ঘরের মেয়ে রমলাদেবীর প্রেমে পরে কোন এক পীর বংশের ইমানদার মুসলিম পুরুষ সমাজ সংসার থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিল। একিসাথে রমলাদেবীও বহিষ্কৃত আর বিচ্ছিন্ন জীবন কাটিয়েছে তার দুই মেয়ে আর এক ছেলেকে সঙ্গী করে। ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের রেখে যখন রমলাদেবীর স্বামী দেহত্যাগ করে তখন সে নিতান্তই দুঃস্থ আর অসহায় হয়ে পরে । ছেলেমেয়ে মানুষ করার মত মানুষিক বা অর্থনৈতিক কোন জোরই তার তখন ছিলনা। তাই রমার মা খালা মামা কেউ প্রকৃত অর্থে মানুস হয়নি।  ওর মা এমন এক সমাজে সিঙ্গেল মাদার হয়েছেন যেখানে শুধু পতিতারাই সিঙ্গেল মাদার হতে পারে। এরপর আছে ওর সেই পাছায় গু লেগে থাকা মামাটাযে সারারাত মদ গাঁজা খেয়ে জুয়া খেলে আর সকালে বাড়িতে এসে পরে পরে ঘুমায় । নিজের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার জন্য মাঝে মাঝে কিছু অতি প্রয়োজনীয় জিনিষ ভাঙচুর করে দেখায় যে এখনো সে জীবিত আছে আর এ বাড়ীর সবাইকে ওকে মান্য করেই চলতে হবে। এরপর হচ্ছে ওর ছোটমাসী বা  খালা, চিরকুমারী বীণারানী । যার একমাত্র কাজ হচ্ছে রমার মার খারাপ চরিত্র নিয়ে কথা বলা আর কি কি কৃত্তি কলাপের জন্য ওর মার বিয়ে হয়নি আর আবিয়াতি অবস্থায় বাচ্চা পয়দা করে সমাজে কি বেইজ্জতি অবস্থার সৃষ্টি করেছে সে সব ইনিয়ে বিনিয়ে ফিরিস্তি দেওয়া ।

এচ্ছিছি কি কেলেঙ্কারি!

তোর মার জন্য সমাজে মুখ দেখাতে পারি নাকি?

বাজে নষ্টা মেয়েমানুষ।

বিয়ার আগেই পেট বাঁধাইয়া ফেলল ।

কি নচ্ছার!  ছিঃ ছিঃ ছিঃ লজ্জায় কাউরে মুখ দেখাইতে পারিনা।  ঘেন্না ঘেন্না ধরে গেছে।

আর এতেই  যে উনার বিয়ের ব্যাপারে গেন্না ধরে গিয়েছিল সেটার বিবরণও দিনরাত্রি  ওকে মনে করিয়ে দেওয়াই উনার জীবনের এক মাত্র লক্ষ বলে মনে হয় । আর আছে অপ্সরা সুন্দরী,মেধাবী ছাত্রী রমা যার এখনো দিনদুনিয়া সম্পর্কে স্পষ্ট কোন ধারনা হয়নি।

এমন একটা অসুস্থ  অসংলগ্ন পরিবারে রমার বেড়ে ওঠা খুব  স্বাভাবিক ঘটনা হওয়ার কথাও না।  রমার জীবনও তাই কোন স্বাভাবিক জীবন নয়। এসব পরিবারের সন্তানেরা যেমন নীতি বোধ বিবর্জিত ভাসাভাসা অগভীর চিন্তা চেতনা নিয়ে বেড়েওঠে রমাও ঠিক তেমনি অস্থির ভাবে বেড়ে ওঠা মেয়ে। ওর সামনে কি   ভবিস্যত পরে আছে? আর কি করেই বা ওর জীবন কাটবে?ও আসলে ভবিষ্যতে কি হতে চায় বা ঠিক কি করতে চায় এসব নিয়ে ভাবার ফুসরত সে পায়না। কোন রকম ভবিস্যত অজানা আশংকা নিয়েও সে  মোটেও শঙ্কিত নয়। বরং ওর দিকে তাকানো নানা বয়সি ছেলেদের লোলুপ দৃষ্টি দেখে ও ভিতরে ভিতরে খুশী হয় যেন খুব মজার কোন খেলা। এভাবেই বয়সের তুলনায় শারেরিকভাবে  একটু বেশী বড় হয়ে যাওয়া রমা ক্লাস নাইনে উঠে যায় ক্লাসে দ্বিতীয় স্থান দখল করে।  অনেক চেষ্টা করেও মিলনের প্রথম হওয়া স্থানটা  রমা এবারো দখল করতে পারেনা।  দুদুবার ট্যালেন্ট পুলে বৃত্তি পেয়েছে দুজনি।কিন্তু ফাইনালে কি করে যেন মিলন সব সময় রমার চেয়ে একটু বেশী নম্বর পাচ্ছে। তবে এসব রেজাল্ট ফেজাল্ট নিয়ে ও একটুও চিন্তিত না সে আর।  ও জানে ওর আসল অস্ত্র হচ্ছে ওর সৌন্দর্য যা দিয়ে ও সবাইকে  ঘায়েল করে রাখতে পারে।

পাড়ার সবাই রমাকে একটা খারাপ ঘরের মেয়ে বলেই জানে। আর এও জানে  ওর জন্ম নিয়েও কিছু একটা গণ্ডগোল আছে হয়তবা কিন্তু ও যে খুব মেধাবী একটা মেয়ে সেটাও কারো অজানা নেই। বান্ধবীরা পিছনে ফিসিফস  করলেও সামনে বেশ  সমীহ নিয়েই চলে বলে মনে হয়। আর ছেলে  বন্ধুরা তো সব ওর রূপে  একদম ফিদা হয়ে আছে। রমার মোহময় রিনিঝিনি হাসিতে উদ্বেলিত মিলন ওকে দেখলে কেমন যেন কাণ্ডজ্ঞ্যান শূন্য হয়ে যায় রমা খেয়াল করেছে।

এই তুমি আমার সামনে এসে এভাবে হাসবা নাতো!

ক্যান তোমার কি সমস্যা? আমি হাসলে তোমার কি? বলেই  রমা আবারো খিলখিল করে হেসে ওঠে।

ওহ! আমার কি? আমি তোমার এই হাসির জন্য সমরখন্দ কেন আমাদেরএই মিল্কিওয়ে পর্যন্ত বিলায় দিতে পারি।

হি হি হি! মিল্কিওয়ে তো তোমার বাবার সম্পতি, দাও বিলায় দাও।

দ্যাখো!  তুমি আমার সামনে হাস ঠিক আছে কিন্তু ক্লাস টেনের বড় ভাইদের সামনে এমন করে হাসবা না প্লিস।

ইস ইস! দেখো বাচ্চাটার অবস্থা !! বলে রমা মুখ দিয়ে বিচিত্রশব্দ করতে থাকে।

রমা জানে মিলন ওর প্রেমে পড়েছে । আসলে মিলন সেটা ওকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে। রমা হ্যা না কিছুই বলে নি। কিন্তু  স্কুলের  আরও অনেক ছেলেই ওর ঝংকারময় হাসি আর চোখ ঝলসানো সৌন্দর্যদেখে মুগ্ধ দৃষ্টিতে যে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে সেটা না বোঝার মত বোকা মেয়ে তো রমা না। স্কুলের স্যার মেডামরাও রমাকে নিয়ে দিন দিন আশাবাদী হয়ে উঠেছে। ওর পড়ালেখা আর সৌন্দর্যের প্রসংশায় উনারা পঞ্চমুখ।

স্কুল, কোচিং, ঝিলের পাড়ে মাঝে মাঝে মাছ ধরতে যাওয়া,আড্ডাবাজি, বান্ধবীদের সাথে মাঝে মাঝে এদিক ওদিক হারিয়ে যাওয়া , রাস্তায় রাস্তায় ডাংগুটি খেলা আর মিলনের সাথে মাঝে মধ্যে দুরের কোন পোড় বাড়িতে বা গলির মোড়ে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করা। সবই ঠিকমত চালিয়ে যাচ্ছিল রমা। তবে এর মাঝে ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি ওর মার মনের গোপন ইচ্ছের কথা । তবে বেশ কিছুদিন থেকে লক্ষ করছে যে ও পড়তে বসলেই মা খিচাখিচি শুরু করে দেয়।

এত পইরা কি করবি? সেই তো কিছুদিন পর পাকা বেবসায় নাম লিখতেই হইব। হইসে আর পরন লাগবনা।  যা আমার ঘর থিকা যা। আমি এখন ঘুমামু লাইট নিভাই দিয়া জাইস।

এই অসময়ে এত ঘুমের কি হইল? আমি পড়তে বসলেই তোমার পিত্তি  জ্বলে নাকি? সব সময় এত খিচখিচ  কর ক্যান?

যা এখান থেকে। আমার চোখের সামনে থেকে দূর হ! জত্তসব পড়মারানি আসছে!!

রমার মা বুঝতে পারে দেরী হয়ে যাচ্ছে। ঠিক এখনি যদি শক্ত হাতে দড়ি বাধতে না পারে তাহলে এই মেয়েকে আর বাগে নাও পেতে পারে। আর কিছু কিছু বিকৃত রুচির নারিলিপ্সু পুরুষের কাছে এই বয়সি মেয়েরাই প্রধান আকর্ষণ।  মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় খুব তাড়াতাড়ি কিছু একটা হিল্লা করতে হবে। কিন্তু রমাকে কি করে বোঝাবে? যে রকম জেদি আর বেয়াদব ধরনের মেয়ে ও মনে হয়না সহজে মায়ের কথা শুনে চলবে। অনেক ভেবে ভেবে রমার মা একটা  বুদ্ধি আঁটে। তাই সেদিন স্কুল থেকে ফেরার সাথে সাথে মেয়েকে বলে।

শোন! তরে নিয়ে এক হুজুরের কাছে যামু। অনেক বড় হুজুর ইন্ডিয়া থেকে আসছে। তোর নানা তো আসিল পীর বংশের লোক তাই তোরেও ভাবসি একটু পীর হুজুর দিয়া ঝাড়ায় নিব।

ক্যান? আমারে কি জীনে ধরসে নাকি? আমারে ঝাড়াবা ক্যান।

ধরসেই তো। তুই দিন দিন যে বেয়াদব হইছস। আমার কোন কথা শুনস না। তাড়াতাড়ি পাক পবিত্র হইয়া গোছল কর। বাইরে আবার কি বৃষ্টি শুরু হইল? বেলা থাকতে থাকতে যাইতে হবে। তাড়াতাড়ি রেডি হইয়া নে।

রমা সুগন্ধি সাবান দিয়ে গোসল শেষ করে সাদার মধ্যে ছোট ছোট ফুলওয়ালা একটি শালোয়ার কামিজ পরে। সর্বসাকুল্যে তিন সেট শালোয়ার কামিজ আছে ওর।অন্য সময় হলে ফ্রক পরেই যেত কিন্তু হুজুরের কাছে যাবে বলে  আজ সাদা শালোয়ার কামিজটা পড়েছে। কোন রকমে  দুচার গাল খেয়েছে কি খায়নি। ওর মা বার বার তাড়া দিতে থাকে। বাইরে ঝির ঝির করে একনাগাড়ে বৃষ্টি পরেই চলেছে।প্রকৃতির যেন কান্নার কোন শেষ নেই আজ।  রমার মা একটা রিক্সা ভাড়া করে ২৫ টাকা দিয়ে।

মা মেয়ে খুব সুন্দর একটা সামনে  বাগানওয়ালা একতলা বাড়ীর সামনে এসে রিক্সা থেকে নামে। কলিং বেল চাপার সাথে সাথে মধ্য বয়স্ক একটা লোক দরজা খুলে দেয়। লোকটা দেখে আর যাই হোক কোন পীর ফকীর বা হুজুর জাতীয় কিছু মনে হয়নি রমার। ও ভাবে হজুর হয়ত বাসার ভেতরে আছে। মা মেয়ে ড্রয়িং রুমে বসে আছে। বয়স্ক লোকটা উঠে গিয়ে একটা কাগজের প্যাকেট এনে রমার মার হাতে দেয়। চোখের ইসারায় রমাকে লোকটার সাথে ভিতরে যেতে বলে ওরমা।  খুব অস্বস্তি  নিয়ে ও লোকটার পিছু পিছু ভিতরে যায়। ওকে হাত ধরে নিয়ে গিয়ে লোকটা বেডরুমের দরজা আটকে দেয়। রমা ভীত আতংকিত হয়ে চিৎকার করতে গেলে লোকটা ওকে খুব শান্তস্বরে বলে।

দ্যাখো মেয়ে তুমি যথেষ্ট বড় হয়েছ ।

 এটুকু নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ তোমার মা আমার কাছে তোমাকে ক্যান দিয়ে গেল? দশ হাজার টাকা দিয়েছি আমি তোমার জন্য।  শুধু আজকের জন্য।  তাও বলেছে সন্ধ্যার পর তোমাকে এসে নিয়ে যাবে। বাসায় একটা প্রাণীও নাই। কোন রকম হুজ্জ্যতি করে সুবিধা করা যাবেনা। আমি কোন সিনক্রিয়েট চাইনা।

আমার মা কোথায়? উনি কি আছেন ড্রয়িং রুমে?

না । চলে গেছে। সন্ধ্যার পর আসবে।

ওহ! আচ্ছা।

এরচেয়ে বেশী কথা বলার মত কোন শারীরিক মানসিক শক্তি ওর সেদিনছিলনা।

এরপর বহুবছর কেটে গেছে। রমা এখন শহরের সবচেয়ে হাইপেড কলগার্লদের একজন। পাচতারকা হোটেলের স্লিপিং স্যুটের জানালার গ্লাস খুলে বাইরের বৃষ্টি দেখবে বলে। ক্লায়েন্ট আসতে এখনো কিছুক্ষণ বাকী। মনে মনে হাসে রমা। বৃষ্টিদেখে এখনো তাহলে রোম্যান্টিক হতে পারে ও?

বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। একটু আগেইকি মিষ্টি রোদের আলো ছায়া মেঘের পশরাগুলো ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল তাই দেখে রমা সেইদূর অতীতের ছেলে বেলায় নাকি মেয়ে বেলায় হারিয়ে গিয়েছিল। সেই যে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টিতে ঠিক এমনি তো মেঘাচ্ছন্ন ছিল সেই দিনগুলোও।  স্কুল থেকে বাসায় ফিরেছে মাত্র আর একটু কিছু খেয়েছে কি খায়নি আর অমনি ছুটল সবাই মিলে লেকের পারে মাছ ধরতে। কিন্তু সব বৃষ্টিভেজা দিন তো আর একি রকম এত রোম্যান্টিক আর মোহময় হবে না। কোন কোন  বৃষ্টি ভেজা দিন হবে অস্বাভাবিক রকম তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা অসুস্থ একটা দিন। সেদিনটাও ছিল এমনি একটি দিন। সেই একটি দিনই তোরমার জীবনকে চীর রহস্যে আবৃত করে রেখেছে।  না।  সেই একটি দিনই বা বলি কি করে?  বরং রমার জন্মই বলা যেতে পারে ওর জীবনের সবচেয়ে বড় রহস্য! রহস্যই তো যার বাবা কে তাই যখন সে কখনো জানতে পারেনা, এর চেয়ে বড় রহস্য আর একজন মানুষের জীবনে কি হতে পারে? কেমন যেন নস্টালজিয়ায় পেয়ে বসে ওকে!

হঠাৎ দরজায় কার্ড পাঞ্চ করার শব্দে সম্বিৎ ফিরে পায় রমা। নিজেকে যেকোন পরিস্থিতিতে সামলে নেওয়ার মত যথেষ্ট দক্ষ এখন সে। স্বল্পবসনা রমা পেন্সিল হিল পায়ে স্টাইলিস ভঙ্গী করে এগিয়ে যায় দরজার দিকে।  সেই বিখ্যাত হাঁসিটা মুখে ঝুলিয়ে রাখতে ভোলে না।  কারণ এখন আবারো আরেকজন ক্লায়েন্টকে খুশী করতে হবে ওকে!!

ফারহানা রহমান। কবি ও গল্পকার। জন্ম ঢাকায়।  পিতা- মরহুম শেখ রহমত উল্লাহ ও মাতা- সালমা বেগম। লেখাপড়া করেছেন পল্লবী মডেল হাই স্কুল, লালমাটিয়া মহিলা কলেজ ও ইডেন মহিলা কলেজ। ইংরেজি সাহিত্যে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট। কৈশোরে সাহিত্যের প্রতি আকর্ষণ থেকেই কবিতা লেখালেখির শুরু। সেই...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

বালির বেহালা

বালির বেহালা

বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..

তদন্ত

তদন্ত

  এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..