ঝরা শিউলি
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
অগ্রহায়ণ মাস ৷ তারিখ জানা নেই ৷ শীতের সূচনা ৷ এদেশের বেশি সংখ্যক মানুষ বাঙলা মাস গণনা করে শীতের আগে পরে ৷ পৌষ মাঘ শীত কাল কথা ওই এটুকুই ৷ মাঝে অবশ্য পহেলা বৈশাখ, কাশফুল ইত্যাদি আছে ৷আর সারা মাস চলে ইংলিশ মাসের ক্যালেন্ডার ৷ বারো বছরের হৃদয়ের অল্প হিসাব ৷ বাঙলা ইংলিশ অংক ৷ মা বলেন, এবার নাকি এখনও শীত পড়েনি! প্রতি বছর এমন সয় শীত জেঁকে বসে ৷ এমন সময় বলতে এটা নভেম্বর মাস ৷ নভেম্বরের শুরুতেই নাকি শীত লাগে শরীরে ৷ মা বলেন, নভেম্বর মাসের কুড়ি তারিখ হয়ে গেল, এবার এখনও শীত পড়েনি ৷
শীত জেঁকে বসে, এই কথাটা কঠিন মনে হয় হৃদয়ের কাছে ৷ এর মানে সহজ কথা হচ্ছে, গরম উলের সোয়েটার যেমন গায়ে খাপে খাপ লেগে থাকে, শীতও তেমন জাঁকিয়ে বসে ৷ কোনো কোনো রাতে জোঁকের মতো শরীর কামড়ে ধরে শীত!
হৃদয়ের বাপ রিক্সা চালক ৷ এই শহরের লোকে বলে রিশকা ৷ রিশকা ওয়ালার নাবালক ছেলে শহর দেখেনি ৷ ও দেখেছে নিজের ঘরের আশপাশ ৷ প্রায় প্রতিটি ঘরের ছাদে উড়ছে পতাকা ৷ ভিন দেশি পতাকা ৷ বিশ্বকাপ ফুটবলতো শুরু ৷ যে যেই দলের সমর্থক সেই দেশের পতাকা নিজের ঘরের উপরে লাগিয়েছে ৷ ওই পতাকাগুলো যখন বাতাসে ওড়ে, তখন হৃদয়ের শীত করে!
হৃদয় ঘরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে সেই পতাকার দিকে তাকিয়ে থাকে ৷ একদিন গরিব রিক্সা চালক বাবা বলেন,
আমরা ভাত খেথে ভাত পাই না!বিদেশী পতাকা কেনা আমার কাজ না ৷ হৃদয়ের বাপ চলে যাচ্ছিলেন, কী মনে করে আবার পেছনে ঘুরে ছেলের কাছে এলেন, ছেলেকে সতর্ক করলেন- তুমি খেলা দেখবে নিজের ঘরে বসে ৷ বাড়িওয়ালার ছেলের সাথে ফুটবল খেলা নিয়ে আলোচনা করবে না ৷ কারণ ওরা যে দল সমর্থন করে তুমিতো সেই দল সমর্থন করে না ৷
হৃদয়ের বাপ ছেলের জন্য ঘরে টেলিভিশন কিনে এনেছিলেন ৷ মাসিক কিস্তিতে সেই টাকা শোধ করেন ৷ কিন্তু ঘর কেনাতো সম্ভব নয় ৷ পরের ঘরে সেই স্বাধীনতা থাকে না ৷
ঘর নিজের না হোক, দেশতো নিজের ৷ বাবার কাথায় ছেলের মন খারাপ হয় না ৷ কারণ বাপতো আর সবটা জানেন না! শীততো প্রায় চলেই এলো, ভোর রাতে হৃদয়ের ঠান্ঠা লাগে ৷ আহা! ঘরে যদি একটা বাড়তি চাদর থাকত, হৃদয় গায়ে জড়িয়ে আরামে ঘুমুতে পারতো ৷ খেলার দেশের পতাকা দেখে হৃদয়ের শুধু সে কথাই ভাবনায় আসে ৷
হৃদয় যে বিশাল উড়ন্ত পতাকাটার দিকে তাকিয়ে ভাবে, সেটা বাড়িওয়ালাদের ৷ আট তলা বিশাল দালানের ছাদের উপর বিশাল সাইজের পতাকা ৷ বাড়িওয়ালারা এখন হৃদয়দের সামনের ঘরটাতেই থাকেন ৷ টিন ঘর ৷ আট তলার নির্মাণ কাজ শেষ হলে ওরা ওই বাড়িতে উঠে যাবে ৷
কিন্তু কোথায় পেল ওরা অত টাকা? আর হৃদয়ের বাপযে বলে “আমি ভাত খাইতাম ভাত পাই না” ! কেউ পেট ভরে খাবে আর কেউ খাবে না এটা কেমন কথা? কেমন নিয়ম এটা? দেশতো একটাই! আমার দল, তোমার দল কেন? আনন্দতো সবার ৷ অধীকারতো সবার ৷
মা বলেন, বঙ্গবন্ধু থাকলে নাকি এমনটা হতো না ৷ এমন দূর্নীতি হতো না ৷ সর্বত্র বিরাজ করতো এক নীতি ৷ হৃদয়ের মা বলেন, এ দেশের মানুষের দুই টা দল ৷ তুমি যদি তোমার পছন্দের দলের কথা বলো,
তাহলে বাড়িওয়ালারা আমাদের ঘর ছাড়ার নোটিশ দেবে ৷ আমরা এখানে আর থাকতে পারবো না ৷ এমনও হতে পারে ওরা তোমার গায়ে হাত তুলবে ৷ পেটাবে তোমাকে ৷ সবাই দুইটা করে পতাকাা উড়িয়েছে কেন মা?
এ দেশে একটা যুদ্ধ হয়েছিল ৷ মুক্তির জন্য যুদ্ধ ৷ বেঁচে থাকার জন্য যুদ্ধ ৷ যুদ্ধে আমাদের জয় হয়েছিল ৷ এটা সেই বিজয়ের পতাকা ৷ বিদেশী পতাকার সঙ্গে অবশ্যই নিজেদের দেশের পতাকা উড়াতে হয় ৷ সম্মান আর ভালোবাসা প্রদর্শনের জন্য ৷
ভাবতে ভাবতে কিছুদিন পার হয় ৷ আজকে সেই দিন ৷ আজই করবে হৃদয় সেই কাজটা ৷ দুপুর বেলা নির্জন সময় ৷ উঁচু দালানের নির্মাণ শ্রমিকেরা সবাই খাবার বিরতিতে গেছেন ৷ গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে উর্ধ্বশ্বাসে সিঁড়ি বেয়ে ছুটে উঠে যায় হৃদয় ৷ বিশাল বড় ভিনদেশি পতাকাটা খুলে ফেলে ৷ সেটি ভাঁজ করে নিজের পকেটে ঢুকিয়ে নেয়য ৷ একটা স্বস্তি! রাতে আরামে ঘুমুবে আজ ৷
ফেরার সময় হৃদয় লক্ষ্য করে, চারিদিকটা একেবারেই নিরিবিলি ৷ কোথাও কোলাহল নেই ৷ সব দোকানপাট বন্ধ ৷ আজ ছূটির দিন ৷ ষোলাই ডিসেম্বর ৷ বিজয় দিবস ৷
হৃদয় চোখ তুলে দেখে উঁচু দালানের দিকে ৷ সেখানে উড়ছে একটি পতাকা ৷ গৌরবের লাল সবুজ পতাকা ৷
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
শেষ থেকে শুরু। আমি রজকিনী রামী,ধোপার বংশে জন্ম আমার।ঘাটে সখিদের সঙ্গে কাপড় কাচি। একাজটা আমি…..
মালঞ্চার পথে ভোরবেলা। সূর্য সবে উঠছিল। বৈশালী দূর থেকে দেখতে পেল,বুনিয়াদপুর বাসস্ট্যান্ডে বালুরঘাটের দিকে মুখ…..
আমার বাবা ছিলেন অত্যন্ত সাহসী একজন লড়াকু মনের মানুষ।শত অভাব অভিযোগেও তাকে কোনোদিন ভেঙ্গে…..