প্রক্সি
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
“আপনাদের কিছু বলতে চাই”
-আহ্ হচ্ছে না!
-তাহলে কি করে বলবো?
-তুমি যেখানে বসে আছো, একদম চুপ করে বসবে।নড়লে হবে না।তোমার সাথে সাথে ফোনটা নড়ানো যাবে না।এতো নড়লে হয় নাকি?
-কি হচ্ছে কি?এভাবে কেউ বলে নাকি?আমি বলছি ওনাকে?
-আচ্ছা তুই বল
-দেখুন ,আপনার ছেলে ফোনটা এই টেবিলের ওপর রাখবে।আপনি বেশি নড়াচড়া করলে, ফোনটা পরে যেতে পারে।তাতে কি হবে,এই যে আপনি ভিডিওটা করতে চাইছেন,তাতে আপনি সবটা বলে শেষ করার আগেই কেটে যাবে।তখন আবার আপনাকে প্রথম থেকে বলতে হবে
-ও! এমন নাকি?
-হ্য! সুমিত,আমার মনে হয় তুই ফোনটা টেবিলে না রেখে, নিজের হাতে নিয়ে রেকর্ড কর
-ঠিক আছে তাই করছি।আর বাবা তুমি তখন প্রথমেই বললে, “আমি আপনাদের কিছু বলতে চাই”।এরকম ভাবে শুরু করবে না। প্রথমে হাত জোড় করে নমস্কার বলবে
-ও,আচ্ছা
-হ্যা, আসলে কি জানেন, আপনার এই ভিডিও দেশ বিদেশে সবাই দেখবে তো,তাই…
-দেশ বিদেশে দেখবে?
-হ্যা হ্যা, তাই তো তোমাকে এত কিছু বলছি
-আচ্ছা
-নিন একটু জল খেয়ে নিন
-বাবা,তাহলে শুরু করি?
-হ্যা কর
-স্টার্ট
-নমস্কার,আমি তুষার সমাদ্দার।আমায় আপনারা চিনবেন না।আজ আমি আপনাদের কিছু কথা বলতে এসেছি।বলতে পারেন আমি কাজের থেকে বিরতি নিয়েছি প্রায় ন’বছর।আমি কাজ করতাম টলিউডে।টলিউড মানে জানেন তো? আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রের সমস্ত কাজ যেখানে হয়,ওই কলকাতার টালিগঞ্জ স্টুডিও। ভাগ্যক্রমে আমি ঐ টলিউডে গান রেকর্ডিংয়ের কাজে একজন স্টাফ ছিলাম।রেকর্ডিং রুমে গায়ক গায়কদের গানের আগে পরে অনেক কিছু সেট করতে হতো,গানের স্কেলের সাথে ম্যাচ হচ্ছে নাকি,এরকম নানা কাজে থাকতো।তখন তো আর এখনকার মতো এত উন্নত সব মিউজিক সিস্টেম,মাইক্রোফোন ছিল না। এই কাজের সুবাদে কত কত নামি দামি সংগীত শিল্পীদের যে আমি খুব কাছের থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম তাঁদের নাম বলে শেষ করতে পারবো না।সবাইকেই অবাক হয়ে দেখতাম,তবে তাঁদের মধ্যে সৈয়দ আলী ছিলেন আমার সবথেকে প্রিয়। উনি শুধু যে খুব ভালো গায়ক ছিলেন তা নয়,গানের সম্বন্ধে ওনার প্রচুর জ্ঞান ছিল। এখনো মনে আছে,একসময় শুধু ওনার গান শোনার জন্য হল ভরে যেত।তখন টিভি,পেপারে সব জায়গায় শুধু ওনার ছবি,ওনার ক্যাসেড,রেকর্ড প্লেয়ার।এত নাম ডাক ছিল ওনার অথচ ওনার কোনো অহংকার ছিল না,কি সিম্পল ছিলেন উনি।স্টুডিওতে রেকর্ডিংয়ের সময় একবার ওনার সাথে আমার কথা হয়েছিল,আজও তা ভুলতে পারি না।গানের সফলতার সাথে সাথে ওনার ব্যক্তিগত জীবনে অনেক ঝড় আসে।ওনার স্ত্রী যখন ক্যান্সারে খুব কম বয়সে মারা যান,তার পর থেকেই ওনার গানের জগতে অবনতি শুরু হয়।তারপরে আমাদের ওখানের সেই পুরোনো টিমটা ভেঙে যাওয়ার আমিও কাজ ছেড়ে দি, তার কয়েক বছর পর উনি একেবারেই গান ছেড়ে দেন।
এতগুলো বছর কেটে গেল,টিভিতে,পেপারে কোথাও ওনার কোনো খবর দেখি না।মানুষটা কোথায় যেন হারিয়ে গেলেন।কত সিনেমার গান গেয়েছেন তিনি,কত কত পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।আজ ওনার কথা যেন সবাই ভুলে গেছে।এক সময় ওনার গান বাঙালিদের গর্ব ছিল।আমার আজকের এই ভিডিও করার উদ্দেশ্য হলো,দেখুন না আপনারা যদি ওনার কোনো খবর পান।এত বড় একজন গানের শিল্পী এভাবে হারিয়ে যাবে?কেউ কি পারে না,ওনাকে আবার সম্মানের সাথে কোনো সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সবার সামনে আনতে!
আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি,এই ভিডিও সবার কাছে ছড়িয়ে দিন।সৈয়দ আলী নামটা আবার সবার ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ুক।নমস্কার
-কি রে,ঠিক করে বলতে পারলাম?
-একটু বেশি বলে ফেলেছো।ভিডিওটা অনেক বড় হয়ে গেল
-না না ঠিক আছে,আপনি খুব ভালো বলেছেন।আর তাছাড়া একটু বিস্তারিত ভাবে না বললে,আপনি যে আবেগ থেকে বলেছেন সেটা বোঝা যেত না
-তোমার নাম কি?
-শ্রেয়া
-তুমি কি সুমিতের বন্ধু?
-চল তোকে এগিয়ে দি
-দাঁড়া! হ্যা।আজ আসি
-আচ্ছা এসো
ঘর থেকে বেরিয়ে….
শ্রেয়া-তুই এরকম করছিলি কেন?
সুমিত- কি করেছি?
-একটু ভালো করে কথা বলা যায় না?
-মানে?
-মানে একটু মিষ্টি করে
-মেয়েদের মতো নেকিয়ে নেকিয়ে কথা বলা আমার পোশায় না
-তার মানে আমি ন্যাকামো করি?
-মেয়েদের কথা বলেছি
-আমি কি মেয়ে নই,ছেলে?
-এক্ষুণি তো অটোতে উঠবি,এইটুকু সময় শুধু শুধু ঝগড়া করছিস কেন?
-হ্যা আমিই তো শুধু ঝগড়া করি আর তুই তো….
-কি আমি? তোর এই অর্ধেক কথা বলাটা ভীষণ খারাপ
-জানিসই তো যে আমি খারাপ।যা আর এগিয়ে দিতে হবে না
-কবে যে তুই বড় হবি কে জানে? এমনি তে তো সবার সাথে যখন কথা বলিস,মনে হয় আমার ঠাকুমা আর আমার সাথে যখন থাকিস তখন যেন পাঁচ বছরের বাচ্চা হয়ে যাস
অটোর স্টান্ডে,অটোতে উঠতে গিয়ে,সুমিত শ্রেয়ার হাতটা ধরে “কি রে কথা বল!”
সুমিতের হাত ছাড়িয়ে,অটো ওয়ালার উদ্দেশ্যে শ্রেয়া….
-চলুন দাদা
শ্রেয়ার এই এক দোষ,একটুতেই রেগে যায়।অবশ্যই অন্যদের সাথে না শুধু সুমিতের ওপর।আর যতক্ষণ না সুমিত রাগ ভাঙাচ্ছে ততক্ষণ আকাশ,বাতাস সব ভার হয়ে থাকবে।সুমিতও কম যায় না।প্রথম প্রথম নিজেও বেশি পাত্তা দেবে না শ্রেয়াকে,কিন্তু তাতে লাভ কি? শ্রেয়া ছাড়া যে সে থাকতেও পারে না।
পাঁচ/ ছ’দিনের মধ্যেই এই ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেল।শ্রেয়া একদিন দুপুরে সুমিতদের বাড়ির ল্যান্ড লাইনে ফোন করলো।শ্রেয়া জানতো, ওই সময় সুমিত ঘরে থাকেনা।ফোনটা সুমিতের বাবা ধরলেন।
-হ্যালো,আমি সুমিতের বন্ধু,শ্রেয়া
-হ্যা বলো
-একটা ভালো খবর আছে
-বলো
-আপনার ভিডিওটা প্রচুর ছড়িয়ে পড়েছে
-ও! তোমার কাছে খবর এলো বুঝি?
-না না খবর আসে নি।একটু আগে আমাকে আপনার ভিডিওটা একজন পাঠালো,তাই বললাম
-আচ্ছা
-দেখবেন, আপনি যে ভালো উদ্দেশ্যে এটা করেছেন,একদিন ঠিক এটা সফল হবে
-হলেই ভালো।এর মধ্যে একদিন এসো আমাদের বাড়িতে,ওনার সম্বন্ধে আরো অনেক গল্প আছে।
-আসবো, এখন রাখি?
-হ্যা রাখো
ফোন রাখার পর তুষার বাবু খুব খুশি ছিলেন,অপেক্ষা করছিলেন ছেলে কখন বাড়ি ফিরবে,উনি ছেলেকে এই ভালো খবরটা দেবেন।সন্ধ্যে বেলা ছেলে ঘরে আসার পর তুষার বাবু খুব উচ্ছাস নিয়ে ছেলেকে কথাটা বলতেই…..
-কি রে! শুনলাম ভিডিওটা নাকি অনেক ছড়িয়ে গেছে?
ছেলে কোনো উত্তর না দেওয়ায়,আবার বললেন…
-কি রে? তুই খুশি হোস নি?
-খুশি হবো? তুমি জানো এক এক জন এই ভিডিও দেখে কত উল্টো পাল্টা কথা লিখেছে?
-উল্টো পাল্টা? কেন ,আমি কি ভুল বলেছি?
-না তুমি বলো নি…..
হঠাৎ ডোর বেল বেজে উঠলো….
-তুই বোস, আমি দেখছি
তুষার বাবু দরজা খুলে দেখলেন শ্রেয়া….
-ও তুমি? এসো
-ফিরেছে?
-হম,এসো ভিতরে এসো
-শুনুন না,আপনাকে ভিডিও নিয়ে কিছু বলেছে?
-বলছিল এখন,কলিং বেল বাজলো বলে আমি….
-(বিড়বিড় করে)যাক ঠিক সময়েই এসেছি
-কিছু বললে?
-না!চলুন
শ্রেয়াকে ঘরে ঢুকতে দেখে সুমিতের কোনো উচ্ছাস নেই।তুষার বাবু বললেন….
-হ্যা, কি যেন বলেছিলি? কি হয়েছে….
শ্রেয়া-তেমন কিছু হয় নি।এসব হওয়া স্বাভাবিক
তুষার বাবু-কিন্তু হয়েছেটা কি?
-তুমি একজন হিন্দু হয়ে কোনো হিন্দু গানের শিল্পীর জন্য বললে না,একজন মুসলিম গায়কের কথা বললে,এই নিয়ে অনেকে অনেক রকম কথা লিখেছে
তুষার বাবু অবাক হয়ে-হিন্দু মুসলমান? এর মধ্যে হিন্দু মুসলমানের কথা কোথা থেকে এলো?
শ্রেয়া-তোকে কিন্তু আমি ফোনে বলেছিলাম,এসব ওনাকে না বলতে।তবুও তুই….
-না বলার কি আছে? আমি বাবাকে আগেই বলছিলাম,এসব করে কোনো লাভ নেই।তুইই বাবাকে আরো উসকেছিস
-আমাকে আগে বলবি কি,যে এর মধ্যে এসব কথা উঠছে কেন?
-কেউ লিখেছে,সংগীত জগতে তো সৈয়দ আলীর মতো আরো কত শিল্পী ওই জগৎ থেকে হারিয়ে গেছে কিন্তু উনিই কেন?হিন্দু হয়ে হিন্দু ভাইয়ের জন্য না ভেবে মুসলিমদের জন্য ভাবছো,কেউ বলছে এর পিছনেও রাজনীতি,কেউ বলছে সময়ের সাথে চলা উচিত,বর্তমানকে নিয়ে এগোতে হবে,অতীত নিয়ে বসে থাকলে হবে না….আরো কত কি!
-আচ্ছা শোন! হ্যা আমি মানছি,এরকম কথা কয়েকজন লিখেছেন তাই বলে সবাই তো লেখেন নি।কত জন কত ভালো ভালো কথা লিখেছে যে সত্যিই আপনি খুব ভালো কাজ করলেন,সত্যিই মানুষ পুরনোদের আর কেউ খোঁজ রাখে না,কেউ বলেছেন আমিও ওনার খুব ভক্ত,কেউ বলেছেন মিডিয়ার উচিত ওনার বর্তমানটা সবার সামনে তুলে ধরা,কেউ বলেছেন ওনাকে খুঁজে বের করা হোক।তোর এসব চোখে পড়ে না? সব সময় নেগেটিভ চিন্তা!পজেটিভ কোনো কথা তোর মুখে শুনি না!
আমার মনে হয় কাকু,এখনই অনেক কিছু ভাবার দরকার নেই।দেখি না,কিছু না হলে না হয় না হবে
প্রায় দু মাস সাত দিন পর শ্রেয়া সুমিতকে ফোন করে….
-শিগগির টিভিটা খুলে,”চলছে খবর” চ্যানেলটা দ্যাখ
সুমিত শ্রেয়াকে আর কিছু জিজ্ঞেস না করে তাড়াতাড়ি টিভিটা চালায়। দেখলো সৈয়দ আলীকে নিয়ে অনেকটা ডকুমেনটারির মতো দেখাচ্ছে।সুমিত তাড়াতাড়ি বাবাকেও ডাকলো।প্রোগ্রামের শেষে যদিও সুমিতের বাবার বক্তব্য গুলো দিয়েই শেষ হলো,কিন্তু তাতে না সৈয়দ আলীর বর্তমান কিছু জানা গেল, না সুমিতের বাবার কোনো নাম আসলো।প্রোগ্রামটা হয়ে যাওয়ার পর বাবা ছেলের মধ্যে এই নিয়ে আর কোনো আলোচনা হয় নি।তুষার বাবু যেহেতু এখনও বেশ স্বচল, তাই উনি খুব কম মাহিনার চাকরি মানে একটা সাইবারক্যাফে কাজ করতেন।জীবনের অনেকটা বছরই গানের জগতের সাথে যুক্ত থেকে,কম্পিউটারে ভরা ঘরে দ্যাখা শোনার কাজ করতে তাঁর আর ভালো লাগতো না।দিন আবার খুব সাধারণ ভাবে কাটতেই থাকলো।
সুমিত নিজের কেরিয়ার আরো ভালো করার জন্য চারিদিকে অনেক চেষ্টা করছে।এতদিন যেখানে চাকরি করতো সেখানে ভবিষ্যতে তেমন কিছু উন্নতি করার খুব একটা সুযোগ নেই।শ্রেয়ার আঁকার হাত খুব সুন্দর,তাঁর প্রচুর স্টুডেন্ট।সপ্তাহে বুধবার ছাড়া তাঁর আর একদিনও ছুটি নেই।শ্রেয়ার এক স্টুডেন্টের দাদা শ্রেয়াকে বেশ পছন্দ করতো এবং তা শ্রেয়া খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারতো। কিন্তু শ্রেয়া তাঁকে সেটা বুঝতে দেয় নি।আসলে শ্রেয়া খুব কনফিউসড।বিয়ের কথা ভাবলে তাঁর মনে শুধু সুমিতের খেয়ালই আসে,কিন্তু সুমিত যেরকম ছেলে তাঁর সাথে বেশিদিন সংসার করা যায় নাকি সেটা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে শ্রেয়ার।একে তো সুমিতের চিন্তাধারা খুব নেগেটিভ,সব সময় দুঃখ,সব কিছুতে বিতৃষ্ণা।এদিকে শ্রেয়া আবার খুব আশাবাদী,সে কদিন আর সুমিতের এসব সহ্য করতে পারবে?শ্রেয়া স্টুডেন্টের সেই দাদার কথা নিজের দিদিকে জানায়।দিদি সব শুনে শ্রেয়াকে ওই ছেলের সাথে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যেতে বলে।শ্রেয়া ঠিক করে যে সে সুমিতকে একবার জানাবে সবটা,তারপর বিয়ের ব্যাপারে এগোবে।
একের পর এক ইন্টারভিউ আর ফল স্বরূপ শুধু ব্যর্থতায় সুমিতেরও মেজাজ মোটেই ভালো থাকে না আজকাল।বাবার সাথেও সেরকম বিশেষ কথা হয় না।ঠিক এরকম পরিস্থিতিতে শ্রেয়া সুমিতকে ফোন করলো…..
-কি রে কি খবর?
-কোনো খবরই নেই,ওই একই রোজের রুটিনে দিন কাটছে
-কাকুর ওদিকে কিছু প্রোগ্রেস হলো?
-আমি তো অনেক আগেই বলেছিলাম,তোরা শুনিশ নি,ফালতু যত নাটক!
-এখনো তোর মাথা গরম? আচ্ছা শোন, আমার এক স্টুডেন্ট আছে,প্রায় আড়াই বছর ধরে ওকে আমি আঁকা শেখাই, ওর দাদা ভালো চাকরি করে,দেখতে মোটামুটি। এর বেশি তাঁর সম্বন্ধে বেশি কিছু বলার মতো আমার কিছু জানা নেই,হ্যা অব্যশই সে খুব ভদ্র
-না হেজিয়ে আসল কথাটা বল
-সেটাই তো বলছি।তাঁর আমাকে খুব পছন্দ
-তোদের পার্সোনাল কথা আমাকে শোনাবার কি আছে?
-উফ্! তুই কি কখনো ঠিক করে কথা বলতে পারিস না?
-আচ্ছা বল
-মা দের এখনো কিছু বলিনি তবে দিদিকে বলেছি,দিদি সব শুনে খুব জোর করছে,মাদের জানানোর জন্য।আর তারপরে ওদের বাড়ির সাথে কথা বলে বিয়েটা ঠিক করবে বলছে
-তো?আমাকে এসব বলার কারণ?
-এরকম করে কেন কথা বলছিস? তুই আমার এত ভালো বন্ধু,আমি তোর সাথে কি কোনো কথা শেয়ার করতে পারি না?
-আমি তোর বন্ধু না
-তুই আমার বন্ধু না?
-না!
-তুই এভাবে বলতে পারলি? আমি তোর সবকিছু তে সব সময় পাশে থেকেছি আর আজ তুই…
-পুরোনো কথা ভুলে যা।যা! এবার ভদ্র বরের সাথে ফুলশয্যা কর
-তুই?ছি!
শ্রেয়া কাঁদতে কাঁদতে ফোন রেখে দেয়।শ্রেয়ার বিয়ের কথা শুনে সুমিত যেন তখন উন্মাদ।বাবা তখন টিভিতে একটা গানের প্রোগ্রাম দেখছিলেন।বাবার পাশ থেকে রিমোট টা নিয়ে চ্যানেল চেঞ্জ করে বেশ রাগ করে বলে উঠলো……
-সারাক্ষণ ওই গান আর গান।তুষার সমাদ্দার! অতীত থেকে বর্তমানে ফিরে আসো! এখন আর স্টুডিও,রেকর্ডিং,গায়ক গায়িকা তোমার জীবনে নেই!যত্তসব!
বলে নিজের ঘরে ঢুকে গেল সুমিত।বাবা খুব অবাক।বাবা জানে ছেলের একটু বেশি মাথা গরম হয়,কিন্তু তাই বলে এরকম ব্যবহার!ওদিকে শ্রেয়া কেঁদে কেঁদে সারাটা রাত ঘুমাতে পারে নি।সুমিত যেমনই হোক,তবুও শ্রেয়া ভেবেছিল হয়তো সুমিত শ্রেয়াকে বোঝে কিন্তু না! সব ভুল ভাবনা।পরের দিন শ্রেয়া দিদিকে জানায় যে সে এই বিয়েতে রাজি,দিদি যেন নিজেই মাকে সব জানিয়ে দেয়।
ওদিকে মিডিয়া থেকে সৈয়দ আলীর সাথে দেখা করে,ওনাকে, ওনার একটা ইন্টারভিউ করার প্রস্তাব দেন।কুড়ি মিনিটের প্রোগ্রাম,সৈয়দ আলীকে তাঁর সময়কার তাঁর বেস্ট বেস্ট গান নিয়ে আর তাঁর অনুভূতি শেয়ার করতে হবে দর্শকের সাথে।দুদিন পরে লাইভ দেখানো হবে,তাই ওনার কিছু ছবি তুলে নিয়ে গেল মিডিয়ার লোক।পরের দিন দুপুরের পর থেকে “চলছে খবর” চ্যানেলে একটু পর পর দেখাতে থাকলো,তার পরের দিন সৈয়দ আলীর এক্সক্লুসিভ লাইভ ইন্টারভিউ।এত বছর পর সৈয়দ আলী মিডিয়ার সামনে আসবে।শ্রেয়া নিউজটা দেখেই ভাবলো সুমিতের বাবাকে জানাবে,কিন্তু পরে ভাবলো,এসব করে কি লাভ।আর না!কিন্তু শ্রেয়ার বার বার সুমিতের বাবার সেই অসহায় মুখটা মনে পড়ছিল,যখন তিনি ছেলের কাছে তাঁর এই ভিডিওটার জন্য হিন্দু মুসলিম ইসুর কথা শুনেছিলেন।শ্রেয়া ঠিক করলো,দুপুরে সুমিত বাড়িতে থাকে না,সেই সময় ওর বাবাকে জানিয়ে, বলে দেবে উনি যেন সুমিতকে ওর কথা না বলেন।
যেরকম শ্রেয়া ভাবলো তেমনই করলো।পরের দিন দুপুরে সুমিতদের ল্যান্ড লাইনের ফোনে শ্রেয়া ফোন করলো।তখন সুমিতের বাবা ভাত খাচ্ছিলেন।সুমিতদের একটা বরাবরের নিয়ম,ওরা যখন খেতে বসে তখন ল্যান্ড লাইনের সাথে কানেক্ট কর্ডলেস ফোনটা খাবার টেবিলে নিয়ে বসে।খাবার সময় কারোর ফোন এলে ফোনটা কানে না ধরে,স্পিকার অন করে কথা বলে।শ্রেয়ার সাথে সুমিতের শেষ কথা হওয়ার পর দুদিন হয়ে গেছে সুমিত কাজে যায় নি।সুমিতের বাবা তখনও খাচ্ছিলেন,সুমিতের খাওয়া শেষ।হাত না ধুয়েই বাঁ হাতে ফোনে মেল চেক করছিল সুমিত,কোনো নতুন চাকরির খবর এলো কিনা দেখার জন্য।ঠিক সেই সময় শ্রেয়ার ফোনে কর্ডলেসের রিং বেজে উঠলো।সুমিতের বাবা স্বভাবতই বাঁ হাতে ফোন রিসিভ করে স্পিকার অন করলো।ফোনের ওপাশ থেকে আওয়াজ এলো….
-হ্যালো,কাকু! আমি শ্রেয়া
শ্রেয়ার আওয়াজ পেয়ে সুমিতের বাবা সুমিতের দিকে তাকালে,সুমিত বিরক্ত মুখে বাবাকে ইশারা করে,ওর বাবা যেন না বলেন ওখানে সুমিত আছে।সুমিতের বাবা খুব শান্ত ভাবে বললেন….
-বলো
-এখন সুমিত অফিসে তো?
সুমিতের বাবা সুমিতের বিরক্তি কর মুখ দেখে একটু থতমত খেয়ে বললেন…..
-ও তো রোজ এই সময়ে অফিসেই থাকে
-খুব ভালো খবর আছে
-কি?
-আপনার আশা পূর্ণ হয়েছে,আজ সন্ধ্যে সাতটা থেকে সৈয়দ আলীর সরাসরি ইন্টারভিউ, “চলছে খবর”
(ছেলে সামনে আছে বলে,উনি কোনো উচ্ছাস না দেখিয়েই)-ও! ভালো
-ভালো?শুধু ভালো বলছেন? এটা কার জন্য হয়েছে?শুধু আপনার জন্য।কেউ জানুক না জানুক আমি জানি।আপনার ছেলে যদিও তা কোনদিনও স্বীকার করবে না
সুমিতের বাবা ভয়ে জোরে জোরে কাশতে থাকলেন…
-কি হলো? জল খান।সরি আপনি বোধহয় এখন ভাত খাচ্ছেন,তাই না?
-হম
-আমি খুব খুব খুশি হয়েছি।যদিও উনি কখনো জানবেন না ,ওনার এই অজ্ঞাত জীবন থেকে কে ওনাকে ফিরিয়ে আনলো, তাতে কি বলুন? আবার তো আপনারা যাঁরা ওনাকে এত ভালোবাসেন,ওনাকে দেখতে পাবেন
-হম
-আচ্ছা,একটা কথা,আমি যে আপনাকে ফোন করেছি,সেটা আপনার ছেলেকে বলবেন না।আপনি তো জানেন,ও কোনো কিছু পজেটিভ ভাবে নিতে পারে না।ওর ভাবনা সব সময় উল্টো
সুমিতের বাবা আবার কাশতে থাকলেন….
-আপনার দেখছি খুব কাশি হয়েছে,ছেলেকে বলুন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে।আমি আর কবে ফোন করতে পারবো জানি না।আমার বিয়ের কথা চলছে।আজ মা রা ফোনে কথা বলবে আর কাল হয়তো পাকা কথা বলতে যাবে
কথাটা শুনেই সুমিত নিজের খাওয়ার থালাটা জোরে ধাক্কা দিয়ে,উঠে দাঁড়িয়ে চেয়ারটা জোরে ধাক্কা দিয়ে ওখান থেকে চলে যায়।দুবার এত জোরে আওয়াজ পেয়ে শ্রেয়া……
-কি হলো? পড়ে গেলেন নাকি?
-না,আমি ঠিক আছি
-আচ্ছা আমি রাখছি
-ভালো থেকো
সন্ধ্যে থেকেই তুষার বাবুর মধ্যে খুব অস্থিরতা শুরু হয়েছে।ছেলে আজ বাড়িতে,তার ওপর আজকাল ছেলের এত রাগ,এত অসভ্য ব্যবহার দেখছেন তিনি,তাই সৈয়দ আলীর সাক্ষাৎকার দেখার সময় যদি টিভি বন্ধ করে দেয়?এদিকে সুমিতের ঘরের দরজা বন্ধ,ভিতরে কেউ আছে বলে মনেই হচ্ছে না।ভিতরে কোনো শব্দ নেই।কিজানি হয়তো কোন বড় ঝড় আসার আগের নিস্তব্ধতা।ওদিকে শ্রেয়ার দিদি মাকে সব সকালেই বলে দিয়েছে।দুপুরে শ্রেয়ার মা আর দিদি শ্রেয়াকে ডেকে কিছুক্ষণ কথা বলে আবার ফাইনাল জিজ্ঞেস করে নিলেন যে শ্রেয়ার ওখানে বিয়ে করতে কোনো অসুবিধা নেই তো?শ্রেয়ার বুকের ভিতরটা উথাল পাথাল হয়ে যাচ্ছিল,ভিতরের কান্না গুলো সব বাধা ভেঙে বেরিয়ে আসতে চাইছিল কিন্তু শ্রেয়া অভিমানের পাথর চাপা দিয়ে সব শান্ত করে, মাথা নেড়ে সম্মতি দেয়।দিনটা ছিল বুধবার।শ্রেয়ার ছুটির দিন।পরদিন মা রা পাত্রের বাড়িতে যাবে বলে,দিদি আর মা দুজনেই মার্কেটে জুতো কিনতে গেল।শ্রেয়া মনে মনে খুশিই হলো যে যদিও সৈয়দ আলীকে নিয়ে ওর কোনো ইন্টারেস্ট নেই কিন্তু তবুও সুমিতের বাবার এই ইচ্ছায় যে ও নিজেও উপস্থিত ছিল তাই আজ সে সৈয়দ আলীর প্রোগ্রামটা দেখবে।
এদিকে সুমিতের বাবা টিভির আওয়াজ পুরো বন্ধ করে পৌনে সাতটায় টিভি খুলে বসলেন।ভাবলেন বিজ্ঞাপন নিয়ে আধ ঘন্টার প্রোগ্রাম,যদি ততক্ষণ সুমিত ওর ঘরেই থাকে তাহলে আর কোনো চিন্তা নেই।কিন্তু প্রবাদই আছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়।সাতটা বাজতে ঠিক দু তিন মিনিট আগে সুমিত দরজা খুলে বেরোলো।গায়ে একটা টি-শার্ট আর ট্রাউজার পরা।এই রকম ড্রেস সুমিত আশে পাশের দোকান,বাজারে গেলে পরে।ঘর থেকে বেরোলোই প্রচন্ড বিরক্ত মুখে,দেখে মনে হবে ঘুম থেকে উঠেছে বোধহয়,চোখমুখ বেশ ফোলা।বেরিয়েই ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা জলের বোতল বের করে গ্লাসে জল ঢালছে,এমন সময় শুরু হলো “চলছে খবর”চ্যানেলে সৈয়দ আলীর লাইভ শো।তুষার বাবু ভাবছিলেন,এবার তো একটু সাউন্ড বাড়াতেই হবে।যেই উনি সাউন্ড বাড়ালেন আর হাসি মুখে সৈয়দ আলীকে টিভির স্ক্রিনে দেখালো,সুমিত বাইকের চাবিটা নিয়ে দরজাটা প্রচন্ড জোরে বন্ধ করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।তুষার বাবু পুরো কেঁপে উঠলেন।কিসের যে এত রাগ সুমিতের মধ্যে কে জানে? একথা ভেবে উনি আবার মন দিয়ে প্রোগ্রামটা দেখতে থাকলেন।ওদিকে শ্রেয়াও একা ঘরে খুব মন দিয়ে প্রোগ্রামটা দেখছে।প্রথম বিজ্ঞাপনে শ্রেয়া উঠে নেলকাটারটা নিয়ে বসলো,টিভি দেখতে দেখতে নখটা কাটবে বলে,এমন সময় বেল বেজে উঠলো।শ্রেয়া সেন্টার টেবিলের ওপর নেলকাটারটা রেখে দরজা খোলার জন্য উঠে দরজার আই হোল দিয়ে দেখতেই যাচ্ছিল,আবার বিজ্ঞাপনের পর পোগ্রাম শুরু।তাড়াতাড়ি করে আবার টিভির সামনে আসার জন্য আই হোলে আর না দেখেই দরজা খুলে দ্যাখে সামনে সুমিত।শ্রেয়া থতমত খেয়ে…..
-কিরে তুই এখানে?
-তোর সাথে কথা আছে
-তাই বলে আমার বাড়িতে? ফোনে বলতে পারতি তো
-না পারতাম না
-বাড়িতে কেউ নেই,তুই এখন যা
-এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলবো
-কি বলবি? আর কি বা বলার আছে?
শ্রেয়া সুমিতের দিকে তাকিয়ে দেখলো, সুমিত নিচের দিকে তাকিয়ে আছে,ওর দু গালের চোয়াল দুটো শক্ত হয়ে আছে,দেখে মনে হচ্ছে সুমিত যেন দাঁতে দাঁত চেপে রেখেছে।শ্রেয়া শান্ত ভাবেই বলল “ভিতরে আয়”।সুমিত ভিতরে ঢুকে সোফায় গিয়ে বসলো।শ্রেয়া দরজাটা খোলা রেখেই বসলো।সবে কিছু বলতেই যাচ্ছিল,এমন সময় শ্রেয়ার ফোন বেজে উঠলো।শ্রেয়া ফোন ধরেই দেখলো দিদির ফোন।দিদি একটু চিৎকার করেই বলছিল….
-কিরে ওখানে বৃষ্টি হচ্ছে?
-সে তো জানি না রে,আমি ঘরে টিভি দেখছি
-শিগগির ছাদে যা,ছাদে দুটো আচারের বোতল আর মাদুর আছে ওগুলো নিয়ে আয়, এখানে খুব বৃষ্টি হচ্ছে।আমরা তো এখানে আটকে গেছি।ছাতাও
আনি নি।তুই যা! আকাশের অবস্থা খুব খারাপ,আমি রাখছি,আমাদের ফিরতে দেরি হলে ভাবিস না,বৃষ্টি না কমলে যেতে পারবো না
-আচ্ছা সাবধানে আসিস
ফোন রেখেই শ্রেয়া সুমিতকে বলল….
-তুই একটু বোস, আমি একটু আসছি
শ্রেয়া সিঁড়ি দিয়ে একটু উঠতেই বুঝলো ঝড় উঠেছে,দরজা-জানলা গুলোয় জোরে আওয়াজ হচ্ছিল।শ্রেয়া চিৎকার করে সুমিতকে বলল….
-দরজা জানলাটা একটু বন্ধ করে দে তো,আমি ছাদের থেকে আসছি,ঝড় উঠেছে
সুমিত উঠে দরজা জানলা বন্ধ করে দিলো।ওদিকে শ্রেয়া চিলেকোঠার আর ছাদের লাইট জ্বালিয়ে তাড়াতাড়ি গিয়ে আচারের কাঁচের বোতল গুলো নিয়ে চিলেকোঠায় রেখে,আবার মাদুর নিয়ে সেটা গুটিয়ে রেখে দরজা বন্ধ করতে গিয়ে ঝড়ের বেহিসেবি হওয়ায় দরজা বন্ধ করতে হিমশিম খেয়ে,অবশেষে দরজা বন্ধ করলো।এবার ছাদের আর চিলেকোঠার লাইট বন্ধ করবে বলে যেই এগিয়েছে,ওর মনে হলো কিসের একটা আওয়াজ,পিছনে ফিরে দ্যাখে সুমিত!
-কি রে তুই এখানে এলি কেন?
-বিয়েটা করছিস তাহলে?
-কি বলছিস? নিচে চল
-পারবি আমাকে ছেড়ে থাকতে?
সুমিতকে নিজের দিকে এগোতে দেখে,শ্রেয়া খুব ঘাবড়ে গেল
-বলছি তো নিচে চল,কথা বলবো।আর দুটো মিনিট তোর তর সইছে না?
-না! আমি এসব আর নিতে পারছি না।তুই কিছু বুঝিস না?
সুমিত শ্রেয়ার সামনে যেতে যেতে, শ্রেয়া একদম দেওয়ালের গায়ে গিয়ে ঠেকেছে।শ্রেয়ার কানের পাশ দিয়ে সুমিতের দুটো হাত দেওয়ালে গিয়ে ঠেকেছে।শ্রেয়া আড় চোখে দেখার চেষ্টা করছে দেখে সুমিত বলে উঠলো “ভয় নেই তোকে ছুঁই নি”।কিন্তু সেই মুহূর্তে শ্রেয়ার মাথায় অন্য কথা ঘুরছে।ও যেখানে দাঁড়িয়ে আছে হিসাব মতো ওর মাথার পিছনে দেওয়ালে একটা পেরেক লাগানো ছিল।ওই পেরেকটা কোথায় গেল? কারণ পেরেকটা থাকলে তো শ্রেয়ার চুলে,মাথায় লাগতো।এদিকে সুমিত তখন…..
-তোর কিচ্ছু এসে যায় না, না?
-কি করেছি আমি?
-কত সহজে আমায় বললি যে, তোকে ছেলেটা পছন্দ করে আর তুই ও
-কি আমিও?
-তোর সাহস হয় কি করে,তুই আমাকে অন্যের সাথে তোর বিয়ের কথা বলিস?
-আমি…..
শ্রেয়া আর কিছু বলার আগে সুমিত নিজের ডান হাতটা দিয়ে শ্রেয়ার মুখটা চেপে আরো দেওয়ালের গায়ে সেটে দিলো।শ্রেয়ার মাথার পিছন আর দেওয়ালের মাঝে শুধু সুমিতের বাঁ হাতের তালু।সুমিত শ্রেয়ার একদম মুখের কাছে নিজের মুখটা নিয়ে…..
-সবার সব কিছু বুঝিস,সারাক্ষণ পট পট করে বলতেই থাকিস।আর আমার মনের কথা বুঝিস না?তুই ছাড়া আমি থাকতে পারবো না,বুঝিস না?সব ধ্বংস হয়ে যাবে,আমি কাউকে সুখে থাকতে দেবো না বলে দিলাম
শ্রেয়া নিজের হাত দিয়ে সুমিতের হাতটা মুখ থেকে সরিয়ে….
-তুই কি পাগল হয়ে গেছিস? তুই কোনোদিন আমায় ভালোবাসিস নি।তাহলে আজ এই পাগলামী করছিস কেন?
সুমিত ঠোঁট টা শ্রেয়ার ঠোঁটের আরো কাছে নিয়ে বলল…..
-সত্যি করে বল! তুই ভালোবাসিস না আমাকে?
-শ্রেয়া চোখ নিচে করে বলে উঠলো “না!”
-তাই?মিথ্যা! তোর মতো আমায় কেউ ভালোবাসতে পারবে না।তুই আমার,আমার বাবার আমার লাইফের সব খবর রাখিস,সব প্রব্লেম সল্ফ করিস কেন,কেন করিস?
-এমনি
-এমনি? আর কত মিথ্যা কথা বলবি?
-আমার সাথে তোর কোনো মিল নেই।তুই বড্ড নেগেটিভ,সব সময় তোর মধ্যে হতাশা।আমি আশাবাদী, আমি সব কিছু পিজিটিভ ভাবে নি।দেখিস না তোর সাথে আমার কত ঝগড়া হয়?আমরা কোনো দিন এক হতে পারবো না,আর যদি হই ও কদিন পরেই ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবে
-ঘর আলো কিসে হয়?
-মানে?
-বল না?
-লাইটে
-এই লাইটটা কি করে জ্বলছে?
-বিদ্যুতে
-বিদ্যুৎ কি করে তৈরি হয়?
-কি শুরু করেছিস বলতো?
-পজেটিভ আর নেগেটিভ মিলেই বিদ্যুৎ তৈরি হয়
শ্রেয়া সুমিতের দিকে তাকালো,হঠাৎ বাজ পড়লো।বাজের আওয়াজে…..না,শ্রেয়া ভয়ে সুমিতকে জড়িয়ে ধরে নি।বরং ওই আওয়াজে শ্রেয়া খুব জোরে কেঁপে ওঠে আর সঙ্গে সঙ্গে সুমিত দুচোখ বন্ধ করে ফেলে।শ্রেয়ার সন্দেহ হওয়াতে সুমিতকে ঠেলে সরিয়ে মাথার পিছনে তাকিয়ে দ্যাখে,দেওয়ালে তখনো সুমিতের হাতটা রাখা।শ্রেয়া হাতটা সরিয়ে আঁতকে ওঠে!শ্রেয়া যে পেরেকের ভয় পাচ্ছিলো,সুমিত এতক্ষণ ওই পেরেকের ওপর হাতটা রেখে, পেরেকটা শ্রেয়ার মাথায় লাগতে দেয় নি।সুমিতের হাত কেটে রক্ত বেরোচ্ছিল।শ্রেয়া….
-তুই কি মানুষ?
-না!
-শিগগির নিচে চল
-তুই আগে বল
-তুই যা… বি?
-চল
দুজনে তাড়াতাড়ি নিচে নেমে।শ্রেয়া সুমিতকে দুহাত দিয়ে জোর করে ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসিয়ে ছুটে গিয়ে একটা তুলো আর ওষুধের বাক্স নিয়ে এলো।তুলো দিয়ে শ্রেয়া রক্তটা মোছার আগে সুমিত ওর হাতটা ধরে বাধা দিলো।
-কি হলো কি! রক্তটা মুছতে দে
সুমিত উঠে দাঁড়িয়ে…..
-একবার লাগাতে দে
-কি?
-এটা,তোর মাথায়
-সুমিত! এটা কি হিন্দি সিনেমা হচ্ছে?
-না রে,আমি জানি আমি তোকে কোনো দিন পাবো না।আমি তোর যোগ্য না।কেউ জানবে না,একবার তোকে এটা লাগাতে দে।আর আমি তোকে কখনো কিছু জোর করবো না।শুধু আমার জন্য।তুই কাল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে তুলে ফেলিস
শ্রেয়ার দুচোখ ছল ছল করছিল….
শ্রেয়া-কেন বলিস নি কখনো,কেন এত দেরি করে ফেললি?
-আমি সব ঠিক করে দেবো দেখিস
শ্রেয়া কাঁদতে কাঁদতে সুমিতের বুকে মাথা ঠেকিয়ে….
-মা দের ফোনে কথা হয়ে গেছে,কাল ওরা ছেলের বাড়িতে যাবে।আমি যে তোকে অনেক ভাবে ইঙ্গিতে বোঝাতে চেয়েছিলাম।কিন্তু তুই বুঝিস নি
সুমিত শ্রেয়াকে বুকে জড়িয়ে,
-তুই দ্যাখ আমি বলছি,আমি সব ঠিক করে দেবো।আমি এখনই বাবাকে গিয়ে সব বলবো।তারপর আজই বাবাকে নিয়ে আসছি তোর মার সাথে কথা বলতে।তুই কাঁদিস না।তুই দেখিস আর আমি নেগেটিভ ভাববো না,
শ্রেয়া হেসে চোখ মুছতে মুছতে….
-ভুতের মুখে রাম নাম।তুই পাল্টাবি?
-পাল্টে যাবো দেখিস,তোকে পাওয়ার জন্য আমি সব করবো
-আগে বোস, ওষুধটা লাগাই
-জানিস,আমার মনটা জ্বলে যাচ্ছিল,বাবার সাথেও কত খারাপ ব্যবহার করেছি
শ্রেয়া রক্তটা পরিষ্কার করে ওষুধ লাগাতে লাগাতে…..
-যখন তোর মন ভরে যাবে,তখন যদি আবার তুই বদলে যাস,
-তোর কি মনে হয়,আমি তোর শরীরের জন্য তোকে পেতে চাইছি? তাহলে আজকের সুযোগটা ছাড়তাম বলে তোর মনে হয়?খালি ঘরে তোকে পুরোপুরি পাওয়ার মতো যথেষ্ট সময় ছিল।আর যদি আমার ওপর অসহ্য হয়ে তুই আমাকে ডিভোর্স দিতে চাস, তাহলে ডিভোর্স দিয়ে দিস কিন্তু আমরা দুজনে আমার ঘরেই থাকবো।মাঝখানে একটা দড়ি লাগিয়ে কাপড় ঝুলিয়ে দেবো।তুই তোর মতো থাকবি কিন্তু আমার ঘরে।আমি তোকে ছাড়া থাকলে মানসিক দিক দিয়ে শেষ হয় যাবো।একদিনে আমি বুঝেছি তুই আমার জীবনে কি
-মনে হয় ঝড়টা একটু কমেছে,এবার তুই যা,মা রা এসে যাবে
-এক্ষুণি যাচ্ছি
সুমিত উঠে দরজার কাছাকাছি গিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়ালো
-কি হলো যা!
-যাচ্ছি
সুমিত আবার শ্রেয়ার কাছে এসে…..
-তুই তখন জিজ্ঞেস করলি না,যে আমি মানুষ না কি?হ্যা আমি মানুষ না।আমি হিংস্র শের।একমাত্র তুই এই শের কে কাবুতে আনতে পারবি
-হয়েছে হয়েছে
-সত্যি লাভ ইউ রে
-জানি তো,যা এবার।সাবধানে যাস
বাইরে আকাশ তখন প্রায় পরিষ্কার।সুমিত শ্রেয়াদের বাড়ি থেকে একটু খানি যাওয়ার পরই ওদিক থেকে শ্রেয়ার মা আর দিদি রিকশা করে ঘরে ফিরলো।সুমিত বাড়িতে গিয়ে আনন্দে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো।বাবা তো অবাক! প্রথমে ভেবে পেলেন না,এতো রাগে বেরিয়ে গিয়েছিল,বজ্রপাতটা কোথায় গিয়ে হয়ে সব শান্ত হলো।সুমিত বাবাকে চেয়ারে বসিয়ে সব বলল।বলল বাবাকে রেডি হতে,শ্রেয়ার বাড়ি আজই যেতে হবে।এত রাতে কারোর বাড়ি যাওয়াটা যদিও তুষার বাবুর আপত্তি ছিল,কিন্তু তিনি জানতেন তাঁর এই বদরাগি ছেলেকে এক শ্রেয়াই ঠিক রাখতে পারবে।অনিচ্ছা সত্ত্বেও উনি জামা কাপড় বদলাতে গেলেন।এমন সময় শ্রেয়া ফোন করলো সুমিতের ফোনে….
-আসছি আসছি,এত ব্যস্ত হওয়ার কিছু নেই
-মার খাবি।শোন না,একটা গুড নিউজ আছে
-কি গুড নিউজ? তোর প্রেমিকের আরেকজন প্রেমিকা আছে
-উফ্! তুই না!আজ বিকালে মা একবার ওদের ল্যান্ড লাইন ফোনে, ফোন করেছিল,বেজে গিয়েছিল,কেউ ধরে নি।তারপর মা রা সন্ধ্যায় অনেকবার ফোন করার চেষ্টা করেছিল,লাইন পায় নি।এত ঝড়ে বোধহয় ওদের তার টার খুলে গেছে।আমি দিদিকে সব বলেছি
-স…..ব
-হ্যা
-তুই দিদিকে বলতে পারলি যে আমি না,তুই আগে আমার বুকে এসেছিলি?
-আমি ফোন রাখছি
-প্লিস প্লিস বলনা?
-না! বলিনি! এগুলো কেউ বলে?
-আচ্ছা আচ্ছা বল
-দিদি বলল,একটু পরে দিদি মাকে সব বলবে।কাল কাকুর সাথে মা দের দেখা হওয়াটা খুব জরুরি জানিস
-ঠিক আছে,কাল আমার জন্মদিন তো,তাই বাবাকে বলছি তোদের বাড়িতে ফোন করে দুপুরে খাওয়ার নিমন্ত্রণ করতে
-কাল তোর জন্মদিন?কিন্তু তোর তো
-ওটা আরেকটা।আরে বাবা! বছরে একদিন জন্মদিন পালন হয় তো বাবা মার জন্য,তোর জন্য না হয় আরেকদিন জন্মালাম।কেনা খাবার চলবে তো?
-সব চলবে
পরের দিন দুপুরে সুমিতদের বাড়িতে খাওয়া দাওয়ার সময়…..
শ্রেয়ার মা-আজকালকার ছেলে মেয়েরা, বাবা মায়েদের কি ভাবে দেখেছেন তো দাদা? নিজেদের মধ্যে ঝগড়া ঝাটি করে কত বড় ভুল করতে যাচ্ছিল! ভাগ্যিস আমরা কালকে ওনাদের ফোনে পাই নি,তাহলে কি কেলেঙ্কারিটাই না হতো
সুমিতের বাবা উত্তর দিতেই যাচ্ছিলেন,এমন সময় কর্ডলেসের ফোনটা বেজে উঠলো।সুমিত ফোন রিসিভ করে স্পিকার অন করলো।ওপাশ থেকে আওয়াজ এলো…..
-হ্যালো,তুষার সমাদ্দার বলছেন?
সুমিতের বাবা-হ্যা বলছি,আপনি কে বলছেন?
-আপনি একটু লাইনে থাকুন,সৈয়দ আলী আপনার সাথে কথা বলবেন
-কে কথা বলবেন?
-গায়ক সৈয়দ আলী
সুমিতের বাবা ফোন কানে দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন,ওনার হাত কাঁপছিল।সবাই অবাক হয়ে শুনছে।সুমিত বাবাকে ইশারা করে বলল ফোনের স্পিকার অন আছে,তাই ফোন কানে দিতে হবে না।ওপাশ থেকে গাম্ভীর্য পূর্ণ আওয়াজ এলো…..
-তুষার সমাদ্দার?
গলা কাঁপা স্বরে- হ্যা স্যার আমি তুষার সমাদ্দার বলছি
-আপনার ভিডিও আমি দেখেছি।আপনার ফোন নম্বর পেতে অনেক সময় লেগে গেলো।আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
-না না স্যার এরকম বলবেন না।আপনার জন্য কিছু করতে পারলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করবো
-আপনার এই ভিডিও মানুষকে একটু হলেও ভাবিয়েছে। আর দু সপ্তাহ পর গানের ভুবন নামে একটা গানের অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছে।সেখানে প্রতিসপ্তাহে একজন নতুন গানের শিল্পী আর একজন পুরোনো দিনের গানের শিল্পী আসবেন,আমি ওনাদের সাক্ষাৎকার নেবো।থাকবে ওনাদের অভিজ্ঞতার কথা,নতুন পুরোনো গান
-বাহ্ বাহ্ খুব ভালো স্যার।ভিডিওটা ছড়ানোর পরে আমি তো খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম
-কেন?
-স্যার,অনেকে এটা হিন্দু মুসলিম ভেদাভেদের নামে অপপ্রচার করার চেষ্টা করেছে
-তাতে কোনো লাভ হবে না।শিল্পীদের কোনো জাত হয় না।শিল্পীর পরিচয় হয় তার শিল্পে।কোনো গানের সুর কখনো দেশ বিদেশের বিভাজন মানে না,গানের শব্দকেও বাঁধা যায় না,গানের কোনো নির্দিষ্ট ভাষা হয় না,গান বুঝতে কাউকে গান শিখতে হয় না।আপনি যেটা করেছেন তা কজন ভাবে? একসময় আমাদের গাওয়ানোর জন্য, ডেট নেবে বলে লোকে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করে বসে থাকতো।আমরা যেখান দিয়ে যেতাম লোকে ছুটে আসতো দেখা করার জন্য, অটোগ্রাফ পাওয়ার জন্য।কিন্তু এই যে এত গুলো বছর আমরা যে ইন্ডাস্ট্রির সাথে যুক্ত নেই,তার আর কেউ খবর রাখে না।আমরা এখন অকেজো।সবাই ছুটছে,নতুনের পিছনে।তবে এবার দিন হয়তো ফিরবে।আপনি আজকাল কি করেন?
-আমাকে স্যার আপনার মনে নেই,আপনি একবার একটা রেকর্ডিংয়ের সময় আমার সাথে কথা বলেছিলেন।সে অবশ্য বহু বছর আগের কথা।এখন আমি একটা সাইবারক্যাফেতে এক বেলা দেখা শোনার কাজ করি
-আপনার সাথে আমার দেখা হয়েছিল,আমার এখন ঠিক মনে পড়ছে না।গানের ভুবনটা একটু ভালো করে শুরু হোক,তারপর আপনাকে এখানে কিছুতে ঢুকিয়ে দেবো।এই নম্বরটা আমার।এটা কাউকে দেবেন না।কখনো কিছু দরকার হলে ফোন করতে পারেন।আপনার জন্য আমরা আবার ফিরে পাচ্ছি আমাদের সম্মান।ভালো থাকবেন
-হ্যা স্যার,আপনিও
শ্রেয়া খাওয়ার থালা নিয়ে রান্নাঘরে রাখতে গেল।পিছন পিছন সুমিত ও গেল।শ্রেয়া সুমিতকে দেখে….
-তুই আমার পিছন পিছন উঠে এলি কেন?ওরা কি ভাববে বলতো?
-বুঝবে যে তোকে ছাড়া আর থাকতে পারছি না
-আবার শুরু হয়ে গেলি!
থালাটা বেসিনে রেখে সুমিত,শ্রেয়ার একদম কাছে যেতেই শ্রেয়া….
-কি হচ্ছে কি!ওরা কেউ চলে আসবে তো
-আমি কিছু না করলেও, তুই আগে থেকে এত চিল্লাস কেন?একটা জিনিস খেয়াল করেছিস?
-কি?
-পজেটিভ আর নেগেটিভ মিলে গিয়ে যে বিদ্যুৎ তৈরি হয়েছে,তাতে আমাদের জীবনে চারিদিকে এখন শুধু আলোয় আলোয় ভরে যাচ্ছে
-হম বিদ্যুৎই বটে
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..
বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..