যাযাবর
যাযাবর যাযাবরদের ছোঁড়া কাঠে আগুনও অসংযত,ঝড় উঠে ইত্যবসরে কিছু লবণ দানাও জমা পড়েছে… উদ্বাস্তু রোমে…..
আমি তো কবিতা পড়িনা, কবিতা লিখিও না। গড়পড়তা জীবন কাঠিতে লেগে থাকা সস্তা আইসক্রিমের মতো, কখন যে টুক করে খসে পড়বে ধূলিমলিন রাস্তায়, কে জানে! তবু তাই নিয়েই হরদম কসরত চলে, দলাই-মলাই করে যাহোক ঝাঁ-চকচকে একখানা তৈরী করতে হবে তো, যদিও টিকে থাকার লড়াইয়ে, পোড়া-রুটির মত প্রয়োজনীয় অথচ বিস্বাদ ঢোক গিলে, তালি-মারা প্যান্টে মুছে নিই এঁটো হাত,আড়-চোখে শুধু মেপে নেওয়া পাশাপাশি প্রতিযোগীগণ ঠিক কতটুকু জোরে দৌড়চ্ছে, ‘হাম কিসিসে কম নেহী’র’ ময়দানে দম চেপে পাক খেয়ে উজবুকের মত যখন সময় ফুরিয়ে থিতু হই আঘাটা’য়, ঘাটের নৌকা ততক্ষণে ছেড়ে গেছে অজানা দিগন্তের খোঁজে, আমার পাশে এসে আলতো করে আমার কাঁধ ছোঁয় কবিতা তখন। ফাঁকা রেলস্টেশনে একা বসে থাকার মত অনুভূতি হয় আমার। রোদ চাঁদ আমায় তখন জড়িয়ে ধরে আশ্লেষে। আমার চারপাশে তখন শুধু প্রিয় কবিতা’র লাইন। আমায় ঘাড় ধরে পড়িয়ে নেওয়া সব অনবদ্য কবিতা’র পংক্তি, আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলে ‘এসো, এই তো সময়, শুধু তুমি আর আমি! ‘আমি মোহগ্রস্তের মত ঢুকে যাই কবিতা’র শরীরে, সে আমায় হাঁ করে গিলে নেয় তার বিশাল কালো গর্তের মত মুখে’র ভেতর,
আমার শরীরে তখন তীব্র জ্বর!
প্রিয় কবি’র কবিতা’র সব অক্ষরমালা তখন এঁকেবেঁকে ঢুকে গেছে শরীরে আমার,লাল পিঁপড়ের সারি’র মত ক্ষমাহীন বিষাক্ত সব অনুভুতি’র মিছিল মস্তিষ্কের কোষে কোষে। আমি তখন লালচক্ষু গাঁজাখোরের মত মেজাজ ভুলে বর্ষা’র মিয়ানো মুড়ি’র মতই নেতিয়ে যাই, লোকজন আড়চোখে মাপে, ভাবে ব্যাটা নির্ঘাৎ ধান্দাবাজ, আলাভোলা সেজে মোটা দাঁও মারা’র তালে আছে!
বাদামে’র খোসা-ছাড়ানোর মত ম্যাড়মেড়ে অবসরে হঠাৎই দু-চার লাইন লিখে ফেলে নিজের অস্তিত্বের কাছে রাজা-বাদশা হয়ে উঠি কিম্বা নিরলস সকালে ভাগ্যে’র পশ্চাতে চার-অক্ষরের খিস্তি মেরে নিজেকে বেশ সিউডো-আঁতেল ভেবে আবিষ্কারের মোহে তেতে উঠে যখন পার্থিব লোকসান হিসাবে ভেঙে ফেলি কমদামি ডাঁটি-ভাঙা চীনা-মাটি’র কাপখানা, কপালে জুটে যায় নির্বিকার খেউড়। দুসসসস শালা!
খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে নিজেকে টেনে নিয়ে যাই। সমান্তরাল রেললাইনের মত ভাগ্যে’র সাথে জীবনের টানটান ছুটে চলা, কেউ একটুও দূরত্ব কমালেই মুখ থুবড়ে পড়বে যাপন। এমনই নিয়তি। উদগান্ডু আমি কখনও দার্শনিক হয়ে উঠে নিজের থেকে সামান্য ওপরে অবস্থানের ক্ষীণ প্রচেষ্টা’য় দুপুরে’র বাসি ভাতে’র ঢেকুরে’র মত বুকজ্বালা নিয়ে দারুণ একটা কিছু করে তোলা’র নিদারুন ইচ্ছায় লাফিয়ে উঠলে, সস্তা হাওয়াই চপ্পলে’র স্ট্র্যাপ ছিঁড়ে যায়। মুচি বসবে সেই হাটবারে। শরীরে’র ভেতর অক্ষরমালা ততক্ষণে খুঁচিয়ে পেঁচিয়ে তুলেছে আমার যত নাড়িভুড়ি লাল সস ছড়ানো ফুটপাতে’র চাউমিনের মত। উপোসী কাকে’র দ্বিধাহীন চঞ্চু’তে ঠুকরে ঠুকরে ফেলছে আমার পচা ইঁদুরে’র মত ভাবনা’র লাশ। আর ঠিক তখনই, খাতা’র পাতায় ছিটকে এসে লাগছে পচাগলা মাংসের কুচি, বদরক্ত, আর আমি লিখে ফেলছি যা কিছু গন্ধময় উদগার!
আমি কবিতা পড়িনা, আমি কবিতা লিখিনা। কোন কোনদিন এই ক্লিষ্ট, অনিশ্চিত, গাল-খাওয়া জীবনেও জোয়ার আসে, ভুতুড়ে জোৎস্নাায় ভেসে যায় করোটি’র কেজো চিন্তা। নরম হয়ে আসে শরীর, মন। তখন রাতচরা পাখি ডাকে টি টি করে, তখন দেবকন্যা’রা মিলিত হয় কালপুরুষের সাথে, তাদের রমণ-শীৎকারে কেঁপে কেঁপে ওঠে নভোমণ্ডল, ছায়া ফেলে নক্ষত্রেরা পৃথিবী’র বুকে, আলো চিনে ফিরে যায় কোন পদ্মযোনি নিশিগন্ধা, পাতালে’র নীচে নাগরাজের সুদৃঢ় আলিঙ্গনে। নিষিদ্ধ আনন্দের মত সঙ্গমের বিপ্রতীপে যে স্বমেহন বাস করে, আমি সেই আদিম নীল লোভ মিশিয়ে নিই আমার স্নায়ু, শিরা’র কালচে রক্তের ভেতর। প্রতিবার নিজের বোধহীন, মায়া-ভালোবাসাহীন, নিরালম্ব যন্ত্রণাবহ সত্ত্বা’র ওপর অবিমিশ্র অত্যাচারে জন্ম দিই রক্তপায়ী জোঁকের মত কিলবিলে, থিকথিকে নোংরা সব অমেরুদণ্ডী প্রাণীবৎ, যারা আমার অস্তিত্বকেই জন্মইস্তক কুড়ে কুড়ে খায়, আর আমি নিস্ফল আক্রোশে জন্ম দিই কবিতা’র মত কিছু, রাতজাগা দিনজাগা অশ্বমেধে’র ঘোড়া,পড়ে ফেলে কবিতা’র মত কিছু অক্ষরের মায়া-বিন্যাস।
পরবর্তী অর্গ্যাজম আমায় অপেক্ষাকৃত নিষিদ্ধতর আহ্বান জানায়। আমি আবার বেঁচে উঠে, মরে গিয়ে, নষ্ট রাতে, কষ্টে’র সকালে, ভুখা পেটে, শুখা ঠোঁট তালু চেটে, নিজের ছায়া’র থেকেও বেঁটে হয়ে যাবার উদ্ভট তাড়না’য়,চুলকে চুলকে ঘা করি, চিমটি কেটে দেখি সাড় আছে কিনা!
আমি কবিতা পড়িনা। আমি কবিতা লিখিনা।
যাযাবর যাযাবরদের ছোঁড়া কাঠে আগুনও অসংযত,ঝড় উঠে ইত্যবসরে কিছু লবণ দানাও জমা পড়েছে… উদ্বাস্তু রোমে…..
কবি গো ওওও,আর যত গুণীজন কি দিয়ে পূজি তোমাদের চরণ আমি যে অভাগা জানি না…..
আমি জানতাম না চব্বিশের জুলাইটা এত দীর্ঘ হবে, আমি জানতাম না, অগাস্টকেও রাহুর মত গ্রাস…..
অভিশাপ মেঘের ভেলায় নিঃশ্বাসে ক্লান্তির ছাপ সবুজের নীড়ে আপন ঠিকানার খোঁজ এক ফালি সুখের নেশায়…..