ঝরা শিউলি
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
মেয়ের বিবাহ উপলক্ষে বসের কাছে কিছু টাকা ধার চেয়ে মাথা নিচু করে অপরাধীর মতন দাঁড়িয়ে ছিল কুতুব মিয়া, এই দাঁড়িয়ে থাকা যেন ঘন্টাব্যাপী; অস্বস্তিদায়ক; লজ্জার। মেয়ের বিয়ের আর এক সপ্তাহ বাকী, কত কিছু শখ ছিল বিয়ে নিয়ে; কিন্তু তার আয় প্রয়োজনের চাইতেও কম সবসময়, চেষ্টা ছিল সংসারের খরচ কমিয়ে কিছু টাকা জমানো, কখনোই হয়নি সেটা, কোন না কোন প্রয়োজন প্রত্যেক মাসেই তৈরি হয়ে যেত; এখনো যায়।
কুতুব মিয়ার বিশ বছরের চাকরী জীবনের অর্ধেক সময় এই আশায় কেটে গিয়েছে; অল্প হলেও এ বছর তার বেতন বাড়বে, তখন তাদের অভাব কমে যাবে অনেক, তারপর দেখা যায় আশেপাশের সবার বেতন বাড়ে, শুধু কুতুব মিয়াই আটকে থাকে একই বেতনে। সবই ভাগ্য মনে মনে ধরে নেন তিনি।
তারপরের বছরের জন্য আবার আশা করে বসে থাকেন, আশা মানুষকে ধোকার মধ্যে বাঁচিয়ে রাখে এই পর্যন্তই, কপাল সবার বেলায় খোলে না; এটা দুনিয়ার জানা বাস্তবতা।
কুতুবের বস তাকে দাঁড় করিয়ে রাখতে রাখতে সময় বেশি অতিক্রম হওয়ায় ফাইল থেকে চোখ না তুলে বললেন; কুতুব তুমি যাও আমি দেখছি ব্যাপারটা; কি করা যায় তোমার মেয়ের জন্য, এই বলে একটু থেমে আবার বললেন যে তার মেয়েরও বিয়ে; এইযুগের ছেলে মেয়ে বলে নিজেরাই পছন্দ করেছে এবং এতে দুই পক্ষের কারোই আপত্তি নেই, বিয়েতে তেমন বেশি আয়োজন করবেন না বলে ঠিক করেছেন এই করোনার মধ্যে।
কাছের মানুষ কয়জন ডাকবেন কিনা এখনো ডিসিসন নিতে পারেননাই, তিনি আরো জানালেন যে তার মেয়েকে তার ক্রেডিট কার্ড দিয়ে দিয়েছেন বিয়ের জন্য যা যা লাগে কিনে নিতে, তারা মেয়ের সাথে যাবেননা এসময় মার্কেট; মেয়েকেও সাবধানে শপিং করতে বলেছেন। আসলে মার্কেটকে করোনা আক্রান্ত হবার কারখানা বলে মনেহয় তার।
কথা শেষ করে চুপ মেরে ফাইলে মনোযোগ দিলেন তিনি।
কুতুব মিয়ার বস তার প্রয়োজনটা বুঝলেন কিনা; টাকা পয়সা কিছু দিবেন কিনা এইরকম অনেক চিন্তা নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি। বিশ বছরের চাকরী জীবনে এই যে তার বেতন বাড়ায় নাই কোনোদিন এই কথাটা তার বসের কাছে মুখ ফুটে বলে নাই, আজ বলেছেন একমাত্র মেয়ের বিয়ের কথা চিন্তা করে; খুব সাহস করেই বলেছেন, এখন তার বস যদি ধার দিয়ে কোন সাহায্য না করেন তিনি এই বিষয়ে তার বসকে কিচ্ছু বলবেননা এই প্রতিজ্ঞা তার।
পাঁচটা বাজার কিছু সময় আগে একটা ভারী মোটা বড়সর প্লাস্টিক টাইপ শপিং ব্যাগ দিয়ে গেলেন কতুব মিয়ার বসের ড্রাইভার। স্কচ টেপ দিয়ে লাগানো ব্যাগ একটু ফাঁকা করে যা দেখলেন তাতে মনে হলো ভেতরে শাড়ি, চুড়ি, মেকআপ বক্স, তেল, সাবান জাতীয় জিনিস পত্র।
টাকার বদলে তার বস বিয়ের বাজার ধরিয়ে দিয়েছেন বুঝতে পেরে মনে মনে একটু অসহায় বোধ করেন তিনি। একটা গরু কেনার সাধ ছিল বিয়ের জন্য, নাই নাই করে আত্মীয় স্বজন কম তো না তার, গরীব হলেও কাউকে দাওয়াত থেকে বাদ দেয়ার ইচ্ছে নাই তার।
যাইহোক ধার না দিয়ে যে উপহারগুলো দিয়েছে খুশি মনে গ্রহন করা উচিৎ, অন্যের টাকায় এত অধিকার কিশের যদি কিছুই না ও দিতো তবে তো খালি হাতে যেতে হতো মেয়ের সামনে।
মাগরিবের নামাজ আদায় করে কুতুব মিয়া হাজারো চিন্তা মাথায় নিয়ে বের হয় অফিস থেকে।
একা একা হাঁটতে হাঁটতে রেল স্টেশনের পেছনে রাজা মিয়ার চায়ের দোকানে বসে চা খেয়ে চিন্তা যুক্ত হয়ে বাসার উদ্দেশ্যে পা চালান তিনি, পথে একজন পরিচিতের সাথে দেখা, কথাবার্তা আলোচনা প্রায় সব মেয়ের বিয়েকে কেন্দ্র করে, শিক্ষিত ভদ্র ছেলে, ভালো চাকরি করে, কোন ডিমান্ড তো নাই আরো বলে বাবা আপনি বিয়ের খরচ নিয়ে চিন্তা করবেন না, টাকা লাগলে আমার কাছ থেকে নিবেন, এরকম ছেলে এই যুগে হয় বলেন! তার মেয়ের যে এত ভালো বিয়ে হবে স্বপ্নেও ভাবেননি পরিচিতের কাছে আনন্দিত গলায় জানান সে কথা।
বাসার ফিরতে ফিরতে রাত নয়টা। হাতমুখ ধুয়ে খেয়েদেয়ে বালিসে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়ে বিছানায় তার তিন সেকেন্ডের মধ্যে কুতুব মিয়ার বসের দেয়া ব্যাগের কথা মনে পড়ে। ঐটা নিয়ে যে সে বাসা পর্যন্ত পৌছায়নাই এটা পরিস্কার। ব্রেনে আরেকটু প্রেশার দিতেই মোটামুটি শিওর হয়ে যায় ব্যাগ কোথায় রেখে এসেছে সে। একবার ভাবেন থাক কাল অফিস থেকে ফেরার পথে নিয়ে আসবে, রাজা মিয়া নিশ্চয়ই রেখে দিবে ব্যাগটা, যদিও তার সাথে তেমন পরিচয় নেই, মুখ চেনা তো চেনেন তাকে।
তারপরই মনেহয় কত লোক যায় আসে তার দোকানে যদি কেউ নিয়ে যায় রাজা মিয়ার চোখে যদি না পড়ে ব্যাগটা।
যে জিনিষ গুলো তার বস দিয়েছে দামী অনেক, ব্যাগের ভেতরে রাখা শাড়ির ক্ষনিক দৃশ্য ভেসে উঠে চোখের সামনে, কি সুন্দর শাড়ি! ওরকম শাড়ি কখনোই কুতুব মিয়া কিনে পড়াতে পারবে না মেয়েকে, বোঝে সে; বুঝে শংকিত হয় ব্যাগটি পাবে তো! কেউ এতক্ষনে তো নিয়েও থাকতে পারে।
তার বাড়ি থেকে রাজা মিয়ার চায়ের দোকান ৫০ মিনিটের পথ,
সেখানে যখন পৌছালো তখন রাত দশটা, দোকানের যেখানে সে বসেছিল আর ব্যাগটা ঠিক পাশেই রেখেছিল সেই জায়গাটা এই মুহূর্তে খালি। দোকান এখনো খোলা; রাজা মিয়া ও আছে।
বুকের ভেতর ধক করে ওঠা অবস্থায় রাজা মিয়ার কাছে গিয়ে বললো ব্যাগের কথা, রাজা মিয়া সাথে সাথেই অবিশ্বাস্য কথাটা জানালো কুতুবকে,
সে পেয়েছে একটা ব্যাগ কুতুব মিয়ার কাছে জানতে চাইলো
-ভেতরে কি কি আছে,
ব্যাগটা যে তারই শিওর হবার জন্য রাজা মিয়ার এই বুদ্ধি, ধতমত খেয়ে কোনরকম শাড়ির কথাটা বলতে পারলো কুতুব।
-আর কি আছে?
আর কি আছে কীভাবে বলবে কুতুব তবু একটু একটু করে বলল
-সাবান, শাম্পু, চুড়ি,
-আর?
-মেকআপ বক্স
-আর?
ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইলো কুতুব।
রাজা মিয়া ঈষৎ হেসে ভেতর থেকে এনে দিলো ব্যাগটা।
বাসায় ঢুকতে ঢুকতে বস ফোন করলেন। খুব হাল্কা গলায় জানতে চাইলেন তার মেয়ে শাড়ি থ্রিপিস মেকাপ বক্স শ্যাম্পু পছন্দ করেছে কিনা! ওগুলো তার মেয়ে নিজে কিনে দিয়েছে, বললেন
-আমি যখন তোমার মেয়ের কথা জানলাম শপিংমলেই ছিল আমার মেয়ে, তাই ওকে বলে দিয়েছিলাম তোমার মেয়ের বিয়ের জন্য কিছু কিনতে,
আর তোমাকে দুই লাখ টাকা দিয়েছি একটা গরু কিনে নিও, সবাইকে দাওয়াত দিও, আমিও সবাইকে দাওয়াত দিবো ভেবেছি; একটাই মেয়ে আমার।
শোনো বাকী টাকা দিয়ে বিয়ের অন্যান্য বাজারগুলো করে ফেলো,
অবাক কুতুব কাঁপা কাঁপা গলায় বললো -স্যার আপনি টাকা দিয়েছেন! দুই লক্ষ টাকা! আমি তো কিছুই জানিনা!
-জানবে কীভাবে আমিতো তোমাকে বলিনি আগে, ওটা তোমার জন্য ছিল সারপ্রাইজ! হাহাহাহ!! এটা কিন্তু ধার দেইনি তোমার মেয়ের বিয়ের উপহার আমার তরফ থেকে; দরাজ গলায় হাসেন তার বস, বসের এমন হাসি আগে কখনো শোনেনি কুতুব।
-স্যার আমি ব্যাগটা খুলে দেখি,
-এখনো ব্যাগই খোলনি? আচ্ছা দেখো দেখো খুলে দেখো।
হতবিহব্বল কুতুব মিয়া একটানে ব্যাগ খুলে দেখে; সেখানে একহাজার টাকার দুটা বান্ডিল!! রুমে কখন এসে তার স্ত্রী আর একমাত্র কন্যা দাঁড়িয়েছে টের পায়নি, তারা সব শুনেছে হয়তো, পেছন ফিরতেই বাবা বলে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে মেয়ে, মেয়ের সাথে মেয়ের মা ও কাঁদে, আনন্দের কান্না। বিয়ের খরচের চিন্তায় ভেতরে ভেতরে ভেংগে পড়া কুতুবের সময় গুলোর সাক্ষী ওরা মা মেয়ে।
মোবাইল হাতে নিয়ে বসকে দ্রুত ডায়াল করে
সে! চোখ দিয়ে টপ টপ পানি পড়ছে, রাজা মিয়ার নাম্বারটা জানা থাকলে ভালো হতো চোখের জল মুছতে মুছতে মনে আসে সে কথা।
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
শেষ থেকে শুরু। আমি রজকিনী রামী,ধোপার বংশে জন্ম আমার।ঘাটে সখিদের সঙ্গে কাপড় কাচি। একাজটা আমি…..
মালঞ্চার পথে ভোরবেলা। সূর্য সবে উঠছিল। বৈশালী দূর থেকে দেখতে পেল,বুনিয়াদপুর বাসস্ট্যান্ডে বালুরঘাটের দিকে মুখ…..
আমার বাবা ছিলেন অত্যন্ত সাহসী একজন লড়াকু মনের মানুষ।শত অভাব অভিযোগেও তাকে কোনোদিন ভেঙ্গে…..