বিলাপ

সুদীপ ঘোষাল
কবিতা
Bengali
বিলাপ

একা

চিনেছি মানুষ আর ভাইরাস ভালবাসা

মানুষ কী ভীষণ একা প্রিয় মুহূর্ত জানে সেকথা…
বাঁচতে চাই আরও কয়েক পূর্ণিমা

নাচতে চায় জ্যোৎস্না সাগর ঢেউ

রোয়ার কাজে পূর্ণশশী অভুক্ত রাতজুড়ে

সবুজ বপনে বাঁচে
স্বপ্নালু মন

বিজয়ী

রাস্তাজুড়ে বস্তিপাড়ার ভাটিখানা পাশে সুউচ্চ অট্টালিকার সারি দেখে মনে হয় নরম বালিশ ভেতরে অসার শুকনো ঘাস তবু তো স্বপ্ন জাগে
ওঠানামা করে জোয়ার ভাঁটা রঙমাখা বোবা আকাশের দৃষ্টিতে মন জাগে বারবার ফুটপাত সুরে
অসমান দেহ- মনের গোপন দুয়োর ধনীর মখমলে চাদর বৃথা হাসে ঘাসের চাদরজোড়া আদরের আব্দার দেখে গরীবের চন্দন ফোঁটা
মাটির মায়া ঝুরো গল্পের মত ঝরে ফুলের শেষ শয়নে। হিসেব করে পিছোয় সে মখমলি মতলবি
ভাইরাস হাওয়ায় যখন শব ভেসেছিল পৃথিবীর দরজায় সাথী ছিল মানুষের বেহিসেবি মন

বিলাপ

বিরহী পুরুষ ও বিশ্বাসী সীমানার বেইমানি রঙ ঘেসো আলপথের মত ভেঙে তৈরি হয় অতৃপ্ত বিছানা
ভালবাসার রাস্তা ও মৃত ময়ালের অতৃপ্ত খিদে
আলাদা করে গিঁট দেওয়া প্রেম ও প্যাঁচালো কাম
পথে পড়ে ভুখা যিশু কতশত সাদা চাদর ঢাকা একমুঠো মাংস
কুকুর সেঁধিয়ে যায় খুবলে নেয় উপোসি রক্তশিরা
মর্গের মাতাল ছেলেটার মত সুন্দরীর মৃত যোনীর লোভে পিশাচ ঘুণপোকার সমাজ
ভীষণ লোভ শরীরী ভাষায় এলোমেলো ভাঙাচোরা প্রেম শুধু বোঝে খিদে, নরম বিছানার নাম জানে জীবনের শুরু আর প্রান্তিক শেষ সীমানায় ভেজে রক্তমাংস লাশ আর লোভের মিশ্রণ…

দহন

পুড়ে যাওয়ার আগে পুড়েছি নিঃশব্দ নিরালা
আজ কান্না থামে না আমার অবর্তমানে
আঁচল উড়িয়ে অনেক পথ ঘুরেছো তুমি অন্তরের বৃষ্টি বিহীন রাতে
ও শুধু তোমার চেনা মাঠ আড়াল থেকে সয়েছি আমি তোমার খুশি চেয়ে
টস টসে চোখের মুক্ত ঝরে বিগত কৃত অপরাধে
বাধাহীন আজ তোমার উৎসব দিনে
আঁচল গুটিয়ে নাও সংযমী বসন্তে.. .
আমি উড়ত উড়তে দেখি তোমার দোলাচল চিতে নিঃশব্দ দহন…

 

জাহাজ

জাহাজ ভাসছে নদীর মাঝে মামুলি সাজে
অজান্তে স্মৃতির ভিতরে হঠাৎ -প্রেম জাগে
হৃদয় ভাসার দিনে আঁচল ছায়ায়
এলোমেলো নৌকো ছিপছিপে হাওয়ায়
ঢোকে খেয়ালে নৌকার গলুই ঘরে কেউ
অবাক নয়ন পাগল হতো উথাল পাতাল ঢেউ
নৌকা ভুলে, জোয়ার স্রোতে
জাহাজ ভাসে কেন
নৌকার অই গলুই ঘরে
পোড়াবাঁশি বাজে এখনও…

 

সার্কাস

পড়তে পড়তে বইয়ের পাতা ঝাপসা
কিশোরীর মনে ভয়ের শিকল
পরীক্ষা,পরীক্ষক আর চার দেওয়াল
এদিকে সার্কাস চলছে রমরমিয়ে
কত মানুষের ভিড়
শুঁড় দোলানো হাতির ডাক
,ওদের বই নেই,পড়া নেই
তবু ওরা আলোর ফেরিওয়ালা
ভয়ের কান্ডারী যারা
তারা কি সার্কাস দেখেছে
শান্তিনিকেতনের ভাষা পড়েছে
কিশোরী ভাবুক হয়ে যায়
শিক্ষার পদ্ধতি সার্কাসের কাছে হেরে যায়
বইয়ের পাতা জুড়ে বারের খেলা…

 

চন্দ্রাবলীর সংসার

আমাদের জ্যোৎস্না রাতের ঘর
দুজনে দুজনের দেহে আলো মাখাই
মন জুড়ে ক্যাপসিক্যামের আদর
আলুপোস্ত আর মুগের ডালে রসনা তৃপ্ত
ঝাল লাগলে জলের স্নেহ মাখি…
ওপাড়ে যে কুটীর দেখা যায় গোলাপ ঘেরা
তার পাশ দিয়ে বয়ে চলে ঈশানি নদী
দুপুরে শ্রমিকের ঘাম ধুয়ে দেয় উদার কুলুকুলু স্রোত
ওটাই আমাদের শীতল আশ্রয়ের আদর
আমি মাঠে কাজ করে ফিরি যখন
ঈশানীর হাওয়ায় দোলে প্রতিক্ষারত চাঁদমুখ
খুশির হাওয়ায় জেগে ওঠে রাঙা সূর্যের রোদ

চন্দ্রাবলীর পরিশ্রমের ঘাম চেটেপুটে খাই
খিদের পাতে…

 

সারাংশ

গঙ্গার জলে মন খারাপের গন্ধটা গেলো না
আমার জিভে নোন্তাজলের স্বাদ,ঢোক গিলছি বাধ্যস্বরে
সহজ সুরে মেতে যায় কলরব, মনের কোণে তবু বিষন্নতা
যে যার ঘরে ফেরে আপন ঘর ভুলে মোহবশে
গঙ্গাবক্ষে থাকে উলঙ্গ ছেলে কোলে অসংখ্য মা
ওরা সারাংশ বোঝে কি? সত্য নির্জন সে ঘর
বিসর্জনের পরেও তাই ওদের ঘরে ফেরার তাড়া নেই
ওরাও মিলিত হবে সম্মেলনে, আপন ঘরে…

সুদীপ ঘোষাল। গল্পকার। জন্ম ভারতের পশ্চিমব্ঙ্গরাজ্যের কেতুগ্রামের পুরুলিয়া গ্রামে। প্রকাশিত বই: 'মিলনের পথে' (উপন্যাস)। এছাড়াও কয়েকটি গল্প ও কবিতার বই আছে।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..