বুকে আমার

বদরুদ্দোজা শেখু
পত্র সাহিত্য, মুক্তগদ্য
Bengali
বুকে আমার

 

 

নতুন কোনো

ভাবছি যখন পা বাড়াবো নতুন কোনো সড়কে,
সামনে এক নারী এসে দাঁড়ালো,
তার ভালবাসা পাওয়ার অন্ধ আশার মোড়কে
নতুন পথে যাওয়ার ইচ্ছা হারালো ।

হৃদয় যেন স্রোতের পদ্ম , পায়নি পূজার পা দুটি ,
যেখানে যাই,ভাসে প্রেমের মায়াতে ,
জীবন তবু গড়িয়ে চলে গুঁড়িয়ে সব বাঁধুটি
থামেনা কোথাও কোনো কিছুর ছায়াতে ।

হয়না ইচ্ছা ,হাঁটছি তবু,নামছি ধূলোর ডহরে,
লক্ষ্য খুঁজে যাচ্ছি পথের খামোকা ,
বাঁচতে হবে ব’লেই কিনা শহর থেকে শহরে
দিচ্ছি পাড়ি , খুঁজছি নতুন মেনকা ।

স্বপ্ন আমার মিথ্যাই হয় ,– হয়তো এটাই নিয়তি ,
তবু সদাই অন্ধকারে হাঁটি যে ,
চোখ ফেরাতে দেখছি যাকে — সুন্দরী নয়কো অতি,
মনটা হারায় তবু তারি শেমিজে ।

উপলব্ধি হয়েছে এই –নারীই প্রেমের মোহনা
জানি না সে সতী কিংবা অসতী ,
অবুঝ হিয়া পরিয়ে তাকে কল্প-সুখের গহনা
পথের বাঁকেই বাঁধতে চাহে বসতি ।

স্থিতাবস্থা পাইনি পোড়া শতাব্দীটার কার্ণিশে ,
পারিনি প্রেমের ভাগ্যরেখা জাগাতে ,
জোড়াতালির জীবন ধুঁকছে তারি মায়ার বার্ণিশে ,
প্রেমিক মনটা মরেনা হাজার আঘাতে ।।

 

প্রত্ন

ঘুম ভেঙে গেছে, একা অসহায় আমি জেগে আছি ।
একদিকে কীর্তি-যশ , অন্যদিকে কবরের ঝোপ
আমাকে দগ্ধ করছে অনিশ্চিত দু’য়েরই প্রকোপ ,
প্রেমের মোহন-ফুলে উড়ে যায় চেতনার মাছি ।
আমি তো চলছি পথ –আশায় আশায় শুধু বাঁচি ,
মায়ের আত্মীয়তার নিবিড়তা হ’য়ে গেছে লোপ ,
নিশীথ আঁধার করে কামনার বিপদ আরোপ ,
হৃদয় পায়না খুঁজে তীর্থভূমি সান্ত্বনার সাঁচী ।

আমার কাফন-সম তুমি যদি হও , হও যদি
দারিদ্র্য-নিন্দার সাথে বুক-বাঁধা দুর্লভ দরদী ,
কুড়াও ভালোবাসার যদি কিছু করোটি ও হাড়
যেখানে অতীত-গর্ভ পরিচয় তোমার আমার
এসো , নারী , একবার প্রেমিকের হাত দুটি ধরো,
চলো , খুঁড়ে’ দেখে আসি জীবনের মহেনজোদড়ো ।।

 

বুকে আমার

তোমার জন্য বুকে আমার প্রেম-বিছুটি ।
আমার ঘরে দাও–না তোমার চরণ দু’টি ।।

তোমার কাছে যাওয়ার সাহস যখন থামে
সামনে তোমার , শরীর আমার বেদম ঘামে,
মনের কথা বলার বিষম ক’লজে কাঁপায়,
বুকের ভিতর ব্যর্থ বধির রক্ত লাফায় ।
ইচ্ছা করে — দেখবো তোমায় আড়াল চোখে ,
নজর হানে ধূর্ত চারিপাশের লোকে ;
একজনকে তোমায় রাজি করতে বলি ,
ব্যর্থ হওয়ার উৎকণ্ঠায় শিউরে চলি
ইচ্ছা করে — তুচ্ছ করি সব ভ্রুকুটি ।
আমার ঘরে দাও-না তোমার চরণ দুটি ।।

দিনের শেষে আপন সাজে রাত্রি আসে
মোর হুতাশে বাতাস কাঁদে বনের শ্বাসে ,
নতুন দিনের প্রহর গোণে গাছের পাখি
তাদের সাথে জাগলো কতো আমার আঁখি ;
মনের গুহায় হাওয়া তোমার যায় গুমরি’ ,
তোমার আশায় আমার সকল মণ্ত্র পড়ি ,
অন্য মনে কতো ভঙ্গুর কৌশল আঁটি
বুকের ব্যথার বৃষ্টিপাতের দাদন খাটি ।
ভাবতে ভাবতে কখন্ ঘুমাই , ভেবেই উঠি ।
আমার ঘরে দাও-না,সখি , চরণ দুটি ।

কাজের শেষে দুঃসাহসের দুয়ার ধরি’
তোমায় নিয়ে ভবিষ্যতের ভুবন গড়ি ,
ধর্ম এসে কুটিল হাসি হাসলো ক’বার ,
তার আড়ালে ফুটলো হৃদয় রক্ত-জবার —
ঢাকলো তোমার প্রেমের পাষাণ পূজার বেদী ,
মাখলো গায়ে নিকষ কলঙ্কের মেহেদী ;
স্বপ্নভরা সবুজ বনের গন্ধ শুঁকে’
ঘোর অসুখের ‘দাওয়াই’ খুঁজে’ মরছি ধুঁকে ,
জ্বলছি ,তবু লাগছে ভালো প্রেম-বিছুটি ।
আমার ঘরে দাও-না তোমার চরণ দুটি ।।

তোমার জন্য বুকে আমার প্রেম-বিছুটি।
আমার ঘরে দাও-না তোমার ঢরণ দুটি ।।

রাতবিরিতে

রাতবিরিতের অন্ধকারে রাতবিরিতে
মনটা মাতে পদ্ম-নাভির প্রেম-পীরিতে
রাতবিরিতে জ’মকে উঠে আতসবাজি
বৌ-বেসাতির স্নায়ুতন্ত্রে ,কসাই কাজি
হাতড়ে’বেড়ায় দিগ্বিদিকের গুপ্ত ডেরা
খোল-নলচে’র ক্ষুধার চাবি পটল-চেরা

কোপন রাতের অসহ্য এই অন্ধকারে
এখন আমি চাচ্ছি কোনো ডব্কা নারী
যুগল টিলা ফুল্ল এবং পাছাভারী
চাচ্ছি পেতে উষ্ণ অধীর কামের কলি
গন্ধভরা রেশমী ঝোপের অন্ধগলি
গুপ্ত শিরার অস্থিরতা ফেনিয়ে ওঠে
স্বপনপ্রিয়ার রমণ-ক্রিয়ার বমন ফোটে
মত্ত ঠোঁটে মুখ রেখে যাই অসঙ্কোচে
নগ্ন নারীর সংকটময় সর্বখোঁচে ,
জমকে’ উঠে উথালপাথাল স্নায়ুর হুলো ;

অসংযত চঞ্চুগুলোর কামের ধূলো
ঝাড়ছে প্রেমের এক রমণী শুদ্ধ-বোধি
ভালবাসার অন্তরালে নিরবধি ,
ব্যাকুল কামুক ইচ্ছাগুলোর স্বেচ্ছাচারে
দুখ জাগে সেই একটি মুখের মায়ায় ছাওয়া ,
আজো তারে একলা রাতের অন্ধকারে
হয়নি পাওয়া , পাওয়া হয়নি , হয়নি পাওয়া ।।

—————————————–

৫•

অপচ্ছায়ার
——————-

জানালার ফাঁকে চাঁদ যাচ্ছে দেখা
আঁধিয়ার ঘরে আমি জাগছি একা ,
চারিধার সুনসান নিঃঝুম অতি
থমকে’ আছে এক ঘোর যুবতী
দূরস্থ দ্রাঘিমায় আলোছায়ার
স্বপ্নালু আলিসায় কালো পাহাড়
ক্যানভাস হ’য়ে যেন মৌনব্রতী
যেন উদ্ভ্রান্ত সে রুদ্ধ-রতি ;
আচমকা সানুদেশে বিস্ফোরিত
বিরক্ত বিবমিষা পরিবৃত
গুহার বিকার থেকে বালিয়াড়ির
অপূর্ণ আশ্লেষে সায়া-শাড়ির
সম্ভ্রম অপসৃত কুপিত কালি
চোরাবালি মৈথুনে ডাকছে খালি ।

মাতিসের নারী নয় , মোনালিসার
মতো কেউ নয় সে তো , অমানিশার
বিদিশায় পিয়াসার মোহন মায়া
ডাকছে কামদেবীর অপচ্ছায়া ,
আমি কি ডাকবো তাকে প্রেমের দেবী ?
তাকেই ডাকতে মন মাদক -সেবী ।
জানালার ফাঁক দিয়ে অনতিদূর
আবছায়া ক্যানভাস যাচ্ছে দেখা ,
কাম ওই জোছনায় সদ্য সেঁকা
রুটির মতন মিঠে গন্ধভরা
রাত-চরা রমণীর অন্ধ-করা
অপচ্ছায়ার চির-অচিনপুর ।।

বদরুদ্দোজা শেখু। কবি। জন্ম ১৯৫৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গরাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘিতে। অভাব অনটনের মধ্যে তাঁর বেড়ে উঠা। প্রথাগত শিক্ষায় স্নাতকোত্তর। পেশায় অবসরপ্রাপ্ত রাজ্য সরকারি কর্মচারী, নেশায় কবিতা লেখালিখি। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: অলৌকিক আত্মঘাত, দুঃস্বপ্নের নগরে নিভৃত নগ্ন, শব্দ ভেঙে...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ