বুনো

বদরুদ্দোজা শেখু
কবিতা
Bengali
বুনো

বিবর্তন

শৈশবে খেলেছি খুব পাশের বাড়ির সেই শ্যামলা – বরণ রোগা খুকুটির সাথে
দিনরাত, দু’বাড়ির চৌহদ্দির আনাচেকানাচে আর ফটকের পাশে,আঙিনাতে,
অগাধ ধূলোর লিকে,কুড়ের কার্ণিশে খেলেছি পুতুল-খেলা,কানামাছি, ঘর-কন্নারা রূপক;
আমি পরতাম একরঙা ঢোলা হাফ্প্যান্ট, সে পরতো ফুল-তোলা ফ্রক।
তখন সে অন্তরঙ্গ খেলার সাথীকে মেয়ে ব’লে মনেও হয়নি,বড়ো ছিল খেলার খেয়াল।
কৈশোরের আগমনে কীভাবে সে হ’য়ে গেল
ক্রমশঃ আড়াল
বুঝতে পারিনি কিছু, ইতস্ততঃ দেখা ছিল দ্বিধায় আনত, অকারণ
ভীরু ভীরু,চকিত চাওয়ায় ছিল অকস্মাৎ বুকে বেজে-ওঠা এক মৌন শিহরণ,
তারপর জানিনা কখন শরীরে শরীর চেয়ে লাগলো আগুন,
বধূবেশে কখন সে বিদায় নিয়েছে পরিচিত গণ্ডী থেকে; আহত করুণ
সংক্রামক কামনায় অলিগলি এভেন্যুয়ে খুঁজেছি চরিত্রভ্রষ্ট নারীর শরীর,
হতাশ প্রেমের ভূতগ্রস্ত মনে এঁকেছি উলঙ্গ ছবি স্বপন-পরীর
আর হাঁকিয়েছি হতচ্ছাড়া ভাগ্যের ছ্যাক্ড়া গাড়ি ইতস্ততঃ রুক্ষ পথের ঠেকায়,
এভাবেই বহুপথ পাড়ি দিয়ে এসেছি একাই।
আজকাল কালেভদ্রে বেড়াতে এলে সে তার খেলুড়ে খুকুর
ফেলে-যাওয়া ফ্রকগুলো নাড়িচাড়ি, তুলে রাখি। প্রেমে নয়, মমতায় লেজ নাড়ে যৌবনের কামার্ত কুকুর।

নতুন কোনো

ভাবছি যখন পা বাড়াবো নতুন কোনো সড়কে,
সামনে এক নারী এসে দাঁড়ালো,
তার ভালবাসা পাওয়ার অন্ধ আশার মোড়কে
নতুন পথে যাওয়ার ইচ্ছা হারালো।
হৃদয় যেন স্রোতের পদ্ম, পায়নি পূজার পা দুটি,
যেখানে যাই,ভাসে প্রেমের মায়াতে,
জীবন তবু গড়িয়ে চলে গুঁড়িয়ে সব বাঁধুটি
থামেনা কোথাও কোনো কিছুর ছায়াতে।
হয়না ইচ্ছা,হাঁটছি তবু,নামছি ধূলোর ডহরে,
লক্ষ্য খুঁজে যাচ্ছি পথের খামোকা,
বাঁচতে হবে ব’লেই কিনা শহর থেকে শহরে
দিচ্ছি পাড়ি, খুঁজছি নতুন মেনকা।
স্বপ্ন আমার মিথ্যাই হয়,  হয়তো এটাই নিয়তি,
তবু সদাই অন্ধকারে হাঁটি যে,
চোখ ফেরাতে দেখছি যাকে – সুন্দরী নয়কো অতি,
মনটা হারায় তবু তারি শেমিজে।
উপলব্ধি হয়েছে এই – নারীই প্রেমের মোহনা
জানি না সে সতী কিংবা অসতী,
অবুঝ হিয়া পরিয়ে তাকে কল্প- সুখের গহনা
পথের বাঁকেই বাঁধতে চাহে বসতি।
স্থিতাবস্থা পাইনি পোড়া শতাব্দীটার কার্নিশে,
পারিনি প্রেমের ভাগ্যরেখা জাগাতে,
জোড়াতালির জীবন ধুঁকছে তারি মায়ার বার্ণিশে,
প্রেমিক মনটা মরেনা হাজার আঘাতে।

 

বুনো

“না! আমি কক্ষনো ছোঁব না তোমাকে আর আজ থেকে
দেখে নিও”, তৌবা ক’রে বললাম বিব্রত বিবেকে।
” তাই নাকি? কবে থেকে?” ব’লে তুমি খিলখিল হেসে
মন দিলে রান্নায়, তোমার দৃষ্টির তির্যক শ্লেষে
তোমার হাতের আনাজপাতির মতো কুচি কুচি
মনে হ’লো ঘরময় ধ্বস্ত স্নায়ুর বিধ্বস্ত শুচি।
কুণ্ঠিত লজ্জায় নাড়ি বইখাতা খবর -কাগজ
ইতস্ততঃ, একাগ্র হয়না মন, বিরক্ত মগজ
ঘুরে ফিরে হাতড়ায় ছাপছোপ কুটো বিজ্ঞাপন
উদ্দীপক নারীর ভঙ্গীতে মাতে ব্যাচেলর মন,
বয়সের ঝোঁক এড়াতে পারেনা চোখ, ইদানীং বেশী
লুদ্ধ মনে হয় দৃষ্টি, ক্ষুদ্ধ পেশী সৌজন্য-বিদ্বেষী।
যৌবনের রুক্ষতা মাড়িয়ে আমি অস্থির ভীষণ,
কাম-সন্ধির সংকট ইচ্ছে হয় করি উন্মোচন
ভিক্ষে-করা প্রেমে। তাই বুঝি সংক্রামক হতাশায়
অকস্মাৎ টেনে নিই তোমাকে আবার, মুছে যায়
শপথ বিবেক কিংবা ধর্মাধর্ম, আর সে সময়
ফুটে উঠে সত্ত্বার আদিম শুধু বুনো পরিচয়।

 

পূর্বরাগ

আমি তো লাজুক খুব, মেয়েদের কাছে
যাই না কখনো যেচে, সংশয়, পাছে
কেউ বাঁকা কথা বলে, গেঁয়োভূত ছেলে!
ভাবনায় ঘুরে মরে প্রেম এলেবেলে।
মনে মনে অনেক খুঁজেছি তাকে যে আমার হবে
আত্মার আত্মীয়,প্রিয়, ভালবাসায় নীরবে।
কর্মসূত্রে একদিন হলো সাক্ষাৎ…
ছল ক’রে ব্যস্ত থাকি তার জন্য ব্যগ্র দিনরাত
কী যেন কী ভাবনায় থাকি মশগুল
তাকে নিয়ে অবিরত, কাজে হয় ভুল,
যেদিন সে লজেন্স্ দিলো, আঙুলে আঙুল
জড়িয়ে ছড়িয়ে গেল, তখন তুমুল
তোলপাড় বুকে আর অনুরাগ-রাঙা চোখ- মুখে,
প্রশ্রয়ের হাসি তার লাজুক চিবুকে।
কী পুলক! কী পুলক! আনন্দের লাজে
কাঁপন লুকায় তার আঁচলের ভাঁজে!
উভয়েই অধোমুখ, বিমূঢ় বিহ্বল,
অঝোরে ভিজিয়ে যাচ্ছে প্রণয়ের জল!
আজো ভিজি সেই
পূর্বরাগ লজ্জায় ভিজি উভয়েই।

বদরুদ্দোজা শেখু। কবি। জন্ম ১৯৫৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গরাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘিতে। অভাব অনটনের মধ্যে তাঁর বেড়ে উঠা। প্রথাগত শিক্ষায় স্নাতকোত্তর। পেশায় অবসরপ্রাপ্ত রাজ্য সরকারি কর্মচারী, নেশায় কবিতা লেখালিখি। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: অলৌকিক আত্মঘাত, দুঃস্বপ্নের নগরে নিভৃত নগ্ন, শব্দ ভেঙে...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..