উৎসমুখ
সারারাত নিজের সঙ্গে লুকোচুরি খেলে সৌমেন। লেডি ম্যাকবেথের মতো পায়চারি করে বারান্দায়, আঁতিপাঁতি করে খোঁজে হারানো আনন্দবেলা। বুকের মধ্যে রাতের শেষ ট্রেনের কুঝিকঝিক, মনজুড়ে পোকায় কাটা যৌবন – চালচিত্র। সব ভেসে যায় তিস্তায়। ভাঙা পানসি নিয়ে সৌমেন ছোটে পেছনে। ধরা পড়লে শুরু করবে খানাতল্লাশি। রাত যুবতী হয়, গতি বাড়ে পানসির। পঞ্চতপা, মনীষা, আয়েশা, অরুন্ধতী পালা করে আসে তিস্তায়, চলে যায় পলাশ গন্ধ ছড়িয়ে। পড়ে থাকে শুধু শূন্য। শূন্যের মধ্যে ‘নিদ্রায় চলন্ত’ সৌমেন জীবনের সাথে যুদ্ধ করে। তিস্তাকে কি সবকথা বলা যায়? ঘূর্ণিপাকের বিবরে দ্রুত বয়স বাড়ছে। ভোরের আলো বারান্দায় ছড়িয়ে বলে বসলো, ‘ সব রাত জলে গেলI ‘
বাউল বাতাস
সবকিছুই কি জীবনের ভিজে গা থেকে জল ঝাড়া? এই যে অন্যজন্মের ভাষাবুকে খন্ডখন্ড অন্ধকার উড়ে আসে, আর মোহনার খোঁজে সিঁড়িভাঙা অংক অপেক্ষা করে সূর্যোদয়ের – এ দুটোর মধ্যে কি কার্যকারণ সম্বন্ধ থাকেনা কিছুই? ছেড়ে যাওয়ার আগে জীবনের যে এতো গল্প তা কি শুধু বাঁচার বিশ্বাস, মৃত্যুর ঠিকানা নয়? ক্ষমা করার পরেও যদি দূরত্বের ইতিহাস রচিত হয়, কেন মনে করাবে ‘ আশ্বাস ‘ একটা বিজাতীয় নাম? বেঁচে থাকা যেমন কঠিন সত্য, মৃত্যুও তেমনই অমোঘ। উত্তরণের জন্য সিঁড়ি থাকলেও কোনও সিঁড়িই পৌঁছে দেয়না আকাশে। হাত যতো বড়োই হোক, সব বৃষ্টি যায়না ধরা করতলে।
বৃষ্টিলিপি
টিনের চালে বৃষ্টি পড়ার শব্দে একধরণের গন্ধ ভাসে। সেই গন্ধে শুনি খুনসুটি, লড়াই, রক্তপাতের আওয়াজ। সেই রক্ত বুকে ধরে সিঁদুরে মেঘ পোড়ে, তারপর রঙিন পাখি হয়ে নেমে আসে পৃথিবীতে। তখন গুমোট কেটে চারদিকে ফুরফুরে হাওয়া। বেরিয়ে পড়ি বাইরে। অতীতচারণ শুরু হয়। কিছু অতীত ভুলতে পারলে বোধহয় ভালো হতো। বৃষ্টিজন্মের আগের বেদনার্ত শব্দগুচ্ছ ছুঁড়ে দিই বাতাসে। হালকা হওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করি, উড়তে উড়তে ঘরে ফিরি। শব্দ আর গন্ধ মিলেমিশে কবিতা হয়ে ডানা ঝাপটায় মনের অলিন্দে।