বেওয়ারিশ

মঈনুল হাসান
গল্প
Bengali
বেওয়ারিশ

নৃপেন দারোগা বিরক্তমুখে চেঁচায়, তোমরা দুজন কি তামাশা দেখবার আসছ? হাত লাগাও না ক্যান?

রোদের প্রখর তেজে তার কালো মুখমণ্ডল ঝলসানো মাংসপিণ্ডের মতো দেখা যায়। কোটর থেকে ঠিকরে বেরিয়ে আসা লাল লাল চোখগুলো রাগের প্রচণ্ডতায় যেন তির তির করে কাঁপছে। আরও কিছু বলতে গিয়ে থেমে যায় সে।

দারোগার এমন আকস্মিক ধমকে ভ্যাবাচেকা খাওয়া সেপাই দুজন দূরে দাঁড়িয়ে একে অন্যের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে। কী করবে ঠিক বুঝতে পারে না। হতবুদ্ধিতার ছায়া ছড়িয়ে পড়েছে তাদের চোখে-মুখেও। সেই হতভম্ব চেহারা নিয়ে পাড় থেকে এবার নিচে নেমে আসে তারা। কাঁচুমাচু হয়ে একজন জিজ্ঞাসা করে, কী করব ওস্তাদ?

আঙুল চোষ দুইজন।

রাগ করেন ক্যান ওস্তাদ?

রাগ করব না তো তোমাদের নিয়া সোহাগ করব? যতসব উজবুকের দল!

নদীর উঁচু পাড় থেকে ঢাল বেয়ে নেমে আসা নীল পোশাক পরা সেপাই দুজনের চোখে-মুখে রাজ্যের বিস্ময়; যেন অজ্ঞাতনামা কোনো লাশ কোনোদিন কেউ দেখেনি। শোনেনিও কোনোদিন।

নৃপেন দারোগা সেখানে নাকে রুমাল চেপে হাঁটু গেড়ে বসে আছে আগে থেকেই। কাদাজলে মাখামাখি হওয়া চটের বস্তার মুখ দড়ি দিয়ে পেঁচানো। ঘাটের কাছে এই লাশ কোত্থেকে ভেসে এসেছে কে জানে! ভেতরের গলিত মৃতদেহটার চেহারা বুঝবার উপায় নেই। শরীর ফুলে ঢোল। খোদাই স্বয়ং জানেন কখন থেকে ভাসছে? কোথা থেকেইবা ভেসে আসছে? কারইবা লাশ এটা?

উপরের নির্দেশ কী আছে ওস্তাদ? বলে চ্যাংড়ামতো রতন নামের সেপাইটা। চলেন, ভাসায়ে দেই। থানায় গিয়া বলব লাশ ভাইসা গেছে। পাওয়া যায় নাই।

তুমি এত ফড়ফড় কর ক্যান? তোমার তো চাকরি বেশিদিনের না, তাই চাকরির মায়া ক্যামনে বুঝবা তুমি? তার উপরে বিয়াও করো নাই। তুমি এইসবের বুঝবা কী? ভীষণ বিরক্ত হয়ে শ্লেষের সাথে কথাগুলো বলে যায় ইদ্রিস আলী নামের অপেক্ষাকৃত বয়স্ক সেপাইটা।

সেপাই দুজনের অর্থহীন অনাবশ্যক এই আলাপে বিরক্তি বাড়ে নৃপেন দারোগার। বিরক্তি ঝেড়ে খেঁকিয়ে উঠে বলে, বেশি বুইঝ না, রতন। আমি কি তোমাদের কথা শুনব? দারোগা কে? তোমরা না আমি?

দুজনেই থতমত খায়। তবে সে ধাক্কা সামলে ইদ্রিস আলী বলে যায়, ওস্তাদ, আমাগো ডিউটি কী? পচা এই লাশ থিকা তো বাজে গন্ধ আসতাছে। কী করব এখন?

গোলাপজল আইনা ছিটাও। তোমাদের কথা শুনলে গায়ে জ্বর আসে। মাথা খালি ভোঁ ভোঁ করে। আর মুর্খের মতো কথা বল ক্যান? লাশের গা থিকা সুগন্ধ বাহির হয় নাকি? উজান থেকে স্রোতে ভাইসা লাশখান এই ঘাটে আসছে। কে বা কারা থানায় খবর দেওয়ায় আমার উপর দায়িত্ব পড়ল একটা ব্যবস্থা করার।

ওস্তাদ, ঘাটে এইভাবে আর কতক্ষণ বইসা থাকবেন?

চল, ধরাধরি কইরা ডাঙায় তুলি আগে। কোত্থেকে আসল আগে সেইটাই বিবেচনা।

যদি কোনো হদিস পাওয়া না যায়? তখন কী হইব?

বেওয়ারিশ হিসাবে দাফন হইব। ঝটপট উত্তর দেয় দারোগা।

ওস্তাদ দাফন না হইয়া সৎকারও তো হইবার পারে। হিন্দুর লাশ যদি হয়। অভিজ্ঞতা থেকে কথাটা পাড়ে ইদ্রিস আলী।

নৃপেন দারোগার মনে হঠাৎ খটকা লাগে। হাতে থাকা রুমাল দিয়ে দরদর করে বেয়ে পড়া কপালের ঘাম মুছে নেয় সে। ছোট্ট নিঃশ্বাস বাতাসের বুকে আছড়ে দিয়ে বলে, কথা ঠিক বলছ। তবে সেইটা তোমার বিবেচনা না।

লাঙ্গলবাঁধ বাজারের গোহাটার নিচে তপ্ত দুপুরের ঝাঁ ঝাঁ রোদ মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে নীল পোশাক পরিহিত তিনজন পুলিশ। বিসদৃশ তিনটি চরিত্রের একজনের বুকে গভীর আবেগে মায়ার মন্থন ঘটলেও বাকি দুজন একদম নির্বিকার। নিতান্ত দায়িত্ববোধ কাঁধে না চাপলে হয়তো কচুরিপানার মতো ঠেলে দিয়ে এই বিড়ম্বনা থেকে নিশ্চিত মুক্তি চাইতো তারা।

নদীর ঢালু পাড়ের কাছে বাঁধানো একটা ঘাটের ওপর দাঁড়ানো তিন পুলিশের এমন আলোচনা তাই ডাঙার ফুরফুরে বাতাসের কাছে আসে না; কিংবা মিশে যায় না বাজারের কোলাহলমুখর জনান্তিকের মুখে মুখে ফেরা নানান কথার মাঝে। কথাগুলো ফিসফিসানি হয়ে দুপুরের গনগনে রোদের মধ্যে পুড়ে যেতে থাকে ভীষণভাবে। সময়ের নিজস্ব গণ্ডির মধ্যে আটকা পড়ে সবকিছুই শেষে স্থবির হয়ে যায়।

নৃপেন দারোগার বড্ড মায়া হয়। দশাসই কালো চেহারা হলেও তার অন্তরের ভেতরে একটা কোমল ছেলেমানুষি মন বাস করে। লাশের বিষয়ে কোনো একটা খবর পাওয়ার জন্য সে অধীর হয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। অপেক্ষা করতে থাকে স্থানীয় কোনো জনপ্রতিনিধির আগমনের আশায়। শেষমেশ যদি লাশের কোনো আত্মীয়ের সন্ধান বা পরিচয় না পাওয়া যায়, তবে সোজা থানায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা ছাড়া কোনো গত্যন্তর থাকবে না। শেষ বাস্তবতার কথা চিন্তা করে রতনের দিকে তাকিয়ে আবারও হাঁক দেয় সে।

একখান কাপড়ের ব্যবস্থা কর। দেখ না কেমন রোদ লাগে।

ওস্তাদ, মরা লাশের কী আর বোধ-শোধ আছে।

তাতে কী? মানুষ তো। পরিচয় যাই হোক; সৎকারের অধিকার তো তার আছে। রোদে কেমন চিমসা মেরে যাচ্ছে। কাপড় আইনা ঢাকো আগে।

নৃপেন দারোগার কিছুক্ষণ আগের হুংকার, চেঁচামেচি কোথায় যেন পালিয়ে যায় মুহূর্তে। তার রাগী চেহারার ওপর একখণ্ড মায়া এসে জমা হয় হঠাৎ; সেইসাথে বরফশীতল কোমল গলার নির্দেশ পেয়ে সেপাই দুজন খুবই বিরক্ত হয়ে গটগট করে অদৃশ্য হয়ে যায় আবার।

খানিক বাদে কোনো এক যাত্রাদল অথবা সার্কাসের প্যাণ্ডেলের ফেলে যাওয়া জীর্ণ বিবর্ণ এক টুকরা কাপড় নিয়ে দ্রুতপায়ে ফিরে আসে তারা। লাশের প্রতি আবার মায়া! যত্তসব আদিখ্যেতা! মুখে প্রকাশ না করলেও সেপাই দুজনের শরীরের ভঙ্গিতে এমনটাই বুঝে নেয় নৃপেন দারোগা। কিন্তু, তারপরও পরনের কাদামাখা লুঙ্গি আর ময়লা জামার ওপর বিবর্ণ হলুদ কাপড়ের এক টুকরা আচ্ছাদন পড়ে।

 

দুই

বেলা গড়ানোর সাথে সাথে ধীরে ধীরে লোকজনের জটলা বাড়তে থাকে গোহাটার দিকে। হাটুরে লোকজনের আনাগোনায় ঘাট ছাড়িয়ে তা গোহাটার উঁচু চাতাল পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। উৎসুক জনতা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখতে থাকে। তামাশা দেখে লাশ নিয়ে তিনজন মানুষের কিংকর্তব্যবিমূঢ়তার। তামাশা দেখে হয়তো নিজেরাই নিজেদের। তবে জটলার মধ্যখানে দারোগা আর সেপাইয়ের উপস্থিতি দেখে কেউ আর সাহস করে না কিছু জিজ্ঞাসার। তাই অসীম কৌতূহলে কেবল তিনজন পুলিশকে বৃত্তবন্দি করে দাঁড়িয়ে থাকে তারা।

জনার্দন ময়রার আধ পাগলা ছেলেটা কিছু না বুঝে ভিড় ঠেলে এগিয়ে যায়। বিনা কারণে চেঁচিয়ে উঠে বলে, ‘আমি জানি এ লাশ কার? এ লাশ ঘষিয়াল চরের। সেইখান থেকে ভেসে আসছে এ লাশ। নিশ্চিত খুন’। হঠাৎ মুখ বিকৃত করে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে সে। ভিড়ের মধ্যে একটা মৃদু শোর ওঠে, তারপর সে গুঞ্জন সংক্রামিত হয়ে চারপাশে ছড়িয়ে যায় ধীরে ধীরে।

জিতেনের অসংলগ্ন আচরণ ও আবোল তাবোল কথায় নৃপেন দারোগা সেদিকে ঘেঁষতে ঠিক সাহস পায় না। এদিকে লাঙলবাঁধ হাটের পাটের বড় আড়তদার টুকু মুন্সী গিয়ে থামায় জিতেনকে। সে এই হাটের সবচেয়ে পুরাতন কারবারি। নৃপেন দারোগা তাই তার কাছেই এগিয়ে যায়।

আমার মনে হয় সে কিছু জানে। নাম কী তার?

জনার্দন ময়রার ছেলে জিতেন। ওর কথার কোনো তালগোল নাই।

কিন্তু, কোন চরের কথা জানি বলল সে?

সে তো ওই ঘষিয়াল বালুর চর। এইখান থেকে কম করে হইলেও তিন মাইল উজানে। কুসুমপুর গাঁয়ের কাছে। অতদূর থেকে আসে নাকি লাশ? কেউ কি দেখত না তাইলে।

আপনি তো দেখি সবই জানেন। আপনিই বলেন তবে কোইত্থেকে আসছে?

আমি জানব কিভাবে? আমি তো এই হাটে পাটের কারবার করি। আর ঘষিয়াল বালুর চর সবাই চিনে। দারোগার পেঁচানো প্রশ্নে কিছুটা বিরক্ত হয় টুকু মুন্সী।

শেষ বিকালের ঝিমিয়ে পড়া রোদের সাথে মৃদুমন্দ হাওয়া মিশে লাশের দমবন্ধ করা পচা গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে বাজারময়। এদিকে দূর থেকে সেপাই দলের দুর্দশা দেখে মায়া হলে হাটের জাগরণী ক্লাবের কয়েকটা ছেলে সাতপাঁচ না ভেবে সাহায্যের জন্য এগিয়ে যায় সেখানে। নানান কূটকচালে ভিড় ততক্ষণে কিছুটা নরম হয়ে আসে। ওদের মধ্যে রগচটা একজনের সাথে লাশ নিয়ে সেপাই রতনের একটা হাঙ্গামা বেঁধেই যায়। সেই বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে নৃপেন দারোগার দিকে চেয়ে সে জিজ্ঞাসা করে, ‘ওস্তাদ অরে পাকড়াও করব নাকি’?

দারোগার নির্বিকার চেহারা দেখে এবং সেদিক থেকে কোনো জবাব না পেয়ে পরক্ষণে সে আবার বলে, ‘আমাদের কারও সাহায্য লাগব না। মেম্বার-চিয়ারম্যান আসলে সব সমস্যার সমাধান হইব’।

ঘষিয়াল চরের লাশ আমাগো যে ক্যান দাফন করতে হইব, কিচ্ছু বুঝি না! ওইটা ভিন্ন জেলা অন্য গাঁয়ের মইধ্যে। এদিকে লাশের গায়ে ভনভন করে ডুমো নীল মাছি উড়তে থাকে। সেই মাছি তাড়িয়ে নিজের মতো করে রাগে গজরাতে থাকে রতন। অভিজ্ঞতাহীন নতুন চাকরি বলেই তার এ ছটফটানি, অনর্থক আস্ফালন।

গড়াই নদীর কুলকুল স্রোতের সাথে সময় গড়িয়ে যায়। নদী যেখানে দিগন্তের কাছে মিশে গিয়েছে পশ্চিমের সূর্য সেদিকে যাই যাই করছে। নৃপেন দারোগা চারদিকে যোগাযোগ করে কোনো কূল-কিনারা খুঁজে পায় না। সিদ্ধান্তহীন অবস্থায় অপেক্ষা করে তার শুধু অস্থিরতা বাড়তে থাকে। চেয়ারম্যান বা মেম্বার অথবা পরিচিত কারও আসার লক্ষণ দেখতে না পেয়ে সেখানেই অসহায় দাঁড়িয়ে থাকে নৃপেন দারোগার দল।

 

তিন

লাঙ্গলবাঁধ বাজারের পুব পাশের হাই ইশকুলের মাঠে জনস্রোত গিয়ে মিশছে। কোনো রাজনৈতিক দলের বড় জমায়েত আছে সেখানে। বড় বড় মাইকের মুহুর্মুহু আওয়াজে বাজারস্থল প্রকম্পিত। প্রচণ্ড শব্দে কানে তালা লেগে যাওয়ার জোগাড়। প্রধান অতিথি হিসেবে নিশ্চয়ই বড় কোনো নেতা সভাস্থল অলংকৃত করবেন। তাই সিকি-আধুলি নেতা হতে শুরু করে সব পাতি নেতার ছড়াছড়ি সেখানে। ইতোমধ্যে রঙিন ব্যানারে ছেয়ে গেছে প্রধান রাস্তাসহ সব ইট-সুড়কির গলিপথ; কাঁচা-পাকা দালানের ভাঙা দেয়াল, খালি অংশ। পাটের রশিতে ভর করে বিভিন্ন সারির নেতারা হাওয়ায় ঝুলছেন পোস্টারে ছাপা হয়ে। বাজারজুড়ে হৈ-হুল্লোড়ের অন্ত নেই। বড় দলের জনসভা বলে কথা। উন্নয়নের ফিরিস্তি বাতাসে ভেসে ভেসে ছড়িয়ে পড়ছে দিগ্বিদিক জুড়ে, খোলা ময়দান-প্রান্তরে।

হালিম চেয়ারম্যান এই জনসভার সভাপতি। তৃতীয়বারের মতো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে তার এ হুলুস্থূল আয়োজন। এ নিয়ে চারদিকে পয়সাও ছিটানো হয়েছে খৈয়ের মতো। জনসভায় লোক নিয়ে আসা, তার জনপ্রিয়তার পক্ষে স্লোগান দিয়ে মাঠ গরম করা আর পাশাপাশি বিপক্ষদলের অন্তর্কোন্দলকে উসকে দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করা সবই ছক কষে করা। এ নিয়েই গাঁয়ের পোড় খাওয়া রাজনীতির দুই যুগের হালচাল।

হালিম চেয়ারম্যান অত কিছুর ধার ধারে না। টানা দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার সুবাদে সবকিছুই তার হাতের মুঠোয় এখন। এই তো মাস দুয়েক আগে হুকুমের আসামী হিসেবে একটা খুনের মামলার অভিযোগপত্র থেকে নিজের নাম কাটিয়েছে দেন-দরবার করে। তার এই কূটকৌশলে অন্যরা হরদম ধরাশায়ী হয়ে তাকেই আবার মেনে নিচ্ছে মুখ বুজে। সবাই এখন শামিল তার ছাতার নিচে।

থানা থেকে হালিম চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছিল কিনা এ নিয়ে নৃপেন দারোগা খুব অস্থির হয়ে ওঠে। এ বিষয়ে চেয়ারম্যানের নিশ্চিত নির্লিপ্ততা তাকে বেশ অবাক করে দেয়। তবে আজকের এই এলাহী কাণ্ডের মধ্যে হয়তো বিষয়টি তার মনে নাও থাকতে পারে ভেবে নিজেকে বুঝ দেয় সে।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে দেখে নৃপেন দারোগার নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়। মাঠের হৈ-হুল্লোড়ের দিকে একদম মন নেই তার। ঘাটের কাছেই তার মন পড়ে থাকে। যদিও বাজারের একমাত্র সিনেমা হলের দিক থেকে মাইকের আওয়াজ ভেসে আসছে জোরেশোরে। হল মালিকেরা বোধ হয় নতুন সিনেমা নামিয়েছে। সেই ছবির প্রচার ও উদ্ভট গানের আওয়াজে কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে প্রায়।

সেপাই দুজন ‘ওস্তাদ আসি’ বলে সেই যে গেল, ফেরত আসার আর নাম গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে না তাদের। অথচ এদিকে অজ্ঞাত লাশটার ওপর অকারণে তার মায়া ক্রমে ক্রমে বাড়তেই থাকে। কেন জানি এসব ফেলে মোটেই যেতে ইচ্ছা করে না তার। একা বসে তাই সে ভাবে, তবে কি থানা থেকে চেয়ারম্যানকে জানানো হয়নি। কিছুক্ষণ পরই তো তিনি মাঠে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। তিনি যদি না আসেন তখন বিষয়টির কীভাবে সুরাহা হবে? নাকি নৃপেন দারোগা একাই লাশ নিয়ে ফিরে যাবে থানা অভিমুখে। এরূপ নানা চিন্তা আপাদমস্তক তাকে আচ্ছন্ন করে রাখে।

এক সময় নৃপেন দারোগা আপনা থেকেই বলে ওঠে, ভালোই মুশকিলে পড়লাম মনে হয়। সেপাই দুজনই বা গেল কই? রতনকে আসতে দেখে বলল, তুমি একলা যে? বুড়া ইদ্রিস আলী গেল কই?

ওস্তাদ, তার শরীর খারাপ করছে। ক্লাবের ভিতরে একটা খাটিয়ায় শোয়াইয়া দিয়া আসলাম। ক্লাবের একজনরে বইলা আসলাম মাথায় পানি ঢালতে।

এ তো ভালো যন্ত্রণা হইল। মেম্বাররে বইলা রাখছিলাম একটা ভ্যান জোগাড় করতে। তারও কোনো হদিস নাই। কী করছে ভগবানই জানে। পারলে তুমিই তাড়াতাড়ি গিয়া একটা ব্যবস্থা কর তো দেখি। আমি গিয়া বুইড়ারে একটু দেইখা আসি। রতনের দিকে চেয়ে বলে নৃপেন দারোগা। তারপর কী জানি ভেবে আবার বলে, চল আমিও যাই তোমার সাথে। একথা বলে একসাথে বেরিয়ে যায় তারা।

গড়াইয়ের ঘাটের কাছে তারপর সন্ধ্যা নেমে যায় ঝুপ করে। নৃপেন দারোগা উদভ্রান্তের মতো পচা-গলা লাশটা নিয়ে অপেক্ষা করে থাকে রতনের আসার পথের দিকে চেয়ে। সে ফিরে আসলে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে থানার দিকে যাবার প্রস্তুতি নেয় সে। ওদিকে ইদ্রিস আলীর আকাশ পাতাল কাঁপিয়ে এসেছে জ্বর। তাকে ক্লাবের লোকজন আর মেম্বারের হেফাজতে রেখে দ্রুত এগিয়ে যায় রতন ও নৃপেন দারোগা।

 

চার

ভ্যানের ওপর বস্তাবন্দি লাশটা তুলে দিয়ে ভ্যানঅলার দিকে সরু চোখে তাকায় নৃপেন দারোগা। তারপর জিজ্ঞাসা করে, কীরে, নাম কী তোর?

গহর। নাম বলার সাথে সাথেই যেন তার মুখে ফড়ফড় করে কথার খৈ ফুটে ওঠে। গরম খোলায় হুড়ুমের চাল পড়লে ঠিক যেমন হয়।

ওস্তাদ, শুনলাম ঘইষাল চরে রুস্তম ডাকাত ধরা পড়ছিল। আমাগো পাশের গিরামে বাড়ি। তারে নাকি পুলিশ ধরার পর আর কোনো খোঁজ নাই। বেবাকতে কয় পুলিশই নাকি মারছে তারে। গুলি কইরা পানিতে ডুবাইয়া দিছে।

তুই এত কথা জানস ক্যামনে?

আমি তো কাইল ওই গিরাম থিকা খ্যাপ নিয়া আইছিলাম। ওইখানেই শুনলাম সব। ঘইষাল চরে তারে অনেকেই যাইতে দেখছিল। সেইখানে তার নাকি আস্তানাও আছে?

রুস্তম ডাকাতরে চিনস নাকি তুই?

চিনি না আবার? আমাগো পাশের গিরাম কুসুমপুরে ছিল তার বাড়ি। দশ গিরামের মাইনসের ঘুম হারাম করছিল এ রুস্তম ডাকাইত। তার সামনে কথা কয় এমুন সাহস আছে নাকি কারু। তয় তারে দেখি নাই কখনও।

হুঁ, বুঝলাম। মাথা ঝাঁকায় নৃপেন দারোগা।

এই কথা জিগান ক্যান স্যার?

সেপাই ও দারোগা দুজনের আর কেউই কোনো কথা বলে না। ভাঙা রাস্তা পার হয়ে মেঠো রাস্তার গর্ত ফেলে লক্কড় ঝক্কর শব্দ তুলে এগিয়ে যায় গহরের ভ্যান। গহরের মনে একবার উঁকি দেয়, এইডা রুস্তম ডাকাতের লাশ না তো? পরক্ষণেই আবার ঝেড়ে ফেলে সে চিন্তা। কী আবোল তাবোল ভাবছে সে। তার যে সামনে সীমাহীন খুশির দিন অপেক্ষা করছে। সেই ঘোরেই বিভোর থাকতে চায় সে। অথচ কী কুক্ষণেই না দেখা হয়ে গেল এদের সঙ্গে। কেনই যে সে মেম্বারের ডাকে বাজারে এসেছিল আর ওই জটলা দেখে কেনইবা একটু উঁকি দিয়েছিল, এখন ভেবে আক্ষেপ হয় তার। তারপরও শিউলির মায়াভরা মুখের কাজল-আঁকা চোখ কল্পনা করে ফিক করে হেসে ওঠে গহর।

কীরে তুই হাসলি ক্যান? তোরে যে বড় খুশি লাগে গহর।

ওস্তাদ, পরের শুক্কুরবার আমার বিয়া।

ও, এইজন্য এত খুশি তুই?

হ স্যার। তয় আইসা কী বিপাকেই না পড়লাম। আমারে তাড়াতাড়ি ছাইড়া দ্যান স্যার। বাড়ি যাইতে হইব। বাড়ি তো ম্যালা দূর।

কথা বেশি কস তুই, এইবার থাম তো। সামনে তো তোর বিয়া। সেই খুশি নিয়া এইবার জোরসে টান ভ্যান। হালকা বিরক্তি নিয়ে তাড়া দেয় নৃপেন দারোগা।

ওস্তাদ, মরল কহন?

জানে কে?

আমার মনে হয় এইডা তার লাশও হইবার পারে।

ধুর, কী যে কস তুই? আর কথা না। তাড়াতাড়ি টান।

ওস্তাদ, কাহিল হইয়া পড়লাম। একটু বিরাম দেওন দরকার। সামনে বাজারের মতোন দেখা যায়।

কোরপাই বাজারের কাছে এসে থামে গহর। বিরক্ত হয়ে নৃপেন দারোগা বলে ওঠে, কীরে আবার থামাইলি ক্যান?

স্যার চা খাইবেন? সেই কোন বেলায় দুইটা খাইয়া চাটাই পাইতা একটু শুইবার চাইছিলাম। মনের ভিতর খুশির খোয়াব দেখবার লাগছিলাম। সব পণ্ড হইল। দুইদিন ধইরা টানা ভ্যান চালাইছি। শরীলডায় খালি বিষ করে। আমারে তো ঘর থিকা ডাইকা আনল মেম্বার। বাজারের শোরগোল শুইনা একটু থামছিলাম।

তোর অত চিন্তার কাম কী?

লাশের সওয়ার এমনিতেই রথ ভার। থানার পথ তো এহনও মেলা বাকি স্যার। কী যে করি!

তোর কাজ থানায় খালি পৌঁছায় দিবি। মোটা বকশিশ পাবি তুই। তারপর তোর ছুটি। খালি ভ্যান হাওয়ার গাড়ির মতো টানতে টানতে নিয়া যাবি। তোর আর বেশি সময় লাগব না। যা, চায়ের অর্ডার দে।

সেপাই ও দারোগা দুজনকে ভ্যানের কাছে রেখে টঙ দোকানের দিকে এগিয়ে যায় গহর। এ দীর্ঘ অনিশ্চিত যাত্রা থেকে যে কখন ছুটি হবে, কখন নিষ্কৃতি মিলবে বা আদৌ মুক্তি মিলবে কিনা সে জানে না। পুলিশের জাত বড়ই গোলমেলে, বড়ই খচ্চর। একবার তাদের পাল্লায় পড়লে সাত ঘাটের জল খাইয়ে ছাড়ে। এমনটা জানে গহর।

দোকানিকে গিয়ে বলে, তিনডা চা দে দুখাই। আগে সে যখনই এই পথ দিয়ে যেত দু দণ্ড থেমে দুখাইয়ের দোকানে বসে রঙ চা ঢেলে নিত গলায়। ঠোঁটে বাংলা ফাইভ সিগারেট ধরিয়ে লম্বা একটা সুখটান দিয়ে দিনের সব ক্লান্তি জুড়িয়ে নিত এক নিমিষে। তারপরেই ফিরত বাড়ি। সাথে পুলিশ থাকায় দু একজন তাকে দেখে ঘিরে দাঁড়ায়। কিছু মনে হয় জিজ্ঞাসা করতে চায় তাকে। ওদিকে দেরি দেখে হাঁক দেয় রতন। ‘আইতাছি স্যার’, বলে গহর ছুট দেয় সেদিকে।

স্যার, চা লন।

টাকা নিয়া যা।

স্যার, টাকা লাগব না। দুখাই আমারে চিনে। আমি একটু খেদমত করলাম আপনাগো।

তোর বিয়ায় আমাগো দাওয়াত দিবি নারে গহর? নৃপেন দারোগা রসিকতা করে ওঠে।

স্যার, কী যে কন? আমার মতো মাইনসের বিয়ায় আপনাগো আমি কই পামু?

হইছে, হইছে বুঝলাম। রাইত হইয়া গেল। এইবার আর কথা না বাড়াইয়া থানার দিকে জোরে একটা টান দে।

 

পাঁচ

থানায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত তখন দশটা বাজে প্রায়। নৃপেন দারোগা থানায় গিয়ে কর্তব্যরত কাউকে আর খুঁজে পায় না। সবাই বিশ্রামে আছে হয়তো। এক রহস্যজনক গোলক ধাঁধাঁয় ডুবে যায় তার মন। পোশাকি একটা দায়িত্ববোধের বাইরেও কোথায় যেন এক তাল নরম কাদার মতো মনটা একটু ধুকপুক করতে থাকে।

‘আমার মনে হয় এইডা তার লাশও হইবার পারে’, গহরের এই কথা তার মাথায় তখন থেকেই ঘুরপাক খাচ্ছে অনবরত। সত্যিই তো, এই লাশখানা কার? গহরের আশংকা হয়তো মিথ্যা নাও হতে পারে।

নৃপেন দারোগার মনে হাজারো প্রশ্ন জড়ো হয়ে উঁকি দেয়। তবে কি থানা আগে থেকেই জানত সবকিছু? হালিম চেয়ারম্যান কি ইচ্ছা করেই আড়াল করলেন বিষয়টা নাকি কোনো অজানা নির্দেশের কারণে এড়িয়ে গেলেন সবকিছু? থানার সাথে চেয়ারম্যানের সখ্যের বিষয়টা কারো অজানা নয়, বরং এর শিকড় আরও অনেক গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত। তার মনের ভেতর বিশাল এক প্রশ্নবোধক চিহ্ন এঁকে রাখে অজ্ঞাতনামা তথা কথিত রুস্তম ডাকাতের সে লাশটি। একটি অপরাধবোধ ভেতর থেকে খামচে ধরে তার নরম হৃৎপিণ্ডকে। আঁকড়ে ধরে অবশ করে দিতে চায় সমগ্র শরীর-মনকে।

থানা প্রাঙ্গনের এককোণে অবহেলায় পড়ে থাকে বস্তাবন্দি লাশটি। তীব্র দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। তাই যত দ্রুত সম্ভব সৎকার হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু, এ নিয়ে কারো কোনো ভ্রুক্ষেপ দেখা যায় না। নৃপেন দারোগার সারারাত ঘুম আসে না। অস্থির মনে ভাবে, না জানি আজ কোন পরিবারের মাঝে এই অঘটনের সর্বনাশা ছায়া নেমে এসেছে? কাদের জীবনেইবা অমানিশার ঘোর দুর্দশা নেমে আসল অতল অন্ধকারের মতো। তারা কি জানতে পেরেছে? তারা না জানলেও ভগবানই জানেন সব।

ভোরের আলো ঠিকমতো না ফুটতেই মোটর সাইকেলের আওয়াজে ঘুম ভাঙে নৃপেন দারোগার। শেষ রাত্রির ঘুম ততটা গভীর না হওয়ায় ভীষণ চোখ জ্বালা করতে থাকে তার। ঘুম থেকে জেগেই গতরাতের কথা মনে হয়। আরও মনে হয় লাশটার সৎকার না হওয়ার কথা। সারাদিনের ক্লান্তি আর বিক্ষিপ্ত চিন্তার মাঝে রাতে কখন যে সে ঘুমিয়ে পড়েছিল ঠিক মনে করতে পারে না। এদিকে ওসি সাহেবের সামনে হালিম চেয়ারম্যান লাশের বিকৃত মুখ দেখে জানায় এ তার পরিচিত মুখ নয়। লাঙ্গলবাঁধ ইউনিয়নের কেউ নয় সে। কথাটা আংশিক সত্য হলেও খুব বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না নৃপেন দারোগার কাছে। বেওয়ারিশ হিসাবে দাফনের ব্যবস্থা করতে বলে দ্রুত চলে যায় সে।

লাশ দাফনের সব ব্যবস্থা শেষে ফিরে এসেছে পুলিশের দলটি। আর তখুনি হাউমাউ করে জোসনা তার দুই সন্তান নিয়ে হাজির হয় থানা গেটে। গেটে দাঁড়ানো পাহারাদার দুজন প্রথমে আসতে বারণ করলেও নৃপেন দারোগার ইশারায় ভেতরে ঢুকে তারা। ঘোটপাকানো অসত্যটা ধীরে ধীরে প্রকাশিত হয় ভোরের আলোর মতো। বিলাপমাখা সেই কান্নার মধ্য থেকে অন্তত এটুকু বুঝতে পারে যে, রুস্তম ডাকাতের বউ সে। চেয়ারম্যানের দিকে ইঙ্গিত করে খিস্তি তুললে তার লোকজন ধমক দিয়ে থামিয়ে দেয় সাথে সাথে। নৃপেন দারোগার কাছে মুহূর্তে দিনের আলোর মতো সব পরিষ্কার হয়ে যায়।

সকালে স্থানীয় একটা পত্রিকার প্রথম পাতায় সবিস্তারে ছাপা হয় ঘটনাটি। চেয়ারে বসে পত্রিকা হাতে নিতেই নৃপেন দারোগার চোখ যায় সেদিকে। ‘পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে রুস্তম ডাকাত নিহত’ শিরোনামটি দেখে তার ঔৎসুক্য বাড়ে।

লাঙ্গলবাঁধ গ্রামের অদূরে বাজারের ঘাটের কাছে গতকাল দুপুরে বস্তাবন্দি অজ্ঞাত একটা লাশ ভেসে আসে। প্রত্যক্ষদর্শীসহ বাজারের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, পার্শ্ববর্তী কুসুমপুর গ্রামের ঘষিয়াল চরের দিক থেকে লাশটি ভেসে আসতে পারে। এই সংবাদ স্থানীয় থানায় পৌঁছানোর পর পুলিশের একটা দল লাশটি উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নিয়ে গিয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনের ব্যবস্থা করে।

তবে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, লাশটি ছিল কুসুমপুর গ্রাম নিবাসী জনৈক আব্দুর রুস্তম ওরফে রুস্তম ডাকাতের। কুসুমপুর গ্রামের পাশের ঘষিয়াল বালুর চরে এক সময় আস্তানা গাড়লেও সে ছিল লাঙ্গলবাঁধ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান হালিম মৃধার এক শক্ত ডান হাত। চেয়ারম্যানের সাথে বিভিন্ন ব্যবসায়িক ভাগ বাটোয়ারাসহ নানান কুকর্মে আঁতাতের কারণে সৃষ্ট বিবাদের জের ধরে এই ঘটনা ঘটতে পারে বলে গ্রামবাসীদের ধারণা। পুলিশের সাথে কথিত এক বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার আগে তাদের সম্পর্কের মারাত্মক অবনতি ঘটেছিল বলে জানা যায়।

উল্লেখ্য যে, ভূমি ও বালু মহালের জবরদখল, ইজারা ব্যবসা, ডাকাত দলের আস্তানাসহ নানামুখী দ্বন্দ্ব থেকে ঘটনাটি ঘটেছে বলে স্থানীয় লোকজন জানায়। এর সাথে অনেক রাঘব বোয়ালও জড়িয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরেই গড়াই নদীর বিস্তীর্ণ বালুচরের বালুর ব্যবসা নিয়ে পাশাপাশি দুই ইউনিয়নের তীব্র দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। তারই জের ধরে মাত্র দুদিন আগে কথিত বন্দুকযুদ্ধের পর লাশটি পানিতে ভেসে গেলে বা ভাসিয়ে দেয়া হলে আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

নৃপেন দারোগা পত্রিকার পাতায় চোখ বুলিয়ে গভীর একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। তারপর ডিউটি অফিসার হিসেবে তার সামনে রাখা বেওয়ারিশ লাশ দাফনের কাগজে একটা সই করে দেয়।

 

মেহেরপুর

১৯ মে ২০১৭

 

চরিত্রসমূহ:

নৃপেন দারোগা, সেপাই রতন, ইদ্রিস আলী, হালিম চেয়ারম্যান, গহর, শিউলি, জোসনা।

 

স্থানসমূহ:

লাঙ্গলবাঁধ বাজার, লাঙ্গলবাঁধ গ্রাম, কুসুমপুর গ্রাম, ঘষিয়াল বালুর চর, গড়াই নদী।

মঈনুল হাসান। কথাসাহিত্যিক ও ছড়াকার। ১৯৭৮ সালের ৪ আগস্ট (বাংলা ২০ শ্রাবণ, ১৩৮৪ বঙ্গাব্দ), ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকার তেজগাঁওয়ে শৈশব কাটলেও পৈতৃক নিবাস চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী জেলায়। বাবা মরহুম মোঃ আব্দুল আউয়াল এবং মা বেগম শামসুন নাহার। বটমলী হোম বালিকা...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

বালির বেহালা

বালির বেহালা

বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..

তদন্ত

তদন্ত

  এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..