ব্যর্থতা

সুদীপ্ত বিশ্বাস
কবিতা
Bengali
ব্যর্থতা

বাঁচা

সকাল বিকাল ব্যস্ত হয়ে ঘুরছি যে ভাই খোশ মেজাজে
তোমরা যারা হিসেব কষ নোংরা তারা ভীষণ বাজে।
আমি তো বেশ পাহাড় চড়ি, ঝর্ণা দেখি প্রতিদিনই
তোমরা শুধু ভ্যানতারা গাও- ‘রক্তে চিনি, রক্তে চিনি।’
আমি তো রোজ মেঘের পাশে চাঁদ খুলে দিই রাত দুপুরে
আকাশ তখন নাচতে থাকে তারার আলোয় আদিম সুরে।
আবার যখন ভর দুপুরে ঝাপুর-ঝুপুর বৃষ্টি নামে
তোমরা তবু হিসেব কষ, শেয়ার কেন অল্প দামে।
আমি তখন ছাদের পাশে লুকিয়ে দেখি গোলাপ কুঁড়ি
কিংবা হঠাৎ লাটাই নিয়ে মনের সুখে উড়াই ঘুড়ি।
বনের পাশে ঘরটি আমার ঘর মানে তো খেলনাবাটি
আসল কথা গুরুই জানে- ‘মাটি টাকা, টাকা মাটি।’
বেঁচে আছি মনের সুখে বাঁচতে আমার ইচ্ছে আরও
তোমরাও ভাই ইচ্ছে হলেই এমন বাঁচা বাঁচতে পারো।

আয় সুখ আয়

আয় সুখ আয় তোকে ছুঁয়ে বেঁচে থাকি
যেভাবে রাতকে ছোঁয় রাতচরা পাখি
যেভাবে মাটিকে ছোঁয় জোছনার আলো
যেভাবে কালিকে ছোঁয় কাজলের কালো
যেভাবে প্রেমিক ছেলে প্রেমিকাকে রাতে
ছুঁয়ে থাকে সাবধানে, হাত রাখে হাতে
যেভাবে পক্ষীমাতা ডিম রাখে বুকে
সেভাবে আগলে তোকে বেঁচে থাকি সুখে ।
যেভাবে পদ্ম পাতা মুছে ফেলে জল
সেভাবেই তুই কেন চলে যাস বল ?
আয় সুখ আয় তোকে ছুঁয়ে বেঁচে থাকি
নরম আদরে তোকে আয় ধরে রাখি ।

বেশ তো আছি, ভালোই আছি

এই তো সেদিন মনের মধ্যে উঠল জমে মেঘের পাহাড়
তারপর ভাই মন খারাপের সে কি ভীষণ জমল ধুলো
অনেকটা রাত জাগার পরও জাগতে হত সমস্ত দিন
এক নিমেষও ঘুম ছিল না, শুধুই ছিল কান্নাকাটি।
অন্ধকূপে বন্দী হয়ে সে কি ভীষণ গুমরে মরা
দিনগুলো সব দিন ছিল না কাটছিল না একটা দিনও
নদী পাহাড় সাগর ঘুরে, ঘুরতে ঘুরতে হন্যে হয়ে
ছিন্ন সুতো ঘুড়ির মত উড়ছি শুধু হাওয়ার টানে
আপন বলে কেউ ছিল না একলা আমি একলা আমি
বন্ধ ঘরে আগুন জ্বলে দাউ দাউ দাউ তবুও সেদিন
ঠাঁই দাঁড়িয়ে খুব পুড়েছি। বৃষ্টি একটু বৃষ্টি চেয়ে
যেই গিয়েছি, বন্ধুরা সব লেজ গুটিয়ে দে ছুট দিল ।
বনের মধ্যে তখন আমি পথ হারিয়ে কাঁদছি তো খুব
এমন সময় একটা ঋষি আমার কানে মন্ত্র দিল।
সেই মন্ত্রটা পড়তে পড়তে, সেই মন্ত্রটা জপতে জপতে
এখন আমি পূর্ণ থেকে পূর্ণ তুলে বেশ তো আছি।
ঈশা বাস্যমিদং সর্বম্, মধু বাতা ঋতায়তে
তৎ সবিতুর্বরেন্যম- বেশ তো আছি, ভালোই আছি।

বিন্দুতে দাঁড়িয়ে থাকা

দুটি সমান্তরাল সরলরেখা
অসীমে মিলিত হবে-
এই সত্য ধরে আমরা চলিনি।
বরং দুজন দুদিক থেকে এসে
হঠাৎ মিলেছিলাম একটা বিন্দুতে।
তখন ব্যাসার্ধ-ব্যাস কিছুই ছিল না আমাদের।
সব দিক দিয়ে পারফেক্ট বিন্দু ছিল সেটা।
কিন্তু তারপর তুমি চলতে শুরু করলে
একদম অন্য দিকে।
আমি আজীবন চেষ্টা করেও পেরতে পারিনি
সেই বিন্দুর অন্ধকূপ,
আমি আজও সেই বিন্দুতে দাঁড়িয়ে আছি
শুধু তুমি ফিরবে বলে।

অন্বেষণ

তুমি যদি আমায় ভালোবাসতে
আমার হিমালয় যাবার প্রয়োজন হতো না
তুমি যদি আমায় ভালোবাসতে
আমার সমুদ্রে যাবার দরকার হতো না
আমার মাটির বাড়ির খড়ের চালেই
আমি তাজমহল খুঁজে পেতাম।

ব্যর্থতা

তোকে তো দিয়েছি আলো ঝিকিমিকি
বাজাতে ছেয়েছি দ্রিমিকি দ্রিমিকি
তুই পারতিস ঠিক পারতিস তুই
আমায় দেখাতে ফসল সবুজ ভুঁই
আমারই তো ছিলি আমারই তো ছিলি
ভোল পাল্টালি রঙ বদলালি
ঘোরালি অনেক অন্ধ গলি ও লেন
হতে পারলিনা সেই বনলতা সেন।

অপেক্ষা

জানি তুমি ফিরবে না
ফিরবে না কোনোদিন এই নদীতীরে
পথ চেয়ে তবু আমি আজও বসে আছি
চোখ জ্বেলে তারা গুনি সারারাত ধরে।

জানি তুমি ফিরবে না
ফিরবে না কোনোদিন এই সীমানায়
তবু আমি চিঠি লিখি বাতাসের গায়ে
সব চিঠি মুছে যায় ভুল ঠিকানায়।

জানি তুমি ফিরবে না
ফিরবে না কোনোদিন এই কুঁড়ে ঘরে
তবু আমি ঝাঁট দিই নিকানো উঠোন
বেছে বেছে ফুল তুলে গেঁথে রাখি মালা
জানি তুমি ফিরবে না
ফিরবে না কোনোদিন এতদিন পরে
তবু আমি সারারাত দোর খুলে জাগি
যদি তুমি ফিরে আসো এই অবেলায়…

সুদীপ্ত বিশ্বাস। কবি। জন্ম ১৯৭৮, ভারতের পশ্চিমবঙ্গরাজ্যের নদিয়া জেলার রানাঘাট। পেশাগতজীবনে তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। কবিতা লিখছেন ১৯৯২ সাল থেকে। প্রকাশিত বই: ঝিনুক জীবন, মেঘের মেয়ে, ছড়ার দেশে, পানকৌড়ির ডুব, হৃদি ছুঁয়ে যায়, Oyster Life ইত্যাদি। লেখালিখি ও সরকারি চাকরির...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

যাযাবর

যাযাবর

যাযাবর যাযাবরদের ছোঁড়া কাঠে আগুনও অসংযত,ঝড় উঠে ইত্যবসরে কিছু লবণ দানাও জমা পড়েছে… উদ্বাস্তু রোমে…..