ইমন কল্যাণ
পরিচ্ছেদ ৬ অনেক রাতে ফিরেছিল কল্যাণ ওরফে শহীদুল।গাড়িটা শেডে রাখার পর দু’বার হালকা করে মা…..
(দ্বিতীয় পর্ব)
আর কোন ভুল করলে কান ধরে উঠবস করবো বলে প্রতিজ্ঞা যখন করেই ফেলেছি, পিছিয়ে আসার জো নেই। বুঝেছি, আজ নিজের ইজ্জত নিজেকেই খোয়াতে হবে। বউ এর সামনে চূড়ান্ত অপমানিত হতে হবে।
এতো নার্ভাস লাগছে যে ভেবেচিন্তে কিছু বলার অবস্থা নেই। টেনশনে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে পায়ে ব্যথা শুরু হয়ে গেছে। এই ধরণের ব্যথাকে আমরা পা কামড়ানো বলি। পায়ের এমন ঠান্ডা অবস্থা দেখে আরো ভয় পেয়ে গেলাম। সে ঠান্ডা যদি কোমড় পর্যন্ত পৌঁছায়! নিজেকে প্যারালাইজড মনে হচ্ছে।
আমি সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটি সিগারেট নিয়ে দ্রুত ঠোঁটে চাপিয়ে ফস করে লাইটার জ্বালিয়ে লম্বা টান দিলাম। হাত-পা টা একটু গরম হোক। প্রথম টানেই মনে হলো আহ! শান্তি। বউ লজ্জা শরম, আদেশ উপদেশ ভুলে গিয়ে বলে উঠল “এই কর কী, কর কী? সিগারেটের গন্ধ আমার একদম পছন্দ না, ওয়াক থু বমি লাগছে”। প্রথমে হচকচিয়ে গেলেও পরে ভাবলাম ভুল আবারও করেছি। সিগারেট আজ রাতে খাবো না বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। এতে মুখে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হবে, নতুন বউ এর সাথে দুর্গন্ধযুক্ত মুখ নিয়ে কথা বলা উচিত হবে না একেবারেই। সাথে এলাচ কিংবা দারুচিনি থাকলেও হতো। বাসরঘরকে হেঁশেল বানানোর পরিকল্পনা কারো ছিলো না বলে এইসব এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ কেউ রাখার কথা ভাবেনি। হায় টেনশন! মনে হলো – কেন যে ছাই বিয়েতে মত দিয়েছিলাম!
কারো দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে একবার অন্তত ঘুরে দাঁড়ায়, শেষ চেষ্টা করে। আমার হয়েছে সেই দশা। সত্যিই দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। শুধু পিঠ নয়, চার দেওয়াল ঠেসে এসে পেট, পিঠ সব চেপে ধরছে। ভাবলাম কান ধরে উঠবস করার আগে শেষ চেষ্টা করে দেখি। আগপাছ কিছুই না ভেবে সাহস নিয়ে বলেই ফেললাম “নেশা বলতে ওই একটাই – রাত দিন মিলিয়ে এক প্যাকেট সিগারেট ফূঁকা। এর গন্ধতো কিছুটা সহ্য করতেই হবে। বাংলা চোলাই মদ আমার পছন্দ না। আমিই গন্ধ সইতে পারি না, তুমি আর কী করে পারবে? রাম, ভদকা কেনার সামর্থ্য নেই। তাই এটাই একমাত্র উপায়”। এক নিঃশ্বাসে বলে যেই কান ধরতে যাব দেখি বউ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
কি বলেছি কিছুই যেনো বুঝতে পারছে না। যেভাবে চোখ বের করে তাকিয়ে আছে আইলাইনার, মাশকারা ছাড়াই দিব্যি পটলচেরা চোখ হয়ে যেতো। এখন এত সাজগুজের জন্য এই তাকানোকে হাইব্রিড পটলচেরা বলা যায়। যাইহোক হাইব্রিড পটলচেরা চোখ নিয়ে বউ ভাষাহীন তাকিয়ে আছে। আমি ধীরে সুস্থে সিগারেট শেষ করলাম।
মনে পড়ে অনেক আগে খবরের কাগজে পশ্চিমাদের শীর্ষ কিলারের কাহিনী পড়েছিলাম। বিদঘুটে নামটি ভুলে গেছি। ধরা পড়ার পর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছিলো পনেরোটি খুনের মধ্যে এটিই সে খুব ভেবেচিন্তে ঠান্ডা মাথায় করেছিল। এর পূর্বে প্ল্যান হীন চৌদ্দটি খুনের গোয়েন্দা বা পুলিশ কোন ক্লো খোঁজে পায়নি। আমার অবস্থা হয়েছে সেই সিরিয়াল কিলারের মতো। ভেবেচিন্তে যাই বলেছি তাতেই বউ এর কাছে গো হারা হেরেছি। অথচ চিন্তাভাবনা ছাড়াই যেটি বললাম বউ শুনে টাসকি লেগে গিয়েছে। বাপরে মদের এতো জোর! নামেই কুপোকাত।
এই বার মনে বল এলো। সিগারেট শেষ করে শেরোয়ানি খুলে চেয়ারের উপর রেখে পাজামা পাঞ্জাবীটাও খুলবো কী না ভাবছিলাম। অতপর পাজামা বাদ দিয়ে আপাতত পাঞ্জাবী খুলেই ঠান্ডা মাথায় বললাম “শোন, তোমার ভালো নাম ইভানা পবন। পবন মানেই তো হাওয়া। তাই আদর করে হাওয়া বলেছি আরকী। ইভানা থেকে ইভ। হাওয়ার অন্য নাম ইভ, জানতো? তাহলে তোমার ভালো নাম দুটিই হাওয়াকে ইনডিকেট করে। সৃষ্টির প্রথম নারী। তেমনি তুমিও আমার জীবনের প্রথম নারী।” বলে বেশ ভালো লাগছে। পুরানো সাহস আবার আস্তে আস্তে ফিরে আসছে। পরীক্ষা বা চাকরীর ভাইবাতে গেলে প্রথম হৃদযন্ত্র যেমন দ্রুত লাফিয়ে লাফিয়ে আস্তে আস্তে থিতু হয়ে আসে, আমার সাহসের অবস্থাও তেমনি। একেবারে উড়ে যাওয়া সাহস আস্তে আস্তে ফিরে আসছে।
পরিচ্ছেদ ৬ অনেক রাতে ফিরেছিল কল্যাণ ওরফে শহীদুল।গাড়িটা শেডে রাখার পর দু’বার হালকা করে মা…..
পরিচ্ছেদ ৫ আকাশে এখন আর মেঘ নেই। হাওয়া হচ্ছে।কদিন পরেই বর্ষা নামবে।একদিন হাসপাতাল থেকে ফিরতে…..
পরিচ্ছেদ ৪ ভোর হয়ে আসছে।রাতে ভালো ঘুম হয়নি।ঘুমের ঘোরে মনে হচ্ছিল দম বন্ধ হয়ে আসছে।এরকম…..
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..