ইমন কল্যাণ
পরিচ্ছেদ ৫ আকাশে এখন আর মেঘ নেই। হাওয়া হচ্ছে।কদিন পরেই বর্ষা নামবে।একদিন হাসপাতাল থেকে ফিরতে…..
ব্যাচেলরদের বাসাটা যে মরুভূমি সদৃশ্য হয়, একথা সবারই কম বেশি জানা আছে। ঘরে ঢুকলেই মনে হবে এই মাত্র মরু ঝড় শেষ হয়েছে। মাথার বালিশ পায়ের নীচে, বই পত্র সব খাটের উপর, হাঁড়িপাতিল টেবিলের উপর জায়গা বদল করে যেন সগৌরবে তাদের উপস্থিতি জানান দিতে থাকে। ব্যাচেলরদের এই উল্টাপাল্টা ব্যাপারটাতো স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাই বুঝেছিলেন সবার আগে। তাইতো তিনি মরুভূমিতে মরুদ্যান হিসেবে হাওয়াকে সৃষ্টি করেছিলেন বেশ জেনেবুঝেই।
আমি ছোটখাট চাকরীজীবি, একজন অতি সাধারণ ব্যাচেলর। আমার বাসাটা কি ধরণের হবে সেটা পাঠকেরা সহজেই অনুমান করে নিতে পারেন। সিগারেটের শেষ অংশটি লম্বা টান দিয়ে ফ্লোরে ঢিল মারার যে আরাম সেটা কি আর এ্যাশট্রেতে গুঁজে পাওয়া যাবে? নাকি হাত-মুখ-মাথা মুছে ভেজা গামছাটি খাটে দলামুচড়া করে ফেলে রাখার আনন্দ বারান্দার গ্রিলে কষ্ট করে মেলে পাব। বাইরের স্যান্ডেল পায়ে নিয়েই সারা ঘর হাঁটাতো কেবল আমাদের পক্ষেই সম্ভব। কোন মেয়ের সামনে এই কাজ করলে নিশ্চিত গরম পানিতে ডেটল মিশিয়ে আমার হাতে বালতি আর ত্যানা ধরিয়ে দিত ঘর মুছার জন্য।
মশারীটা সেই যে প্রথম বাসায় এসে খাটে ঝুলিয়েছিলাম সেটা হারুর মা এসে না ভিজালে বুঝতেই পারতাম না যে এটা এত ময়লা হয়েছিল। বাথরুমে কাঁদা পানি দেখে হারুর মাকে বলতেই বলে উঠল – “মামা, এটা ফেহের ফানি না, আফনের মশারি দোয়া ফানি। কি কালা বানাইছুইন দেহেন দুইতে দুইতে জান যায় কিন্তু ময়লার কুল কিনারা ফাইনা, মেহার ময়লা- এক্কেবারে গরুর চেনা……..”।
মশারি প্রতিদিন সকালে খুলে আবার প্রতিরাতে ঝুলানোর মত কাজের মানুষ আমি না। এই কাজে সময় আর ক্যালরি খরচ করা আমার ধাঁতে সইবে না। তবে আশ্বস্ত হলাম এই ভেবে মশারিটা না থাকলে সব ময়লা তো আমার বিছানার চাদরে পড়ত। আর এই ময়লা চাদরেই আমি রাতের পর রাত আরামসে ঘুমাতাম? ওহ! বড় বাঁচা বেঁচেছি। আমার চেয়ে পাশের রুমের সুমন তো এক ডিগ্রী উপরে। দোকানে গিয়ে খোঁজ করে – মামা, ক্যাপ ছাড়া কোন পেস্ট আছে? মামাও বড় রসিক। তিনিও এক সময় ব্যাচেলর ছিলেন কিনা! মামা পেপসোডেন্ট পেস্টটি হাতে নিয়ে ক্যাপটি খুলে ঢিল দিয়ে ফেলে বললেন – এই নিন। সত্যিইতো! প্রতিদিন ক্যাপ খোলার ঝামেলায় কে যাবে?
আমার অবশ্য ব্যাচেলর জীবনের ইতি ঘটে গেছে। গত মাসেই বিয়ে করেছি। আমার মরুভূমিতে মরুদ্যান হিসেবে আমার স্ত্রী লতা’র আগমন ঘটেছে। লতা একটি কিন্ডার গার্ডেন স্কুলে বাচ্চাদের পড়ায়। বিয়ের পর সে আমাদের বাড়িতে চলে এসেছে। এখনো সে আমাদের বাড়িতেই আছে। মেয়েরা নাকি চাকরীর জন্য বরকে ছেড়ে দেয়। সে ক্ষেত্রে আমি অত্যন্ত ভাগ্যবান। লতা আমাকে না ছেড়ে স্কুলের চাকরীতেই ইস্তফা দিয়েছে। এই সৌভাগ্যেরও ছোট একটা ইতিহাস আছে সেটা কিছু সময় পরেই আপনারা টের পাবেন।
বন্ধুরা সব বিয়ের রাতে “বিড়াল মারার” কথা বলেছিল। লতার অবস্থা দেখে আমার মনে হচ্ছে নিজের অজান্তেই সে রাতে আমি বিড়াল নয় কুকুরই মারতে পেরেছিলাম। কেননা “সিগারেট ছাড়া” নিয়ে আপত্তি বিয়ের প্রথম রাত ছাড়া আর কোনদিন শুনিনি লতার মুখে।
বাসর রাত নিয়ে নানা কাহিনী শুনে শুনে ভেতরে এক ধরণের ভয়ই ধরে গিয়েছিল। তার উপর বউ আবার শিক্ষিকা – হোক না কিন্ডার গার্ডেন, আমার বয়স তো আর পাঁচ না। কি প্রশ্ন করতে কি করে ফেলে! সুমন কে বলাতে সে বিসিএস গাইডটা রিভিশন দিয়ে যেতে বলেছিল। আমি বুদ্ধি করে গাইড রিভিশনের সাথে সাথে সাইক্রিয়াটিস্ট, সাইকোলজি, চেকোশ্লোভাকিয়া বানান গুলোও মুখস্ত করে রেখেছিলাম। চাকরীর ভাইভা দিতে দিতে বেশ সাহসী হয়েই উঠেছিলাম। সে নিয়ে কোন ভয় ছিল না কিন্তু ভুল ভাঙল রাতের বেলা। যেই ঘরে ঢুকতে যাব দেখি আমার বেশ নার্ভাস লাগছে, পা টা খানিক কাঁপছেও। প্রথম ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের যেমন কেঁপেছিল। আমার চোখ দুটো যেন অন্ধকার হয়ে আসছে। সব পড়া ভুলে গেছি। “আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছে” বিখ্যাত উক্তিটি যে কার কিছুতেই মনে পড়ছে না। যাই হোক দরজার বাইরে চৌকাঠ ধরে তো আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না! সাঁকোতে যখন উঠেছি শেষ সীমানায় যেতেই হবে। আমি মনে মনে সাহস সঞ্চয় করে দোয়া দরুদ পড়ে “ইয়া আলী” বলে ভেতরে ঢুকে পড়লাম। তবে হলফ করে বলতে পারি অতি সাহসী ইয়াজিদেরও সেদিন বুকটা খানিক কেঁপেছিল। আর আমিতো…….
জানি, দাদী-নানী-ভাবীরা প্রথম রাত নিয়ে মেয়েদের নানা টিপস শিখিয়ে দেয়। এর মধ্যে অন্যতম টিপস হল তারা যেন কিছুতেই সহজে নতুন বরের সাথে কথা না বলে। বরেরা অনেক সাধ্য সাধনা করে যেন কথা বের করে। আসলে একবার কথা বের হলে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত থামানোর সাধ্যতো আর কারো নেই কিনা! তাই একরাতের জন্য মুখে কুলুপ আটা আরকি। কিন্তু আমার তো সে কপাল নয়। আমাকেই আজ প্রথমে কথা বলতে হবে সারাজীবন চুপ হয়ে যাওয়ার জন্য। আমাকে বড় দুলাভাই শুধু বলে দিয়েছে – শালা যাই করো রয়ে সয়ে। আমার সম্বল বলতে কেবল বিসিএস গাইড আর কটা কঠিন বানান, সেই সাথে দুলাভাইয়ের রওয়া সওয়া পরামর্শ। প্রশ্ন কমন পড়তেও পারে নাও পারে। সে ভাগ্যদেবী জানেন, আড়ালে তিনি মুচকি হাসছেন কিনা!
যা হোক, রুমে ঢুকে দেখি নতুন বউ নিয়ম মত চুপ করে বসে আছে, চাবি তো আমার হাতে। সেটা আমাকেই ঘোরাতে হবে। কি বলতে কি যে বলি! এদিকে গরমে আর মানসিক প্রেশারে ঘামছি কুল কুল করে। উপরে শুধু ফ্যানটাই ঘুরছে, গায়ে হাওয়া লাগছে না একটুও। আমি বিড়বিড় করে বললামঃ
একে তো মে মাস
তার উপরে সর্বনাশ
বউ দেখি অবাক চোখে আমার দিকে তাকাল। হয়তো ভাবছে আমি কবিতা আবৃত্তি করছি। এদিকে নতুন বউকেও দেখি নানা গহনাগাঁটি, ভারী শাড়ী পরে অস্বস্তিতে আছে। আরে বাপরে বাপ মুখে তো মেকাপ নয়, আম্বুজা সিমেন্টের প্রলেপ। আমার বড়ই মায়া হল। আমি কোনমতে সাহস করে বলে ফেললাম – তোমার মনে হয় খুব গরম লাগছে, শাড়ীটা খুলে ফেল। বউ হয়তো প্রথমেই এই কথার জন্য প্রস্তুত ছিল না, সে তার দাদী-নানীর উপদেশ ভুলে গিয়ে অবাক হয়ে জোড়ে বলে উঠল – কি বললেন? বুঝলাম, প্রথমেই ভুল করে ফেলেছি। হিসেব করে এগুতে হবে। আমি কাছে গিয়ে আদুরে গলায় বললাম – হাওয়া, আমি আসলে বলতে চে..য়ে…..কথা আর শেষ করতে পারলাম না। মারমুখী ভঙ্গীতে বউ আবারো জোড়ে চিৎকার করে উঠল – কি বললেন? আমার নাম হাওয়া? বুঝলাম আবারো ভুল। ইচ্ছে করছে নিজের গালে নিজেই ঠাস করে এক চড় মারি। নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করলাম ফের যদি কোন ভুল করি বউ এর সামনেই কান ধরে উঠবস করব।
পরিচ্ছেদ ৫ আকাশে এখন আর মেঘ নেই। হাওয়া হচ্ছে।কদিন পরেই বর্ষা নামবে।একদিন হাসপাতাল থেকে ফিরতে…..
পরিচ্ছেদ ৪ ভোর হয়ে আসছে।রাতে ভালো ঘুম হয়নি।ঘুমের ঘোরে মনে হচ্ছিল দম বন্ধ হয়ে আসছে।এরকম…..
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..