ব্যাস এটুকুই

অরীত্র মুখার্জী
কবিতা
Bengali
ব্যাস এটুকুই

প্রাপ্তি

যত দিন এগোবে আমরা চালাক হবো।
তুমি ভাববে বেশ ফাঁকি দিলুম অগোচরে,
কিন্তু বিশ্বাস করো, আমি তোমার জামায়
পরস্ত্রীর গন্ধের থেকে বেশি
নিজের অস্তিত্বে বিশ্বাস করি।

যত দিন যাবে আমরা পশু হয়ে উঠবো।
নারী মাংসের লোভ আমার অবক্ষয়কে
চিহ্নিত করবে,সূচিত করবে ধ্বংসকে
কিন্তু বিশ্বাস করো, আমি আবার তোমায়
নতুন করে গড়ে তোলার দাবী করতে পারি…

যত দিন যাবে ভালবাসাগুলো শেষ বারের মতো
প্রশান্তি খুঁজবে নিঃশ্বাসে, আমি
বোদ্ধার মতো তাকিয়ে দেখবো আর
সলতে পাকানোর প্রস্তুতি নেব মোমবাতির মিছিলে হাঁটার জন্য।
বিশ্বাস করো, আগুনটা নেভার আগে তোমার মুখটাই দেখতে চেয়েছি প্রতিবার!

যতদিন কবিতাগুলো বাঁচবে, কালোকফি ভরে থাকবে কাপে-
একটার পর একটা অক্ষর চুরি করে যাবো
তোমার স্মৃতি হাতড়ে , আর সগর্বে ঘোষণা করবো ‘এ আমার সৃষ্টি’।
বিশ্বাস করো, তোমার প্রতিটা বিশ্বাস আমার বেঁচে থাকার রসদ যোগায় –
আনন্দে ভয় পাওয়ায়, সুখের দিনেও হাসি মোছায়…

 

জট

আমি মানুষ,
আমি চিরটাকাল দায় চাপানোয় বিশ্বাসী।
আমার প্রথম কষ্টের দায় দিয়েছিলাম মায়ের ওপর হওয়া অভিমানকে…
বুঝিনি এ খেলার শেষ নেই!
তার পর বয়স বেড়েছে কতক,
ভাবনাদের সঙ্গী হয়েছে আত্মসন্তুষ্টিরা আমি আরও প্রশ্রয় পেয়েছি…

আমার প্রথম প্রেমের ব্যর্থতা
প্রেমিকের ওপর চাপিয়ে
নিশ্চিন্তে কাটিয়েছি বিনিদ্র রাত।
মাকড়সার মতো জড়িয়েছি জালে,
নিজের বোনা আড়ষ্ঠতার জাল-
যার আদি-অন্ত নিয়মে আঁটা!
এ দায় সমাজের ,
আমি অবলা সেজে কাটিয়ে দিয়েছি যুগান্তর-
ডানা ঝাপটানোর আগেই ঘোষণা করেছি
‘আমি অপারগ’…

বৃদ্ধার ক্ষতবিক্ষত যোনি হোক
বা শিশুর উপড়ে ফেলা চোখ,
বা ছাড়িয়ে নেওয়া চামড়া –
আমি প্রতিবাদ করেছি বন্ধ দরজার আড়ে,
পাছে ধর্মের টিকি-দাড়িওয়ালারা খুঁজে নেয় আমাকে!
পিশাচের আচরণে থুতুও ফেলেছি লুকিয়ে
আর পাড়ার মোড়ে কাগজের পাতা উল্টে গেছি বছরের পর বছর …

মোমবাতির মিছিলে যাওয়ার ইচ্ছে প্রবল,
মাঝে মাঝে রক্তটা ফুটতে চায় –
তবু সরকারী চাকরির মায়া আমায় নাগপাশে বেঁধেছে-
আর প্রতিবাদটা ঠান্ডা রক্তে মিশে আরও পুরু করেছে চামড়া!
আমার যে বিষ হয় না-
যন্ত্রণা তো সেখানেই
সরীসৃপ হলে তবু কেউ মেরুদণ্ডের দোহাই দিত না।
আমি তো আস্ত একটা ভীড়,
যে কখনও একা লড়তে শেখেনি…

আমি বটবৃক্ষের ছায়ায় কাটিয়েছি গোটা জীবন,
রোদের আঁচটুকুও লাগেনি গায়ে!
অবলীলায় কেটে গেছে জীবন কত সহজে,
বলার মতো কোনো গল্পই তৈরী হয়নি আমার!
আমি দশটা-পাঁচটার ডিউটিতেই ভবিতব্যকে বেঁধেছি ।
আমি সাধারণ মানুষ,
ঝুঁকি নেওয়ার ঝুঁকি নিতে পারিনি কখনও,
পাখির চোখ দেখেছি নিশ্চল দৃষ্টিতে
তবু অর্জুন হতে পারিনি…
এ ব্যর্থতা কার ভাগে বিলিয়ে দেব?

 

ঝিনুক

সফেন নোনা জলে মৃত্যুর পরেও
যার অবাধ বিচরণ অব্যাহত,
সে ঝিনুক নাম পেয়েছে বিধাতার ভাগ্যালেখা ক্ষণে…
খোলস থাকলে বুঝি
এমন করেই বেঁচে থাকা যায়,
নিজের লাশ বয়ে নিয়ে ভেসে থাকা যায়…

 

ব্যাস এটুকুই

আমার ভালবাসা প্রতিদানের
মহতাজ নয়,
ওর অবয়বহীন বসত তোমার ভাবনার ভিটেতে !
শুধু ওই সময় টুকুই সম্বল…
সেই কলেজ দিনের পকেট খালির ঠাট্টা,
আড্ডায় কেটে যায় ক্যান্টিনে অনার্স,
সেই একটা ভাঁড়ে চুমুক ভাগ করে খাওয়া চা,
একটাই সিগারেটের কাউন্টার বা
সরস্বতী পুজোয় প্রথম হাত ধরে হাঁটা
অনেকটা দূর…
ফেরার রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিলাম সেই দিনই।
মনে পড়ে?

তখনও আমাদের মধ্যে উপহার বিনিময় হয়নি,
হয়নি লাল গোলাপের বাড়বাড়ন্ত!
ভেবেছিলাম একটা গল্প হবে আমাদের প্রেমের,
যেটায় আড়ম্বর থাকবে না-
থাকবে না চাকচিক্যের উপরি হিসাব,
শুধু অকপট স্বীকারোক্তিতে ভর দিয়ে
পার হয়ে যাবো যতদূর চোখ যায়-
যতদূর মন চায়,
ব্যাস! এটুকুই চেয়েছি…

অরীত্র মুখার্জী। কবি, শিক্ষক ও নৃত্যশিল্পী। প্রকাশিত বই: 'ভাবনা হানুক চাবুক' (২০১৮), 'কোলাজে কবিতা যাপন' (কৌস্তভ রায়ের সাথে যৌথ, ২০১৯)।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..