প্রক্সি
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
কীরে মলিনা, তোর হয়েছে?
-না গো দাদা! মার খুব শরীর খারাপ, বিছানাতেই পড়ে আছে, তাই আমাকে ঘরের কাজ সব করতে হচ্ছে। এত কাজ করে আমি সেলাইয়ের জন্য সময়ই পাচ্ছি না
-ওসব বললে শুনবে কেউ, বল! ওদের কি লোকের অভাব? ওরা যেই দেখবে, মাল ঠিকমতো আসছে না, অমনি বাদ দিয়ে অন্য লোক নিয়ে নেবে
-না না দাদা, এরকম বলো না। আমাকে আর একটাদিন তুমি সময় দাও, আমি পরশু সব কাঁথা দিয়ে দেবো
-ঠিক আছে পরশু ঠিক দিয়ে দিস, তবে এক টাকা করে কম পাবি কিন্তু!
-সেকি! কেন? একেই তো একটা কাঁথায় দশ টাকা পাই
-কেন মানে? তুই কাজ দেরী করে দিচ্ছিস, ওরা তোকে ভাবছিস পয়সা অতটাই দেবে?
-দাদা, কাঁথাগুলো যদিও একদম ছোট বাচ্চাদের কিন্তু কাপড় কেটে, কাঁথা সেলাই করে, তাতে এত সুন্দর করে কাঁথা স্ট্রিচের সেলাই করতে প্রায় চারঘণ্টা লাগে। তাতেই পাই দশ টাকা, আবার তার মধ্যেও যদি এক টাকা করে কাটে, তাহলে তো তিরিশটা কাঁথায় তিরিশ টাকা কেটে যাবে!
-কি করবো বল, আমাকে তো ওরা কাঁথা বাবদ দু’টাকা করে দেয়। আমি তোদের সবার কাঁথা একসাথে প্রতিসপ্তাহে দিতে যাই বলে, যাওয়া আসার খরচ মিলিয়ে আমার টাকায় কোনোমতে পুষিয়ে যায়। তোরা গ্রামের মেয়েরা কিছু করে রোজগার করতে চাইছিস তাই আমি এগুলো শহরে দোকানে দোকানে দিয়ে আসি। নয়তো এই কাজ কেউ করে? কোনো লাভ নেই, শুধুই বেগার খাটা!
-না না দাদা, তোমার তো তুলনা হয় না, তুমি না থাকলে এটুকুও রোজগার করতে পারতাম না
পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়ার অনেক ভেতরে তাসপুর গ্রামে মলিনা আর পদ্ম খুব সুন্দর কাঁথা সেলাই করতো। তাঁরা গ্রামের একে-তাকে বিনে পয়সায় সেলাই করে দিতো। ওঁদের নেশা ছিল নতুন নতুন কিছু নকশা করে কাঁথার কাজ করা। নকশা করার ব্যাপারে পদ্মর মাথায় বেশী নতুন নতুন চিন্তা আসতো কিন্তু কাজের হাত খুব ভালো ছিলো, মলিনার। ওরা আগে জানতোই না যে, কাঁথা সেলাই করেও পয়সা পাওয়া যায়! গ্রামের বিভাস ছাটুই গ্রামের আইবুড়ো মেয়েদের কাঁথা স্টিচের কাজ করা কাপড় শহরে চড়া দামে বিক্রি করে ভালোই রোজগার শুরু করেছিল। বিভাসের যতই রোজগার বাড়লো, টাকার লোভ ততই বাড়লো। বিভাস শহরে একটা কাপড় বাবদ যা পেতো, তার খুব সামান্যই এই মলিনা আর পদ্মকে সে দিত। ওদের দেখাদেখি আরো কয়েকজন এই সেলাইয়ের কাজ শুরু করে, তবে তারা তো আরো কম পয়সা পেতো। মলিনাদের ওই এলাকায় মলিনাদের কাঁথার কাজ সবথেকে ভালো ছিলো, শহরে যেখানে বিভাস কাপড় দিতে যেত, সেখানে মলিনাদের কাঁথা কাজের খুব ডিমান্ড ছিল। কিন্তু এসব কিছুই জানতো না মলিনা আর পদ্ম।
প্রথমে পদ্মরা সেলাই করতো ঘরের পুরোনো শাড়ি কেটে সদ্যজাত বাচ্চাদের কাঁথা। পরের দিকে দোকানদারদের চাহিদা অনুযায়ী কখনো কুশনের ওপর, কখনো বালিশের ঢাকনা, কখনো টেবিলের ঢাকনায়, কখনো দেওয়ালে টাঙানো শোপিসের ওপর, কখনোবা কোস্টারের ওপর সেলাই করা শুরু করেছিল। দিন দিন মলিনাদের কাজের চাহিদা বাড়তেই থাকে কিন্তু সেটার লাভ হচ্ছিল শুধুই বিভাসের। বিভাস সুযোগ বুঝে শহরে মলিনাদের কাজের দাম বাড়িয়ে সাপ্লাইয়ারদের থেকে মোটা টাকা নিতো, কিন্তু মলিনাদের কাজের পারিশ্রমিক দিতো অনেক কম। এদিকে সেলাইয়ের কাজের চাপে মলিনার শরীর চলছিল না। অথচ যদি পরে আর কাজ না পায়, সেই ভয়ে বিভাসকে কদিন কাজ করবে না তা বলতেও পারছিল না।
তার কদিন পর সেই ডিলারশিপের সাথে দেখা করতে এলেন রুবি রায়। তিনি বিভাসের সাথে দেখা করে সব জানতে চান, যে এই সেলাই কোথা থেকে আসে, কারা করে? কিন্তু বিভাস, ওর মিথ্যা ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে কিছু জানাতে চায় নি। কিন্তু রুবিদির পরিকল্পনা ছিল অনেক বড় আর তারজন্য মলিনাদের সাথে তাঁর দেখা হওয়াটা খুব দরকার ছিল। তারও কিছুদিন পর রুবি’দি আবার বিভাসকে বলেন যে এই কাঁথা সেলাইয়ের একটা নতুন কায়দা বেড়িয়েছে। যেটা ওদের শেখাতে পারলে ওরা খুব তাড়াতাড়ি অনেকটা সেলাই করতে পারবে আর তাতে ওদের সাথে সাথে বিভাসেরও আর্থিক দিক থেকে অনেক বেশী লাভ হবে। লোভীদের লাভের টোপ ফেলাটাই যথেষ্ট। বিভাস নিজের রোজগার বাড়ার লোভে রুবিদি’কে গ্রামে নিয়ে যেতে রাজি হয় এবং একদিন রুবিদি’কে গ্রামে মলিনাদের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে রুবিদিকে অনেক পাহারায় রাখলেও, সুযোগ বুঝে রুবিদি মলিনাদের জানায় যে পদ্ম আর মলিনারা কাঁথার কাজ এত সুন্দর যে,ওরা যদি একটা বড় খুব সুন্দর করে কাঁথা স্টিচের কাজ তৈরি করে দিতে পারে তাহলে উনি ওঁদের সেলাইটা ডিস্ট্রিক লেভেলের পুরস্কারের জন্য পাঠাবেন। এবং যখন উনি মলিনাদের থেকে শোনেন যে মলিনারা এত কষ্ট করে, এত সুন্দর সুন্দর সেলাইয়ের এই সামান্য টাকা পায়, তখন বিভাসের ওপর খুব রেগে যান, কিন্তু বিভাসকে উনি কিছু বুঝতে দিলেন না। বিভাসকে বলেন, এই উন্নতমানের কাজগুলো একজিবিশানে পাঠাতে পারলে প্রচুর পয়সা। তবে তারজন্য মলিনাদের একবার শহরে নিয়ে যেতে হবে। কারণ একজিবিশানে সেলাই পাঠানোর যে কাপড় ওরা সেলাই করতে দেবে তারজন্য তাঁদের ছবি আর সই লাগবে। এসবে বিভাসের খুব একটা ইচ্ছা না থাকলেও যখন রুবি’দি বললেন যে এক একটা কাঁথা স্টিচের শাড়ি কুড়ি/পঁচিশ হাজার টাকায় বিক্রি হয় আর যদি মলিনাদের একটা শাড়ি বিক্রি হয় তখন তার চল্লিশ শতাংশ মানে দশ হাজার টাকা ওরা পাবে। বিভাস মনে মনে হিসাব করে নেয়, দশ হাজারের মধ্যে দেড় দেড় মোট তিন হাজার মলিনাদের দিয়ে নিজে সাত হাজার টাকা নেবে। রুবি’দি মলিনাদের বলে দিয়েছিলেন, এই কাজ সহজ নয়, পৌরাণিক কোনো থিমের ওপর এই নকশা করে এই সেলাই করতে হবে খুব সুক্ষ্ণভাবে। পুরো কাজে কোথাও সুতো একটুও ওঠা কিংবা লুজ থাকতে পারবে না, সেলাইয়ের প্রতিটি ঘর সমান হতে হবে, তবেই সেই কাজটা ডিস্ট্রিক অ্যাওয়ার্ড-এর জন্য পাঠানো যাবে। পদ্মরা বলেছিল, ওরা চেষ্টা করবে খুব ভালো করে কাজটা করার।
দোকানের সাধারণ অর্ডারের কাজ করার সাথে সাথে ডিস্ট্রিক লেভেলের কাজটা শেষ করতে পদ্মদের দু’জনের দুটো কাজ শেষ করতে ন’মাস লেগে যায়। সেটা বিভাস রুবিদি’কে দিয়ে আসে। তার দু’সপ্তাহ পর কথামতো বিভাস মলিনাদের নিয়ে কলকাতায় রুবিদি’র অফিসে ছবি তুলতে আর সই করতে নিয়ে যায়। বিভাসকে বাইরে বসে অপেক্ষা করতে হয়। ভিতরে রুবিদি মলিনাদের জানান যে ওরা যে সেলাইটা করেছে তা ডিস্ট্রিক লেভেলের জন্য পাঠানো যাবে না। সেটা শুনে মলিনাদের মনে খুব কষ্ট হয়, দু’জনেরই চোখ ছল ছল করে উঠে। কারণ এতোমাস ধরে কত পরিশ্রম করে, না ঘুমিয়ে, না বিশ্রাম করে এই সেলাই দু’টো দু’জনে শেষ করেছিল। অ্যাওয়ার্ড-এর লোভের থেকেও ওদের টাকাটার খুব দরকার ছিল।
রুবিদি বলেন কুটির শিল্পে সরকারি ক্ষেত্রে পুরস্কার দেওয়ার নিয়ম হয়, প্রথমে হয় ডিস্ট্রিক লেভেল, তারপর তার থেকে বড় স্টেট লেভেল, তারপর তার থেকেও বড় হয় ন্যাশনাল লেভেল আর এদের থেকেও বড় পুরষ্কার হয় শিল্পগুরু। উনি অ্যালবাম বের করে কিছু গ্রাম্য মেয়ের ছবি দেখান, যাঁরা সেলাই করছে, পুরস্কার নিচ্ছে। তারপর তিনি বলেন-
-এরা বাংলাদেশের রাজশাহীর একদম গণ্ডগ্রামের মেয়ে। এরাও কাঁথা স্টিচ করে অল্প স্বল্প রোজগার করতো। আমি সেইসময় বাংলাদেশে ছিলাম। আমি ওঁদের কাজ দেখে মুগ্ধ হই। আমি ওঁদের নিয়ে, ওঁদের সেলাই নিয়ে অনেক খোঁজ খবর করে, প্রচুর চেষ্টা করার পর প্রথমে এই দুই বোন কাঁথা স্টিচের ওপর ডিস্ট্রিক অ্যাওয়ার্ড পায়, তারপরে অ্যাপ্লাই করলাম, ওঁদের আরো ভালো কাজ নিয়ে স্টেট অ্যাওয়ার্ড এর জন্য। ওরা স্টেট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিল। গত বছর ওরা ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছে। আমি প্রচুর মেয়েদের সেলাইয়ের হাত দেখেও বুঝতে পারি কারা পুরস্কারের যোগ্য। কী অপূর্ব ওঁদের সেলাই, আজ ওঁদের কত নাম, সম্মান, অর্থ। তোমাদের কাজ দেখেও আমার মনে হয়েছিল যে তোমরা ডিস্ট্রিক অ্যাওয়ার্ড পাবে কিন্তু তা হলো না। আমি যখন তোমাদের সেলাইটা ডিস্ট্রিক অ্যাওয়ার্ড এর জন্য লিখে পাঠালাম, ওনারা সেটা আগে খুব ভালো করে যাচাই করে তবে সই করে পাশ করায় আর নয়তো ডেকে হবে না বলে ফেরত দিয়ে দেয়। ওনারা আমায় ফোন করে কি বলেছেন জানো?
মলিনা আর পদ্ম লজ্জায় তখন নিজেদের যেন গুটিয়ে ফেলেছে, কেউ মুখ থেকে কোনো শব্দ বের করে নি। রুবি দি বললেন-
-ওনারা বললেন “আপনি বোধহয় ফর্ম ফিলাপের সময় লিখতে ভুল করেছেন, আপনি তো ডিস্ট্রিক লিখেছেন!” আমি বললাম, ভুল করেছি মানে? ওনারা বললেন
“আপনি যে সেলাইটা পাঠিয়েছেন,এটা তো সরাসরি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ডের জন্য যাওয়ার কাজ। আপনি এখানে এসে ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ডের জন্য এপ্লাই করুন। অপূর্ব হয়েছে এ কাজ”।
তোমাদের সেলাইটা ডিস্ট্রিকের জন্য নয়, ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ডের জন্য পাঠানো হয়েছে। কিইইই অপূর্ব বানিয়েছো তোমরা, মুগ্ধ হওয়ার মতো।
মলিনা আর পদ্মর মুখে হাসি ধরছিল না, চোখের জলের বাঁধ ভেঙে গেছিলো। দু’জনে সঙ্গে সঙ্গে রুবিদি’কে প্রণাম করলো। রুবিদি বললেন-
-এই পুরস্কার নিতে তোমাদের দিল্লী যেতে হবে
মলিনা- দিল্লী!
পদ্ম-কিন্তু ম্যাডাম, আমরা কীভাবে দিল্লী যাবো! আমাদের তো টিকিট কাটার পয়সা নেই
রুবি দি- তোমাদের যাতায়াতের, ওখানে থাকার, খাওয়ার কোনো খরচ লাগবে না, সব সরকার দেবেন। শুধু দুটো ভালো জামা কিংবা শাড়ি নিয়ে যেও। আমি যতদূর জানি এক বছরে কাঁথা স্টিচের জন্য একজনকেই অ্যাওয়ার্ড দেয়। তোমরা দু’জনে একসাথে এইবছর পাবে না। তবে পরপর দু’বছর পাবে। আর পুরস্কারের সাথে এক লাখ টাকাও পাবে
মলিনা- ম্যাডাম, এইবছর পদ্ম পাক, পরেরবার আমি পেলেও হবে
রুবিদি- ওসব আমার হাতে নেই, ওটা তো ওনারা ঠিক করবেন। এখন তোমরা দিল্লী যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রাখো। মানে বাড়িতে জানিয়ে কাপড়, ব্যাগ সব কিনে রাখো। দরকার হলে ধার করে কেনো, টাকা পেলে দিয়ে দেবে। তবে যে অ্যাওয়ার্ড পাবে, তার সাথে শুধু একজনের সবকিছু ফ্রি থাকবে। চিন্তা করো না, এই নাও আমার ফোন নম্বর। তোমরা তো যখন তখন এখানে দেখা করতে আসতে পারবে না, তাই ফোন করো। বিভাসকে এসব কিছু বলতে হবে না। ওকে বলেছি তোমাদের সেলাইগুলো একজিবিশানে যাবে। অবশ্য সত্যিই এরপর তোমাদের সেলাইগুলো, বিভিন্ন স্টেটে যে কুটির শিল্পের একজিবিশানগুলো হয় সেখানেও পাঠাবো, তবে তারজন্য অনেকগুলো ভালো কাজ রেডি করতে হবে, একটা দু’টোয় হবে না। মন দিয়ে কাজ করো, তোমাদের ভবিষ্যৎ খুব উজ্জ্বল।
রুবিদি-ভেবেছিলাম তোমাদের বড় কাজ শেষ হলো, এবার কতদিন বিশ্রাম নিতে বলবো কিন্তু একজিবিশানের কাজ অনেক পরে আছে। শুনছি তো এবার শুরু হবে ইন্টারন্যাশনাল একজিবিশান, আর প্রথমবার বোধহয় অস্ট্রেলিয়ায় হবে
পদ্ম- অনেকগুলোর নকশা পুরো হয়ে গেছে দিদি, কাজতো সবে শুরু করেছি
-খুব ভালো করে করো, কিছু কিছু কাজ মর্ডান আর্টের ওপরও করো
মলিনা- ঠিক আছে দিদি, আপনি বেশী চিন্তা করবেন না, আপনার শরীর ভালো না। আমরা সময় নিয়ে খুব যত্ন করে করবো
পদ্ম- দিদি একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
-বলো
পদ্ম- আমরা গ্রামের দুটো মেয়ে কাঁথা সেলাই করে দশ টাকা করে পেতাম, সেই জায়গা থেকে আপনি আমাদের তুলে কোথায় পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। আজ আমাদের আর্থিক অবস্থা বেশ কিছুটা ভালো, কত লোক আমাদের চেনে, গ্রামে আমাদের কত সম্মান, টিভিতে ইন্টারভিউ দিয়েছি, কুটির শিল্পের জগতেও আমাদের কত সম্মান, এইসব আপনার জন্য হয়েছে। আপনি কবে আমাদের কাছে ম্যাডাম থেকে দিদি হয়ে গেছেন মনে নেই। আপনি বাংলাদেশেও আলিয়ারাদের কোথায় তুলে দিয়েছেন। আমাদের ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার পরও আপনি থামেন নি, আপনি আমাদের দুই দেশের একসাথে শিল্পগুরু পুরস্কারের জন্য কাজ তৈরি করতে পারতাম আর আলিয়ারা ওঁদের ওখানে আলাদা করে কাজ করতে পারতো। কিন্তু আপনি চেয়েছেন আমরা একসাথে একটা PP করবো। কেউ ছিল না, আপনি এটা নিয়ে এদেশে ওদেশে গিয়ে কত লোকের সাথে দেখা করেছেন, কত লড়াই করে আজ আপনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আপনার তো কোনো স্বার্থ নেই, তাহলে নিজের শরীর, অর্থ, সময় সবকিছু কেন নষ্ট করেছেন?
-খুব বেশি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করে বলতে পারবো না। অনেক কথা বললে আজকাল একটু শ্বাস কষ্ট হয়
মলিনা- থাক দিদি, আজ বলতে হবে না, অন্যদিন বলবেন
রুবিদি- না, আসলে আমিও চাই বলতে। আমার দাদুরা বাংলাদেশে থাকতেন। ওখানেই বাড়ি, বিঘা বিঘা জমি, ক্ষেতখামারী সব ছিল। পরবর্তীসময়ে আমার বাবা আর ছোট কাকু ভারতে চলে আসেন। জেঠুরা ওখানেই থেকে যান। বাবা কাকু এখানেই চাকরি, বিয়ে করে এখানেই সেটেল্ড হয়ে গেছেন। ছোটবেলায় আমিও বাবার সাথে অনেকবার বাংলাদেশ গিয়েছি। আমার কাছে দুটো দেশ নয়, আমার কাছে এটা আমার মামা বাড়ি আর বাংলাদেশেটা আমার ঠাকুরদার বাড়িই মনে হতো। এই কারণেই হয়তো কেন জানি মনে হতো আবার যদি আগের মতো ভারত বাংলাদেশ এক হয়ে যেত, তাহলে কী ভালোই না হতো। যদিও জানি তা সম্ভব নয়, কারণ বাংলাদেশ তাদের মতো করে নিজেদের আদব-কায়দা, সংস্কৃতি, রোজকার প্রয়োজনীয়তাকে গুছিয়ে নিয়েছে আর ভারতও ঠিক তেমনই নিজের মতো করে গুছিয়ে নিয়েছে।
সেবার যখন মলিনা তুমি প্রথম ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পেলে আর পদ্ম তুমি পরেরবার, সেটা তো ছিল আরোকিছু করার জন্য তোমাদের ওপরে নিয়ে আসার আমার চেষ্টা। লক্ষ্য ছিল ভারত বাংলাদেশ মিলিত পুরস্কার। আমি যখন ওপরমহলে জানালাম, শিল্পগুরু পুরস্কার পাওয়ার জন্য দুই দেশের শিল্পী একসাথে কাজ করবে। তখন ওনারা বারণ করে দিলেন, বললেন এরকম হয় না। ওনারা আমার কোনো কথাই শুনছিলেন না। ওনাদের কাছে এসব অবাস্তব লাগছিলো। বলছিলেন একটা কাজে দুই দেশের শিল্পী কাজ করবেন কীভাবে? কোনো এক দেশের শিল্পীদের অন্য দেশে গিয়ে তাহলে কাজ করতে হবে। কিন্তু আমার কাছে দু’দেশই সমান। যা করবে দু’পক্ষ একইরকম করবে। ওরা বার বার না করেছেন। একদিকে দরজা বন্ধ হয়েছে তো আমি অন্য দরজায় গেছি। হার মানি নি। চলচ্চিত্র জগতে যদি ভারত বাংলাদেশ একসাথে কাজ করতে পারে, সংগীতের জগতে, খেলার জগতে, সাহিত্যের জগতে; তাহলে কুটীর শিল্পে বাধা কোথায়? বহু মাসের পর, বহু যুক্তি তর্ক, বাধা বিপত্তি পেরিয়ে জয় হয়েছে দুই দেশের যৌথ সম্মতিতে আমার স্বপ্ন, আমার আবেগ। তবে শুধু আবেগে কিছু হয় না। তাই মাথা থেকে বের করেছিলাম যে একটা শাড়ির ওপর কাজ হবে। যার আঁচলটা তৈরি করবে আলিয়ারা, তাতে বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রেক্ষাপটের নকশা থাকবে আর শাড়ির সারাগায়ে ভারতের ইতিহাসের প্রেক্ষাপটের নকশা থাকবে। পরে ওটা জুড়ে দেওয়া হবে খুব নিখুঁতভাবে। প্রথমে এটার পুরস্কার বাংলাদেশে দেওয়া হবে, তোমরা বাংলাদেশ যাবে আর তারপর পরেরসপ্তাহে ভারতে ওঁদের আনিয়ে তোমাদের সাথে ওঁদেরকেও শিল্পগুরু পুরস্কারে সম্মানিত করা হবে। এই দুর্লভ কাঁথা স্টিচের শাড়িটা বছরে ছ’মাস ভারতের মিউজিয়ামে আর ছ’মাস বাংলাদেশের মিউজিয়ামে রাখা হবে।
এই পুরস্কার দুই দেশ একসাথে প্রাপ্তিলাভ করবে, এটার কারণে দুই দেশের কুটির শিল্পের প্রসার বাড়বে। এই কাঁথা স্টিচের মাধ্যমে দুই দেশের ইতিহাসের নকশা একটা কাপড়ের ওপরেই সবাই দেখতে পাবে। তাছাড়াও এই অভিনব প্রচেষ্টা এক নতুন ইতিহাস গড়বে, চিরকাল সবার কাছে এটা ‘ভারত বাংলাদেশের কাঁথা কাহিনী’ বলে প্রসিদ্ধ থাকবে।
সম্পাদনা: শাহানাজ ইয়াসমিন
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..
বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..