প্রক্সি
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
এক একটি সকাল আসছে যেন ধীরগতিতে। নীরব, নিঃসঙ্গ, নিঃশব্দে। দিন শুরু হচ্ছে নৈঃশব্দ্যতার এক নৈসর্গিক রাশিচক্রে। সূর্যের গগনচুম্বী উজ্জ্বল রশ্মিতেও কেমন যেন মিইয়ে পড়ছে একেকটি দিন। একেকটি সকাল।
আজকের সকালেও একটু একটু কুয়াশার চাদরে ঢেকে আছে পুরো পৃথিবী। কিন্তু এই অসময়ে কুয়াশা? আজ এপ্রিলের চার তারিখ। তার চেয়ে বরং একটু একটু
মেঘলা আকাশ হলে খারাপ লাগতো না। কিন্তু কুয়াশা! যাক গে, সবকিছুই যখন এলোমেলো তখন আর প্রকৃতির কী দোষ? আর আকাশতো কোন ছার! সে তো প্রকৃতিরই একটি উপাদান মাত্র। তার আর নিজের বলতে কী আছে। প্রকৃতির ফার ফরমাশ খাটে মাত্র। এই রোদ, এই মেঘ, এই বৃষ্টি। শীত কুয়াশায় আটকে ফেলে তার সমস্ত অবয়ব।
ইদানিং শায়মার ঘুম ভাঙতে একটু দেরি হয়। অবশ্য ইচ্ছে করে। ফজরের নামাজ পড়ে ঘর অন্ধকার করে আবার একটু ঘুমিয়ে নেয়। অফিসের তাড়া নেই। ঝক্কি ঝামেলা নেই কোনো। বরং সকাল সকাল দিন শুরু করলে দিনটি অনেক বড় বড় লাগে। ব্যস্ততাহীন দিন ফুরাতে চায় না সে। তাই ওর এই একটুখানি পাল্টে ফেলা নতুন রুটিনের দিন চলছে এখন।
আজ সকালেও ঘুম ভেঙ্গেই কুয়াশা মোড়া সকাল দেখে আর এক প্রস্থ ঘুমিয়ে নিয়েছে।
না, আর নয়। ভারি পর্দা সরিয়ে ব্যালকনিতে আসে শায়মা। বাহ! অলকানন্দার পরিপূর্ণ ভাবে মেলে ধরা মখমলের হলুদ পাপড়িগুলো বাতাসে দুলে দুলে শায়মাকে যেন অভিনন্দন জানায়। বর্ষার প্রথম ফুল ফুটতে দেখে ওর একটু আগে গুমোট হওয়া মনটা হেসে ওঠে সূর্যের সাথে তাল রেখে। এরই মধ্যে সূর্য তাড়িয়ে দিয়েছে কুয়াশার চাদরকে। সে চাদর ভেদ করে এখন আলোর মেলা পৃথিবীতে। হাত দিয়ে অলকানন্দার পাপড়িগুলো ছুঁয়ে দেয়। আদর করে। আজ কদিনই ওর কুড়ি আসা পর্যন্ত ওকে আলাদা যত্নে রেখেছে। যেন বা, সন্তান সম্ভবা মা তিনি!
খুশি মনে শায়মা ঘরে ঢোকে। টিভির রিমোটটা হাতে নিতেই ওর চোখ ছানাবড়া। কী অবস্থা দেশের? মানুষ আর মানুষ। পাটুরিয়া ফেরিঘাট, মাওয়া ফেরিঘাটে, রাস্তায় মানুষের গিজগিজে হাট!
পুলিশ পিটিয়ে কিংবা বুঝিয়ে ঘরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন মানুষ দেরকে–এ কয়দিন এই ছবি দেখতে দেখতে শায়মা একটু স্বস্তি পেয়েছিল। কারণ সে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিভিন্ন রিপোর্ট থেকে জেনেছে, বাংলাদেশ যদি সাবধানে লকডাউন এ থাকতে পারে, তাহলে হয়তো এ যাত্রায় তারা পৃথিবীর অন্য দেশের মতো এতটা মৃত্যুর মুখোমুখি নাও হতে পারে। কারণ বাংলাদেশের নিজস্ব
কিছু সুবিধাজনক কারণ বাঁচিয়ে দিতে পারে বাংলাদেশকে।
গবেষকরা হিসেব করে দেখাচ্ছেন, এতটা আতঙ্কের কিছু নেই। করোনা মানেই মৃত্যু, ব্যাপারটা আসলে মোটেও তা নয়। সামগ্রিকভাবে এই ভাইরাসের সংক্রমণে মৃতের হার ৩-৪ শতাংশ মাত্র। তার মানে ১০০ জন আক্রান্তের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠছেন প্রায় ৯৭ জন।
এতো গেল সারা বিশ্বের কথা, বাংলাদেশের জন্য আরো বেশি আশার বাণী শোনাচ্ছেন গবেষকরা। তারা বলছেন, সুনির্দিষ্ট কিছু কারণে বাংলাদেশ বেঁচে যেতে পারে করোনাভাইরাসের বড় ধরনের সংক্রমণ থেকে।
তার মধ্যে প্রথম সুবিধাটা হচ্ছে বাংলাদেশের উষ্ণ আবহাওয়া। উষ্ণ আবহাওয়া ভাইরাসটির গতি অনেকাংশে কমিয়ে দেবে। এমআইটি থেকে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, ৩২ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যে এটি দীর্ঘ সময় টিকে থাকতে পারে না। একই কথা বলেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ভারতীয় চিকিৎসক জি পি নাগেশ্বর রেড্ডি। বাংলাদেশে এখন নামছে চৈত্রের গরম, মে মাসের শেষ পর্যন্ত যা উত্তোরোত্তর বাড়বে। সেক্ষেত্রে করোনাভাইরাস এখানে খুব একটা গেড়ে বসতে পারবে না। তারপর আছে বিসিজি টিকা। যক্ষ্মা প্রতিরোধের জন্য দেওয়া বিসিজি টিকা করোনাভাইরাস ঠেকিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। মেডআর্কাইভ নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এমন সুখবর দিয়েছে।
১৯৭৯ সাল থেকে বাংলাদেশে শিশুদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয় যক্ষার এ ভ্যাকসিনটি। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডসের মতো বেশ কিছু দেশে বিসিজি টিকার কর্মসূচি নেই। তাই এটিও হতে পারে বাংলাদেশের জন্য একটি রক্ষাকবচ।
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের মানুষদের তুলনামূলকভাবে বেশি। দূষিত পরিবেশই আমাদের জন্য হয়ে উঠতে পারে আশীর্বাদ। এমন পরিবেশের কারণেই ইউরোপ-আমেরিকার মানুষের চেয়ে আমাদের অভিযোজন ক্ষমতা বেশি। সে কারণে আমাদের দেশে ইউরোপ-আমেরিকার মতো এতবেশি মানুষ আক্রান্ত নাও হতে পারে। তাছাড়া শুরুতেই
বাংলাদেশে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
যার কারণে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায়নি। ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র কিংবা স্পেন কিন্তু তা করেনি। করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পরও ইতালিতে চলেছে ফুটবল ম্যাচ। জানা যায়, সেখান থেকেই বিদ্যুত গতিতে ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রমণ। কঠোর পদক্ষেপ না নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তো এটাকে ‘চীনা ভাইরাস’ বলে কটাক্ষ করে সময় কাটিয়েছেন।
এছাড়াও আমাদের মানুষদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে ন্যাচারাল এন্টিবডি।
ভাইরাসটি সবসময় একই গতিতে সংক্রমণ ঘটিয়ে যাবে তা কিন্তু নয়, আস্তে আস্তে সে তার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। কারণ ততদিনে আক্রান্তদের অর্ধেকের শরীরে তৈরি হবে ন্যাচারাল এন্টিবডি, যা বাঁচিয়ে দেবে আক্রান্ত বাকিদেরকে। তাছাড়া সময়ের ব্যবধানে একটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে ন্যাচারাল ইমিউনিটি বা প্রাকৃতিক সুরক্ষা দেয়াল তৈরি হয়। এদিক থেকে হিসেব করলে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে চীনের উহানে শুরু হওয়ার অনেক পর। যার কারণে কারোনা প্রতিরোধে একটা ন্যাচারাল সাহায্য পাবে বাংলাদেশ।
ধূপমান বা মদ্যপান ইতালি কিংবা ইউরোপের দেশগুলোতে বেশি মানুষের মৃত্যুর একটা বিশেষ কারণ। যেটা আমাদের এই উপমহাদেশে খুব একটা নেই। ওইসব দেশের অধিকাংশ বৃদ্ধরাই মদ্যপায়ী। এর পাশাপাশি তাদের রয়েছে উচ্চ রক্তচাপের আধিক্য। তাই আক্রান্ত হওয়ার পর তারা আর সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। এছাড়াও সর্বশেষ যেই কারণ, সেটি হচ্ছে
মানসিক স্বাস্থ্য। যারা মানসিকভাবে শক্ত ও সুখী, তাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি থাকে। আমাদের এই অঞ্চলের মানুষ এজন্য এগিয়ে থাকবে বলেই মনে হয়। তাই শায়মা অতটা ভীত কিংবা শংকিত নয়। তাছাড়া ওর আছে, মহান আল্লাহ্র ওপর অগাধ বিশ্বাস। যার মৃত্যু যেখানে যেভাবে লেখা আছে, তেমনটি হবে। এক সেকেন্ড এদিক ওদিক হবে না। তাই ঘরে বসেই সে সরকারের ঘোষিত নিয়ম নীতি মেনে নিয়ে করোনা কালীন সময়টাকে উপভোগ করছে নিজের মতো, পরিবারকে সাথে নিয়ে।
কিন্তু আজ টিভি খুলে সবকিছু কেমন এলোমেলো মনে হচ্ছে শায়মার। সরকার সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ করলেন। ঠিক সে সময়েই বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ তাদের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি খোলার জন্য ঘোষণা দিলেন! যে সময় তাদের সমস্ত কর্মচারীগুলো গ্রামে অবস্থান করছেন। তাদের চাকরি বাঁচাতে এবং পেটের দায়ে তারা এখন পায়ে হেঁটে ঢাকার দিকে রওনা করেছেন! এইযে ঢাকা থেকে চলে যাওয়া আবার দলবদ্ধ হয়ে ঢাকার দিকে ফিরে আসা! নাহ! কিছুতেই মাথায় যেন কাজ করছে না শায়মার ! তাহলে সরকারই বা কি দায়িত্ব পালন করলেন ? আর গার্মেন্টস শিল্পের মালিকরাই বা কি দায়িত্ব পালন করলেন? আর এই মানুষগুলোর কি হবে এখন? তারা কি সবাই তিন ফুট নিরাপদ দূরত্ব বজায় না রেখে চরম ঝুঁকি নিয়ে ঢাকার দিকে রওনা করল না?
যারা ঢাকায় গৃহবন্দী আছে, এই মানুষগুলো ঢাকায় ফেরার পর তাদের
সামাজিক অবস্থাটা কি দাঁড়াবে? কে দেবে এই প্রশ্নের জবাব, কে নেবে এর দায়িত্ব? কে সামলাবে এই সামাজিক বিপর্যয়? করোনা ভাইরাস ট্রান্সমিশন কী তাহলে এখানে বন্ধ থাকবে? নাহ,
যা দেখছি তা যেন সব যেন মিথ্যা হয়। বিশ্বাস করতে চাই কোন মানুষ ঢাকা অভিমুখে রওনা করছেন না। আগামীকাল গার্মেন্টস খুলছে না। আর বিশ্বাস করতে চাই সরকারের ঘোষণা মোতাবেক সকল জনগণ নিজ দেশ এবং জাতির কল্যানে অবশ্যই লক ডাউনে আছেন এবং থাকবেন।
মেজাজটা এবার টোটালি বিগড়ে যায় শায়মার। কেন বাবা, তোরাই বা তখন কেন, জীবনের রিস্ক নিয়ে ঢাকা ছাড়লি। ছুটির আগেই তো পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছিল সরকার । তাহলে কেন, বাদুরের মতো ঝুলে ঝুলে, মৌমাছির মতো গায়ে গা লাগিয়ে দৌঁড়ে দৌঁড়ে গ্রামে চলে গেলি? তোদের তো আর গ্রামে যাবার জন্য ছুটি দেয় নি। কোয়ারান্টাইনে থাকার জন্য। এ ছুটিতো আর ঈদ পার্বন উপলক্ষে নয়!
–দেখছো দেশের কী অবস্থা? সব আবার হেঁটেই ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে।
শায়মা তার বর মি কায়েস সাহেবের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে।
–হু। দেখছি তো। চিন্তা করা যায়? সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের জীবন মরণ নিয়ে খেলা!
–তাই তো দেখছি। কী হবে এখন, বলো, করোনা তো ছড়িয়ে যাবে জ্যামিতিক সূত্রে। গায়ে গা লাগিয়ে, বাচ্চাগুলো কোলে করে, এই রোদ্দুর এর মধ্যে কী করে হাঁটছে! আহারে, রাস্তায় তো কোনো খাবারের দোকান খোলা নেই। মানুষের মুখ শুকনো। চোখে হতাশা।
–চাকরি হারানোর ভয়। একদিকে শারীরিক নিরাপত্তার চিন্তা, অন্য দিকে চাকরি হারানোর ভয়।
— নাহ। মেনে নিয়ে যায় না। দেখো, ফেরিঘাটে, রাস্তায় মানুষের ঢল। আগে মানুষের জীবন, তারপর তো ব্যবসা? জনগণকে ঘরে থাকতে বলবে, অন্যদিকে গার্মেন্টস খোলা থাকবে! জাতির সাথে এ কেমন তামাশা!
— তারা তো আর মানুষ নয়, খেটে খাওয়া জনগণ, কর্মচারী। আসলে বাংলাদেশ সরকার বা প্রশাসন পারলে ভালো, না পারলে আন্তর্জাতিক আদালত কিংবা জাতিসংঘে এর বিচার চাওয়া উচিৎ। সারা দুনিয়ার আইন কানুন নিয়ম লঙ্ঘন করে এখন পর্যন্ত ইমিউন আর বিশ্বাসে ভর করে ভালো থাকা আমাদের মা-বাবা, ভাই -বোন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু- পরিচিতজনদের এভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া?
–গণহত্যাই বটে। এখানে কেউ কী আইন ও নিয়মের উর্ধ্বে? কিংবা গার্মেনটসে শিল্পের কর্ণধররা?
–এটা আত্মঘাতী একটা চক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না।
–এতে একটা বিষয় পরিষ্কার হলো। যেন BGMEA এর সিদ্ধান্তই সরকারের সিদ্ধান্ত। কিন্তু বিষয়টি তো সম্পূর্ণ উল্টো।
–BGMEA আসলে সরকার ঘোষিত পাঁচ হাজার কোটি টাকার ইনসেনটিভ জায়েজ করার জন্যই …
শায়মার মুখের কথা শেষ করতে না দিয়েই কায়েস সাহেব বলে ওঠে
–দেখো, গার্মেন্টস কিন্তু ঠিকই আবার বন্ধ ঘোষণা করবে। সরকার ঠিকই সঠিক ভাবে হস্তক্ষেপ করবে।
অকারণ এই মানুষগুলোর লেফট রাইট!
— গার্মেন্টস সেক্টর চালু রাখলে করোনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। বাংলাদেশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাবে। তারা
শুধু অর্থ সম্পদের কথা চিন্তা করছে, কিন্তু মানব সম্পদের কথা চিন্তা করছে না। ভেবে দেখা উচিত,
মানব সম্পদ না থাকলে, অর্থ সম্পদ কোন কাজেই আসবে না, আমেরিকার মত দেশের অবস্থা দেখো,তাঁরাই করোনা নিয়ন্ত্রণে হিমসিম খাচ্ছে, এখনো সুযোগ আছে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজে বাঁচা এবং দেশকে বাঁচানো।
–তাই যেন হয়। আর একটি কথা, শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। গার্মেন্সেটের এই সমস্ত কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেই কাজে ঢোকানো উচিত।
–হুম, তাদের টেম্পারাচার, ঠাণ্ডা, কাশি, ইত্যাদি । তাহলেও একটু হলেও রক্ষা করা যাবে।
হঠাৎ কলিং বেল বেজে ওঠে। বহুদিন পর যেন।
–কে, কে?
–নাহ্, কেউ নেই কোথাও। হয়তো বা ভুল করে তিন তলার বাচ্চাটি দিতে পারে।
–হতে পারে, বাচ্চাদের ঘরে আটকে রাখা খুব কষ্ট হচ্ছে। তিন তলার ভাবী সেদিন ফোনে বলছিল।
–এখন তো ফোনই ভরসা। ফোনে কথা বলেই সবার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে হচ্ছে।
–আচ্ছা, তুমি টিভি দেখো। আমি যাই বলে শায়মা আবার ঢুকে পড়ে তার পড়ার ঘরে, মনোজগতে। সে ভাবে,
আগে খুব ব্যস্ত থাকতাম। ভাবতাম, কবে একটু বিশ্রাম পাব, কবে হবে একটু অবসর? তখন জমানো বইগুলো পড়ব, অনেক না শোনা গান শুনব, অনেক প্রিয় কবিতাগুলো পড়ব, আবৃত্তি করব, সবচে বেশি মনে হত, নিজের সাথে একটু নিজেকে একটানা সময় দিতে পারব, ওর সাথে একসাথে অনেকটা সময় কাটাতে পারবো। কিন্তু আজ যখন এমন একটা সুযোগ হাতে এলো, তখন ভুলে গেলাম আগের সব কিছু।
মানুষ আসলে এমনই হয়, জন্মগতভাবেই মানুষের এই স্বভাব।
“হাতে পেলে নিতান্ত মাটির মনে হয় সোনার মোহর।”
মোবাইলটা হাতে নিয়ে আবারও একটু হেলান কেদারায় আরাম করে বসে।
হঠাৎ ওর চোখ পড়ে, একটি স্ট্যাটাসে। সেখানে করোনা আক্রান্ত এক ডাক্তার মৃত্যুর আগে বলে গেছেন,
“করোনা যে কি ভয়াবহ তা যদি কেউ আগে টের পেতো তাহলে জানালার দিকেও তাকাতো না”। আহা!
আর আমরা? কতটা অসচেতনতার পরিচয় দিচ্ছি!
শায়মা আবারও ভাবে,
যার পরিবারের কেউ এই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তার বা তাদের কী অবস্থা। আমরা তো সবাই যে যেখানে আছি, এখনও পর্যন্ত ভালো আছি। হে মহান আল্লাহ। ভালো রাখো তুমি। সবাইকে।
না শায়মা আর কিছু ভাবতে পারে না। মহান আল্লাহর কাছে আবারও মনে মনে প্রার্থনা করে, মহান আল্লাহ,
তুমি আমার সন্তানদের, আমার ভাইবোনদের, আমার আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধবসহ এ পৃথিবীর সকল মানুষ, যে যেখানে আছেন সকলকেই ভালো রাখো। তোমার পৃথিবীকে তুমি ভালো রাখো।
মহান আল্লাহর কাছে তার মনের সব আর্জি জানানোর পর সে নির্ভার হয়, শান্ত হয়। তার মন অন্য এক প্রশান্তিতে ভরে ওঠে। বিশ্বের এই নাজুক পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন ঘরে আটকে থাকার পরও তার নিজেকে খুব ভারমুক্ত, সুখী মনে হয়।
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..
বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..