ভালোবাসার নাম অভিমান

বিকাশ দাস
কবিতা
Bengali
ভালোবাসার নাম অভিমান

শরণ্য

শুধু একটিবার
ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছে ছিলো তোমাকে
আমার দু’চোখ বসিয়ে তোমার চোখের ছলাৎ।
রাত্রির স্তবে অসঙ্গত তৃষ্ণার করাত ।

এবারো আসোনি
যখন বৃষ্টিরআঁশ চোখে মুখে মেখেছিলো চড়া রোদ্দুর
নিশ্বাস ভেঙে ভেঙে ঘুমের জাজিমে পড়ে থাকা একলা শরীরে।
এবারো আসোনি
যখন মেহেদি- ছোপানো হাতে লেগেছিলো রক্তের দাগ
অহং পাপ দংশেছিলো আমার শরীরের বিলাসে বাসনার নীলে।
দেখেছি
আলোভাসান মাটির উসুমে
অন্ধকারের সান্ধ্যর গহন থেকে উঠে আসে
রজনী ।
ভালোবাসার সান্ধ্যর গহন থেকে উঠে আসে
রমণী ।
জেনেছি
ভালোবাসা শুধু ছুঁয়ে থাকে
আকাশ উপুড় রাত্রি দুপুর
হৃদয়ের অনন্ত প্রান্তর নিভৃতে গোপনে
ঘর গেরস্তি নিবিড়।

 

কষ্ট

আমার দু’হাতে তোমার স্পর্শের গন্ধ লেগে আছে
গন্ধের সুবাসে
তাই এখনও আমি জীবিত।
আমার বুকে তোমার ঠোঁটের আকর্ষী লেগে আছে
আকর্ষীর সুবাদে
তাই এখনও আমি জীবিত।
ঘাসের নরম শিকড় ছিঁড়ে, অভিমানে … বাইরে চলে যাচ্ছ ? যাও তবে ।
অনেকদিন তো হলো সঙ্গে ছিলে ঘর-গেরস্তির সত্যি টুকু জড়িয়ে কবে ?

আকাশকে সাক্ষী রেখে নিশীথে সাজানো গোছানো মেহফিলে
তোমার মনপসন্দ একগুচ্ছ কবিতা পড়ে শোনাবার কথা নয়
তবু পড়ে চলেছি । আবেগ মুছে রুমালে । সবার তো সব পাওয়া নয় ।

আলোর আশাতীত কাজলে
ক্রমশ হাওয়ার আস্পর্ধায় কবিতার ঝনৎকার ভেঙে নিভৃতে
পাগলের মতো খুঁজে যাচ্ছিলো চুকেবুকে যাওয়া ভালোবাসা।

দিনদুপুরের আড়ালে
দাঁড়িয়ে আছি আয়নার সমীপে আমাকে তোমার মতো করে নাও।
অন্ধকারে দুঃখের দিয়ার সলতে আগুনের আলোতে পুড়তে দাও।
আমার কষ্ট তোমার অন্তরের পর্দায় লেগে আছে
কষ্টের নিহিতে
তাই এখনও আমি জীবিত।

 

স্বস্তি

যদি ফিরিয়ে দাও
তবে বলো । কোথায় যাবো!
পায়ে পায়ে বিপণ্ণতা, ব্যর্থ আমার কবিতা
শ্রাবনভরা দিনেও তীব্র দহন বৃষ্টির জ্বলন
দুঃখগুলো তৃষ্ণার সংশয়ের কাব্যমরণ।
যদি ফিরিয়ে দাও,তবে বলো । কোথায় যাবো!

অনেক আগেই কলম নিয়েছে ফিরিয়ে মুখ
চৌকাঠ থেকে তুমিও যদি ফিরিয়ে নাও মুখ
তবে বলো । কোথায় দাঁড়াবো!

অহংকার পুড়িয়ে এসেছি নিজেরই অন্তঃপুরে
শোণিত স্রোতে ভাসিয়ে দিয়েছি জীবনজুড়ে
লজ্জায় নত মাথা আলোর বিহানে নিশ্চিন্ত অনাবিল নিঃস্বতার গানে।

এবার অন্তন্ত একটু স্বস্তি না দিলে
অনিবার্য মৃত্যুর বুকে কি করে ফোটাবো আমার কবিতার
শব্দে প্রাণবন্ত জোর।
ভোর করে দেওয়ার মতো ডাকে নিয়ত নামিয়ে আকাশ
ভুবনজোড়া ভোর।

ভালোবাসার নাম অভিমান

খেলা ভেঙে ফিরে যাও উবু দশ
মুখ ঘুরিয়ে দেখে যাও একবার, আমি কতো একা আজ অবধিপার ।

কথা বলা মাঠ পায়ে পায়ে ছুটে ছিলো দল বেঁধে যে যার
হাঁপানো শরীরে শরীর ধরে একজোট নিঃশ্বাসে বারবার ।
এক মাথা রোদ্দুর
এক মাথা বৃষ্টির দুমদাম তোলপাড়
ঘাসের শিরীষে কাঁচা মন ছোটো বেলার
হাওয়ার চূর্ণে থালাভরা গল্প গান কবিতার ।
আজ ফেলে এসেছি
এক দু’পশলা বৃষ্টির কাঁথাপাতা ঘুম ।
বুকের নিহিতে প্রথম প্রেমের চুম ।
নবান্নের মাঠ নিজস্ব ঘর বাড়ি অরণি ।
ভালোবাসা জমকালো দূরের সরণি ।

আজও প্রবাসে দেখি সেই চাঁদ, বসত বাড়ির আকাশের উঠানে
জ্যোৎস্নার ঘুঙুর পায় নদীর জল উছলে উছলে যেতে অভিমানে ।

কবির নির্লজ্জ কবিতা

কবিরা শব্দ টুকে টুকে কবিতা লেখেন ।
যেমন…
ভিজে মাটি ।
কাশ ফুল । স্থির নদী । সিঁদুর চুবানো দেবতার থান।
ভিজে পাহাড় । যৌনতার রূপটান । সমুদ্র বলবান।
গাছপালার কুঁড়ির বয়স বাড়ে,ভালোথাকার সুবাদে ছাঁটা গর্দান।
সাদা কাগজের মতো বিধবার শুভ্র থান কাপড় নিকানো উঠান ।

কবির কলমের আঁচড় ছবির মতো কথা বলেন ।
যেমন …
রঙ্গপ্রবণ অন্ধকারে কার পাশে শুয়ে শরীর মেলে
আজও নির্দ্বিধায় দু’হাত ভরে খিদের চাল মেলে ।

কবির দু’চোখ নিঃশব্দতা ছুঁয়ে লিখে রাখেন।
যেমন…
শরীরে ঈশ্বর থাকে বলে উনুনের আঁচ কথা বলে ।
ধর্ষণের নির্যাতন একলা নিবিড় বর্ষণ বৃষ্টির জলে
উবু হয়ে
বসে থাকা
নারীর স্তনের‘ওমে’লিখে ক’খান কবিতা
নির্বাক ধানের বুক দুধের স্বাদে মানবিকতা।
কলমের টানের স্পর্শে বর্ণহীন মানসিকতা।
ধর্ম নিঃসাড় নির্বিকার
ধর্মান্ধ রক্ত দুধের সুবাসে কন্যা জায়া জননীর সংসার।

কবিতার শব্দের ফেনায়
পুরুষের হাতের আঙুলের মধ্যমা তর্জনী
স্থিতির খাপে খাপে বাহাদুরি ।
ফুসলে ফাসলে তুলে নাজুক কিশোরীর
অস্থিমাংসে আনন্দ সুড়সুড়ি ।
শিস-ওঠা আলোর অন্তরায় বিঁধে থাকা।
এক গোটা রাত ।
এক থালা ভাত।
কবিতার সংকলনে কবির বেঁচে থাকা ।
পৃথিবীর
দিনরাত্রির অস্থি পোড়ে
ক্ষীণশবে স্বাস্থ্য পোড়ে
আকাশের নীচে মানুষের কাতার । জেহাদ ঘর পাতার।

জননীর আঁচল স্নেহ মমতা আহ্লাদীর।
সুনীল আকাশ সন্ততির বুকের নিবিড়।
ঠা-ঠা রোদ্দুর । ঘর-গেরস্তি । একঝাঁক বিহঙ্গ । স্বস্তির নিশ্বাস।

কবি নিঃশব্দে চলে যান ঠোঁটে শব্দ বাজিয়ে ।
যেমন…
কবে পুড়ে গেছে আকাশ
পুড়ে গেছে নির্মল বাতাস
রঙচটা বাস্তব অমোঘ অভিশাপ
শৃঙ্খলা ভেঙে ভেঙে ধাপে ধাপ
বেড়ে উঠছে ভুবন ডাঙায় পোক্ত ঘরবাড়ি ।
নগ্নতম শরীর স্নান সারা নারীর জলুস
সর্বোত্তম কাম খুবলে বিলাসী পুরুষ
কবির চৌকাঠে কবির নির্লজ্জ কবিতা।

বিকাশ দাস। কবি। জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গরাজ্যের মালদহ শহরে। পড়াশোনা করেছেন প্রথমে ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জে, এরপর কলকাতায়। বর্তমান নিবাস মুম্বাই। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থঃ এখন আমি একা, জরায়ুজ, নিকুচি করেছে কবিতা, কবির শেষপাতা, তবু ভালো দুঃখ দিও, জীর্ণ ব্যথার মুখবন্দী কথা, নির্বাচিত কবিতা, ঈশ্বর...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..

ফ্রেম

ফ্রেম

দেবী না পরিণীতা রাতটা একা থাকে এবং নিঃসঙ্গ অন্ধকার মানে রাত; তাহলে অন্ধকার নিজেও একা…..