ভালোবাসা

শারমিন সুলতানা রীনা
ছোটগল্প
Bengali
ভালোবাসা

 

নীপা হাসতে হাসতে দীপুর গায়ের উপর পড়ে যায়। ওর হাসি কোন ভাবেই থামছে না। অপু বারবার জিজ্ঞেস করেও উত্তর পাচ্ছে না নীপার হাসি বেড়েই যাচ্ছে। অপু প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে অপলক তাকিয়ে থাকে নীপার দিকে। হাসলে নীপাকে অসম্ভব সুন্দর লাগে। আগেও খেয়াল করেছে ওর সুন্দর হাসি। যে কাউকে মুহূর্তে পাগল করে দিতে পারে। ওর ভুবন ভোলানো হাসি দেখার জন্য অপু জীবনভর তাকিয়ে থাকতে পারে মুহূর্তে আনমনা হয়ে যায় অপু খেয়াল করেনি নিপার হাসি থেমে গেছে।

নীপা ওকে একটা ধাক্কা মেরে জিজ্ঞাসা করে, কিরে এমন ভাবে তাকিয়ে আছিস কেন, মনে হয় তুই আমাকে আজই দেখছিস?

অপু সম্বিত ফিরে পায়। না না কিছু না এমনিতেই তোকে দেখছিলাম তুই শুধু হেসেই যাচ্ছিস কিন্তু কারণটা বলছিস না।এমন ভাবে হাসছিস কেন?

নীপা ওর পেটে একটা খোঁচা দিয়ে বলে এমনি এমনি কেউ হাসে কারণ ছাড়া।

আরে আমিতো সেই কারণটাই জানতে চাইছি। তুইতো বলছিস না।

বলার মতো হলে না বলবো। বলার মতো নয় তাহলে আমার সামনে এসে হাসছিস কেন।

এবার নীপা স্বাভাবিক হয়ে গুরুগম্ভীর ভাবে বলে, আমার মা আর বড় খালার কথা শুনেছিস?

নাতো কি হয়েছে বল।

তুই শুনে আয় কি কথা হচ্ছে।

না তুই বল। এবার অপু সিরিয়াস।

তারা আমাদের বিয়ের কথা বলছে।

কি বলছিস সত্যি?

এই শোন তোর সাথে কি আমার ফান করার সম্পর্ক যে আমি ফান করবো। আচ্ছা তুই বল ভাই বোনে কখনও বিয়ে হয়

এবার মুল ঘটনা অপু বুঝতে পারে সেও এবার সিরিয়াস বোন কার বোন?

তোর বোন না আমি

না তুই আমার বোন না

মানে কি?

মানেটা খুব সহজ তুই আমার খালাত বোন জাস্ট এটাই।

তুইতো বেশ হারামিরে, আমাকে বোন বলতে তোর ইগোতে লাগে নাকি?

ইগোর কোন প্রশ্ন এখানে আসে কেন তুই আমার খালাত বোন। আমি তোকে ভালোবাসি এটাই ফাইনাল।

বোনকে ভাই ভালোবাসবে এটাই স্বাভাবিক।

না স্বাভাবিক নয় এই ভালোবাসা সেই ভালোবাসা নয়।

তাহলে কোন ভালোবাসা?

জানিনা তুই এখন যাতো তোর কথা শুনতে আমার আর ভালো লাগছে না তুই একটা নির্বোধ।

কি বললি আমি নির্বোধ। তাহলে বোধওয়ালা কাউকে বোন করে নে।

তুই আমারও ফান করছিস

তো কি করবো তোর গলায় মালা পরাবো।জীবনেও না

আমার অপরাধ

অপরাধ তুই আমার ভাই

খালাত ভাই

ভাইতো

হুমম

তাহলেতো মিটেই গেলো।আমি তোকে বিয়ে করতে পারবো না

কেন পারবিনা? আমার অযোগ্যতা কোথায়?আমি কি তোর উপযুক্ত না

আমি কি তাই বলেছি।আমি তোকে ভাইয়ের মতো দেখে আসছি তাই তোকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়

কেন নয় তাহলে আমার ভালোবাসার কি হবে

শোন তোর ভালোবাসা এক তরফা আমি তোকে ভালোবাসিনা।আমার অন্য কোথাও পছন্দ আছে।

কি বললি আগেতো কখনও বলিসনি

প্রয়োজন হয়নি আর আমার সব বিষয়ে তোকে বোলতে হবে কেন?

আমি কিন্ত মাইন্ড করছি

আমার বয়েই গেলো।

দীপু অনেকটা রাগ হয়ে ঘর থেকে হন হন করে বের হয়ে যায়।
মা চলোতো বাসায় যাবো।

ছোট খালা তাকে জিজ্ঞেস করে হঠাৎ ও যেতে চাইছে কেন?

যাবোনা তো কি করবো তোমার মেয়ের মুখ দেখবো বসে বসে

সারা জীবন যেন দেখতে পারিস সে ব্যবস্থা করছি।

হ্যাঁ, করো। তোমাদের যা খুশি। দীপু বাইরে চলে যায়।

কিছুক্ষণ পর নীপার ফোন আসে। ফোন রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে নীপা জানতে চায় অপু কোথায়?

আমি যেখানে খুশি সেখানে তুই তা দিয়ে কি করবি মুখপুড়ি।

একি কথা দুদিন পর যার বর হবি তাকে মুখপুড়ি বলছিস

তোর বর হতে আমার বয়েই গেছে। ফোন রাখ আমি আসছি।

রাতে খাওয়া দাওয়া সেরে অপু মাকে নিয়ে বাসায় যায়। কিন্তু তার মনটা কেমন অবসন্ন লাগছে। মাকে নিজ থেকে কিছু বলতেও পারছেনা। নীপার অন্য কোথাও পছন্দ আছে মা অথবা খালা কি সেটা জানে? জানলে তারা আগাবে কেন আর যদি না জানে এর ফলাফল অবশ্যই ভালো হবেনা। কিন্তু মাকে কিছু বলারও সাহস পাচ্ছেনা মার হয়তো শুনলে কষ্ট হবে। অপু লন্ডন থাকে, মা তাকে বিয়ে দিতে লন্ডন থেকে নিয়ে এসেছে। আর অপুও নীপাকে ভালোবাসে তাই সে নির্দ্বিধায় মায়ের এক কথায় চলে এসেছে লন্ডন থেকে। বিয়ে করে আবার চলে যাবে বউ নিয়ে। সে বিয়ের কেনাকাটাও করে নিয়ে আসছে। নীপার কি পছন্দ তাও সে কিছুটা জানে। নিজের মনে ভাবতে থাকে নীপাকে সে ছোট বেলা থেকেই ভালোবাসছে যে কারণে অন্য কোন মেয়েকে তার ভালোমতো দেখা হয়নি। নীপার সাথে শেষ বারের মতো ডিসকাসড করে মাকে ব্যাপারটা জানাবে অপু।
রাতে নীপাকে ফোন দেয়। নীপা ফোন রিসিভ করতেই কোন ভনিতা না করে নীপার কাছে আসল ঘটনা জানতে চায়।

আমার যা বলার তাতো তোকে বলেই দিয়েছি আবার কি জানতে চাস?

শোন নীপা তোকে বিয়ে করবো বলে মায়ের কথায় আমি দেশে এসেছি।এখন তোর কথা শুনে আমার কষ্ট হচ্ছে।আমি ছোট বেলা থেকেই তোকে ভালোবাসি।

সে কথা তুই আমাকে আগে বলিস নি কেনো এখন রাসেলকে আমি কি বলবো তুই বলে দে।

আমি এতোসব জানিনা আমি তোকে আমার করে চাই। আর তুই যদি নেহাতই অপরাগ হোস তাহলে খালাকে বল বিয়ে ভেঙে দিতে।

আমার বয়েই গেছে। নীপা ফোনটা কেটে দেয়।

অপু হতভম্বের মতো ফোনটা ধরে বসে থাকে। মায়ের সাথে কথা বলতেও পারছেনা। মা শুনলে কষ্ট পাবে। সারারাত তার ঘুম আসেনা এতো বড় ভুল কি ভাবে করবে? মনে মনে ভাবে সকাল হলে মাকে সে সব খুলে বলবে।
ঘুম থেকে উঠতে অপুর বেশ দেরী হয়ে যায়। মা তাকে ডাক দিয়ে নাস্তার টেবিলে বসতে বলে। অপু ভাবে এসময় বাসায় কেউ নেই সে মায়ের সাথে খোলাখুলি নীপার বিষয়ে কথা বলবে। মাকে কিছু বলার আগেই মা বলে ওঠেন, হাতে বেশী সময় নেই। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়েটা সেরে ফেলতে হবে। সবাইকে দাওয়াত দিতে হবে।

মা তুমি আর খালা যা করছো তাকি ভালো কিছু হবে বলে মনে করো?নীপার কি বিয়েতে মত আছে?তার মতামতেরও কিন্তু গুরুত্ব দিতে হবে।

তুই কি বলছিস এখন নীপা সবই জানে বিয়েতে তার মত আছে।

তাহলে…

মা অপুর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলে, তাহলে বলতে কোন শব্দ নাই।

নীপা নিজেও অপুকে পছন্দ করতো কিন্তু মুখ খুলে কখনও অপুকে বলা হয়নি। বিয়েতে সে যথেষ্ট খুশি তার স্বপ্নের রাজপুত্র তাকে নিয়ে যাবে রাজপুরিতে। সে শুধু অপুকে যাচাই করেছিলো। রাসেল বলে তার কেউ নেই। নিজের বিয়েতে সব বন্ধুদের সে দাওয়াত করবে অনেক প্ল্যান করে সে। অনেক আনন্দ করবে।

যতো দিন আগাচ্ছে অপুর ভাবনা ততো বাড়ছে। নীপা তাকে ভালোবাসেনা সে ভালোবাসে রাসেলকে। অন্যের ভালোবাসা হরন করতে তার মন চাইছেনা, কিন্তু মনের এই দ্বিধাবোধ কাউকে খুলেও বলতে পারছেনা। নীপা কি তাকে নিয়ে সুখী হবে?
নাকি সে বিয়েটা ভেঙ্গে দেবে। তাও পারছেনা মায়ের মনে নীপাকে নিয়ে কতো আনন্দ বয়ে যাচ্ছে। কোন কিছুতেই অপু স্বস্তি পাচ্ছেনা।
নির্দিষ্ট একটি দিনে তাদের বিয়ে হলো। বাড়িতে আনন্দ বয়ে যাচ্ছে। বিসমিল্লাহ খানের সানাই বাজছে। কিন্তু তার বুকের ভিতরে সানাইয়ের সুর হাতুড়ির মতো পেটাচ্ছে তাকে। বাসর ঘরে কি বলবে নীপাকে কিছুই বুঝতে পারছেনা। বন্ধুরা তাকে বাসর ঘরে পাঠিয়ে দেয়। নীপা বিশাল এক ঘোমটা টেনে বসে আছে। সে কি করবে ভাবছে। চুপ করে গিয়ে নীপার কাছে বসে।

নিপা নিজেই ঘোমটা খুলে কথা বলে। অন্যের প্রেমিকাকে বিয়ে করে বীর হয়ে গেলি তাই না?

অপু কোন কথা বলেনা।

কিরে আমার কথার জবাব দিচ্ছিস না কেন।

অপু থতমত খেয়ে বলে, যা বলতে চাই তার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। তবে বউ হিসেবে তোকে দারুণ লাগছে ।বিয়েটা আমি ভেঙ্গেই দিতাম। মা আর খালার মনে কষ্ট দিতে চাইনি।তবে তোর যদি আমাকে পছন্দ না হয় তবে তোর প্রেমটা চালিয়ে নিতে পারিস।
তুই কি কাপুরুষকে নিজের বউকে বলছিস আবার অন্যে কারো সাথে প্রেম চালিয়ে যেতে।

নয়তো কি আমাকে তোর পছন্দ না তোর ভালোবাসার মানুষতো ঐ রাসেল ছোকরা।

এই ছোকরা বলবি না ওকে আমি ভালোবাসতাম।

বাসতাম মানে কিরে এইটুকু সময়ের ব্যাবধানে ওকে বাসতি এখন ভালোবাসিস না।

না ভালোবাসি না তোর কোন সমস্যা।

আমার সমস্যা হবে কেন আমার জন্যতো ভালোই হলো। তোকে পেলাম আর রাসেল ছোকরা তোর বিরহে গান ধরবে।
একটা কথা বলি?

একটা কেন আজ তুই হাজারটা বল কেউ কিছু বলবেনা।

শোন রাসেল বলে আমার কেউ নেই। আমি তোকেই ভালোবাসতাম কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারিনি, তুইওতো কোনদিন বলিসনি আমাকে তোর পছন্দের কথা।

মুহুর্তে অপুর বুকে চেপে থাকা পাথরটা সরে যায় তাহলে এতোদিন নীপা ওকে পরীক্ষা করেছে? আচ্ছা বল আমি কি পাশ করলাম না ফেল করলাম?

আবারও প্রশ্ন করছিস?

ওকে আর কোন প্রশ্ন নয় তবে একটা কথা মানতে হবে

কি কথা বল

আমাকে আজ থেকে আর তুই বলা যাবেনা

শুধু নিজের বেলা আমাকে বলছিস তুই করে।

সরি আজ থেকে আমরা তুমিতে ফিরে যাচ্ছি

কথাটা দুজনের মুখ থেকে একসাথে বের হয়।
অপু লাইটটা নিভিয়ে দেয়।
তারপর……

শারমিন সুলতানা রীনা। কবি ও ছড়াকার। জন্ম বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলায়, বর্তমান নিবাস ঢাকা। প্রকাশিত বই: 'মুজিব মানে বাংলাদেশ' (ছড়া, ২০২১), 'মা এক পৃথিবী' ((ছড়া, ২০১২), 'আমার কেবল ইচ্ছে করে' (ছড়া, ২০১৬), 'চড়ুই পাখির ছানা' (ছড়া, ২০১৫), 'বাবা আমার বাবা' (ছড়া,...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ