ভাসছি যখন, বসন্ত এমন

বদরুদ্দোজা শেখু
কবিতা
Bengali
ভাসছি যখন, বসন্ত এমন

ভাসছি যখন

ভালবাসায় ভাসছি যখন, ভিজতে বড়োই ইচ্ছে করে
ইচ্ছে করে যাই চ’লে যাই তিস্তার কি ডৌকের চরে
ওখানে আছে ঝিরঝিরে সুখ সবুজ ঝিনুক উপল নুড়ি
বাতাস ওড়ায় ওড়না শেমিজ, কুড়িয়ে জড়ায় আনন্দপুরী।

কিংবা কোনো বিজন পার্কে ফোয়ারা আর ফুলের সভায়
তদ্গত এক যুগল মূর্ত্তি দাঁড়িয়ে আছি জ্যোৎস্নাধারায়
হারিয়ে গেছে এই চরাচর দিকচিহ্ন চাওয়া পাওয়া
কী যায় আসে কেউ এলে গেলে বৃষ্টি বরফ তুষার হাওয়া

অথবা কোনো সাগর দ্বীপে, ঢেউ ভাঙছে ঢেউয়ে এবং
জলোচ্ছ্বাসে ভিজিয়ে যাচ্ছে হৃদয়-মনের সমস্ত রঙ,
সন্ধ্যা নামুক রাত্রি আসুক জোনাকি জ্বলুক এ সৈকতে
মুখোমুখি ব’সেই আছি অবকাশের এ ফুরসতে…

সংগোপনে গহন বনে ছন্দিত আলাপচারিতায়
হাঁটছি যখন, মর্মর-শ্বাস আন্দোলিত পাতায় পাতায়
চোখ রগড়ায় রোদ্দুরভুক পত্রালি আর গাছগাছালি,
আঁকছি মনে এ রম্যতা সৌম্যতা আর চোরাবালি।

খামখেয়ালি পাহাড়ি শহর কুয়াশা ও তুষার ছাওয়া
যাচ্ছি যুগল পাশাপাশি, ফার-সেগুনের হিমেল হাওয়া
যাচ্ছে ছুঁয়ে সূঁচের মতো, আমরা তখন আরো উন্মন
ভালবাসছি ওই হাওয়াকে স্নিগ্ধ উদার মুক্ত পবন।

ভালবাসায় ভাসছি যখন, ইচ্ছে তখন অন্ধ বধির
পরস্পরের সান্নিধ্যই অন্তরঙ্গ উষ্ণ অধীর
অকিঞ্চনের অভিমানেও ছলোছলো আয়ত নয়ন
সুখেও কাঁদি দুখেও কাঁদি, আবেগের অশ্রুতে প্লাবন।

 

মায়াকানন

ভালবাসতে ইচ্ছা করে, ইচ্ছা করে জড়িয়ে থাকি
আষ্টেপৃষ্ঠে, কষ্টেসৃষ্টে পাশেপাশেই ছড়িয়ে রাখি
সেই বাসনা, আনাগোনার অন্তরালেই জীবন যাপন
ব্যস্ত বিভোর কর্মযজ্ঞেই সাধ-সোহাগের সুখ-উদযাপন
মনের ছোঁয়া দেওয়া-নেওয়ার সময় বড়ো সংক্ষেপিত,
ফোন আলাপন বিরল বিষয় কাজের কথায় রয় সীমিত
প্রীত উদগ্রীব চাউনি-পরশ, বিবশ -করা ঝড়-শিহরণ
হারিয়ে যায় অন্য বাঁকে সরল পথের মোড়ের মতন,
মানিক রতন ঝিনুক নুড়ি কুড়াই যা পাই আর যা বাকি
এর-ই মধ্যে, সর্বশুদ্ধে সুখ-অসুখের অচিন পাখি
উড়ে বেড়ায় ভাঙাচুরায়, ঝিমোয় স্মৃতির বাগান বীথি;
ভালবাসার মায়াকানন হয়তো এমন অনিশ্চিতি।

 

তার ছোঁয়াতে

তার ছোঁয়াতে যাদু আছে, মধু আছে, আছে উষ্ণতা
মান-অভিমান পরাগ–বিরাগ ব্যথার রম্যতা
আনন্দ আর আশার মোহক, কুহক কথার জাল
সকাল বিকাল রাতবিরেতের তিয়াস অন্তরাল
উন্মনা ভাব স্বপ্ন-খোওয়াব ভাব-অভাবের গলি
দোয়েল শ্যামার শিস-দেওয়া সুখ মৌন শহরতলি
পলি-পড়া নদীর চড়ায় জলপরিয়া নাচ,
স্নিগ্ধ হিমেল বাতাস বিলোয় ভালবাসার গাছ;
কাছ থেকে দূর দূর থেকে কাছ কতোই সম্ভাবনা
ভাঙাগড়ার জল্পনা-জল অথই আনাগোনা;
হঠাৎ ক্ষুদ্র মতান্তরেই উগ্র সে আর অশান্ত
ভালবাসার টাপুরটুপুর ঝড় হবে তা কে জানতো?

 

বসন্ত এমন

বসন্ত কতোই এলো, এলো গেলো ইয়ত্ত্বা নাই
হাঁটছি হাঁটছি পথ এলোমেলো বসন্ত -সভায়
প্রকৃতির সবুজে অনল জ্বলে, হৃদয়ে তিয়াসঠীস
অধীর উষ্ণতা দ্যায় অনাগত প্রিয় মধুমাস
নিভৃত চরণে আসে পরিপাশে বরণ -ডালায়
সাজিয়ে রাঙিয়ে দিয়ে অপব্যয়ী পুষ্পিত মালায়
মিলনের বার্তাবহ মনপ্রাণ হৃদয় উজাড়
আনমনা অকারণ শিহরণে হৃদয়ের পাড়
ঢেউ ভাঙে ঢেউ ভাঙে ,মরু-গাঙে প্রমত্ত উদাস
ভাবের জোয়ার আসে কলোচ্ছ্বাসে, কৃপণ দ্বিধায়
নসীবকে দূষি আর স্বপ্ন পুষি তীব্র অভিধায়
আরক্ত আকুতি নিয়ে, বুকে নিয়ে যমুনা-বিলাস
খুঁজে ফিরি সবখানে খুঁজে ফিরি মানস-প্রতিমা
প্রকৃতির মতো মন অকাতর উদার মহিমা
যার রূপকথা , মননের যাদুর ছোঁয়ায়
অকিঞ্চন জীবন ভরিয়ে দ্যায় প্রণয় -তোড়ায়
কুণ্ঠাহীন অনিবার, সেই তাকে খুঁজে খুঁজে ফিরি
খুঁজে ফিরি বসন্তের কাছে এক নীরব ভিখিরি।

হঠাৎ পেয়েছি দেখা একদিন, চোখে চোখ রেখে
ধরেছি দু’হাত তার …কলঙ্ককে ডেকে
মেখেছি পরাগ-ছাই, আনন্দের বানে
আলিঙ্গন উন্মাদনা ভেসে গেছে সরল ধেয়ানে
জরোজরো থরোথরো অনুভূতি অবয়ব আর স্নায়ুকোষ
তছনছ নয়ছয় ফুলগাছ প্রেমের বাগান পরিতোষ
সৈকতে তখন শুধু তোলপাড় ঝড়ের হুল্লোড়
মরা গাঙে ঢেউ ভাঙে তালগাছ সুনামির তোড়,
মোড় ঘুরে গেল শূণ্য প্রতীক্ষার নীরস বাঁকের…
বসন্ত এমনো হয় চাঁদঝরা মৌন জোনাকের!

পশেনি কখনো আর সেই ছোঁয়া হৃদয়ে পশেনি
তেমন বসন্ত আর কখনো আসেনি!

বদরুদ্দোজা শেখু। কবি। জন্ম ১৯৫৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গরাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘিতে। অভাব অনটনের মধ্যে তাঁর বেড়ে উঠা। প্রথাগত শিক্ষায় স্নাতকোত্তর। পেশায় অবসরপ্রাপ্ত রাজ্য সরকারি কর্মচারী, নেশায় কবিতা লেখালিখি। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: অলৌকিক আত্মঘাত, দুঃস্বপ্নের নগরে নিভৃত নগ্ন, শব্দ ভেঙে...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..