প্রক্সি
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
“তুই আর কতদিন ওর খোঁজ করবি বল তো! দেশে ফিরলেই তোর এক কাজ।” ঐশী মৃদু হাসল। মা খুব কিছু ভুল বলেনি। কিন্তু কি বা করবে ও! নীলাঞ্জনের সাথে ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে বছর পাঁচেক হল। তখন ব্রতর বয়স সবে দুই। কিন্তু এখনও নীলাঞ্জনের আকর্ষণ থেকে বেরোতে পারেনি ঐশী। লোকটার মধ্যে একটা চুম্বক ছিল যেন। যখন পরিচয় হয়েছিল তখন নীলাঞ্জন বেকার। নিয়মিত কবিতা লিখত। লেখালিখি, ফটোগ্রাফি আর ঘোরাঘুরি এই ছিল নীলাঞ্জনের জীবন। লাদাখ ঘুরতে গিয়েই আলাপ হয়েছিল দুজনের। সে বয়সে নীলাঞ্জনের কেয়ারলেস বোহেমিয়ান অ্যাটিটিউডের প্রেমে পাগল হয়ে গিয়েছিল ঐশী। প্রেম হল। ক্রমশ সম্পর্কটা বিয়ে পর্যন্ত এগোল। কিন্তু নীলাঞ্জনের মত মানুষকে কি সংসারে বেঁধে রাখা যায়! মাঝে মাঝেই বেরিয়ে পরত এদিক ওদিক। চাকরি বাকরি জোগাড় করার কোন তাগিদ ছিল না। ঐশীর চাপে দু’এক জায়গায় জয়েন করলেও সেসবের আয়ু মাস তিনেকের বেশী ছিল না।
ওদিকে ঐশী বড় এম এন সি তে মোটা মাইনের চাকরি করত। দুজনের জীবন থেকে দুরকম প্রত্যাশা ছিল। ঐশী চাইত বিদেশে গিয়ে সেটল্ড করবে,জীবন টা আনন্দে কাটাবে। আর নীলাঞ্জনের জেদ ছিল চাকরি বা ব্যবসা করবে না, জীবনটা লেখালিখি করেই কাটাবে আর বাকি সময়টা ঘুরবে। কিন্তু এসব করে কি আর জীবন চলে! ঐশী বোঝানোর চেষ্টা করত অনেক, নীলাঞ্জন পাত্তা দিত না। বলত “তোমাদের মত নিয়মবন্দী জীবন কাটানোর থেকে মৃত্যু ভালো”। বছর দুয়েকের মধ্যে অশান্তি চরমে পৌঁছল। এরইমধ্যে ব্রত পৃথিবীতে এল। ঐশী ভেবেছিল এবার হয়ত ছেলের মুখের দিকে চেয়ে নীলাঞ্জন বদলে যাবে। কোথায় কি! নীলাঞ্জনের ভবঘুরে স্বভাবটা বরং আরও বেড়ে গেল। অনেক চেষ্টা করেছিল ঐশী। কিন্তু শেষপর্যন্ত আর পারল না। তারপর ডিভোর্স। নীলাঞ্জন একবারের জন্যও ঐশীকে আটকায়নি। ব্রতর কাস্টোডিও দাবি করেনি। একপ্রকার মুক্তি পেয়েছিল যেন নীলাঞ্জন।
ডিভোর্স হওয়ার পর ঐশী ব্রতকে নিয়ে ইউএসএ চলে যায়। তারপর থেকে নীলাঞ্জনের সাথে আর যোগাযোগ হয় নি। যতটুকু খবর পেয়েছে ডিভোর্সের পর পরই নীলাঞ্জন বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। এখনও শ্বশুর বাড়ির লোকের সাথে কথা হয় ঐশীর। কেউই সঠিকভাবে জানে না নীলাঞ্জনের খবর। বিভিন্নসময় বিভিন্নজায়গা থেকে উড়ো খবর পায় ঐশী। যেমন গতবার এক বন্ধু বলেছিল সে নাকি নীলাঞ্জনকে দেখেছে পন্ডিচেরিতে। ঐশী ছুটে গিয়েছিল। বলাবাহুল্য খুঁজে পায়নি নীলাঞ্জনকে।
“তোর কিন্তু একটা সংসার আছে। তুই দেশে এসে তোর এক্স হাজবেন্ডকে খুঁজতে চলে যাস!
এটা কিন্তু ঠিক নয়!”
“লোকটাকে তো ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম। দু’বছর সংসারও করেছি। কিছু না শুধু ও কোথায় আছে সেটা যদি একবার জানতে পারতাম”। বছরদুয়েক আগে বিনীতকে বিয়ে করেছিল ঐশী। অফিসেই আলাপ। বিনীতই প্রপোজ করেছিল ঐশীকে। ঐশীও বাস্তবের সাথে যুদ্ধ করতে করতে একটা আশ্রয় খুঁজছিল। কিন্তু সে আশ্রয় দীর্ঘস্থায়ী হয় নি। খুব অল্পসময়ের মধ্যেই ওদের সেপারেশন হয়। যদিও এ ব্যাপারে বাড়িতে কিছুই জানায়নি সে। নীলাঞ্জনের ওপর দুর্বলতাটা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি ঐশী। লোকটা ছকের বাইরে ছিল। নিজের টার্মে জীবনটা কাটাতে চেয়েছিল। ঐশী মাঝে মাঝে রিপেন্ড করে, ও তো পারত নীলাঞ্জনকে নিজের মত বাঁচতে দিতে। ও তো নিজে মোটা মাইনের চাকরি করত। সেটা দিয়ে সংসার দিব্যি চলে যেত। ডিভোর্সটা কি সত্যি দরকার ছিল! আসলে সমাজ একটা দেখার চোখ তৈরি করে দেয়। তার বাইরে কিছুই মানুষ সহ্য করতে পারে না। হয়ত এজন্যই শেষদিকে নীলাঞ্জনকে অসহ্য লাগত ঐশীর।
“ওরকম একটা দায়িত্বজ্ঞানহীন লোকের ওপর এখনও তোর আকর্ষণ আছে!”
“মা লোকটাকে তো ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম! সে লোকটা কোথায় হারিয়ে গেল সেটা নিয়ে কি কৌতুহল থাকা খুব অস্বাভাবিক!”
এবারও বিফল মনোরথ হয়ে হয়ত ফিরতে হবে ঐশীকে। ঐশী তা বিলক্ষণ জানে। তবে এবার খবরটাও এসেছে খুবই কাকতালীয়ভাবে। আর খুব নির্ভরযোগ্য সোর্স থেকে। অনির্বাণ, নীলাঞ্জন আর ঐশীর কমন ফ্রেন্ড। ব্যবসার প্রয়োজনে লখনউ গিয়েছিল অনির্বাণ। সেখানে চিকন ফ্যাক্টরির কাছে একজনকে দেখেছে যাকে দেখতে অনেকটা নীলাঞ্জনের মত। ভিড় রাস্তায় নামটা ধরে ডেকেছিল অনির্বাণ। কোন সাড়া পায়নি। তবে অনির্বাণ নিশ্চিত ওই ব্যক্তি নীলাঞ্জনই। হাঁটাচলা একদম নীলাঞ্জনের মত। দেরি করেনি ঐশী। ছুটি নিয়ে দেশে চলে এসেছে দিনপনেরোর জন্য। দিল্লীতে কোম্পানির একটা কনফারেন্স আছে, অতএব অজুহাত খুঁজতেও বিশেষ অসুবিধে হয় নি। নীলাঞ্জন-এর জন্য এখনও ঐশীর খুব মন কেমন করে। সময় বয়ে গিয়েছে অনেকটা। নীলাঞ্জনের জন্য খুব কষ্ট হয় ঐশীর। সে আরেকটু ধৈর্য রাখলে নীলাঞ্জনের এমন অবস্থা হত না। কে জানে কি করছে এখন ও! কাজ টাজ তো কিছুই করত না। একটা ম্যাগাজিনে লিখত, পরে সেটাও ছেড়ে দিয়েছিল। কি করে ওর চলছে কে জানে! বেঁচে আছে তো নীলাঞ্জন! ঐশীর চোখটা প্রায় বুঁজে আসছিল। হঠাৎ ঐশী আঁতকে উঠল।
লখনউ এয়ারপোর্ট থেকে হোটেলটা বেশ দূরে। জানালার কাঁচ দিয়ে ঐশী নজর রাখছে মানুষের ভিড়ে। একটা মুখ, তার সাথে জড়িয়ে থাকা অসংখ্য স্মৃতি। ঐশী কিছু বুঝে উঠতে পারছে না কোথায় খুঁজবে ওকে এত বড় শহরে! এ একপ্রকার অসম্ভব। তবে ভালোবাসা মানুষকে দিয়ে অনেক কিছু করিয়ে নেয়। হোটেলে পৌঁছে অনির্বাণকে একটা ফোন করল ঐশী। চিকন ফ্যাক্টরির অ্যাড্রেসটা নিল। বিন্দুমাত্র দেরী না করে বেরিয়ে পড়ল নীলাঞ্জনের খোঁজে। লখনউ শহরটা ইতিহাসের শহর। বড়া ইমামবড়া, রুমি দরওয়াজা পেরিয়ে চিকন ফ্যাক্টরি। ঐশীর চোখ তাড়া করতে থাকল চারদিক। ঘণ্টাদুয়েক খোঁজার পরও ঐশী এমন কাউকেই খুঁজে পেল না যাকে নীলাঞ্জনের মত দেখতে। হতাশ হয়ে হোটেলে ফিরে এল ঐশী। যে জীবন থেকে একবার হারিয়ে যায় তাকে খুঁজে পাওয়া হয়ত এমনই কঠিন। হাতে আরও একদিন আছে। ঐশী মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল নীলাঞ্জন যদি লখনউ-এ থেকে থাকে তবে সে নীলাঞ্জনকে খুঁজে বার করবেই।
পরেরদিন সকাল থেকেই শুরু হল আবার খোঁজ। নীলাঞ্জনের ফটো দেখিয়ে অনেককে জিজ্ঞেস করল ঐশী। কেউ কেউ সোজাসুজি বলে দিলেন এমন কাউকে দেখেননি, কেউ আবার পরামর্শ দিলেন পুলিশকে জানানোর জন্য। সারাদিন চেষ্টা করার পর সামান্যতম যোগসূত্রও পেল না ঐশী। প্রতিবারের মত এবারও ব্যর্থ হয়ে ফিরতে হবে। রাগ হচ্ছে অনির্বাণের ওপরে। ও যদি একবারও লোকটাকে গিয়ে প্রশ্ন করত! নীলাঞ্জন তো বাড়ি ফেরার জন্য বাড়ি ছাড়েনি। ও ধরা দিতে চায় না। নইলে অন্তত একবার যোগাযোগ করত। তবু এত বছরে একবারও কি খোঁজ নেবে না। মানুষটা স্বভাবে ভবঘুরে ছিল কিন্তু একবারের জন্যও ঐশী বা ব্রতের খোঁজ করবে না তা হতে পারে না। তবে কি সত্যি নীলাঞ্জন আর নেই! ঐশী কি একটা অস্তিত্বহীন মানুষের পেছনে ছুটে বেরিয়েছে! কাল আবার ফেরার পালা। লখনউ থেকে কলকাতা, সেখান থেকে ইউএসএ।
কাল রাতে ঐশী নিজেকে অনেক বুঝিয়েছে এবার এই পাগলামো বন্ধ করা উচিত ওর। ব্রত বড় হচ্ছে। এভাবে নীলাঞ্জনের খোঁজ পাওয়া যাবে না, এত চেষ্টা করেও তো কিছু হল না। আর নীলাঞ্জনের খোঁজ ও করবে না। নূতন করে সবকিছু শুরু করতে হবে। আজ সন্ধ্যায় ফ্লাইট। সারাটাদিন কোন কাজ নেই ঐশীর। বাবা ছোটবেলায় বলতেন “লখনউ গেলে কখনও ভুলভুলাইয়াটা দেখতে ভুলে যাস না, মাস্টারপিস!” ঐশী ভাবল মনটাকে একটু শান্ত করা দরকার। আজকের দিনটা সে নিজেকে দেবে, নিজের মত করে কাটাবে। ঐশী বেরিয়ে পড়ল ভুলভুলাইয়ার উদ্দেশে।
বড়া ইমামবাড়া সত্যি সবদিক থেকে অতুলনীয়। এমন অদ্ভুত কনসেপ্ট নিয়ে কাজ খুব কম হয়েছে এ দেশে। গতকাল এসেছিল এখানে ঐশী নীলাঞ্জনের খোঁজে। তাই এই অদ্ভুত স্থাপত্যের নির্যাস উপভোগ করার সময় পায়নি সে। নীচের তোলায় সুবিশাল ইবাদতখানা। তার মধ্যেই শায়িত আছে আসফ-উদৌল্লা আর কিফায়েতউল্লার কবর। একজন ছিলেন নবাব যার পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি হয়েছিল এ স্থাপত্য, অন্যজন এর প্রধান স্থপতি। ঐশীর ইতিহাস নিয়ে খুব আগ্রহ নেই, এসব ডিটেলস সে জেনেছে নীলাঞ্জনের কাছ থেকে। ওর এসব বিষয়ে খুব আগ্রহ ছিল, গড়গড় করে বলে দিত স্থাপত্যের সাথে জড়িয়ে থাকা ইতিহাসগুলো।
বলত “আমরা একসাথে পুরো ইন্ডিয়া টুর করব একবার! দেখবে বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছে ঘুচে যাবে। কত ডাইমেনশন আছে বল দেশটার!” আজ সকালেই ঐশী প্রতিজ্ঞা করেছিল নীলাঞ্জনের কথা আর ভাববে না! কিন্তু ঐশীর জীবনের সাথে নীলাঞ্জনের যেন এক অচ্ছেদ্য সম্পর্ক।
“ম্যাডাম! গাইড চাহিয়ে আপকো!”
ভুলভুলাইয়ায় গাইড ছাড়া কার্যত যাওয়া অসম্ভব। একহাজার উনত্রিশটা পথ। কিন্তু শুধু একটামাত্র পথ দিয়ে যাওয়া যাবে টেরেসে। ঐশী গাইডের সাথে এগিয়ে গেল। একেকজন একসাথে প্রায় সাত আটজনকে গাইড করে। পঁয়তাল্লিশটা সিঁড়ি ওঠার পড়ে ডানদিকে গেলেই ভুলভুলাইয়া। ঐশীই শুধু একা এসেছে। বাকিরা ফ্যামিলির সাথে। এমনিতে ভেতরটা অন্ধকার, কোথাও আবার জানালা দিয়ে আলো এসে ধুয়ে দিচ্ছে অন্ধকার। যেন এক আলোআঁধারির খেলা। গাইড বলে চলেছে একের পর এক কাহিনী। যদিও বেশীরভাগটাই জানে ঐশী, নীলাঞ্জনের দৌলতে।
মিনিট পনেরো পর ঐশীরা পৌঁছে গেল টেরেসে। চারদিকটা ঝাড়োকা দিয়ে ঘেরা। সবাই ফটো তুলছে। ঐশীর এসব ভালো লাগে না আর। ফ্যামিলি বলতে যা বোঝায় সেই ত গড়ে উঠল না। বিনীতের সাথে সম্পর্কটাও ঠিক ওয়ার্ক করল না। ভালো না বেসে শুধু অ্যাডজাস্টমেন্ট করে বোধহয় সংসার করা যায় না। “চলিয়ে ব অপ লোক মুঝে গাইড কিজিয়ে!” এ ত রীতিমত পরীক্ষা। নীচে নামার সময় নাকি গাইডরা এমন খেলাই খেলে। ঐশী একটা ছক করে এগিয়ে গেল। সবাই যে যার মত এক্সপেরিমেণ্ট করছিল। সবার পেছনে গাইড। কারোর ভুল হলেই পেছন থেকে সঠিক দিক দেখিয়ে দিচ্ছে সে। কিছুদূর যাওয়ার পর ঐশী পেছনে তাকাল। কেউ কোথাও নেই। ঐশী একটু অবাক হল। এই ত একটু আগেই তো গাইড বলছিল “ম্যাডাম রাইট মে!” ঐশী তো সঠিক দিকেই এসেছিল। তবে কি বুঝতে কিছু ভুল হল। ঐশী এগিয়ে গেল। সব গুলিয়ে যাচ্ছে। এ ত আদতেই ভুলভুলাইয়া। চেষ্টা করল ঐশী। আবার একই জায়গায় ফিরে এল। এখন তবে কি করবে ঐশী। চিৎকার করবে! কে শুনবে! ঐশী এদিক ওদিক ছুটতে লাগল। লাভ কিছু হল না।
ঐশী চিৎকার করতেই যাচ্ছিল। হঠাৎ থেমে গেল “কেমন আছ!” ওঠার সময় গাইড বলেছিল এখানে দেওয়ালে কান পেতে রাখলে অনেক দূর থেকে বলা কথাও পরিষ্কার শোনা যায়। গলাটা খুব চেনা। “ভয় পেয়ো না! আমি আছি ত!” এবার তো আর দেওয়াল থেকে আসছে না কথাটা, কেউ পেছন থেকে বলছে। ঐশী পেছনে তাকাতেই চমকে উঠল “নীলাঞ্জন!”
মুখে একগাল কাঁচাপাকা দাড়ি। ভাঙা গলার স্বর। চেহারাটা যেন প্রখর তাপে ঝলসে গেছে। একবারে চেনা সত্যিই অসম্ভব। যখন অনেক কথা বলার থাকে তখন অনেক সময় কোন কথাই বলা হয়ে ওঠে না। ঐশী বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। চিবুক গড়িয়ে পড়ছে চোখের জল।
“মাস তিনেক এখানেই গাইডের কাজ করছি। কালই তোমাকে দেখলাম এখানে। খুব ইচ্ছে হল গিয়ে কথা বলি! তারপর ভাবলাম না তুমি বিয়ে করেছ এখন এভাবে কথা বলাটা ঠিক নয়! আজ যখন তোমাকে আবার দেখলাম, ভাবলাম এখানে আসার পেছনে তোমার ঠিক কোন কারণ আছে। তুমি একা এসেছ। ভাবলাম আমি নই তো সেই কারণ! গতমাসে অনির্বাণ আমাকে দেখে চিনে ফেলেছিল। আমি দুইয়ে দুইয়ে চার করলাম। তারপর থেকেই তোমাকে ফলো করছিলাম।”
ঐশী কি বলবে বুঝতে পারছিল না। নীলাঞ্জন কি জানে গত কবছর কিভাবে ঐশী ওকে পাগলের মত খুঁজেছে। “এখনও ভালোবাসো আমায়!” ক্লান্ত গলায় প্রশ্ন করল নীলাঞ্জন।
“বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে গেলে কেন!” নীরবতা ভাঙল ঐশী।
নীলাঞ্জনের চোখেও জল “তুমি চলে গেলে! ব্রত চলে গেল! আর মন টিকল না। বেরিয়ে পড়লাম। তারপর একেক জায়গায় একেক কাজ! মন টিকত না কোথাও। কখনও পণ্ডিচেরি, কখনও দিল্লী। তোমার আর ব্রতর খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করতাম নানাভাবে। একদিন জানতে পারলাম তুমি বিয়ে করেছ। ব্যস সব পিছুটান শেষ!”
“তোমার আগেওবা কি পিছুটান ছিল নীলাঞ্জন। কখনো ভাবতে আমাদের কথা! ভালোবেসেছিলে আমাকে! যদি ভালোবাসতে তবে বদলে যেতে তুমি।”
মৃদু হাসল নীলাঞ্জন “আমার মনেও তো একটা ভুলভুলাইয়া আছে, আমি ওর থেকে বেরোতে পারি না। তুমিও তো পারতে আমাকে ওখান থেকে বের করতে!” দু’জন দু’জনের দিকে শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নীলাঞ্জনকে জড়িয়ে ধরল ঐশী। চোখের জল বাঁধ ভাঙল “ফিরে চল তুমি!”
নীলাঞ্জন মৃদু হেসে বলল “আর তোমার সংসার!”
ভুলভুলাইয়ার আলোআঁধারির সম্মোহনের সাথে সাথে ক্রমশ তরলায়িত হল অভিমানগুলো। সময়ের দূরত্বই যেন দু’জনকে দু’জনের এতটা কাছে নিয়ে এল। এতদিনের না বলা কথাগুলো যেন কিছুতেই বাঁধ মানছে না। সময় গড়িয়ে বিকেল হল। নীচে নেমে এল দু’জন। পেছনে দাঁড়িয়ে তখন অওয়ধের গৌরব। যেখানে হারিয়ে যাওয়ার ভয় সেখানেই মিলন হল হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসার। এও কম আশ্চর্যের কিসের!
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..
বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..