চেয়ারম্যান সাহেব খুব অনেস্ট
মাকেন্দো গ্রামে ভীষণ বিপর্যয় নেমে আসে। এ গ্রামের কৃষক ও কারিগরেরা শ্রমে-রক্ত-ঘামে যে টাকা-পয়সা…..
প্রিজন ভ্যানে বসা পাশের আসামি চোখ গোল গোল করে বলে, দাদা আপনার সাহস তো কম না; আপনে একজন সংখ্যালঘু হয়েও ‘ভুয়া মন্ত্রী’ সেজেছিলেন।
ভুয়া মন্ত্রী ধমক দিয়ে বলে, দেখুন আমাদের সমাজে ভুয়ারাই সংখ্যাগরিষ্ট। অযথা ধর্ম দিয়ে গুরু-লঘু ঠিক করবেন না। আর আপনি কোন আক্কেলে হাইকোর্টের বিচারপতি সাজতে গেলেন; ভুয়া ইংরেজি বলে ধরা পড়লেন তো ঠিকই।
–অধিকাংশ লোকেরেই ভুয়া ইংরেজি বলতে দেখি দাদা; আমারে দোষ দেন ক্যান; সব দোষ শিক্ষা ব্যবস্থার। এই শিক্ষা-ব্যবস্থারে বঙ্গোপসাগরে ফালাইয়া দেয়া উচিত।
আদালত কক্ষে থমথমে পরিবেশ। এই প্রথম একজন ভুয়া মন্ত্রী মামলার শুনানি চলছে। আদালত কক্ষে উপস্থিত লোকজন ফিসফিস করে আলোচনা করে, এতোদিন ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট, ভুয়া পুলিশ, ভুয়া সেনা-কর্মকর্তা দেখেছি; কিন্তু ভুয়া মন্ত্রী এই প্রথম দেখলাম। আর কী কী যে দেখতে হবে খোদা জানেন!
অডিও পস্টকাস্ট শুনুন এইখানে
https://www.facebook.com/OngshumaliMagazine/videos/2131784433537591/
বিচারক আদালতে প্রবেশ করতেই সবাই ধড় মড় করে উঠে দাঁড়ায়। বিচারক এতো গম্ভীর হয়ে আছেন যে মনে হচ্ছে উনার জন্মের সময় উনার মুখে এক চামচ মধু দিতে ভুলে গিয়েছিলো সবাই। বিচারকের মুখমণ্ডল জুড়ে তাই শোক-সভার গাম্ভীর্য।
সরকার পক্ষের আইনজীবী কাঁপা কাঁপা গলায় বলেন, ইওর অনার; আজ এমন এক মামলার শুনানিতে অংশ নিতে হচ্ছে যা বড়ই পরিতাপের বিষয়। এক ব্যক্তি বন ও পরিবেশ মন্ত্রী সেজে লোকজনকে ঠকিয়ে প্রায় ৫০ লাখ টাকা তুলে ফেলেছে। পবিত্র সংবিধানের এরকম মারাত্মক লংঘন আগে কখনো দেখিনি।
ভুয়া মন্ত্রীর আইনজীবী বলেন, ইওর অনার; সরকার পক্ষের আইনজীবী এতো অতিরঞ্জিত অভিযোগ তুলছেন যেন, এদেশে সংবিধানের মর্যাদা ভীষণ সমুন্নত রাখা হয়েছে। কত বন ও পরিবেশ মন্ত্রী এলো গেলো; কত উন্নয়ন প্রকল্প ভোগে গেলো; আর উনি এসেছেন পবিত্রতার গপ্পো দিতে। ইওর অনার পরিবেশ খাতের পারফরমেন্স বিচার করে বলুন; কোন পরিবেশমন্ত্রী ভুয়া ছিলেন না!
সরকার পক্ষের আইনজীবী ধমক দিয়ে বলেন, মুখ সামলে কথা বলুন। সব সহ্য করতে পারি; মন্ত্রীর অমর্যাদা সহ্য করতে পারবো না বলে দিলাম কিন্তু। একটা ফুন দিয়া হেলমেট বাহিনী নিয়া আসবো; শুনানি শেষে বাড়ি ফিরতে হবে আপনাকে; ভুইলা যাইয়েন না।
বিচারক মুখের গাম্ভীর্যের ব্যকরণ সমুন্নত রেখে বলেন, আসামিকে জেরা করুন। ভুয়ামন্ত্রীকে কাঠগড়ায় তুলে দিতে দিতে তাকে গ্রেফতারের সাফল্যের বিরাট হাসি প্রস্ফুটিত করে তোলে দুটি পুলিশ। নিয়মিত মিডিয়ার সামনে আসামি নিয়ে ফটো সেশান করে করে, একটা প্রফেশনাল সেলিব্রেটিসুলভ হাসি, মুখের জ্যামিতিতে চিরস্থায়ী হয়ে গেছে তাদের।
বিচারক গম্ভীর কন্ঠে বলেন, আপনারা হাসছেন কেন, মামুর বিয়ে খেতে এসেছেন নাকি! ভুলে যাবেন না এটা আদালত।
পুলিশ দুটির মুখ শুকিয়ে পাংশু হয়ে যায়। সরকার পক্ষের উকিল আসামিকে প্রশ্ন করেন, এই যে ভুয়া মন্ত্রী; বলেন এতো বড় সাহস কোথায় পেলেন! আসামি বলেন, ‘এই যে’ কী সম্বোধন, মন্ত্রীদের সামনে গিয়ে স্যার স্যার-ভাই ভাই করে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন; আর এখানে এসে বাহাদুরি দেখাচ্ছেন। যতক্ষণ ‘ভুয়া’ প্রমাণিত না হচ্ছি; ততক্ষণ কমপক্ষে দাদা বলুন। কিছু এটিকেট শিখুন। কোন জঙ্গল থেকে উঠে এসেছেন!
বিচারক বলেন, উনি ঠিকই বলেছেন, অভিযুক্ত আসামি মানেই অপরাধী নয়; আর আসামি না অপরাধী সে রায় আমি পরে দেবো; এটা সরকারি উকিলের এখতিয়ার নয়। সরকারি উকিল একটু ঘাবড়ে যান। ভুয়া মন্ত্রীর উকিল বলেন, বেছে বেছে শিষ্টাচার জানে না এমন লোকজনকে কেন যুগে যুগে সরকারগুলো আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেয় জানিনা।
ভুয়ামন্ত্রী কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বলেন,মেধার মূল্যায়ন না থাকায় যথাযথ নিয়ম মেনে নিয়োগ হয় না বলেই আজ সার্বিক পরিস্থিতি এতো বিশৃংখল। আমি তো বুঝতে পারিনা; জনগণের কোন ভোট না পেয়ে মানে জনপ্রতিনিধিত্ব না করে কী করে পতাকা উড়িয়ে ঘোরে মন্ত্রীরা। তাদের কী বিবেক নেই; বিবেচনাবোধ নেই!
বিচারক একটু নড়ে চড়ে বসেন, তারপর বলেন, দু’ঘন্টা পর আদালত আবার বসবে। এর মাঝে নির্বাচন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিকে আদালতে তলব করা হোক।
ঘন্টাদুয়েক পর হাঁপাতে হাঁপাতে আদালতে পৌঁছান নির্বাচন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের জাস্টিফিকেশান অনুষদের ডিন। তাকে সরাসরি কাঠগড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। বিচারক জিজ্ঞেস করেন, ভোট না পেয়ে লোকজন ভুয়া জনপ্রতিনিধি সেজেছে, এমন অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। তাই আপনার সাক্ষ্য প্রয়োজন।
নির্বাচন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের জাস্টিফিকেশান অনুষদের ডিন হেসে বলেন, মাননীয় আদালত, দেশের মানুষের যখন সব শখ মিটে যায়; তখন তারা আর ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে আসে না। সেক্ষেত্রে আমরা কী করবো!
বিচারক বলেন, আপনি যা বলেন তা কী বুঝে বলেন! নাকি চিন্তা না করেই কিছু একটা বলেন!
জাস্টিফিকেশান অনুষদের ডিন বলেন, সজ্ঞানে সচেতনভাবে বলছি মাননীয় আদালত!
–তা কী কী শখ মিটেছে ভোটারদের।
–কিছুই তো বাকি নাই মাননীয় আদালত, স্কুলে বাচ্চাদের পড়ানোর শখ মিটেছে, হাসপাতালে ট্রিটমেন্টের শখ মিটেছে, নিরাপদ সড়কের শখ মিটেছে, ঘুষ-দুর্নীতিমুক্ত সরকারি সেবার শখ মিটেছে, নারী ও শিশুদের নিরাপত্তার শখ মিটেছে, বিচার বহির্ভুত হারকিউলিসের আদালতের ন্যায়বিচারের শখ মিটেছে, সুষ্ঠু ও অবাধ ভোটের শখ মিটেছে, সুষ্ঠু ভোট পরিচালনার জন্য আমাদের পিঠা ভাগাভাগি করে খাওয়ার ফেস্টিভ্যালের শখ মিটেছে, সর্বোপরি গণতন্ত্রের শখ একেবারে মিটে গেছে।
মাকেন্দো গ্রামে ভীষণ বিপর্যয় নেমে আসে। এ গ্রামের কৃষক ও কারিগরেরা শ্রমে-রক্ত-ঘামে যে টাকা-পয়সা…..
এক রাজার রাজ্যে কিছু চাল ব্যবসায়ী একজোট হয়ে ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতার কাছে গিয়ে বললো,…..
স্ত্রী তার নির্বাচন বিশেষজ্ঞ। ঐ একবার মঈন মামাকে দুটি ঘোড়ামন্ত্রে বশ করে ওপাড়ার প্রণব সাধু…..
জোছনা করেছে আড়ি আসে না আমার বাড়ি গলি দিয়ে চলে যায়, গলি দিয়ে চলে যায়…..