করাচিতে নজরুল
করাচি বন্দরে এককালে গ্রিক-পারসিক-আরবীয় সওদাগরেরা নোঙ্গর করেছে; অনেক স্থাপত্য চিহ্ন আজো রয়ে গেছে; যা…..
কার্ল মার্ক্স ( ১৮১৮ – ১৮৮৩) দুটি অসাধারণ গ্রন্থ রচনা করেছেন। একটি দাস ক্যাপিটাল। সহজ বাংলায় পুঁজি। আরেকটিকে গ্রন্থ বলছি পর্যাপ্ত সম্ভ্রম জানাবার ইচ্ছায়, আসলে ওটি একটি প্যামফ্লেট, পুস্তিকা। ওর নাম কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো। মার্ক্স এবং ফ্রিডরিশ এঙ্গেলস (১৮২০ – ১৮৯৫), এই দুজনের চিন্তা ভাবনা, দৃষ্টিভঙ্গি, ভাবধারা, মিলিয়ে মিশিয়ে মার্ক্সবাদ।
তো মার্ক্সবাদের মূল কথাটা হল শ্রমিকশ্রেণিই মানবসমাজের সবচাইতে অগ্রণী অংশ। তাদের নেতৃত্বে শ্রেণিসংগ্রামের পথে শোষণের অবসান হবে। পুঁজির আমলে রাষ্ট্র পুঁজির সেবাদাস। তাই পুঁজির বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে রাষ্ট্রীয় ধারণার বিরুদ্ধেও লড়তে হয়। রাষ্ট্র থাকবে, আর শোষণ শাসন থাকবে না, এ হয় না।
১৮৪০ সালের দিকে কার্ল মার্ক্স তাঁর পিএইচডি থিসিস লিখছিলেন। তখন মার্ক্সের বয়স বাইশ বছর। তাঁর গবেষণা সন্দর্ভের শিরোনামটি এ রকম : The Difference Between the Democritean and Epicurean Philosophy of Nature। গবেষণা পত্র রচনা ১৮৪১ নাগাদ সম্পন্ন হয়ে গেল। লেখাটি সম্পর্কে এভাবে বলা হল, “a daring and original piece of work in which Marx set out to show that theology must yield to the superior wisdom of philosophy”.
এই সন্দর্ভের মধ্যে বহু বিতর্কিত উপাদান ছিল, যেগুলিকে বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের রক্ষণশীল অধ্যাপকেরা বিরক্তিকর গণ্য করবেন আশঙ্কা করে মার্ক্স তাঁর সন্দর্ভটি তুলনামূলক ভাবে কম রক্ষণশীল জেনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পেশ করেন। এই জেনা বিশ্ববিদ্যালয় ১৮৪১ সালের এপ্রিল মাসে কার্ল মার্ক্সকে পিএইচডি উপাধি দেন।
মার্ক্স অধ্যাপনা পেশায় যুক্ত হতে চেয়েও পাননি। সংবাদপত্র ও পত্রিকার সাংবাদিক লেখক আলোচক হয়েছেন।
চৌষট্টি বছর বয়সে, অর্থাৎ মোটামুটি ভাবে পরিণত বয়সে, ১৮৮৩ সালে ১৪ মার্চ তারিখে মার্ক্সের দেহাবসান হল। মৃত্যুর আগে তিনি থাকতেন লণ্ডনে, অবশ্য তখন তিনি কোনো রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করতেন না। ১৮৪৫ সাল থেকেই মার্ক্স রাষ্ট্রহীন ছিলেন।
২
মার্ক্সের জীবৎকালেই গরিবদের তরফে শাসনভার ছিনিয়ে নেবার ঘটনা ঘটে গেল। সময়টা ১৮৭১। প্রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ চলছে ফ্রান্সের। এরই মধ্যে ফ্রান্সের সেনাবাহিনীর একাংশের মধ্যে শ্রমিকশ্রেণির বৈপ্লবিক চিন্তাভাবনা নাড়া দিয়েছে।
১৮৭১ সালের মার্চ নাগাদ জার্মান সেনাবাহিনীর হাতে ফরাসি সেনাবাহিনী সম্পূর্ণভাবে পর্যুদস্ত হয়ে গেল।
এই সময়ের আগেই ফ্রান্সের গরিব মানুষের মধ্যে ফরাসি সরকার ও প্রশাসনের প্রতি তীব্র ঘৃণা গড়ে উঠেছিল। লুইস চার্লস দেলেসক্লুজ, জারোস্লাভ ডাব্রোওস্কি, ইউজিন ভারলিন প্রমুখ বিপ্লবীর নেতৃত্বে ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে প্যারিসে সাধারণ মানুষের নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়। ওই হল পারী কমিউন। এটা বেশিদিন টেঁকে নি। ১৮ মার্চ ১৮৭১ প্রতিষ্ঠা হয়ে দুই মাস এক সপ্তাহ তিনদিন পর, ২৮ মে তারিখে পারী কমিউন ধ্বংস হয়ে যায়। জাতীয়তাবাদী ফরাসি সেনাবাহিনী কমিউনের সংগ্রামীদের ভয়াবহ ভাবে আক্রমণ করে। ২১ মে সেই আক্রমণ শাণিয়েছিল ফরাসি জাতীয়তাবাদী সেনাবাহিনী। এক সপ্তাহ ধরে প্রায় পনেরো হাজার মানুষকে খুন করে এই বাহিনী ইতিহাসের চাকা উলটো দিকে ঘুরিয়ে দিল।
তবু দুই মাস এক সপ্তাহ তিনদিন সময়সীমার মধ্যেই পারী কমিউন বিস্তর জনদরদী প্রগতিশীল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। ধর্মীয় ব্যবস্থাকে কোণঠাসা করে দিয়ে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাসি প্রতিষ্ঠা করেছিল। রাষ্ট্রের সঙ্গে চার্চের সম্পূর্ণ বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দিয়েছিল। শিশুশ্রম বন্ধ করেছিল। আর মালিক যদি কারখানা ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে তেমন কারখানা পরিচালনার জন্য শ্রমিকেরা দখল করে নিতে পারবে, এমন অধিকার দিয়েছিল।
পারী কমিউনের এই স্পর্ধা মার্ক্স এঙ্গেলসকে গভীরভাবে আপ্লুত করেছিল। ওঁরা বলেছিলেন, দ্যাখো, ডিকটেটরশিপ অফ প্রলেতারিয়েত কাকে বলে পারী কমিউনকে দেখে শেখো।
৩
মার্ক্স চিরতরে চোখ বুজলেন ১৮৮৩ সালে। ১৪ মার্চে। তার পরে পরেই আমেরিকার শ্রমিকেরা সংগঠিত হচ্ছিল। ১৮৬৭ থেকেই আইন হয়েছিল মালিকেরা শ্রমিকদের আট ঘণ্টার বেশি সময় ধরে কাজ করাতে পারবে না। কিন্তু আইন রয়ে গিয়েছিল বইয়ের পাতায়। আক্ষরিক অর্থেই মুখটি গুঁজে। সরকার ও প্রশাসনেরও আইনটির বাস্তবায়নে উদ্যোগ দেখা যেত না। সাধারণ ভাবে সরকার ও প্রশাসনের উপর তলার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মালিকদের একটা সাঁট থাকে। তারা সহজে মালিকদের চটাতে চায় না।
১৮৮৪ সালে গরমকালে, অর্থাৎ মার্ক্স সাহেবের দেহাবসানের বছরটাকের মধ্যেই আমেরিকার সংগঠিত ট্রেড ও লেবার ইউনিয়নের ফেডারেশন আট ঘণ্টা সময়সীমা মেনে কাজের দাবিতে গোটা আমেরিকা জুড়ে আন্দোলন গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করে। ফেডারেশন স্থির করেন যে, ১৮৮৬ সালের পহেলা মে তারিখে দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু করবেন। দুই বছর ধরে তার প্রস্তুতি চলল। মালিকদের কাছে শ্রমঘণ্টার তাৎপর্য নিয়ে চিঠি পাঠাল ফেডারেশন। মালিকদের মতামত জানতে চাইল। লক্ষ্য ছিল তাদের মনোভঙ্গির পরিবর্তন। ফেডারেশন আরো বলল শিশুশ্রম বন্ধ করো। শিশুদের বড় হতে দাও। শৈশবেই পেটের দায়ে কম মজুরিতে কাজ করতে এলে লেখাপড়া শিখবে কখন? শ্রমিকেরা নিজেদের দাবিকে উচ্চে তুলে ধরে গান বাঁধল। এই ভাবে ধৈর্য ধরে একটা পরিকল্পিত সুশৃঙ্খল আন্দোলন গড়ে তুলতে চাইছিলেন যাঁরা, তাঁদের মধ্যে লুসি পারসনস আর অ্যালবার্ট পারসনস বিখ্যাত এক দম্পতি
লুসি এলডাইন গঞ্জালেস পারসনস (১৮৫১ – ১৯৪২) ছিলেন অসাধারণ বক্তা আর শ্রমিক সংগঠক। বিপ্লবী সমাজতন্ত্রের চর্চা করতে করতে তিনি কমিউনিস্ট হয়ে উঠেছিলেন, সেইরকম কমিউনিস্ট যারা শ্রেণিদ্বন্দ্ব ও শ্রেণিসংগ্রামের প্রতি আস্থাবান।
অ্যালবার্ট রিচার্ড পারসনস (জুন ২০, ১৮৪৮ – নভেম্বর ১১, ১৮৮৭) কৈশোর থেকেই দিনবদলের স্বপ্ন দেখতেন।
১৮৭১ সালে পারী কমিউনের ঘটনা সদ্যোতরুণ অ্যালবার্ট পারসনসকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। অ্যালবার্ট নিজেকে কমিউনিস্ট বিপ্লবী হিসেবে ভাবতে শুরু করেন। পরের বছর ১৮৭২ সালে তিনি এবং লুসি গঞ্জালেস বিবাহ করেন। শুধুমাত্র নিজেকে কমিউনিস্ট ভেবেই অ্যালবার্ট ক্ষান্ত হননি, শ্রমিকশ্রেণির লড়াকু সংগঠন গড়ে তুলতেও আত্মনিয়োগ করেছেন।
৪
আমেরিকার সোশিয়ালিস্ট লেবার পার্টি ১৮৭৭ সালের ডিসেম্বর মাসে নিউ জার্সির নেওয়ার্কে একটি কনভেনশন আয়োজন করেন। অ্যালবার্ট সেখানে ডেলিগেট হিসাবে যোগদান করেন।
আমেরিকার ওয়ার্কমেনস পার্টি নির্বাচন আয়োজন করেছিল সেখানে প্রদত্ত ভোটের ছয়ভাগের একভাগ অর্জন করে অ্যালবার্ট চিকাগো শহরের অল্ডারম্যান হন।
১৮৭৭ এই গ্রেট রেলওয়ে ধর্মঘট হয়। তার আয়োজন করতে চিকাগো মার্কেট স্ট্রিট সমাবেশে অ্যালবার্ট বক্তা হিসেবে আমন্ত্রিত হন।
১৮৭৯ তে বছরের শেষের দিকে সোশিয়ালিস্ট লেবার পার্টির দ্বিতীয় জাতীয় কনভেনশন হয়েছিল। অ্যালবার্ট সেই কনভেনশনে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু ক্রমেই তিনি প্রথাগত শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতি শ্রদ্ধা হারাচ্ছিলেন। তথাকথিত শ্রমিক ইউনিয়নের ভিতরের অসংগতিগুলি, নিয়মতান্ত্রিকতাগুলি অ্যালবার্টকে ক্লান্ত করছিল। তিনি ক্রমশঃ প্রথাগত শ্রমিক ইউনিয়নের বিভিন্ন ধরনের কাজের থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে দিনবদলের উপযোগী কোনো সংগঠন তৈরি করতে চাইছিলেন।
এই লক্ষ্যে অ্যালবার্ট পারসনস দি অ্যালার্ম নামে একটি পত্রিকা বের করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। শ্রমিকেরা নিজেদের দাবিকে উচ্চে তুলে ধরে গান বাঁধল। এই ভাবে ধৈর্য ধরে একটা পরিকল্পিত সুশৃঙ্খল আন্দোলন গড়ে তুলতে চাইছিলেন যাঁরা, তাঁদের মধ্যে লুসি পারসনস আর অ্যালবার্ট পারসনস বিখ্যাত এক দম্পতি।
লুসি এলডাইন গঞ্জালেস পারসনস (১৮৫১ – ১৯৪২) ছিলেন অসাধারণ বক্তা আর শ্রমিক সংগঠক। বিপ্লবী সমাজতন্ত্রের চর্চা করতে করতে তিনি কমিউনিস্ট হয়ে উঠেছিলেন, সেইরকম কমিউনিস্ট যারা শ্রেণিদ্বন্দ্ব ও শ্রেণিসংগ্রামের প্রতি আস্থাবান। আর অ্যালবার্ট রিচার্ড পারসনস (জুন ২০, ১৮৪৮ – নভেম্বর ১১, ১৮৮৭) কৈশোর থেকেই দিনবদলের স্বপ্ন দেখতেন।
৫
১৮৭১ সালে পারী কমিউনের ঘটনা সদ্যোতরুণ অ্যালবার্ট পারসনসকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। অ্যালবার্ট নিজেকে কমিউনিস্ট বিপ্লবী হিসেবে ভাবতে শুরু করেন। পরের বছর ১৮৭২ সালে তিনি এবং লুসি গঞ্জালেস বিবাহ করেন।
শুধুমাত্র নিজেকে কমিউনিস্ট ভেবেই অ্যালবার্ট ক্ষান্ত হননি, শ্রমিকশ্রেণির লড়াকু সংগঠন গড়ে তুলতেও আত্মনিয়োগ করেছেন।
আমেরিকার সোশিয়ালিস্ট লেবার পার্টি ১৮৭৭ সালের ডিসেম্বর মাসে নিউ জার্সির নেওয়ার্কে একটি কনভেনশন আয়োজন করেন। অ্যালবার্ট সেখানে ডেলিগেট হিসাবে যোগদান করেন।
আমেরিকার ওয়ার্কমেনস পার্টি নির্বাচন আয়োজন করেছিল সেখানে প্রদত্ত ভোটের ছয়ভাগের একভাগ অর্জন করে অ্যালবার্ট চিকাগো শহরের অল্ডারম্যান হন। ১৮৭৭ এ এই গ্রেট রেলওয়ে ধর্মঘট হয়। তার আয়োজন করতে চিকাগো মার্কেট স্ট্রিট সমাবেশে অ্যালবার্ট বক্তা হিসেবে আমন্ত্রিত হন। ১৮৭৯ তে বছরের শেষের দিকে সোশিয়ালিস্ট লেবার পার্টির দ্বিতীয় জাতীয় কনভেনশন হয়েছিল। অ্যালবার্ট সেই কনভেনশনে অংশগ্রহণ করেন।
১৮৮১ তে একটি নতুন বিপ্লবী সংগঠন মাথা তুলল। ইন্টারন্যাশনাল রেভলিউশনারি সোশিয়ালিস্ট। এই সংগঠনের সূচনাপর্বে পারসনস ডেলিগেট ছিলেন। ১৮৮৩ র অক্টোবরে পিটসবার্গে নতুন করে আরেকটি সংগঠন মাথা তুলল। ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার্কিং পিপলস অ্যাসোসিয়েশন। অ্যালবার্ট তাদের কনভেনশনেও ডেলিগেট হলেন।
কিন্তু ক্রমেই তিনি প্রথাগত শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতি শ্রদ্ধা হারাচ্ছিলেন। তথাকথিত শ্রমিক ইউনিয়নের ভিতরের অসংগতিগুলি, নিয়মতান্ত্রিকতাগুলি অ্যালবার্টকে ক্লান্ত করছিল। তিনি ক্রমশঃ প্রথাগত শ্রমিক ইউনিয়নের বিভিন্ন ধরনের কাজের থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে দিনবদলের উপযোগী কোনো সংগঠন তৈরি করতে চাইছিলেন। এই লক্ষ্যে অ্যালবার্ট পারসনস দি অ্যালার্ম নামে একটি পত্রিকা বের করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরের চার তারিখে প্রকাশ পেল অ্যালবার্ট পারসনসের দি অ্যালার্ম। চার পেজ ব্রডশীটের একটা পত্রিকা। শিরোনামের কাছে লেখা থাকত এ সোশিয়ালিস্টিক উইকলি, একটি সমাজতন্ত্রী সাপ্তাহিক। আরো লেখা থাকত, দুনিয়ার মজদুর, এক হও। অ্যালবার্টের কাগজে লুসি পারসনস নিয়মিত লিখতেন। সে কাগজে লেখা থাকত, দুনিয়ার মজদুর, এক হও।
পনেরো হাজার কপি ছাপা হয়েছিল নবীন এই পত্রিকাটি। আপোসহীন বৈপ্লবিক স্পর্ধায় বিশ্বাসী অ্যালবার্ট নিজেকে নৈরাজ্যবাদী বলতেন। নৈরাজ্যবাদের ব্যাখ্যাও অ্যালবার্ট দিয়েছিলেন তাঁর কাগজে। বলেছিলেন, একজন নৈরাজ্যবাদীও শান্তিতে বিশ্বাস করে, আস্থা রাখে, কিন্তু স্বাধীনতাকে বলি দিয়ে, মুক্তিকে বিসর্জন দিয়ে যে নিবীর্যের শান্তি, তাতে সে বিশ্বাস করে না।
১৮৮৬র শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার কাজে গভীরভাবে যুক্ত হয়েছিলেন তাঁরা। মে মাসের পহেলা মিশিগান অ্যাভিনিউ ধরে আশি হাজার মানুষের বলিষ্ঠ মিছিল চলেছে। তার পুরোভাগে রয়েছেন লুসি এবং অ্যালবার্ট। সঙ্গে তাঁদের দুই শিশুসন্তান। নিজের সংসার ও সন্তানদের নিরাপদ দূরত্বে সুরক্ষিত রেখে যে একধরনের শৌখিন বামপন্থার চর্চা দেশে দেশে দেখা যায়, এই দম্পতি, লুসি ও অ্যালবার্ট, তার থেকে বহুদূরে ছিলেন।
৬
মে দিবসের কথায় অগাস্ট স্পিজ (১৮৫৫ – ১৮৮৭) এর কথাও মনে রাখতে হবে। ওঁর বাবা ছিলেন জার্মানিতে বনদপ্তরের আধিকারিক। তিনি চিরতরে চোখ বুজলেন ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে। তখন স্পিজ নাবালক। বছর পনেরো বয়স। বাবা স্পিজের অল্প বয়সে মারা গেলেও মায়ের আর্থিক অবস্থা যথেষ্ট স্বচ্ছল ছিল। কিন্তু স্পিজ পাড়ি দিলেন আমেরিকায়। সেখানে অবশ্য তাঁর বেশ কয়েকজন আর্থিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত আত্মীয় স্বজন ছিলেন। তো স্পিজ চিকাগোয় থেকে সোফা, গদি, তোষক, বালিশ ইত্যাদির ওয়াড় বা খাপ তৈরির কাজে লাগলেন। ওই কাজ করতে করতে আমেরিকান সমাজে শ্রমিকদের উপর কী অকথ্য নির্যাতন ও দমন পীড়ন চলতে থাকে তা স্বচক্ষে দেখতে দেখতে একসময়ের স্বচ্ছল ঘরের ছেলে স্পিজ নিজেকে গরিব মানুষের বন্ধু হিসেবে ভাবতে শুরু করলেন। ১৮৭৭ সালে তিনি সোশিয়ালিস্ট লেবার পার্টির সঙ্গে যুক্ত হলেন। তখন বাইশ বছরের তাজা তরুণ। ক্রমে স্পিজ ওই সংগঠনের ভিতরে যে লড়াকু অংশ, তাদের নেতা হিসেবে মাথা তুললেন।
আমেরিকার গৃহযুদ্ধের পরে, বিশেষতঃ দীর্ঘকাল ব্যাপী মন্দার পরে আবার শিল্পোৎপাদনের জোয়ার আসে। চিকাগো হয়ে ওঠে একটা গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকেন্দ্র। আর হাজারে হাজারে জার্মান শ্রমিক দুটো রোজগারের আশায় সেখানে পাড়ি দিতে থাকে। এইসব শ্রমিকদের গড় দৈনিক রোজগার ছিল দেড় ডলার। সপ্তাহে ছয়দিন কাজ করতে হত, আর ছয়দিনে ষাট ঘণ্টারও বেশি কাজ করতে হত। শ্রমিকরা চাইত পরিচ্ছন্ন ও ভদ্র পরিবেশে কাজ করতে। এজন্য তারা সংগঠিতও হচ্ছিল।
নাইটস অফ লেবার, বা শ্রমিকদের মুক্তিযোদ্ধা নামে সংগঠন, যারা সমাজতন্ত্রে আস্থা রাখত না, এমনকি কোনো বৈপ্লবিক কর্মসূচি পর্যন্ত গ্রহণ করা স্থগিত রেখেছিল, শুধুমাত্র দৈনিক কাজের সময় সীমাকে আট ঘণ্টার মধ্যে বেঁধে রাখার দাবিকে সমর্থন করেছিল বলেই, ১৮৮৪তে তাদের সদস্যসংখ্যা সত্তর হাজার থেকে ১৮৮৬ তে দশগুণ বেড়ে সাত লক্ষে পৌঁছে গেল। চিকাগো হয়ে উঠল নৈরাজ্যবাদী আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু। হাজারে হাজারে জার্মান অভিবাসী শ্রমিকৈর মনের খিদে মেটাতো আরবেইটার জাইটুঙ নামে জার্মান ভাষার সংবাদপত্র।
৭
অগাস্ট স্পিজ ১৮৮০ থেকে এই আরবেইটার জাইটুঙ নামে জার্মান ভাষার কাগজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৮৮৪ থেকে এই কাগজের সম্পাদক হিসেবে তাঁর নাম লক্ষ্য করা যেত। মে দিবসের আন্দোলন গড়ে তুলতে আরবেইটার জাইটুঙ সংবাদপত্র আর তার কর্মীরা অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন।
শ্রমিক নেতারা আরবেইটার জাইটুঙ আর অ্যালবার্ট পারসনস সম্পাদিত দি অ্যালার্ম পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে পুঁজিবাদী শোষণ শাসনের বিরুদ্ধে শ্রমিকশ্রেণীর সংগঠিত আন্দোলনের প্রয়োজনের কথা লিখতেন। তাঁরা কাজের সময় সীমাকে আট ঘণ্টার মধ্যে বেঁধে রাখার দাবিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তাঁদের যুক্তিবিন্যাস করতেন। তাঁরা বলতেন, এই আট ঘণ্টার লড়াইকে নির্ভর করেই শ্রমিকশ্রেণীর পক্ষে উন্নততর জীবন লাভ করা সম্ভব।
এইসব সংবাদপত্রে লেখা হত, শ্রমিকরা দুর্দশার অতলে ডুবছে, বেকারত্ব বাড়ছে, আর বড় ব্যবসায়ীরা ফুলে ফেঁপে উঠছে। তারা দেখাত যেসব সংস্থায় মুনাফার অঙ্ক চড়চড় করে বাড়ছে, সেখানেও মালিক তার কর্মচারীদের মজুরি কাটার ছুতো খুঁজত। এইসব কাগজগুলির সক্রিয়তায় প্রায়ই ধর্মঘট বেধে যেত। কখনো কখনো হিংসাও ছড়িয়ে পড়ত।
অগাস্ট স্পিজের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সোশিয়ালিস্ট লেবার পার্টির সুবিধাবাদী অংশ ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়ছিল। স্পিজ নিজে ও অনুগামীদের সাহায্যে এই পার্টির একজিকিউটিভ কমিটি দখল করে নেন। এবং আপোসপন্থীদের দূর করে দেন। তখন দলের জাতীয় নেতৃত্ব অগাস্ট স্পিজ এবং চিকাগোর বিপ্লবপন্থী নেতাদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করেন, এবং আরবেইটার জাইটুঙ কে পার্টি বহির্ভূত বলে ঘোষণা করেন।
তখন স্পিজের নেতৃত্বে সোশিয়ালিস্ট লেবার পার্টির বিকল্প একটি বিপ্লবপন্থী সংগঠন গড়ে ওঠে। এর নাম হয় ইন্টার ন্যাশনাল ওয়ার্কিং পিপলস অরগানাইজেশন ইন আমেরিকা।
করাচি বন্দরে এককালে গ্রিক-পারসিক-আরবীয় সওদাগরেরা নোঙ্গর করেছে; অনেক স্থাপত্য চিহ্ন আজো রয়ে গেছে; যা…..
তিনি বললেন, ভাষা হল ওষ্ঠের উপর সুধার মতো। আর বললেন, কবিতা যথেষ্ট স্বাদু, কিন্তু…..
রূপকথা পড়েছেন ছোট বেলায় অনেকে একথা আর বলা সন্দেহমুলক, প্রযুক্তির ব্যবহার জন্মের পর থেকে এখন …..
একটি পরাধীন দেশ আর তার বাসিন্দাদের মনে স্বাধীনতার আকুতি আমরা দেখেছিলাম ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে। এর…..