প্রক্সি
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
ইংরাজী ১৯২০ সাল।বৃটিশদের বিরুদ্ধেলড়াই চলছে জোর কদমে।তখনকার সময়ে রায় পরিবারের সুমনের জীবনের ঘটনা।সুমন যাত্রাদলে বাঁশি বাজায়।আর গোপনে বিপ্লবীদের সাহায্য করে নানারকমভাবে।
পাঁচ ছেলের পরে আবার পুত্রসন্তান হয়েছে রায় পরিবারে।খুব সুন্দর দেখতে হয়েছে।কোনো লোকের যাতে নজর না লাগে তাই নাম রাখা হলো কালো। সুমনবাবু খুব খুশি।সুমনবাবুর বোন সুমিতাও খুব খুশি।
সুমনবাবু খুব ভালো বাঁশি বাজান।যাত্রাদলে রাতের পর রাত তাকে বাঁশি বাজাতে হয়।আড় বাঁশি।তাই বেশির ভাগ রাতে তিনি বাড়ি ছেড়ে থাকেন।যাত্রাদলের মেয়ে রূপসী সুমনকে ভালোবাসে।সুমন সুদর্শন।ভালো চিত্রশিল্পী।
সুমনরা দুই ভাই।বিমল তার ছোটো ভাই।সুমনের বৌ খেনী আর বিমলর বৌ কুড়ো।একদিন খেনী,কুড়ো আর বিমল গঙ্গায় স্নান করতে গেলো।বিমল সাঁতার জানে না।তাই কুড়ো বললো,বেশিদূর যাবে না। ভয় লাগে।
—-ঠিক আছে যাব না।
কিন্তু জোয়ারের টানে ভেসে গেলো কুড়োর সিঁদুর।বিমলকে খুঁজে পেলো না কেউ।
তারপর কুড়োর সুন্দর চুলের বেণী কেটে ঝুলিয়ে রাখা হলো বাড়ির মাচায়।কুড়ো বাল্যবিধবা হলো।চিরজীবন বয়ে বেড়াবে কয়েক দিনের বিয়ের জীবনের স্মৃতি।
খেনীর ছেলে কালো।খেনী নিজেওযেমন সুন্দরী আবার ছেলেটিও তাই।মহিলামহলে খেনীর রূপের খুব সমাদ। সুমন বাড়ি এলে বলে,তো মাকে আর বাঁশি বাজা তে হবে না।জমি জায়গা দেখাশোনা করার পর আমাদের আর কোন অভাব থাকবে না ।
সুমন বললো,দেখো আমি শিল্পী মানুষ।জমি জায়গা নিয়ে আমি থাকতে পারবো না।
—-পারবো না বললে হবে না। ছেলে মানুষ করতে হবে।জমি বেদখল হয়ে যাবে।
—-আমাকে বোঝার চেষ্টা করো দয়া করে।আমি শিল্পী মানুষ।আমি বাঁশি ছাড়া মৃত।আমাকে রেহাই দাও।
খেনী চোখের জলে অন্য ঘরে চলে গেলো।তার সংসারের চিন্তায় মন খারাপ হয়ে গেলো।
আজ রাতে গান নেই।তাই ছুটি। বাড়িতেই আছে।তবু রাতে বৌ এর কাছে না থেকে বাগানে বাঁশি বাজায় সুমন।তার সুর শুনে খেনীর ভয় হয়।এই আপদ বাঁশি তার সংসার ভেঙ্গে দেবে না তো? এই চিন্তায় খেনী রাত কাটায়। আর সুমন সারা রাত রূপসীকে মনে রেখে বাঁশি বাজায় ক্ষণে ক্ষণে।
তারপর রাত পোহালেই চা, মুড়ি খেয়ে বেরিয়ে পরে সুমন।আজ যাত্রা আছে।মীরার বঁধুয়া।মুরা রী বাঁশি মুখে ধরে থাকবে আর আড়াল থেকে বাজবে সুমনের বাঁশি।আজ কৃষ্ণ সাজবে মুরা রী। মীরা মুগ্ধ হবে সুরে।রূপসী আজ মীরা সাজবে।কত লোকে হাততালি দেবে।পুরষ্কার পাবে মুরারী।রূপসী জানে, দলের সবাই জানে বাহাদুর বংশীবাদকের বাহাদু। তবু মুরারী নামের কাঙাল সেজে কপটতা করে।সুমনের তর উপর রাগ হয় না। কৃপা হয়। রূপসীর পিছন পিছন ঘুর ঘুর করে মুরারী।কিন্তু রূপসীর মন পায় না।
রূপসী আড়ালে সুমনকে বলে,ডিম,দুধ খাবে।আমার কাছে আসবে।আমি দেবো।
—আমার বেশি খেলে বদহজম হয়।হাল্কা মুড়ি আমার প্রিয়।
—না না।মুখ দিয়ে রক্ত উঠবে।
—-বেশি খেলে আমার বাজাতে কষ্ট হয়।
—ঠিক আছে।আমার কাছে এসে তুমি যখন বাঁশি বাজাও আমার মনটা কেমন হারিয়ে যায়।
—-জানি আমি।তোমার জন্য আমি বাঁশি বাজাই।তুমি আমার বাঁশি শুনলেই হবে।আর কাউকে চাই না।
সুমন বাঁশি বাজানোর সঙ্গে কোনো আপোষ করে না। তাতে না খেয়ে থাকতে হলেও থাকবে।কোনো আপত্তি নেই।
অপরদিকে রাবণ অপেরা এদের প্রতিদ্বন্ধি।তারা সুমন কে নিজেদের দলে আনার জন্য নানারকম রাজনীতি করে। কিন্তু সুমন দল ছাড়বে না।
মুরারী অপেরায় তার প্রিয়া রূপসী আছে। তাকে ছেড়ে কি করে সে বাঁশি বাজাবে।
রাবণ অপেরার ম্যানেজার বললো , তোমার খুব অহংকার। আচ্ছা তোমাকে আমরা দ্বিগুণ টাকা দেবো।আমাদের দলে এসো।
—-না আমি পারবো না। আমাকে ক্ষমা করে দেবেন।
—আচ্ছা তোমাকে দেখে নেবো।
নিরহঙ্কার সুমনের লোভ নেই। সে সুরে সুরে মহাসুরের সঙ্গে মিলতে চায়।
দুই.
সুমনের ছয় ছেলের মধ্যে এখন শুধু বেঁচে আছে কালো।একবার গ্রামে ওলাউঠা হয়েছিলো।সেই মহামারিতে মরে গেছে সুমনের পাঁচ সন্তান। খেনীর এখন একমাত্র ভরসা এই কালো।সে ভাবে,তাকে মানুষ করতে হবে।বাবার মত বাউন্ডুলে যেনো না হয়।ভাগীদার গণেশ হাজরা জমি দেখাশোনা করে। সুমন ছমাসে,নমাসে একবার বাড়ি আসে। টাকা পয়সা মাঝে মাঝে পাঠায়। এইভাবে সময়ের তালে তালে কালো পড়াশোনা শিখে বড় হতে থাকে।
কেতুগ্রামের মেনকা সম্পর্কে খেনীর আত্মীয়।রূপে,গুণে,সংগীতে মেনকার জুড়ি মেলা ভার।পড়াশোনায় তার সমকক্ষ কেউ নেই।মেনকা গ্রামের আপদে বিপদে সকলের আগে এগিয়ে যায়। গ্রামের লোকেরা খুব ভালোবাসে মেয়োটিকে।
ক্ষ্যান্তবুড়ি মরে গেলে মেনকা চাঁদা তুলে পাড়ার দাদাদের নিয়ে তার শবদাহ করেছিলো।গ্রামের বয়স্ক লোকেরা তাকে দুহাত তুলে আশীর্বাদ করেছিলেন। মেনকা নিজে একজন স্বাধীনচেতা তরুণী। নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে সমাজের মঙ্গল করাই তার লক্ষ্য।তার জন্য তিলে তিলে নিজেকে সে উপযুক্ত করে তোলে।
এই গ্রামে এক সুদখোর লোক ছিলো।গরীবদের কাছে সে দশ শতাংশ হারে সুদ নিত।দেনা শোধ না করতে পারলে জমি জায়গা সোনাদানা কেড়ে নিত।মেনকা এই লোকটাকে দেখতে পারত না। তাকে দেখলেই রাগ হয়ে যেত।জব্দ করার ফন্দি আঁটত দিনরাত।
মেনকা কৃষক পরিবারের সন্তান।সে হাঁস পুষত।তার হাঁসগুলো যখন ডানা ঝাপটে জলে নেমে ডুব দিত তখন সেও হাঁস হয়ে ডুব দিত অতল জলে।মক্ত খোঁজার আশায় তার ডুব। ডুবে ডুবে কখনও তার বেলা বয়ে যেত।কিন্তু মুক্ত তার অধরা রয়ে যেত।
রাতে সে শিক্ষা নিত চাঁদের বাগানে।তার শিক্ষক বলতেন,চাঁদের বুকে অই যে কালো কালো দাগ দেখছো অইগুলো কলঙ্ক।তবু একটা তৃণ অবধি পৌঁছে যায় তার আলো।কাউকে বাদ দেয় না সে।তিনি মেনকাকে বলতেন, জীবনে যতই বাধা আসুক। এগিয়ে যাবার পথ থেকে সরে আসবে না। একদিন ঠিক সফলতা তোমার সঙ্গে সঙ্গে হাঁটবে।
তারপর সকালে উঠেই মেনকা বই হাতে যায় শিক্ষকের বাড়ি। সঙ্গে ছাগল,ভেড়া, হাঁস।তাদের যথাস্থানে রেখে তারপর শিক্ষকের বাড়ি যায় ।
সুদখোর মহাজন মেনকাকে দেখে বললো,এই সুন্দরী শোন। এদিকে আয়।
মেনকা বলে,কি বলছেন বলুন?
—–একবার দুপুর বেলায় আমার সঙ্গে আমার বাড়িতে দেখা করিস তো।
—কেন? আমার সঙ্গে কি কাজ?
—গেলেই জানতে পারবে।মহাজন এমনি ডাকে না। তোমার কপালে আজ প্রাপ্তি্যোগ আছে। যেও বেশ।
—এমন আদরের ডাক কি আর ফেলতে পারি।যাব।
ঠিক দুপুরবেলায় মেনকা তার দলবল নিয়ে হাজির হলো মহাজনের বাড়ি।সবাই ভূতের সাজে উঠে পড়েছে আম গাছে।পাকা আম। সব পেড়ে খাচ্ছে সকলে।মেনকা সাদা শাড়ি পরে কড়া নাড়লো মহাজনের দরজায়।মহাজন বাইরে বেরিয়ে মেনকাকে দেখে পাগলপ্রায়।গায়ে হাত দিয়ে বলে, আয় ভেতরে আয়।
—-যাব,?আমরা ভূত পেত্নির দল তোর বাগানে থাকি।আজ মেনকার সাজে তোর কাছে এলাম। অই দেখ তোর বাগানে কত ভূত।
মহাজন খুব ভিতু।ভূতের ভয়ে সে রাতে বাইরে বেরোয় না। ভয়ে বললো,তোরা ভূত।ওরে বাবারে, আমার সব আম শেষ করে দিলো রে।
সঙ্গে সঙ্গে মহাজনের গালে এক থাপ্পড়।মহাজন জোড় হাতে ক্ষমা চাইছি।আমাকে ছেড়ে দাও।
—-ছেড়ে দিতে পারি।একটা শর্তে।যত দলিল,সোনা তুই চুরি করেছিস সবাইকে ফেরত দিবি।তা না হলে আবার আসবো।
—না না। আমি সব দিয়ে দোবো। আমি আর সুদের কারবার করবো না।
তারপর কিছুদিন পর সুদখোর মেনকার বাবার জমির দলিল ফেরত দিয়েছিল। হয়ত ভূতের ভয়ে তা না হলে লোকবলের ভয়ে।মেনকার বাবা বলতেন,মনে রাখবি মা,জল জল গঙ্গাজল।আর নল,বল লোকবল। বল বা শক্তির মধ্যে লোকবল শ্রে। তার প্রমাণ মেনকা হাতেনাতে পেলো।সুদখোর মেনকার সামনা সামনি হয়নি আর কোনো দিন।মেনকা জানে,ওরা সবলের ভক্ত আর দূর্বলের যম।
মেনকার সঙ্গে সবসময় বন্ধুরা থাকত।প্রায় বিশ পঁচিশজন গ্রামের ছেলেময়ে খেলা করত একসাথে। দলবল নিয়ে গ্রামের বিভিন্ন সমাজসেবা মূলক কাজ করত নিঃস্বার্থভাবে।
মেনকা এইভাবে বড় হতে লাগলো।তারপর সে গ্র্যাজুয়েট হলো।তার বাবা এখন খুব খুশিমনে কৃষিকাজ করেন।
তিন.
সুমনের বাঁশি বাজানো দেখে লাইনের অনেকে হিংসা করে।রূপসী বল,ভালো কাজ করলেই শত্রু বেড়ে যায়।সুমন বল,ছেড়ে দাও ওসব কথা।এসো আমরা সাধনা চালিয়ে যাই।তারপর সুমন বাঁশি বাজানো শুরু করলো। তার বাঁশির নবসুরে রূপসীর দেহ কেঁপে উঠলো।সুমন খুশি মনে স্নান সমাপন করলো।
রূপসীর হাতের রান্না খুব ভালো।সুমন খেলো।রাতে আজ কাজ নেই।মুরারী রাতে রূপসীর ঘরে এলো।সে বললো,শোনো সবাই।যাত্রাদলের এখন কোনো কদর নেই।তাই আমি আপাতত আলকাপের দল করবো।
সুমন বললো,যাত্রাদল তাহলে উঠিয়ে দেবে।
—-না। বন্ধ হলো আপাতত।আবার ডাক পেলে হবে নিশ্চয়।আলকাপের নায়িকা হবে রূপসী।
—-না, দাদা রূপসী নয়। ঝুলনকে করো।
—কেন? তোমার গায়ে লাগছে না কি?
সুমন বললো,রূপসী আজেবাজে ভাষা বলতে পারবে না।
মু রা রী বললো,কি বলছো রূপসী।
রূপসী বললো,আমি নাচ করবো।কিন্তু তোমার বিপরীতে অভিনয় করবে ঝুলন ভাই।
বেশ তাই হবে।কালকে আমাদের আলকাপ হবে।বায়না দিয়ে গেছে।
সুমন বলে,এখন আলকাপ শোনার লোক বেশি।আড়ালে রাতের বেলায় ভদ্রলোকেরাও চাদর মুড়ি দিয়ে শুনতে আসে আলকাপ।খিস্তিখেউড় শুনতে মজা লাগে।মেয়েদের নগ্ননাচ দেখতে ভালো লাগে দর্শকের।টাকা পয়সাও দেয় অনেক।তাহলে যাত্রার ভবিষ্যৎ কি?
রূপসী বল,ছাড়ো তো ওসব কথা। এখন চলে গেলেই হলো।
মুরারী ভালো ব্যবসাদার। সে নিশিকান্ত কে দলে নিলো।ভালো আলকাপ করে। নাম আছে।দলের নাম দিলো,নিশিকান্তর আলকাপ।
তারপর পরের দিন রাতে শুরু হলো আলকাপ।সুমনের বাঁশির তালে নিশিকান্ত আর রূপসী নাচ আরম্ভ করলো।তারপর শুরু হলো আলকাপ।নিশিকান্ত একটা রসগোল্লার হাঁড়ি দুপায়ের ফাঁকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি এলো।তারপর ঝুলন মেয়ে সেজে নিশিকান্তর হাঁড়ি থেকে রসগোল্লা খেলো।আহা কি মি। আরও খাবো।
নিশিকান্ত বললো,তোকো হাঁড়ি উপুড় করে রস খাওয়াবো।আয় আমার শালি।
এইভাবে আসর জমে উঠলো। প্রচুর টাকা পেলো নিশিকান্ত।তার নাম শুনেই লোকে ভিড় করে আলকাপ শুনতে আসে।
মুরারী বলে,দেখো সুমন, যাত্রার থেকে টাকা বেশি আলকাপে।মানুষ যা চায় তাই করতে হবে।তা না হলে না খেয়ে মরতে হবে।
সুমন কোনো উত্তর দেয় না। শুধু আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
সুমন আজ অনেক দিন পরে বাড়ি গেলো।ছেলেটি বড় হয়েছে।পাশে কুড়োর বাড়ি।বিধবা হওয়ার পর ও একা থাকে। একা রান্না করে খায়।একাদশী করে।প্রচুর উপোষ করতে হয়।সুমন একবার বলেছিলো,তুমি আমার ভায়ের বৌ।তুমি ভালো গান জানো।চলো যাত্রাদলে গান করবে।এভাবে জীবনটা নষ্ট করে কি লাভ।খেনী রেগে গিয়ে বলেছিলো,বেশি বাড়াবাড়ি কোরো না। গ্রাম থেকে বাস ওঠাবে না কি?ও ওর মত থাক।সুমন চিন্তা করে দেখলো, এখনও কুসংস্কার দূর হতে অনেক সময় লাগবে।তারপর নিজের সংসারের কথা ভেবে আর ওসব নিয়ে কথা বলে নি।কুড়ো,খেনী দুইবোন। কালোকে কুড়োর কাছে রেখে শান্তি পায় দুদন্ড খেনী।নিঃসন্তান কুড়ো কালোকে পেয়ে মাতৃত্বের স্বাদ অনুভব করে।
চার.
মেনকা গ্রাম থেকে এসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভরতি হয়েছে।এম.এ পড়ছে।লেডিস হোষ্টেলে থাকে।অনেক বান্ধবী আছে।ঠিকমত সময়ে খেয়ে নিয়ে একসাথে যাওয়া আসা করে।মাঝে মাঝে গ্রামের বাড়ি যায়।ছুটি থাকলে গ্রামে যায়।একদিন সকলে চিড়িয়াখানা গেলো।সেখানে পশু পাখিদের দেখে খুব আনন্দ পেলো সবাই।মেনকা খাবারের জোগাড় করলো।ডিম টোষ্ট আর শস,সঙ্গে স্যালাড।মেনকা বললো বান্ধবী সোমাকে,জানিস আমাদের গ্রামের বাড়ি মাটির ছোটো বাড়ি।বাবা বলেন যতই ছোটো হোক বাড়ি হলো মন্দির।জানিস আমার মা ছোটোবেলা থেকে আমাকে শেখাতেন, একটা পাখির বাসাও ছোটো। কিন্তু অবহেলার নয়।কত পরিশ্রম করে তিলে তিলে একটা বাসা তৈরি হয়। কোনো মন্দির,মসজিদ,গির্জা ছোটোবড় হয় না।সবখানেই সেই একই মালিকের বাস। সোমা বললো,তোর কথা শুনতে ভালোলাগে।আমদের ভারতবর্ষ মহান।
চিড়িয়াখানা থেকে ফিরে রাতে ভাত, তরকারী আর মাছের ঝোল খেলো ওরা।তারপর ঘুমিয়ে পড়লো। সকালে উঠে সকলে প্রাতঃরাশের পরে গল্প করতে বসলো।আজ ছুটির দিন।মেনকা তার গ্রামের মেলা যাবার বর্ণনা করলো।সবাই মন দিয়ে শোনে তার সত্যি গল্প,তার জীবনের গল্প।বুঝলি সোমা একবার গ্রাম থেকে
গোরুর গাড়ি চেপে দধিয়া বৈরাগ্যতলার মেলা যাচ্ছি। পিছনে বাঁধা রান্না করার সরঞ্জাম। মেলা গিয়ে রান্না হবে। বনভোজন। সঙ্গে মুড়ি আছে। বড়দা বললেন,গিয়ে প্রথমে মেলা ঘোরা হবে। তারপর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। মা বললেন,তোরা ঘুরবি আমি আর মানা রান্নাবান্না করবো। তারপর দুপুরে মেলা ঘুরবো। গাড়ি চলেছে ক্যাঁচর ক্যাঁচর শব্দে। গোপাল কাকা বললেন,আরে, দেখ দেখ জিম চলে এসেছে। বড়দার ভয়ে ব্যাটা গাড়ির তলায় হাঁটছে।
জিম নেড়ি কুকুর হলেও, আমরা ওকে জিম বলেই ডাকি। কুকুর ভাবি না। অনেক মানুষের থেকেও ওর ভব্যতা অনেক বেশি।
আর একটা মেলায় যেতাম। পঞ্চাননতলার মেলা যেতে একটা আল রাস্তা ছিলো। আমরা ছোটোবেলায় বারবার ওই রাস্তা ধরে আসা যাওয়া করতাম। দুপাশে কাদা ভরতি ধানের জমি। কি করে কাউকে ওই কাদায় ফেলা যায়, এই কুবুদ্ধি আমাদের মাথায় খেলা করতো। আর তাই হতো। ধপাধপ কাদায় পরে যেতো অনেকেই। আর আমরা কি মজা, কি মজা করে চিৎকার করতাম। মার খেয়েছি খুব। বদ বুদ্ধির জন্য।যাইহোক,
গোরুর গাড়ি একবার থামলো। তামালদা আর আমি জমি দিয়ে হেঁটে গেলাম। দেখলাম আখের জমি। বললাম,একটা আখ খাবো। তামালদা বললো, না পরের জমি।
— একটা তো, কিছু হবে না।
—– যাও, তাড়াতাড়ি আসবা।
তারপর একগাছা সরালো আখ ভেঙ্গে খেতে খেতে চলে এলাম।
গোরুর গাড়ি আবার চলতে শুরু করলো। দিগি দিগি, পা পা, করে গোরুর সঙ্গে কথা বলে চলেছে প্রিয় তামালদা।
মন্থর গতিতে পৌঁছে গেলাম সকালের টাটকা মেলায়। ভোরবেলায় বেরিয়েছি বাড়ি থেকে। প্রায় কুড়ি কিমি রাস্তা চার ঘন্টা লাগলো। তবু ক্লান্তি নেই। মা বললেন,প্রথমে জল এনে এই ড্রাম ভরে ফেল।
জল ভরার পরে আমরা মেলা ঘুরতে চলে গেলাম। কাঁচের চুড়ির দোকান পার করে নাগরদোল্লা। চাপলাম। ভয় নেই। মনে মজা।
তারপর ঘুরে ঘুরে দেখার পালা। একই জিনিস ঘুরে এসে দেখে নতুন লাগছে। চির নতুন। কেউ বিরক্ত নয়। সবাই অনুরক্ত মানুষের ভিড়ে। এই প্রবাহ পুরোনো হবে না কোনোকালে।
বড়দা বললেন,অনেক হয়েছে। এবার খাবে চলো। মায়ের কাছে গিয়ে দেখলাম, মুড়ি, তেলেভাজা, আর রসগোল্লা রেডি। ঘুরে ঘুরে খিদে পেয়েছে। খেয়ে নিলাম। জল খেয়ে ধড়ে প্রাণ এলো। এলো আনন্দ।
মানা পিসি বললেন,চল আমি আর তুই একবার মেলা ঘুরে আসি। পিসি প্রথমেই চিতার কাছে গিয়ে বললেন,সব থেকে সত্য, এই চিতা। পিসি খুব তাড়াতাড়ি এই সত্যের সন্ধান কিছুদিন পরেই পেয়ে গিয়েছিলেন।
তামাল দা মাকে বললো,দিদিমুণি, ত্যাল দিন তো। আর ওই খোলের বাটিটা। গরুগোলাকে খেতে দি ভালো করে। ত্যাল মাকিয়ে দোবো। ওরাও তো মেলায় এয়েচে। অবিচার করলে হবে না।
মা বললেন,যাও, দাও গা। ভালো করে খেতে দাও।
মা রান্না সারার পরে একবার মেলায় গেলেন। আমার ঘুরে ঘুরে পায়ের ডিমিতে লাগছে
তবু মেলা না দেখে মন মানছে না। ক্লান্তি ভুলে অবাক চোখ চালানো সারা মেলা জুড়ে। কোনো কিছু দেখা বাকি থাকলো না তো? তাহলে বন্ধুদের কাছে হেরে যাবো। বন্ধুরা বলবে, কেমন মেলা দেখলি। আমরা সব দেখেছি।
আর দেখলাম মানুষের আবেগের রঙীন খেলা। কেউ নাগরদোল্লায়।কেউ খাবার দোকানে। আর অনেকে শুধু ভবঘুরের মতো চরকী পাক খাচ্ছে ভিড়ের মাঝে। মেলায় মিলন মানুষে মানুষে।জাতিতে জাতিতে,বললেন গোপাল কাকা।
এই মেলায় হরিনাম এক প্রধান আকর্ষণ। তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক ভক্তের মায়া।
আমার ঈশ্বর,আমার অনুভব,ভালোবাসা একান্তই নিজস্ব অনুভূতি। আমার জ্যান্ত ঈশ্বরের পরম করুণাময়ের সঙ্গে মিলিত হবার শেষ আয়োজনের শুরু হয়েছে। মনে পরছে, আমার সামনে থেকেও রকেটের দাগের মতো মিলিয়ে গেলো বন্ধু। গঙ্গার জলে ডুব দিয়ে আর উঠলো না নীলমণি। রোজ আকাশে ধ্রুবতারা হয়ে জ্বল জ্বল করে আমার অশ্রু আয়নায়। হাওয়ায় ওড়া আমার বেহিসাবী মন আজও দেখতে পায় অনন্ত আকাশে তার বিচরণ।
দুপুর ঠিক দুটোর সময় মা খাওয়ার জন্য ডাকলেন। মা বললেন,থালাগুলো জল বুলিয়ে নিয়ে এসো সবাই।
তারপর গোল হয়ে সবাই বসে পরলাম খেতে। মাটিতে বসে খেতে শুরু করলাম। আমি কলাপাতায় খেতে ভালোবাসি। এতো খাওয়া নয়,স্বপ্ন জগতে বিচরণ। এই ভালোলাগা বার বার আসে না। অকৃত্রিম আনন্দের জগৎ এই মেলা।
সবার খাওয়া হয়ে গেলে মা ও মানা পিসি বসলেন খেতে। সবাইকে প্রথমে খাইয়ে তারপর নিজের খাওয়া। তাই ভারতমাতার সন্তানরা দেশের দশের জন্য সব ত্যাগ করতেও কুন্ঠিত হয় না। মায়ের কাছে এই শিক্ষা তারা পায় ছোটো থেকেই।
তারপর বাড়ি ফেরার পালা। অনেক মৃতদেহ আসছে শ্মশানে। বলো হরি, হরিবোল ধ্বনিতে আকাশ বাতাস মুখরিত। তারা ফিরছে আপন ঘরে। আমরা ফিরছি গ্রীনরুমে।
সন্ধ্যা হয়ে আসছে। মা চিন্তা করছেন। তামালদাকে বললেন,তাড়াতাড়ি ডাকাও। গোরু দুটোকে তামালদা বলছে,হুট্ হুট্,চ,চ দিগি দিগি। গোরু দুটো ছুটতে শুরু করলো। খুব তাড়াতাড়ি চললাম। টর্চের আলোয় রাস্তা দেখছি সবাই। হঠাৎ রে রে করে দশজন ডাকাত পথ আগলে দাঁড়ালো। দে যা আছে বার কর। হাতে তাদের বড় বড় লাঠি। মা বললেন,বললাম তাড়াতাড়ি করে বাড়ি চলে যায় চ, তোরা শুনলি না আমার কথা।
হঠাৎ তামালদা আর বড়দা নেমে লাঠি কেড়ে নিয়ে বনবন করে ঘোরাতে লাগলো। আমরা গাড়িতে বসেই দেখতে লাগলাম লাঠির ঘায়ে ডাকাতগুলোর মাথা ফেটে রক্ত পরছে। সবগুলো শুয়ে পরে হাত জোড়া করে ক্ষমা চাইছে। মা বললেন,ছেড়ে দে। উচিত শিক্ষা পেয়েছে বাঁদরগুলো। খেটে খাগা যা, পালা।
তারপর তামালদা ও বড়দা লাঠি দুটো নিয়ে সামনে বসলো। বড়দা বলছে,আয় কে আসবি আয়। সেই কেড়ে নেওয়া লাঠি আজও আছে। মা বলতেন,অন্যায় করবি না,আর অন্যায়ের সাথে আপোষও করবি না।
মনমতো পছন্দের মামা আমাদের খুব প্রিয় ছিলেন। যখন মামার বাড়ি যেতাম মায়ের সঙ্গে তখন আমাদের দেখেই মামিমাকে মাছ,ডিম,মাংস রান্না করতে বলতেন। কখনও সখনও দেখেছি মামিমা নিজে ডেঙা পাড়া,সাঁওতাল পাড়া থেকে হাঁসের ডিম জোগাড় করে নিয়ে আসতেন। তখন এখনকার মতো ব্রয়লার মুরগি ছিলো না। দেশি মুরগির বদলে চাল,ডাল,মুড়ি নিয়ে যেতো মুরগির মালিক। নগদ টাকর টানাটানি ছিলো। চাষের জমি থেকে চাল,ডাল,গুড় পাওয়া যেতো। মুড়ি নিজেই ভেজে নিতেন মামিমা। আবার কি চাই। সামনেই শালগোরে। সেখানে মামা নিজেই জাল ফেলে তুলে ফেলতেন বড়ো বড়ো রুই, কাতলা,মৃগেল। তারপর বিরাট গোয়ালে কুড়িটি গাইগরু। গল্প মনে হচ্ছে। মোটেও না। এখনও আমার সঙ্গে গেলে প্রমাণ হিসাবে পুকুর,গোয়াল সব দেখাতে পারি। আহমদপুর স্টেশনে নেমে জুঁইতা গ্রাম। লাল মাটি। উঁচু উঁচু ঢিবি। আমি পূর্ব বর্ধমানের ছেলে। সমতলের বাসিন্দা। আর বীরভূমে লাল উঁচু নিচু ঢিবি দেখে ভালো লাগতো।আমাদের মাটি লাল নয়। কি বৈচিত্র্য। ভূগোল জানতাম না। জানতাম শুধু মামার বাড়ি। মজার সারি। দুপুর বেলা ঘুম বাদ দিয় শুধু খেলা। আর ওই সময়ে দাদু শুয়ে থাকতেন। ডিসটার্ব হতো।একদিন ভয় দেখানোর জন্যে বাড়ির মুনিষকে মজার পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়েছিলেন। তখন ছেলেধরার গুজব উঠেছিলো। আমরা দুপুরে খেলছি। দাদু বার বার বারণ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন,আজ কিন্তু ছেলেধরা আসতে পারে। আমি খুব ভিতু ছিলাম। আমার মামার ছেলে বাঁটুলদা,হোবলো,ক্যাবলা,লেবু। সবাইকে বললাম। তখন বারো থেকে পনেরো বছরের পালোয়ান আমরা। সকলের ভয় হলো। মামা কোনোদিন মিথ্যা বলেন না। কথার মধ্যে কনফিডেন্স না থাকলে তিনি রাগ করতেন। একবার আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন,এই অঙ্কটা পারবি। পড়ে দেখ। আমি বললাম,বোধহয় পারবো। তিনি রেগে বললেন, বোধহয় কি? হয় বল না, কিংবা হ্যাঁ। নো অর ইয়েস। ধমকের চোটে কেঁদে ফেলেছিলাম। এই সেই মামা বলেছেন, আজ ছেলেধরা আসবে। সাবধান। সবাই ঘুমোবি। দুপুরের রোদে বেরোবি না। বাধ্য হয়ে শুলাম। দাদুর নাক ডাকা শুরু হলেই সবাই দে ছুট। একেবারে বাদাম তলায়। চিনে বাদামের একটা গাছ ছিলো। ঢিল মেরে পারছি। এমন সময়ে মুখ বেঁধে ছেলেধরা হাজির। হাতে বস্তা। বস্তা ছুড়ে ঢাকা দিতে চাইছে আমাদের । আমরা সকলেই প্রাণপণে বক্রেশ্বর নদীর ধারে ধারে গিয়ে মাঝিপাড়ায় গিয়ে বলতেই বিষ মাখানো তীর আর ধনুক কাঁধে বেড়িয়ে পড়লো। বীর মুর্মু। সাঁওতাল বন্ধু। ছেলেধরা তখন পগাড় পাড়। আর দেখা নেই। বড়ো হয়ে সত্য কথাগুলি জানতে পেরেছি। মামা ওই সাঁওতাল বন্ধুকে বকেছিলেন,ছেলেগুলোকে ভয় দেখাতে নাটক করছিলাম। আর তুই এক নম্বরের বোঙা। একবারে অস্ত্র হাতে। যদি মরে যেতো ছেল অনেক গল্প শুনেছিলাম দাদুর বীরত্বের গল্প। মা তার নিজের গল্পও বলেছিলেন অনেক।আমার মনে পরে সেইসব কথা।
গল্প বলতে বলতে কখন যেনো মেনকার চোখে জল এসে গিয়েছিলো।সোমা জল মুছে দিলো।বললো,আর পনের দিন পরেই পুজোর ছুটি।সবাই বাড়ি যাবো।কি মজা বল।মেনকা বললো,ঠিক বলেছিস।
পাঁচ.
কথায় বলে না ভালোলোকের শত্রুর অভাব নেই।সুমন নানারকম অসুবিধা থাকলেও এদল ওদল করে না। টাকার লোভ তার নেই।আর এইসব গান বাজনার লাইনে রাজনীতি খুব বেশি।অনেকে ভালো শিল্পীকে নিয়ে টানাটানি করে।সুমন আর রূপসী বড় শিল্পী।তবু তারা মুরারী অপেরা ছাড়ে নি।মুরারী এখন ভালো ব্যবহার করে।আলকাপের দল খোলার পর থেকে লাভের অঙ্কটা হু হু করে বেড়ে চলেছে।তাই সে খুব খুশি।
সুমন এবার নেশা ধরেছে মদের।বাড়ির কথা মনে পড়ে তার।কিন্তু দল ছেড়ে সে থাকতে পারে না। তারপর বাড়িতে বাঁশি বাজাতে দেখলেই তার বৌ খেপে যায়।তাই অশান্তি করতে তার ভালো লাগে না। একবার তার বৌ বাঁশি ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলো।সেবার সুমন বৌকে একচড় মেরেছিলো ছেলের সামনে।মন খারাপ হয়েছিলো তার।ভাগীদার গণেশ হাজরা বলেছিলো,কাজটা আপনি ঠিক করেন নাই দাদাবাবু। সেবার গণেশকে বলে পালিয়ে এসেছিলো সুমন। এখন বাড়ি কম যায়।মাঝে মাঝে টাকা পাঠিয়ে দেয়।
দলে একটা নতুন মেয়ে এসেছে বিজয়া।মুরারীর সঙ্গে খুব মাখামাখি।একবার পুকুরে চান করতে গিয়ে বিজয়া সুমনকে চুমু খেয়েছিলো।বলেছিলো,কি গো নাগর। রূপসী ছাড়া আর কাউকে ভালো লাগে না। তোমার রস একদিন আমাকে খাওয়াও।সুমন এসব পছন্দ করে না। সে বললো,আর কোনোদিন আমাকে এসব বলবে না। রূপসীও আমাকে বিরক্ত করে না।
বকুনি শুনে ভিজে কাপড়ে পালিয়েছিলো বিজয়া। তারপর অনেক দিন পরে একটা যাত্রার পালা করতে সুমনরা গেলো কোপা গ্রামে।সেখানে মেনকার বাড়ি।মেনকা বাড়ি এসেছে কয়েকদিনের জন্য।আর বন্ধুরা সবাই মিলে আয়োজন করেছে এই অনুষ্ঠানে। ঠিক রাত দশটায় কনসার্ট বেজে উঠলো।সুমনের বাঁশির সুরে মাতোয়ারা হয়ে গেলো গ্রাম।
পালাশেষে মেনকা সুমনের সঙ্গে আলাপ করলো। সে বললো,আমার এখন গবেষণার বিষয় এই, আড় বাঁশি।সুমন বললো,অনেক বড় হও মা। আমার তো বয়স হয়েছে।রূপসীও নেই।মরে গেছে।
মেনকা বল, কে এই রূপসী।
—–আমার ঘর বাঁধার স্বপ্নের পাখি।সে আমার সঙ্গে ঘর বাঁধতে চেয়েছিলো।আমি পারি নি।
—-কেন,পারেননি কেন?
—-আমার বৌ বাচ্চা আছে তাই।
—-ও বুঝেছি।
—-এই আড় বাঁশির আড়ালে অনেক কান্ড ঘটে গেছে মা।
—–আপনি ঠিকানাটা দিন। একদিন আপনার বাড়ি যাবো।প্রণাম নেবেন।
তারপর সুমন কোপা ছেড়ে চলে এলো নিজের গ্রামে।এখন সবাই নতুন নায়ক নায়িকা। পুরোনো কেউ নেই।দল ছেড়ে এসে সে বাড়িতে বাঁশি বাজানোর শিক্ষা দিতে শুরু করলো।বহুদূর থেকে ছাত্র ছাত্রী এলো। সুমন তার স্কুলের নাম রাখলো, মধুবনি।
শত শত শিক্ষার্থী এই মধুবনি থেকে বাঁশি বাজানোর শিক্ষা গ্রহণ করতে লাগলো।একদিন মেনকা এলো তার গবেষণার কারণে।এসেই খেনীদেবীর নজরে পড়লো সে।
তিনি বললেন,মা তোমার কোথায় বাড়ি।
—-কোপা।
—-তোমার বাবার নাম কি?
—–কার্তিক মাঝি।
—-ও তাহলে তুমি আমার পিসির গ্রামের দাদার মেয়ে।কোপার কার্তিক মাঝিকে আমি দাদা বলতাম ।যাওয়া আসা না থাকলে আপনজনও পর হয়ে যায় মা। এসো ঘরে এসো।
তারপর সুমন এসে তার জীবনের সমস্ত কথা বললো।মধুবনির স্বপ্নের কথা বললো।মেনকা বললো,আমি আপনার কাছে।
সুমন বললো,তোমার যতদিন খুশি থাকো।আমার মধুবনিকে দেখো।আরও অনেক তথ্য পাবে।
সুমনবাবুর ছেলে কালো, মেনকাকে দেখেই ভালোবেসে ফেলেছে।কিন্তু বলতে পারছে না।সুযোগ এসে গেলো।সুমনবাবু বললেন,কালো একবার মেনকাকে গ্রাম ঘুরিয়ে দেখাও।গ্রাম ঘুরতে ঘুরতে কালোর সঙ্গে মেনকার পরিচয় হলো।মেনকা জিজ্ঞেস করলো,তুমি বাঁশি বাজানো শিখেছো।কালো বললো,বাবা আমাকে মায়ের আড়ালে সুর শিখিয়েছেন।
—–কই বাজাও দেখি।
কালো বাঁশি বাজালো।এযেনো রাধার পোড়া বাঁশির সুর।মেনকা সুরের প্রেমে ধরা দিলো।সে বললো,আমিও এই সুর শিখবো,বাজাবো।
—-নিশ্চয় শিখবে।বাজাবে।
তারা দুজনে বাড়ি ফিরে দেখে প্রচুর ভিড় মধুবনি স্কুলে।ছুটে গিয়ে তারা দেখলো, সুমনবাবুর ক্ষত বিক্ষত মৃতদেহ।কে বা কারা মাঠে তাকে মেরে পালিয়েছে।তিনি মাঠে যেতেন বাঁশি বাজাতে। বাঁশিটাও ভেঙ্গে দিয়েছে।মেনকা সুমনবাবুর কাছে শুনেছেন কে বা কারা যেনো তাকে মারার চক্রান্ত করছে।তার মধুবনি ধ্বংস করতে চাইছে।
পুলিশ এলো।তারা তদন্তের ভার নিলেন।
সুমনবাবুর ছাত্র ছাত্রী সকলে কাঁধে করে শবদাহ করতে শ্মশানে গেলো।আগুনে বিলীন হলো নশ্বর দেহ। কিন্তু তার স্বপ্ন সফল করবে শত শত মধুবনির ছাত্র ছাত্রীরা।
এমন একটা অঘটন ঘটে যাওয়ার জন্য মেনকা কালোর কাছে থাকলো অনেকদিন।এই বড় শোকে যে পাশে থাকে সেইতো আসল বন্ধু।কালোর মা বললেন,মেনকা তোমার মত একটা মেয়ে পেলে আমার জীবনে বাঁচার ইচ্ছাটা থাকবে।মেনকা বললো,একবার আমার বাবার সঙ্গে কথা বলবেন।তিনি বললেন, আমরা তোমাদের বাড়ি যাবো।
মেনকা আর কালো দুজনে ঠিক করলো তারাই এই মধুবনির অপূর্ণ সাধ পূরণ করবে শত বাধা অতিক্রম করে। কালো বাঁশি বাজানো শেখাবে। আর মেনকা একটা গবেষণার গ্রন্থ প্রকাশ করবে। তার নাম দেবে,আড় বাঁশির আড়ালে।মেনকার গবেষণা তিন বছরে পড়েছে।আর এক বছরের মধ্যে পেয়ে গেলো পি এইচ ডি ডিগ্রি। এখন তার নামের আগে লেখে ডঃ মেনকা বোস।
সুমনবাবুর মৃত্যুর দুবছর পরে কালো আর মেনকা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলো। ভালোাসার জয় হলো। কালো এখন একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক।
ধীরে ধীরে মধুবনি সুরের আকাশে নক্ষত্রের জায়গা নিলো।
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..
বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..