সন্ত জোয়ান অফ আর্ক আর বিচারের বাণী
কবিশেখর কালিদাস রায়ের চাঁদ সদাগর কবিতার একটা পংক্তি ছিল, ‘মানুষই দেবতা গড়ে, তাহারই কৃপার পরে,…..
অফিস শেষে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। মতিঝিল থেকে বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সে যাব।
প্রচন্ড মেজাজ খারাপ। ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। বিরক্তিতে তেঁতো হয়ে আছে মনটা। নিজের উপর খুব রাগ লাগছে। ড্রেস চেঞ্জ করতে গেলে উলটো ভেবে ড্রেসটাকে ঠিক করে গায়ে দেয়ার পর যখন দেখি উল্টোটাই পরেছি তখন সেটা খুলে ঠিক করে পুনরায় গায়ে দিতে যেমন নিজের উপরই রাগ আর বিরক্তি ধরে তেমনই এক রাগ আর বিরক্তিতে কপাল কুচঁকে আছে।
প্রায় আধঘন্টা যাবত কমপক্ষে এক ডজন অটোরিক্সাওয়ালাকে মতিঝিল থেকে বসুন্ধরা মার্কেটে আসার জন্য থামিয়েছি। কেউ রাজি হচ্ছে না। ঐ খানে আজরাইল বসে আছে কিনা কে জানে! গেলেই খপ করে জান কবজ করে ফেলবে।
অবশেষে একজন রাজী হল, তবে মিটারের চেয়ে পঞ্চাশ টাকা বেশি দিতে হবে। আমি কিছু বলতে না বলতেই দু’জন ভদ্রলোক উঠে চলে গেল। অটো থামালাম আমি আর কি না টপ করে উঠে গেল আগুন্তুক দুইজন। মানুষের সহবত বলতে কিছুই নেই। সেই থেকেই মেজাজ খারাপের সাথে কপালটাও কুঁচকে আছে। এরপর আরো কিছু অটো এলো। কেউ যাবে না ওদিকে। এদিকে রাত বেড়ে যাচ্ছে, আমার মধ্যে প্রবল অস্থিরতা দেখা দিল। আর একটা অটো এল। মিটারের কথা বলতেই বলল মিটারে নয় তিনশ টাকা দিলে যাবে। অনেক বলেও মিটারের জন্য রাজী করাতে পারলাম না। দেড়শ টাকার ভাড়া তিনশতে ঠিক করে ডবল বিরক্তি নিয়ে অটোতে উঠে বসলাম। ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়েই ড্রাইভার ট্রাফিকের ভয়ে মিটার চালু করে দিল। কিছুদূর এগোতেই লম্বা জ্যামে আটকা পড়লাম। দৈনিক বাংলার মোড় হতে যতদূর চোখ যায় গাড়ীগুলো ছবির মত দাঁড়িয়ে আছে। নির্বিকার একজন রিক্সাওয়ালা গলার তাগায় ঝোলানো লোহার টুথপিক দিয়ে দাঁত খোঁচাচ্ছে, পাশের রিক্সাওয়ালা একদলা থু থু ফেলল আমার ডানপাশে। সামনের বাসের ড্রাইভার বাস থেকে নেমে রাস্তার পাশের টং থেকে টাইগার এনার্জি ড্রিংস কিনে খাচ্ছে। কয়েকটি বাসের কিশোর হেল্পাররা নিজেদের মধ্যে মাস্তি করছে। সময় গড়িয়ে যাচ্ছে, এদিকে মিটারের রিডিং লাফিয়ে লাফিয়ে দ্বিগুণ বাড়ছে।
মিটারের দিকে তাকিয়ে আমার মনের বিরক্তি কিছুটা কমতে শুরু করল। সময় যাচ্ছে আর মিটারের রিডিং বাড়ছে। অটো দৈনিক বাংলা থেকে শাহবাগের মোড়ে আসতে আসতে দুইশ চল্লিশ টাকা উঠে গেল। ইঞ্চি ইঞ্চি এগিয়ে বাংলামটর আসতে আসতে তিনশ পার হয়ে গেল। রিডিং দেখে আমার মনে এক নিষ্ঠুর, পৈশাচিক আনন্দ খেলে গেল। অজানা এক প্রতিশোধের আগুন পেয়ে বসল আমায়। অটোওয়ালাদের বিরক্তির শোধ নেব আজ। আমার মনে হচ্ছে এই ড্রাইভারটিই যেন সমস্ত অটোরিকশা ড্রাইভারের প্রতিনিধিত্ব করছে, একে আজ শিক্ষা দিলেই সমস্ত বিরক্তির শোধ হবে।
সারাজীবন রিক্সা, অটোরিক্সা ড্রাইভারের কাছ থেকে গন্তব্যে যাওয়ার যে অনিচ্ছা দেখেছি তার শোধ তোলার জন্যই প্রকৃতি যেন এই মুহূর্তটি আমার সামনে এনেছে। আমি সোজা হয়ে বসে মিটারের দিকে অপলক তাকিয়ে রইলাম আর প্রাণপনে প্রার্থনা করতে লাগলাম বিলটা যেন চারশ ছাড়িয়ে যায়। সময় গেলে যাক! চুক্তি অনুযায়ী আমি আজ বসুন্ধরার সামনেই নামব। পান্থপথ হয়ে ইউটার্ণ নিয়ে আসতে যা সময় ব্যয় হওয়ার হবে, প্রয়োজনে মার্কেট বন্ধ হয়ে গেলে যাবে, সময় বাঁচাতে তবুও আমি রাস্তার অপজিটে নামবো না। একেবারে মার্কেটের সামনেই নামবে। যাক সময়, সে দিকে আমার ভ্রুক্ষেপ নেই। অনড় সময়কে আমার ভীষণ ভালো লাগছে।
অবশেষে মার্কেটের সামনে যখন আসল তখন মিটারের রিডিং চারশত সত্তর টাকায় এসে থামল। তিনশ’র বেশি যত বিল আসবে সেটাই আমার জয়। ট্যাক্সি ক্যাব, সিএনজি অটোরিক্সা এরা কখনো মিটারে যেতে চায় না। দ্বিগুণ ভাড়া হেঁকে বসে। আজ শোধ নেব আমি। এইবার বোঝ বাঁচাধন, যদি মিটারে আসত আজ সব টাকাই পেত এমনকি বাড়তি পঞ্চাশ টাকাও দিতে হতো আমায়। এখন বুঝুক মিটারে না এসে সে কি বোকামি করল। মনে মনে ফন্দি আঁটলাম চুক্তির এক টাকাও বেশি দেব না।
অবশেষে গন্তব্যে এসে পার্স থেকে চকচকে একশ টাকার তিনটি নোট ড্রাইভারকে দিয়ে বললাম -‘মামা এই নিন বখশিশ।’
ড্রাইভার কিছুই না বোঝে রাগী চোখে তাকিয়ে রইল।
– আমি দ্বিগুণ আনন্দ নিয়ে বললাম – পুরানো টাকার বদলে নতুন টাকা দিলাম, এটাই আপনার বখশিশ। ‘
ড্রাইভার ফ্যালফ্যাল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। সে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলো না যেখানে মিটারে চারশ সত্তর টাকা বিল আসল সেখানে কি করে তিনশ টাকা দিই! আমি অটো থেকে নেমে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে ড্রাইভারকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই মার্কেটের দিকে পা বাড়ালাম। পেছনে ফিরে তার হতভম্ব চোখ আমায় ডবল আনন্দ দিল।
যে বিরক্তি নিয়ে আমি অটোরিক্সায় উঠেছিলাম তার বদলে এক নির্মল আনন্দ নিয়ে অটোরিক্সা থেকে নামলাম। মনটা ভীষণ হালকা লাগছে। রাস্তার পাশের গাছগুলোও যেন অন্য দিনের তুলনায় আরো বেশি গাঢ় সবুজ দেখাচ্ছে। বুঝলাম মাঝেমধ্যে যানজটও ভীষণ মধুর হয়। একেই হয়তো বলে ‘মন্দের ভালো’।
কবিশেখর কালিদাস রায়ের চাঁদ সদাগর কবিতার একটা পংক্তি ছিল, ‘মানুষই দেবতা গড়ে, তাহারই কৃপার পরে,…..
গুলশান এক থেকে দুইয়ের দিকে যাওয়ার পথে চৌরাস্তার পঞ্চাশ গজ দক্ষিণে পঁচিশতলা আর্কেডিয়া টাওয়ারের তেরতলায়…..
রবি স্কুলে এসে প্রথমে সই করতে যায় হেডমাস্টারমশাই এর ঘরে।হেডমাস্টারমশাই বললেন,রবি আমি আজ একটু কাজে…..
কাঁটায় কাঁটায় বিকেল চারটা পঞ্চান্নতে ডাইনিং রুমের উত্তরের দেয়ালে কাঠের ফ্রেমে বাঁধাই করা ফুলদানিতে বর্ণিল…..