লাইমুন নাহার সীমার কবিতা
নাগরিকত্ব আমার ধসে যাওয়া কাদামাটি দিয়ে তুমি গড়ে নিলে তোমার নতুন ঘরের স্তম্ভ আমার স্বপ্নের…..
কে ওখানে?
মহুয়া ফুলের গন্ধ ছড়াও
হিজল বনে খেলা করো
ফুল কুড়াবার ছলে।
মন চাইলে উড়তে পারো
বাঁধা নিষেধ ছাড়া।
আমার এথায় চিতা জ্বলে
স্বপ্ন ভাঁসে নীল আকাশে
বারো মাসেই ফুল ঝরে
তাঁরা লুটায় পথের ধারে।
২
মনেপড়ে সেই সাবকের কথা
যার দু’চোখ ভরা স্বপ্ন আঁকা
উদাস দুপুর বেলা।
নীলআকাশে কাকের ডানায়,
বিষাদ সুরে গান গেয়ে যায়
স্বপ্নভাঙার শব্দে।
মনপুড়ে যায় বনপুড়ে যায়
কিন্ত কে’তা দেখতে যায়
আকাশ করে ভাগ।
পাহাড়ের সিড়ি বেয়ে উঠি উপরে
গল্পকরি শত নীল মেঘপূঞ্জে
মাঝে কাঁচের দিয়াল।
৩
বুকের সমস্ত ভেতরটা খাঁ-খাঁ করে
সূর্য ওঠে পাতাঝরা বনে।
কঙ্কালের গায়ে আগুন জ্বালায়
জ্বলতে জ্বলতে নীভে যায়।
ভূতুড়ে অন্ধকারে শুকনো নদীর চরে
রাতনামে দীর্ঘশ্বাসে।
ওরা শুনবেনা আমার চিৎকার
ওরা বধির ওরা শ্মশান।
ওরা ইশ্বররে রূপে শয়তান সম
গড়ে জাতি জাতিতে বৈষম্য।
৪
কুয়াশার চাদরে কি সূর্য ঢাকা যায়?
চাঁদ উঠলে দেখে সবাই।
সহস্র তাঁরার মিছিল কোথায় যায়?
আমিও সামিল সেথায়।
চিতার পোড়া ছায়ে আগুন জ্বলে
আগুন জ্বলে রক্তে।
আকাশটাকে আরও নত হতে দাও
গ্রাস করুক অন্ধকার।
আঁধার হতে হতে আঁধারে পৌঁছিয়ে যাবো বিরাট আলোর মিছিলে।
তুমি সাঁজো বীর সৈনিকের মত
পরো রাজটিকা।
সামিল হও যোদ্ধা, আলোর মিছিলে
কে যেন ডেকে যায় ডেকে যায়।
সবুজ ঘাসের বুকে পদচিহ্ন এঁকে
ছুটে আয় ছুটে আয়।
আবার গল্প হবে আকাশের সাথে
নীল দিঘির পদ্ম বনে।
একটি নদীর দৈর্ঘ-প্রস্থে দুটি ধার
একবন্ধন একআত্নার।
জ্যোৎস্না মেখে সারাগায়ে-দাড়িও
নতুন একটা ভোরের আশায়।
গৌধুলি বেলা রাখাল ফিরে নিড়ের পথে
গরু-বাছুর ওদেরও তাড়া আছে।
তাড়া আছে ক্লান্ত পাখিটার ঘরে ফিরবার
ওর ও’যে আছে ছোট্র সংসার।
ফুলের কাছে বিদায় নিয়ে ফিরলো ভোমর
ভোমরের আছে ঘরের টান।
আন্ধকারে শুক্লপক্ষ গ্রাসকরে কৃষ্ণপক্ষ
চাঁদ,তাঁরা ভবেরহাটে নিলাম হলো।
চন্দ্রমুখির নিত্য শেষ হয়ে গলো আনান্দে
ঘনঘটা জীবন কিনারে।
পা পিছলিয়ে বদ্ধমাতাল পতিতার বুকে
বিকি-কিনি আদুলিতে।
আবর্তন-বিবর্তনে রবিনসন নিজ ভূখন্ডে
স্রোত-বাতাসের মরন খেলায় উঠি মেতে
হাবলঙ্গের বাজারে নোবেল গেলো চুরি
রিক্তহস্তে রইলাম দাড়ায়ে।
স্নান করে রক্তে নামাবলী গায়
রাম রাম মুখেতে সুধায়
চন্দ্র,আমাবশ্যা লগ্নতীথি বয়ে যায় চলে
পান্ডবেরদল যুদ্ধে মরে।
কাঁচা শরীর নিয়ে ভয়ে মরে সিতা
কোথায় কিঞ্চৎ সুখের দেখা
অসুর বধহলো রাবণের লঙ্কা পুড়েছাই
দুয়ারে নারায়ন গেয়ে যায়।
হায়নাসুরের রক্তচক্ষুতে পেয়ে ভয়
চৈতন্য গেলো পালায়।
শেষ ট্রেন ছুটলো গেলো গন্তব্যর পথ ধরে
একে একর সবাই যায় চলে।
গভীররাত্র দ্রুত এগিয়ে যায় ভোরের দিকে
আনিবে নতুন অরুণউদায়
কেবল তাড়া নেই আমার ঘরে ফিরবার
মনেরটানে,ঘরেরটানে কিংবা শরীরের-
সকালের মিষ্টি রোদে একটু গা এলিয়ে
শুয়েছিলাম,আকাশে চোখ তুলে
হঠাৎ বুকটা ভারি ভারি মনে হলো
যেন মস্ত একটা পাহাড় চেঁপে আছে।
এ আমি কি দেখছি!
জগদিশ্বর শয়ং নিজেই এসেছে
পা তুলে দিতে আমার সংকীর্ণ বুকে
এও কি সহ্য হয় তাঁর-
কিৎক্ষন রক্তচক্ষুতে তাকিয়ে আমার পানে
মলিন মুখের চাহনি দেখা শেষ।
বজ্রকণ্ঠে কিছু বলতে চাওয়ার ঝোকে
মগের মুল্লুক পেয়েছিস বেটা।
হৃদপিন্ডটা বেরিয়ে যেতে চায় মুখদিয়ে
দিক-বিদিক জ্ঞনশুন্য হয়ে।
হাত-পা শিধিয়ে গেছে পেটের মধ্য
অনেক আগেই,অশ্রুপাত চোখে।
মার্জনা করো প্রভু হে ইশ্বর
আমি আশ্রিত তোমার-
তোর সমস্ত অঙ্গ-প্রতঙ্গ খোঁজ করলাম
মিললো না কোথাও রক্তের সন্ধান
বুঝে গেছি আমি কোথাও মিলবে না
শেষ হয়ে গেছে আসবার আগেই
রক্ত পুজে পরিণিত সভ্যতার চাপে
সততার যোম শরীরে বাসা বেঁধেছে
ছোট ছোট প্রাপ্তি ছোট ছোট আশা
বুকের শেষ রক্ত বেঁধেছে বাসা
যজ্ঞকরো আরও একটিবার প্রহরী
নামযজ্ঞ বা ধ্বংসযজ্ঞ।
পশুও মানুষের চর্বি জ্বালিয়ে
মেতে ওঠো মহাযজ্ঞে।
মহাপ্রস্থানের ডাক দাও অতন্দ্রপ্রহরী
ইশ্বরের গোলাম ইস্রাফিল
একদিন প্রশ্ন করবো পিতা মাতাকে? আমাকে কেন জন্ম দিলো?কেন দেখালো এই সুন্দর পৃথিবীর আলো?পুতুলের খেলা ভেঙে কেনোই বা গড়লো সংসার?কোন স্বার্থে কোন আশায়?জীবনের শেষ দিন যদি বিদ্ধাশ্রমের ঐ ছোট ঘরটিতেই কাটে।
ঐদু’টি পাখিকে একদিন জিজ্ঞাসা করবো! ওরা যে ভালোবেসে সুন্দর আবাসভূমি বানিয়ে ছিলো নিজ হাতে কারুকার্যে গড়েছিলো নিজের পৃথিবী,সুখেয় তো ছিল,স্ত্রী,সন্তান নিয়ে।হঠাৎ দমকাহাওয়া লেগে পুরুষ পাখিটি পানিতে ডুবে মরলো,স্ত্রী পাখিটা কোথায় যে উড়ে গেল সন্ধান আজও অনেকের অজানা,আর সেই বাচ্চা দুটির খোঁজ কে বা জানে!
তবে কেন এই ঘর বাঁধে যদি তা ভেঙেয় যায়?
জিজ্ঞাসা করবো সরকারের প্রতিনিধিকে? আমার জন্য পাঠানো সেই সরকারি গম,চাউল,সার,রেশমকার্ড,কোম্বল কোথায় পাঠালে জমা দিলে কার গোদামে?গরীবের অন্ন কেড়ে সাঁজালে কোন রাজার নৈবদ্যর থালা?আমার অন্ন দিয়ে পুজা করলে কোন স্বৈর দেবতার?
আমার নামে কি তবে কিছুই আসেনি?
একদিন প্রশ্ন করবো এই নিষ্ঠুর সমাজকে?
কেনো আমাকে বানালো সন্ত্রাস কেড়লো আমার সুন্দর জীবন,যেহাতে কলম থাকার কথা ছিলো কেনো টোকায়ের হাতে অস্ত্র তুলে দিলো,আমাকে কেন বানালো হিংস্র হায়না,তবে কি আমি পশু হয়ে জন্মে ছিলাম?
বলো এই সমাজের কি প্রয়োজন আছে?
একদিন জিজ্ঞাসা করবো এক শিক্ষককে?
আমার শৈশব কেনো চুরি করলো আমার ঘাড়ে কেনো তুলে দিলো গ্রন্থের বোঝা,আমাকে নির্বধ কেন বানালো ব্যবসার পন্য কেন বানালো আমাকে?জিজ্ঞাসা করবো কত জনকে শিক্ষিত,সভ্য মানুষ বানাতে পারলো আর কত জনকে নিক্ষেপ করলে পাশান পৃথিবীর অন্ধ গুহার শ্মশান জাতাকলে?ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও ঐ প্রতিষ্ঠান যেখানে শিক্ষার নামে ব্যবসা চলছে।
তবে তোমার শিক্ষক হওয়ার কি মূল্য?
নাগরিকত্ব আমার ধসে যাওয়া কাদামাটি দিয়ে তুমি গড়ে নিলে তোমার নতুন ঘরের স্তম্ভ আমার স্বপ্নের…..
ভালো নেই ভালো নেই ধূসর সন্ধ্যা বিষণ্ন বিকেল, চারিপাশ ভালো নেই কফির কাপ পথের ধুলো…..
প্রেমের কবিতা যা কিছু পাষাণ, মনে হয় আঁশ বটিতে কুচি-কুচি করে কাটি পালানো ঘাতক সময়…..
তর্জমা স্নানে শুচি হবার পর বেকসুর সন্ধ্যাগুলো শুধুমাত্র নিজস্ব অন্ধকারের নিচে দোলনাচেয়ারে ছড়িয়ে বসা কিছুটা…..