মরণের পরে

সুদীপ ঘোষাল
অণুগল্প
মরণের পরে

মরণের পরে

সেদিন ছিল ভীষণ কুয়াশা। শীতকালের পৌষ মাসের সকাল। যথারীতি ভোর পাঁচটার ট্রেন ধরে হাওড়া যাবে বলে
লাইন পার হচ্ছিল মনোজ। আর ঠিক সেই সময়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে আসছিল গ্যালোপিং ট্রেন। তাকে পিষে দিয়ে
চলে গেল নিমেষে।

কিছুক্ষণ পরেই মনোজের শরীর বেশ হালকা লাগছে। সে আস্তে আস্তে উপরে উঠতে শুরু করলো। কিন্তু দেখলো
সে হাওয়ায় ভাসছে কেন? আর তার শরীরটা পড়ে আছে লাইনের উপর।

শরীর ছাড়া হয়ে মনোজ বেশ উপরে উঠে উড়ে উড়ে বেড়াতে লাগল। তারপর দুপুর গড়িয়ে রাত নামলো রাতে আরো
অনেকে শরীর ছাড়া। শরীর ছাড়া আত্মা উড়ে উড়ে বেড়াতে বেড়াতে তার কাছে এলো। সকলের সাথে পরিচয় হলো।
সে দেখল সে একা নয় তাদের একটা দল আছে।

 

বাঁচার রসদ

আজ সুপার মার্কেটের পুরো গাছগাছালির আড়াল ঘিরে শুরু হয়েছে পৌষ পিঠের মেলা। এই মেলার সামনের পাড়ায়
বস্তি এলাকায় কিছু গরীব সংসারের আবাস। তারা সুপার মার্কেটের সামনে থাকে এই নিয়ে তাদের গর্বের শেষ
নেই। কারণ এই মার্কেট জুড়ে অনুষ্ঠিত হয় মেলা,সার্কাস আর বাজার। আর সেখানে কাজ করে তাদের ভালমন্দ

খাবার জুটে যায়। শুধু বর্ষাকালে কোনো অনুষ্ঠান হয় না। তখন ঝড়ে ডালপালা ভাঙ্গে আর সেই ডালপালা নিয়ে
এসে তারা বাড়িতে ফুটিয়ে নেয় দুমুঠো চাল। পুকুরের গেঁড়ি, গুগুলি তখন তাদের একমাত্র ভরসা।

আজ পৌষ পিঠের মেলা। দুটি বছর দশেকের শিশু চলে এসেছে মেলায়। তাদের টাকা পয়সা নেই। ঘুরে বেড়ায়
উল্লাসে। তারপর বেলা বাড়ে আর তাদের খিদে বাড়ে সমানুপাতিক হারে। খিদে নেই ওদের যারা ঘুরে ঘুরে পিঠে
খায়। ফেলে দেয় অর্ধভুক্ত পিঠের শালপাতার থালা। ডাষ্টবিন ভরে যায় খাবারসহ শালপাতায়।

শিশু দুটি লোভাতুর হয়ে ওঠে।
পাশে আলো মুখে একজন মহিলা এগিয়ে আসে। সে বলে, তোদের বাড়ি কোথায়। শিশু দুটি দেখিয়ে দেয় তাদের পাড়া।
মহিলা বলে, আমাকে তোদের বাড়ি নিয়ে যাবি?
শিশু দুটি হাত ধরে নিয়ে আসে তাকে। পথে হাঁটতে হাঁটতে মহিলাটি বল, আমি তোদের দিদি। আমাকে দিদি বলে
ডাকবি।
বাড়িতে নিয়ে গিয়ে শিশু দুটি বলে, মা মা দেখ দিদি এসেছে আমাদের বাড়ি। মা তো অবাক। তারপর জানতে পারে
সব। পেতে দেয় তালপাতার চটাই। একগ্লাস জল খেয়ে দিদি ব্যাগ থেকে বের করে পিঠের প্যাকেট। সকলে
একসাথে বসে খায়।

দিদি বলে শিশু দুটির মা কে, আমার ছেলেপুলে হয় নি। তোমার বাচ্চাদের দেখে চলে এলাম তোমাকে দেখতে।
জানো ভগবান, সকলকে সবকিছু দেয় না। তোমাকে যেমন টাকা পয়সা দেয় নি আর আমাকে আবার সন্তান দেয়
নি।
তোমার পুত্রসন্তানদের আমি আজ থেকে দেখাশোনা করব। তুমি অনুমতি দাও বোন…

 

আলো

হাওয়াতে ভেসে চলেছেন সুদর্শন বাবু । ফুরফুরে মেজাজে তার নিত্য আসা যাওয়া কলেজের পথে ।একজন ছাত্রী
তার নিত্য সাথী । ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলা, কলিগরা অন্য চোখে দেখে । বাঙালি একটি যন্ত্র প্রথম
আবিষ্কার করে ।সেটি হলো ষড়যন্ত্র । হাসতে হাসতে বলেন কলিগদের ।

উত্তরে তারা বলেন ,সত্য উদ্ঘাটিত হোক ।

বেশ কয়েক মাস পরে একদিন কলেজ ছুটির পর পিছু পিছু কলিগরা তাদের অনুসরণ করলো । সুদর্শন বাবু
ছাত্রীদের নিয়ে ঘরে ঢুকলেন কলেজ ছুটির পরে।

কলিগরা বাইরে থেকে দেখলো শিক্ষক ও ছাত্রীরা পড়াশুনোয় ব্যস্ত। তারা শিক্ষার আলোর সাধনায় নিবিষ্ট ।
অব্শ্য সঠিক সময়ে ছাত্রীটির অভূতপূর্ব সাফল্যের জন্য কলেজের সকল অধ্যাপকদের পুরস্কৃত করা হলো ।

 

পরশ

দাদুর বাবার লাঠি। যত্ন করে তুলে রাখা আছে বাঙ্কে। কার জন্য? বৃদ্ধ আমার জন্য। কত সুখস্মৃতি জড়িয়ে
লাঠির অঙ্গ প্রত্যঙ্গে। দাদামশাই লাঠি ধরে পথ চলতেন। লাঠিকে বলতেন, বাবা ভাল করে ধরে রাখিস। ফেলে
দিস না এই বুড়ো বয়সে। কোমর ভেঙ্গে যাবে তাহলে। বিশ্বস্ত লাঠি তার দায়ীত্ব পালন করেছে পলে পলে। এবার
তার নাতির পালা।

নাতি বয়স বাড়লেই পাবে তিনপুরুষের পরশ…

সুদীপ ঘোষাল। গল্পকার। জন্ম ভারতের পশ্চিমব্ঙ্গরাজ্যের কেতুগ্রামের পুরুলিয়া গ্রামে। প্রকাশিত বই: 'মিলনের পথে' (উপন্যাস)। এছাড়াও কয়েকটি গল্প ও কবিতার বই আছে।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

দৌড়

দৌড়

একবার এক দৌড় প্রতিযোগিতায় কেনিয়ার হয়ে দৌড়চ্ছিলেন আবেল মুতাই। খুবই ভালো দৌড়াচ্ছিলেন তিনি। সবাইকে পেছনে…..