অদ্ভুত অন্ধকার
এই কপট কবন্ধ সমাজ থেকে
‘সত্য’ হয়েছে দেশান্তরী
ভীষণ উড়নচন্ডী, মতিচ্ছন্ন,
গৃহত্যাগী মানুষের মতো।
‘সুন্দর’ রয়েছে পড়ে মৃত,
তার শব নিয়ে কী ভীষণ
টানাটানি, খাবলা খাবলি
করছে শেয়াল কুকুরের পাল
যেমন ভাগাড়ে গরু মহিষ
নিয়ে করে শকুনেরা,
আবার দুর্ভিক্ষে করে মানুষ নিয়ে।
‘মেধা’ ও ‘মনন’ গ্যাছে বনবাসে,
‘প্রকৃত মানুষ’ আজ মৃত সবখানে।
‘আদর্শ’ পচে কটু গন্ধ ছড়ায়
‘আইন’ কিংবা ‘বিচারের বাণী’ আজ
বেশ্যার মতো বাজারে বিকায়।
আর ‘বিবেক’?
সে তো সাত হাত মাটির নিচে
কবরে ঘুমায়।
পরিবেশবাদী আইনজীবি ডেভিড বাকেলের প্রতি-
গতানুগতিক খুন, রাহাজানি, ধর্ষণ,দুর্নীতি,
জঙ্গিবাদের উত্থান, তীব্র যানজট
আর রাজনৈতিক কাদা ছুড়াছুড়ি বাইরে
একেবারে অন্য রকম একটি খবরে
পত্রিকার পাতায় চোখ আটকে গেলো-
‘আগুনে আত্মাহুতি দিয়ে আইনজীবির প্রতিবাদ।’
তাঁর ছবিসহ খবরটি ছাপা হয়েছে।
‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিবাদ জানিয়ে
শরীরে আগুন দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত আইনজীবি
ডেভিড বাকেল(৬০) আত্মাহুতি দিয়েছেন।
সমকামী ও ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকার আদায়ে
ও পরিবেশবাদী ভিন্ন ভিন্ন সংগঠনের হয়ে
কাজ করতেন তিনি।
স্ইুসাইড নোটে তিনি লিখেছেন,
মানুষ ধরিত্রীর যে ক্ষতি করছে
তা প্রতীকী ভাবে বুঝাতে
জীবাশ্ম জ্বালানি দিয়ে তিনি
নিজেকে শেষ করলেন।’
অদ্ভুত এই খবরটি পড়ে মনে হলো,
ডেভিড বাকেল কেমন মানুষ!
তিনি কি সিংহ হৃদয় পুরুষ?
নাকি সাগর তীরে উঠে আসা
আত্মাহুতি দেয়া তিমি মাছ?
নাকি মানুষ কথিত এক গাধা!
তিনি কি মানুষের কীর্তিকান্ড দেখে,
একে অপরের প্রতি অবিশ্বাস,ঘৃণা,ঈর্ষা,
সন্দেহ, ক্রোধান্ধ চোখ
আর কঠিন চোয়াল দেখে ব্যাথিত হয়েছেন?
অনুমান করি তিনি হতাশাগ্রস্ত ছিলেন,
অবলীলায় শান্তিনিকেতন গুড়িয়ে দিয়ে
মানুষের অনেক যতেœ গড়ে তোলা
স্বার্থপর কাঁচের ঘর দেখে।
ধারণা করি তিনি বিষাদগ্রস্ত ছিলেন-
মানুষের অবিরাম আত্মকলহে,
আত্মীয় সংহারে, অনাত্মীয় বিরোধী বাতাসে গড়া
কারাগারে বসবাস করে।
আমার মনে হয়, বোকার মতো মানুষের
পরমানন্দে ক্রমাগত কার্বন নিঃসরণে,
আপোষে নিজেদের জীবনের চারপাশে
অক্সিজেনহীন পরিবেশে
তিষ্ঠাতে না পেরে
অবশেষে তিনি আত্মাহুতি দিলেন।
দুঃসময়
আমার মগজে আজকাল কবিতা আসে না।
মগজে জ¦লে হুতাশন।
কবিতা হয় না লেখা
শিউলী, বকুল কিংবা গোলাপ
তুলতে গিয়ে কেবল আচঁল ভরা
দুঃখ তুলে আনি।
সমতলে, পাহাড়ে, গাঁয়ে, শহরে ফ্যাক্টরীতে,
সিনেমা হলে, পার্কে, কলোনিতে, আদালতে
কিংবা ট্রাফিক আইল্যান্ডে
কোথাও নিশ্চিন্তি নেই।
পথে ঘাটে যানজট উপচে পড়া ভীড়
অথচ কি এক নিসঙ্গতা ঘন কুয়াশার মতো
হাত ধরার মতো কেউ নেই কোনখানে।
অরাজক পরিবহন বানিজ্য আর
নৈরাজ্যের বলি হয় স্কুলের শিক্ষার্থী।
মায়ের বুক খালি হয়।
সড়কে, মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল
র্দীঘ থেকে র্দীঘতর হয়।
বাস, ট্রাক, কাভার ভেনের স্টিয়ারিং হাতে
আজরাইলসম ড্রাইভার
মৃত্যুর ভেঁপু বাজায় বারবার।
ঘাতক যন্ত্রদানবের চাকার নিচে পিষ্ট হয়
আগামী দিনের বাংলাদেশ।
দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে
শিশু-কিশোর-তরুণেরা ও
রাজপথে নেমে আসে পথ চিনে নিতে।
ভয় বিস্ফারিত চোখে চেয়ে থাকি
সকল সময় যেনো
এখন কোথাও কারো পরিত্রাণ নেই,
প্রতিকার নেই।
খাদের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছি সকলে।
রক্তাক্ত কাদায় আমাদের পা ডুবে যায় বারবার।
শিশু-কিশোর-তরুণের
নিষ্কলুষ, অপাপবিদ্ধ, যৌক্তিক আন্দোলন ও
ছিনতাই হয়ে যায়,
কালিমা লিপ্ত হয়।
টিয়ার শেলের ধোঁয়ায়
আধাঁর নেমে আসে বিশ্ববিদ্যালয়, রাস্তায়।
চোখে দুঃস্বপ্নেরা নেমে আসে।
চমকে উঠি বারবার-
মনে হয় পিছনে লেগেছে ফেউ,
নিজেকে প্রেতায়িত লাগে।
কেউ জেরা না করলেও
নিজেদের দেখি কাঠগড়ায়।
ডানে বাঁয়ে কোনো সশস্ত্র প্রহরী নেই
নেই হাতকড়া
তবুও আমরা যেনো অন্ধকার সেলে বন্দী,
দেয়ালের সাথে কথা বলি
কিংবা কখনো চুপ মেরে যাই।
আমার বুকে তো বিদ্ধ হয়নি বুলেট,
কেউ আমূল ছোরা বসিয়ে দেয়নি পাঁজরে
তবুও আমার বুক থেকে
ফিন্কি দিয়ে রক্ত ঝরছে,
রক্ত ঝরছে
আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বুক চিরে
ক্রোধাগ্নির মতো রক্ত ঝরছে অবিরত,
আর তুষের আগুনের মতো প্রতিবাদের
আগুন জ্বলছে ধিকিধিকি।
দুঃসময় ২
আমার মগজের ডাকবাক্সে
জমে না কবিতার চিঠি আজকাল,
মগজে যেনো জ্বলে মরুভূমি
বন্ধ্যা কাগজ কলম আমায় বিদ্রুপ করে,
‘‘কি সব লেখো ছাই পাশ?
চোখের চশমায় তোমার ফটোক্রোমিক গ্লাস
তাই রাস্তায় দেখো তুমি ভানুমতির খেল।
কানে তোমার ডিজিটাল হেডফোন
তাই তুমি শোননা গুজব’’
আহা কি যে শুনি
কি বা দেখি তাহা কে বা জানে!
পত্রিকার হেডলাইন,
‘‘দেশ জুড়ে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনে
যানবাহনের চাপ নেই বলে ফাঁকা মহাসড়কে
ধান শুকাতে ব্যস্ত কৃষক।’’
টিয়ার শেলের ধোঁয়ায়
আধাঁর নেমে আসে বিশ্ববিদ্যালয়, রাস্তায়।
চোখে দুঃস্বপ্নেরা নেমে আসে।
চমকে উঠি বারবার-
মনে হয় পিছনে লেগেছে ফেউ,
নিজেকে প্রেতায়িত লাগে।
কেউ জেরা না করলেও
নিজেদের দেখি কাঠগরায়।
ডানে বাঁয়ে কোনো সশস্ত্র প্রহরী নেই
নেই হাতকড়া
তবুও আমরা যেনো অন্ধকার সেলে বন্দী,
দেয়ালের সাথে কথা বলি
কিংবা কখনো চুপ মেরে যাই।
আমার বুকে তো বিদ্ধ হয়নি বুলেট,
কেউ আমূল ছোরা বসিয়ে দেয়নি পাঁজরে
তবুও আমার বুক থেকে
ফিন্কি দিয়ে রক্ত ঝরছে,
রক্ত ঝরছে
আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বুক চিরে
ক্রোধাগ্নির মতো রক্ত ঝরছে অবিরত,
আর তুষের আগুনের মতো প্রতিবাদের
আগুন জ্বলছে ধিকিধিকি।
ফিরে যাই মানুষের কাছে
গোলাপ, গন্ধরাজ কিংবা পৃথিবীর
সুন্দরতম ফুলটিও এতোটা সুন্দর নয়
যতটা মানুষের মুখ।
নদী বা ঝর্ণার কলগান কিংবা পাখিদের কলগীতিও
এতটা মধুর নয়
যতটা ধ্বনিময় মানুষের কন্ঠস্বর।
এই যে মায়াময় প্রকৃতি কিংবা সবুজ শ্যামলিমা
সেও মানুষের দুঃখে
হবে না এমন কাতর।
মানুষই মানুষের দুঃখে বুক পেতে আঘাত সয়,
বিষ পানে নীলকন্ঠ হয়।
মানুষের হৃদয় যেনো শ্যামল তৃণক্ষেত্র,
মানুষের চোখের জল
শিশির কণার চেয়েও আর্দ্র।
এমন নিবিড়ঘন বিষাদ
মানুষের চোখে বৃষ্টি হয়ে ঝরে।
আবার মানুষের মতো এমন
শঠ, কুটিল, হিং¯্র, স্বার্থপর, লোভী, নিষ্ঠুর, ধর্ষকামী,
অবিবেচক প্রাণী এই ব্রক্ষ্মান্ডে আছে কি?
মানুষেরই মাঝে সুর ও অসুরের দ্বন্দ্বে
কুরুক্ষেত্র এই পৃথিবী।
তবু
তবু
তবুও
এমন অতলান্তিক দৃষ্টি, এতো অনুভূতিময় চোখ
পৃথিবীর কোন সুন্দরতম ভাষ্কর্যের কখনো দেখিনি আমি।
মানুষের মনের মতো এমন
কুসুমিত পল্লবিত বনভূমি
কখনো দেখিনি আমি।
তাই দুঃখে-সুখে, আনন্দ-বেদনায়,
হাসি-কান্নায়, আশা-হতাশায়
বার বার ফিরে যাই মানুষের কাছে।
কষ্ট
তুমি কাছে না থাকলে ভীষণ কষ্ট পাই।
আমি কষ্ট পেলে,
আমার মনে যদি মেঘ জমে
তবে নীলাকাশের বা আকাশের তারাদের
কিছু আসে যায় না।
এমনকি আমার বাগানের গাছপালা
চড়ুই, শালিক, বুলবুলি, টুনটুনি উদাসীন থাকে।
বাড়ীর পাশের পুকুরে পা ডুবিয়ে থাকি,
ভাবি, পুকুরের ঠান্ডা জলে কষ্টের আগুন শীতল হবে
দুঃখ ধুয়ে যাবে।
ক্লান্ত দিনের শেষে বেশ রাত্তিরে বাড়ি ফিরি
কষ্ট সঙ্গ ছাড়ে না,
দুঃখ বন্ধুর মতো গলা জড়িয়ে ধরে থাকে।
মনে হয় দুঃখকে ভালোবেসে, কষ্টকে সাথে নিয়ে
ফুটপাতে নিঃসঙ্গ বৃষ্টিতে ভিজি একা।
কান পেতে শুনি নৈঃশব্দের সাথে বাতাসের কথা বলা।
মাঝরাতে ভয় পেয়ে জেগে উঠি,
দুঃখ হয়, কষ্ট পেতে থাকি,
নিভৃতে মগজের কোষে কোষে
কবিতারা ফিসফাস কথা কয়।