মসলার দোকানে

সেঁজুতি বড়ুয়া
কবিতা
Bengali
মসলার দোকানে

মসলার দোকানে

মসলার দোকানে দেদারসে দারচিনি বিক্রি হচ্ছে দেখে
আমিও উঁকি দিয়ে তেজপাতার দাম জিজ্ঞেস করি
দোকানি শুকনো মরিচের উপর থেকে একটা আলটপকা
হলুদকে হাতে সরিয়ে সরু চোখে স্বাস্থ্যবান আদাগুলোকে
হাতে ময়ান দিতে দিতে বলে, এই তেজপাতা সুঘ্রাণে ভরা
মাংস কিংবা অন্য কিছুতে দিলে এর ঘ্রাণ নিতে প্রতিবেশীরাও
ছুটে আসবে, এমন তেজপাতা ঘরে ও বাইরে সবার সম্মান
বাড়াবে…এখন ভেবে দেখুন, নেবেন কিনা?

তেজপাতা রেখে আমি জাফরানের কথা জিজ্ঞেস করলে
সে তার মসলার দোকানে ঘুরে ঘুরে চক্কর খায়
মসলার সমস্ত ডালা, জানালার ঝাঁপি, দরজাটার পা্ল্লা খুলে
অারও সরু চোখে তাকায়, এক চিমটি জাফরান হাতে নিয়ে বলে
-ক্যামন অসামান্য মসৃণ লাল, দেখুন একেবারে পদ্মফুলের গন্ধ
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাফরান আমার হাতে, সবচেয়ে দামী মসলা এটি!

দোকানীর হাতের তালুতে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মসলা হঠাৎ ছোট্ট গুল্মফুল
হয়ে যায়, সেই ফুল থেকে একটা সাদাসিদে মানুষের অবয়ব…

আমি প্রচণ্ড কৌতুহলে মানুষটির দিকে তাকালে সে মুচকি হাসিতে
বলে- আমি কিন্তু এশিয়া মাইনর, খোরাসান কিংবা কাশ্মীরের না
বাংলাদেশের হৃদস্পন্দনে বেড়ে ওঠা নির্ভেজাল, স্বাস্থ্যকর জাফরান!
নিয়ে যাও, নরম বালিশে গন্ধের সমারোহে তোমাকে সুখনিদ্রা দেবো

সুখনিদ্রার লোভে যেই তাকে নেবার জন্যে হাত বাড়িয়েছি
অমনি দোকানে থাকা অসংখ্য মসলার ডালা, অমিমাংসিত ঝুড়ি
রাশি রাশি সুগন্ধি, ঝাঁঝালো মসলা এমনকি স্বয়ং মসলা দোকানীও
দৃশ্যমান অদৃশ্যে ছায়াসঙ্গী হয়ে, দলে দলে কাঠ পিঁপড়ার লাইনে
হাতে উঠে বুকের কাছে যত্ন করে সুগন্ধী ছড়াতে চায়

এসব দেখে অতল গভীর ঘোরে আমি যেন তলিয়ে যেতে থাকি…
আমার ক্যামন মাতাল মাতাল লাগে, পা টলতে থাকে…
কালো সরিষার ঝাঁজে আমার ক্যামন অবশ অবশ লাগে…
ভয়ে হাতটা গুটিয়ে নিতে চাইলে একটা লোমশ হাত আমার হাতে
কী সব ঢেলে সন্তর্পণে বলে, এই নিন আমার দোকানের সমস্ত মসলা
ঘোর লাগা সমস্ত সুবাস, সবটুকু নির্যাস- ভাববেন না এমনিতেই দিচ্ছি
এদের আড়মোড়া ভাঙার আগেই, ঝড়ো বাতাসে এখানে ওখানে উড়ে
যাবার আগেই দয়া করে বাড়ি নিয়ে যান, আমি দোকানটা বন্ধ করি!

আমি চোখ খুলে হাতের দিকে তাকাতেই দেখি, কোথাও কিছু নেই তো
না মসলার গুঁড়া, না গোটা মসলা, না দোকানী, এমনকি মসলার
দোকানটাও বাজার থেকে ভোজবাজির মতো কোথায় হারিয়ে গেছে!

এসব দেখে আমি সত্যিই অতল গভীর ঘোরে তলিয়ে যেতে থাকি…
আমার ক্যামন সত্যিই মাতাল মাতাল লাগে, পা টলতে থাকে…

সেঁজুতি বড়ুয়া। মূলতঃ কবি। পাশাপাশি গল্প, ছোটদের গল্প, বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রবন্ধ-নিবন্ধসহ নানা বিষয়ে ফিচার লিখে থাকেন। জন্ম চট্টগ্রামের পটিয়ার কোলাগাঁও-এ মামা বাড়িতে। যদিও নিজ বাড়ি রাউজানের মহামুনি পাহাড়তলি গ্রামে। ঢাকায় বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা, জীবিকা সবকিছু। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..