মাধবী (পর্ব ১২)

আলপনা তালুকদার
উপন্যাস, ধারাবাহিক
Bengali
মাধবী (পর্ব ১২)

আমি মিশেলকে বাধা দিইনি। কারণ সোমা বা মাধবী, কারো কাছেই আমার তখন কোন দায়বদ্ধতা ছিলনা। আমি মিশেলের সাথে ঘনিষ্ঠ হই আরো একটি কারণে। সোমার সাথে সম্পর্কের শেষদিকে আমি ওকে পুরোপুরি তৃপ্তি দিতে পারতামনা। সমস্যাটা আমার শারীরিক না মানসিক, তা বুঝতে পারছিলামনা। আমার সত্যিই শারীরিক কোন সমস্যা আছে কিনা, সেটা বোঝার একটা উপায় পাওয়া গেল। আমি মিশেলকে রেপ করছিনা। যা হচ্ছে, ওর সম্মতিতে হচ্ছে। তাহলে বাধা কোথায়?

আমরা এক হলাম। শরীরের যেসব বিদ্যা আমার তখনো অজানা ছিল, সবই মিশেল আমাকে শেখালো। আমিও ভীষণ খুশী এজন্য যে, নিজের সক্ষমতা নিয়ে আমার সন্দেহ দূর হল। মিশেল পুরো সাত দিন আমার সাথে কাটানোর পর খুশীমনে ফিরে গেল।

পরের সপ্তাহে মিশেল ফোন করল। সে আমাকে বিয়ে করার জন্য চাপ দিতে লাগলো। আমি রাজী হতে পারছিলাম না। কারণ আমি তখনও মাধবীর ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারিনি। তাছাড়া সোমার সাথে সংসার জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা আমাকে আর ওপথে চলতে দিতে চায়না। সর্বোপরি, মিশেল যে শর্তগুলো দিচ্ছিল, সেগুলো মেনে ওকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলনা। আমি শর্তসাপেক্ষে  কোন সম্পর্কে বিশ্বাস করিনা।

– তোমার জীবনে এতকিছু ঘটে গেছে, মাধবী জানে?

বেলির এ প্রশ্নে আমি চমকে উঠলাম।

– না। ওর জানার কোন পথ নেই। সুমনের সাথে যোগাযোগ থাকলে হয়তো জানতে পারতো। মাধবী যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে।

– আমার মনে হয় মাধবীকে তোমার সব জানানো উচিত। কারণ তার জন্যই তো এতকিছু। তাছাড়া এমনও তো হতে পারে, সেও তোমার মতই কষ্টে আছে।

বেলি যুক্তি দিল। আমি ভাবতে লাগলাম। সোমা আমার আর মাধবীর ইমেইল আর চ্যাটগুলো দেখার পর ওখান থেকে মাধবীর মোবাইল নাম্বার, অফিসের ঠিকানা সব পেয়ে যায়। পরে সোমা যখন ফোন করে মাধবীকে গালি দিচ্ছিল, হুমকি দিচ্ছিল যে, ওগুলো সে মাধবীর বস্ ও ওর বরকে পাঠাবে, আমি তখন অনেক কষ্টে ওকে থামাই।

“তোমার যে শাস্তি দিতে হয়, আমাকে দাও। মাধবীর কোন ক্ষতি করোনা। ওর কোন দোষ নেই। ও নিজে থেকে আমার সাথে যোগাযোগ করেনি। আমি করেছি। সব দোষ আমার।”

মাধবীর সাথে সুমনের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণটা অদ্ভুত। আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ হবার পর মাধবী সুমনের সাথে কথা বলতো। হয়তো আমার খবর নেবার জন্যই। অথবা একাকীত্বের কারণে। ওর বর তখন বিদেশে ছিল। কিন্তু সুমনের বৌ বন্যা এই ব্যাপারটা কিছুতেই পছন্দ করলনা। কেন, সেটা দূর্বোধ্য।

বন্যা সুমনের অজান্তে মাধবীকে আজেবাজে মেসেজ পাঠাতো। মাঝরাতে মিস্ কল দিত। মাধবী বিরক্ত হয়ে একদিন কথাপ্রসঙ্গে সুমনকে বিষয়টা জানায়। সুমন মাধবীর কাছে ফোন নাম্বারটা চায়। সে জানার চেষ্টা করবে, কে, কেন মাধবীকে বিরক্ত করছে। তখন জানা যায় যে, কাজটা বন্যা করেছে। তারপর মাধবী ওদের সাথে আর কোন সম্পর্ক রাখেনি। মাধবীকে বন্যা সন্দেহ করতো। সুমন তাকে পছন্দ করে বলে হয়তো ঘৃণাও করতো। মাধবী বন্যার এতদিনের পরিচিত। তাকেই যখন বন্যা সন্দেহ করতে ছাড়েনি, তখন সোমার আর দোষ কী?

মাধবী বলেছিল, বেশিরভাগ মেয়েরা ইনসিকিউর ফিল করে বরকে নিয়ে। এই ইনসিকিউরিটি থেকে সন্দেহ, যা কিনা সংসারে অশান্তির একটা বড় কারণ। বিশেষ করে যারা প্রেম করে বিয়ে করে, তারা আরো বেশী জেলাস হয়। ইনসিকিউরিটির সবচেয়ে বড় কারণ হল, এমনিতেই আমাদের দেশে মেয়েদের ভাল বিয়ে হওয়া সহজ নয়; তার উপরে মেয়ে যদি বেকার, অসুন্দর বা ডিভোর্সি হয়, তাহলে দ্বিতীয় বিয়ে হওয়া অনেক বেশী কঠিণ। তাই বউরা ভয়ে ভয়ে থাকে, যেন তাদের স্বামী হাতছাড়া না হয়। তারা স্বামীকে চোখে চোখে রাখে। আর যদি জানতে পারে যে, বিয়ের আগে স্বামীর প্রেম ছিল, বা স্বামীর আলুর দোষ আছে, বা স্বামীর সুন্দরী-শিক্ষিতা- চাকরীজীবি এক বা একাধিক বান্ধবী আছে,  তাহলে বৌরা কিছুতেই তাদেরকে সহ্য করতে পারেনা।

মাধবীর সাথে সুমনের ভাল বন্ধুত্ব ছিল। সুমন ওকে খুব পছন্দ করত। আমার সাথে দেখা হবার আগে সুমন মাধবীকে প্রপোজও করেছিল। মাধবী রাজী হয়নি। কিন্তু ওর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে গেছে সবসময়। এমনকি, বন্যার সাথে সুমনের প্রেম হবার পরে একাধিকবার সুমন বন্যাকে নিয়ে মাধবীর বাসায় গেছে। একসাথে ঘুরেছে। ফলে বন্যার সাথেও মাধবীর বেশ ভাল সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ওদের দু’জনের সাথেই মাধবীর সম্পর্ক যে ভীষণ আন্তরিক, সেটা আমি অনেকবার নিজে চোখে দেখেছি। সেই মাধবীর সাথেই এখন বন্যার দা-কুড়াল সম্পর্ক।

দেশে গিয়ে যখন ফোন করেছিলাম, তখন মাধবী কথা বলতে চায়নি। হয়তো ভেবেছিল, ওর সাথে যোগাযোগ বন্ধ হলেই বুঝি আমার সংসার টিকে যাবে। তাই আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন কেটে দিয়েছিল। আমি খুব অবাক হয়েছিলাম। কষ্টও পেয়েছিলাম ওর আচরণে।

সেজন্যই আমি ওর সাথে আর কোন যোগাযোগ করার চেষ্টা করিনি।

বেলির কথা শুনে মনে হল, ওর খোঁজ নেই। দেখি, ও কেমন আছে। আমি মাধবীর অফিসের ল্যান্ডফোনে রিং করেছিলাম। ও হয়তো বুঝতেই পারেনি, আমি দেশে। জানলে ও নিশ্চয় কথা বলতো। আমার সাথে দেখাও করতো। মাধবীর নতুন মোবাইল নাম্বার আমি জানিনা। ওর অফিসের নাম্বার আছে।

আমি ফোন করে মাধবীকে চাইলাম। পিওন ডেকে দিল। মাধবী ‘হ্যালো’ বলতেই আবার পুরনো স্মৃতিগুলো সব একসাথে আমার চোখের সামনে ভেসে উঠল। প্রায় দু’বছর পর ওর গলা শুনছি। তেমনি সুরেলা আর মিষ্টি কণ্ঠস্বর। স্পষ্ট আর দৃঢ় উচ্চারণ। মাধবী গান গাইতে পারে। গান ভালও বাসে খুব। কিন্তু ওর গানের গলা তেমন ভাল না। তবে আমার বেশী ভাল লাগে ওর গান সিলেকশন আর গাওয়ার ভঙ্গী। ও বেছে বেছে ঐ গানগুলোই গায়, যেগুলো খুব বেশী সুরেলা, গানের কথাগুলো মন ও মগজ ছুঁয়ে যায়। আর এমন দরদ দিয়ে গায়, যেন মনে হয় গানটা ওর নিজের, যেন শুধু ওর জন্যই গানটার জন্ম হয়েছে।

– হ্যালো! কে বলছেন প্লিজ..।

কথা না বললে যদি ফোন কেটে দেয়, সেই ভয়ে বললাম, “কেমন আছ?”

মাধবী কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে রিসিভার নামিয়ে রাখলো। বুঝলাম, ও কথা বলতে চাইছেনা। হয়তো ভালই আছে স্বামী-সংসার নিয়ে। আবার ফোন করা ঠিক হবে কিনা ভাবছি। খুব ইচ্ছে করতে লাগলো, আর একবার ওর গলা শুনি। অন্ততঃ ওর মুখ থেকে শুনি, ও ভাল আছে। তাহলে আমারও ভাল লাগবে।

– কেন ফোন করেছ?

এবার ওর গলায় বিরক্তি, ভয়, অস্বস্তি। হয়ত অফিসে আশপাশে লোকজন আছে।

– এমনি। তুমি কেমন আছ, খুব জানতে ইচ্ছে করছিল, তাই।

আমরা জানতাম, একসময় আমাদের যোগাযোগের ব্যাপারটা জানাজানি হবেই। তখন দু’জনেরই সংসার জীবন নষ্ট হবে। তবু এক দূর্বার আকর্ষণ অনবরত আমাদের টানতো। আমরা আফসোস করতাম, কেন এক হইনি? কেন ইচ্ছে করে কিছু নির্বোধ লোক আমাদেরকে এভাবে দূরে সরিয়ে দিল? মাঝে মাঝে মাধবীর বাবা আর বরকে আমার খুন করতে ইচ্ছে করতো।

মাধবীকে বিয়েতে রাজী করাতে না পেরে ওর বাবা আমার বাড়ীতে লোক পাঠায়। জানার জন্য, আসলেই আমি বা আমার পরিবার কেমন। যাকে পাঠায়, সে এসে নেগেটিভ কথা বলে। মাধবীর পক্ষে সেটাকে পজিটিভ করা সম্ভব ছিলনা। কারণ মাধবী আমার পরিবার সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতনা। আমি ফোনে বা চিঠিতে যতটুকু জানিয়েছি, ততটুকু ছাড়া। সেই লোক আমার সম্পর্কে বলেছে, এলাকার লোকজন আমি কি করি, সে সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানেনা। জানার কথাও না। আমি এসএসসি পাস করে গ্রাম ছেড়ে চলে এসেছি ঢাকায়। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে ছুটিতে অল্পদিনের জন্য বাড়ী গেছি। মাস্টার্স পাস করেই ইংল্যান্ডে চলে এসেছি। আমি এখানে কি করি গ্রামের লোক তা কি করে জানবে?

মাধবী ওর বিয়ে আটকানোর শেষ চেষ্টা করেছিল ওর হবু বরকে সবকিছু খুলে বলে। এনগেজমেন্টের দু’দিন আগে ও গোপনে দেখা করে ওর বরের সাথে। ও আশা করেছিল, সুশিক্ষিত মানুষ, হয়ত ওর মানসিকতা বুঝে বিয়ে না করে পিছিয়ে যাবে। যায়নি। উল্টে বলেছে, “বিয়ের আগে এমন হতেই পারে। না হওয়াটাই অস্বাভাবিক। আমিও যে কাউকে পছন্দ করতামনা, তা তুমি কিভাবে নিশ্চিত হলে?” এদেশে কোন মানুষ জেনেশুনে এমন বিয়ে করবেনা। বরং পারলে দু’জনকে মিলিয়ে দেবে নিজে উদ্যোগ নিয়ে। আমাদের দূর্ভাগ্য, আমরা বিকৃত মানসিকতার শিকার।

পরিবারের সবার পীড়াপীড়িতে মাধবী শেষ পর্যন্ত হার মানে। অনেক দুঃখ,-কষ্ট-যন্ত্রণা-ক্ষোভ আর ঘৃণায় ওদের অমানবিক জেদের কাছে মাধবী নিজের ভাললাগা-ভালবাসাকে বিসর্জন দিয়েছে। স্বেচ্ছায় নিজেকে নরকে ঠেলে দিয়েছে। সেই সাথে আমাকেও। তোমরাই খুশী হও। আমার জীবন জাহান্নামে যাক। তোমাদের দেখার দরকার নেই। বেচারী রাত-দিন কেঁদেছে। চাবি দেয়া পুতুলের মত নীরবে সবকিছু করে গেছে। বরের পাশে বসে সারাপথ কেঁদেছে। কেউ বোঝেনি, বোঝার চেষ্টা করেনি, কি যন্ত্রণা বুকে নিয়ে বেচারা নতুন জীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছে।

– ফোন রাখ। সোমা জানতে পারলে..।

মাধবী তাড়াতাড়ি বলল। আমি ওকে থামিয়ে দিলাম।

 – সোমা এখন আর আমার সাথে থাকেনা। তুমি ওর চিন্তা করোনা।

এবার ওর অবাক হবার পালা। একটু চুপ করেে থাকলো।

– থাকেনা মানে? ঠিক করে বল, কি হয়েছে?”

– আমাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। এখন আমরা আলাদা থাকি।

অনেকক্ষণ মাধবী কোন কথা বলল না। হয়তো বিশ্বাস করতে পারছেনা। হয়তো আমার জন্য কষ্ট পাচ্ছে। হয়তো অনুশোচনা হচ্ছে। হয়তো ভাবছে, ওর জন্য আমার ঘর ভেঙেছে। মাধবী আর কোন কথা না বলে ফোন কেটে দিল।

মাধবীর সাথে ওর বরের প্রথম বড় ধরণের ঝগড়া হয় মাধবীর চাকরিতে ঢোকা নিয়ে। একা সময় কাটেনা। অতগুলো ভাল রেজাল্ট নিয়ে ঘরে বসে থাকা। মাধবী চাকরীতে ঢোকার জন্য চেষ্টা করছিল। দু’একবার চাকরীর কথা বরকে বলেছিল। যখন দেখেছে বর চায়না, তখন আর জানায়নি। সে যে মাধবীর চাকরী পাবার বিষয়ে কোনরকম সাহায্য করবেনা, এটা মাধবী বুঝে গিয়েছিল। তার সহজ কথা, “কি দরকার? আমি তো আছি আয় করার জন্য। আমি শিক্ষিত বউ চেয়েছি, চাকরীজীবী নয়। সেজন্যই তো বেকার মেয়ে বিয়ে করা।” মাধবী অনুযোগ করেছিল, ” বিয়ের সময় তো এসব বলনি।” বিরক্তির সাথে সে জানায়, “এতে বলাবলির কি আছে? তুমি কি বলেছিলে, তোমার প্রেমিক বিয়ের পরেও তোমাকে বিয়ে করতে চাইবে?”

তারপর মাধবী বরকে না জানিয়ে চাকরীর আবেদন করছিল। কোনরকম ধরাধরি ছাড়াই মাধবী একটা ভাল চাকরী পেয়েও যায়। একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির এক্সিকিউটিভ। মাসিক বেতন দেড় লাখ টাকা।

চাকরীতে যোগ দেবার আগে মাধবী বরকে কথাটা জানায়। তারপরেই বাধে বিপত্তি। ভীষণ রেগে যায় সে। তার অনুমতি ছাড়া চাকরী পাবার অপরাধে ভয়ানক রাগারাগির এক পর্যায়ে রাত বারোটায় সে মাধবীকে তার বাড়ী ছেড়ে চলে যেতে বলে। মাধবী এক কাপড়ে বেরিয়ে আসে। মাস দু’য়েক ছিল মায়ের বাড়ী। এসময় আমি দেশে এসে সোমাকে বিয়ে করি।

আমার কেন যেন মনে হয়, সুমন চায়নি আমাদের বিয়ে হোক। চাইলে মাধবীর বিয়ের আগে ওর সাথে দেখা করে ওর বিয়েটা আটকাতে পারতো। অন্ততঃ ঠেকিয়ে রাখতে পারতো আমি না আাসা পর্যন্ত। কেন ও চায়নি, আমি জানিনা। মানুষের মন খুব জটিল। মাধবীকে ও পছন্দ করত। মাধবী রাজী হয়নি। তার শোধ নিয়েছে কিনা কে জানে!

মাধবীকে আমার বিয়ের খবর দিয়েছে আগ্রহ করে। কিন্তু আমি বিয়ে করতে দেশে এসেছি, এই খবরটা দেয়নি। দিলে মাধবী নিশ্চয় ওর অবস্থা আমাকে জানাতো। তাহলে আমি সোমাকে বিয়ে করতামনা।

মাধবীর বিয়ের পর সুমনের অসহযোগিতার কারণেই মাধবীর সাথে আমার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। নাহলে আমি সোমার সাথে সম্পর্কে জড়তামনা। ওকে বিয়েও করতামনা।

আমি বিয়ে করে বউ নিয়ে চলে গেছি, এখবর শোনার পর মাধবী আমার সাথে কখনও কথা বলার, যোগাযোগ করার চেষ্টা করেনি। আমাকে আমার মত সুখে থাকতে দিয়েছে। দিনের পর দিন স্বামীর অবহেলা আর শাসন হজম করেছে।

আমাদের দেশে নারীকে বেশীরভাগ পুরুষ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে দেয় না। মোোহরানা, স্ত্রীধন, স্বামী  ও বাবার সম্পত্তির অংশ, তালাকের পর খোরপোোষ –  এসব বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দেয়া হ্য়না। সবসময় চেষ্টা হয় বঞ্চিত করার। অনেক ক্ষেত্রে চাকরীও করতে দেয়া হয়না। যদিও জীবনযাত্রার খরচ বাড়ার কারণে সে মানসিকতা ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে।

প্রতিটা মেয়েরও আয় থাকা জরুরী। কারণ আর্থিক স্বাবলম্বিতার সাথে তার আত্মসম্মানবোধ, মানসিক শান্তি, কর্তব্য পালন – এ বিষয়গুলো জড়িত। আয় না থাকলে পরনির্ভরশীল হয়ে বাঁচতে হয়। ইচ্ছে থাকলেও অনেক কিছু করা যায়না। ছোট ছোট প্রয়োজনেও বরের কাছে হাত পাততে হয়। স্বামীর যত টাকাই থাকুক, এটা কোন স্ত্রীর জন্য ভাল কিছু না। কারণ কখনো না কখনো তাকে বরের কাছে খরচের হিসাব দিতে হয়।

এদেশে প্রতিবন্ধীদের জন্যও ভাতা আছে। প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের যাতে বাবা- মা ‘বোঝা’ মনে করে অবহেলা না করেন, সেজন্য এই ভাতা। বেকার ভাতা দেয়া হয়  যাতে যুবক-যুবতীরা হতাশার কারণে কোন অপরাধে না জড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া চাকরী দিতে না পারা সরকারের ব্যর্থতা। তাই সে অন্ততঃ ভাতা দিতে বাধ্য, যতদিন না চাকরী দিতে পারছে। এরা যতদিন কর্মক্ষম থাকে, ততদিন কাজ করে। আর আমরা অবসরের পর আর কিছু করতে চাইনা। চাকরী বা কাজের সুযোগও কম। লক্ষ লক্ষ বেকার। অনেক স্বচ্ছল পরিবারে  আবার মেয়েদের চাকরী করা পছন্দও করেনা। তারা ঘরে থাকবে। রান্না করবে, বাচ্চা সামলাবে। এছাড়া তার আর অন্য কোন জীবন নেই। তার জীবন শুধুই পরিবারের জন্য। মেয়েরাও নিজের আত্মতৃপ্তির জন্য উদ্যোগী হয়ে কিছু করতে চায়না। চাইলেও সবাই পরিবারের সম্মতি বা সাহায্য সবসময় পায়না।

মেয়েরা চাকরী বা কাজ করার ক্ষেত্রে  আর একটি কারণে বড় বাধা পায়। সেটি হল, সংসারের কাজে তাকে আর কেউ সাহায্য করেনা। কিছু কাজ শুধুই মেয়েরা করবে। চাকরী করলেও, না করলেও। এদেশে সবকিছু পাওয়া যায় প্যাকেটে। ফলে কোটা-বাছা, মশলা করা, রান্না – এসব কাজ সহজে, অল্প সময়ে করা যায়। আমি ঢাকায় দেখেছি, মানুষকে রোজ ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে আটকে থাকতে হয়। মানুষের সময় আর শক্তির কি সীমাহীন অপচয়!

মাধবী দান করতে ভালবাসে। তাই নিজে আয় করতে চেয়েছিল। তাছাড়া ওর আত্মসম্মানবোধ খুব তীব্র। বরের টাকা হাত পেতে নিতে ওর ভাল লাগার কথা নয়। ওর চাকরীটা প্রয়োজন ছিল।

চলবে…

আলপনা তালুকদার। ড. আকতার বানু আলপনা (আলপনা তালুকদার নামেই বেশি পরিচিত) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আই.ই.আর (শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট) - এর একজন অধ্যাপক। তিনি এসএসসি-তে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল থেকে রাজশাহী বোর্ডে মানবিক বিভাগ থেকে মেয়েদের মধ্যে প্রথম ও সম্মিলিত মেধা তালিকায় অষ্টম...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ