ইমন কল্যাণ
পরিচ্ছেদ ৬ অনেক রাতে ফিরেছিল কল্যাণ ওরফে শহীদুল।গাড়িটা শেডে রাখার পর দু’বার হালকা করে মা…..
পূর্ব প্রকাশিতের পর…
মাধবীর সাথে ওর বরের মানসিকতার পার্থক্য ছিল আকাশ-পাতাল। মাধবী ছিল মিশুক, রোমান্টিক, উদার, আন্তরিক। ওর বর ছিল ঠিক উল্টা।
মাধবী ছিল তার ঘরের শোপিচ। সে রাতদিন নিজের পেশা নিয়ে বিজি থেকেছে। কখনো বোঝার চেষ্টা করেনি, মাধবী কি চায়।
আমাদের এ অঞ্চলে বউদের শারীরিকভাবে ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা একটি সাধারণ ঘটনা। বিদেশে নারী নির্যাতন বন্ধে নানা কঠোর আইন আছে, আছে তার শতভাগ নিশ্চিত প্রয়োগও। অস্ট্রেলিয়াতে প্রতি মাসে স্বামীর আচরণ কেমন, তার রিপোর্ট দেয় স্ত্রী। এই রিপোর্ট খারাপ দিলে স্বামীর বিরুদ্ধে খুব সহজে নানা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার আইন আছে। ফলে এসব দেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা খুবই কম।
আমাদের দেশের স্বামীরা অনায়াসে স্ত্রীকে মারতে পারে, তালাক দিতে পারে, আবার বিয়ে করতে পারে, ছেড়ে চলে যেতে পারে। কারণ সমাজ এসব অন্যায় মেনে নেয়। আইন থাকলেও বেশীরভাগ ক্ষেত্রে তার প্রয়োগ হয়না। মাধবী মানসিক অশান্তিতে দিন কাটাচ্ছিল।
বিয়ের পর মাধবী একা হয়ে যায়। তার কোন বন্ধু-বান্ধব ছিলনা। কোথাও যেতে পারতনা। ফোনেও কারো সাথে কথা বলতে পারতনা। তার স্বামী পছন্দ করত না। মাধবী সব মেনে নিয়েছে। কিন্তু চাকরী করার ব্যাপারে যখন স্বামীর আচরণের কথা ওর পরিবার জানতে পারে, তখন ওর আম্মা ওর পাশে দাঁড়ান। জামাইকে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, “আমি মেয়েকে পাঠাবনা। একমাত্র মেয়ের খরচ চালানোর স্বামর্থ আমাদের আছে। রাত বারোটায় যে জামাই মেয়েকে বাড়ী থেকে বের করে দিতে পারে, তেমন জামাই আমাদের দরকার নেই। থাক মেয়ে ঘরে।” পরের দিন মাধবী চাকরীতে যোগ দেয়।
বিয়ের চার দিনের দিন মাধবীর বর ওকে বলেছিল, “আমার পরিবারের কেউ তোমাকে পছন্দ করেনি।” মাধবী তখন শ্বশুরবাড়ী এসেছে দ্বিতীয়বার। শ্বাশুড়ীর জন্য মায়ের দেয়া শাড়ী, ননদদের আর জায়ের জন্য ওর হাতের কাজ করা ব্যাগ, পাপোষ – এগুলো সে ব্যাগ থেকে বের করছে সবাইকে দেবে বলে।
মাধবীর অনেক গুণের মধ্যে একটি হল, সে চমৎকার হাতের কাজ জানে। সোফার কুশন কাভার, কুরুশ কাঁটার টেবিল ক্লথ, দেয়াল ভর্তি নানা রকম হাতের কাজের ওয়ালম্যাট, এমনকি কুরুশের টেলিফোন কাভারটিও খুব সুন্দর। আমি ওদের বাসার ড্রইংরুমে বসে মুগ্ধ হয়ে সেসব কাজ দেখেছি। ক্লিনিকে দ্বিতীয় দিন আমাকে দেখতে আসার সময় ও আমার জন্য কিছু উপহার এনেছিল। সুন্দর র্যাপিং পেপারে মোড়ানো ছোট একটা প্যাকেট। প্যাকেটের উপরে একটা টকটকে লাল আধফোটা গোলাপ স্কচটেপ দিয়ে আঁটানো। পরে জেনেছি মাধবীর প্রিয় ফুল গোলাপ নয়, বেলি। তাহলে সেদিন গোলাপ কেন দিয়েছিল? বেলি পায়নি বলে? নাকি প্রেম নিবেদনের জন্য গোলাপের মত বেলি অতটা যুৎসই নয় বলে?
প্যাকেটটা আমার হাতে দিয়ে বলেছিল, “এটা তোমার জন্য। কিন্তু এখন খুলবেনা। ঢাকায় গিয়ে খুলবে।” কেন একথা বলেছিল আমি জানিনা। আমি খুলিনি। মাধবী যাবার পর সুমন হাসতে হাসতে বলেছিল, “নির্ঘাত প্রেমপত্র!” আমি হেসেছি। পরে খুলে দেখি, একটা দামী কলম, একটা রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার গানের ক্যাসেট আর একটা রুমাল। তাতে চমৎকার নক্সা করা। রুমালের চারপাশে কুরুশ কাঁটার কাজ। আমি অভিভূত হলাম। কিন্তু কোন চিঠি নেই। ছোট চিরকুটও না। আমি সেদিন বুঝিনি, ওটা আসলে উপহার ছিলনা, ছিল প্রেম নিবেদন। মুখে বলতে না পেরে ওভাবে বলেছে। নিজের বোকামীর জন্য নিজের উপরেই রাগ হয়েছে খুব। সেই সাথে আফসোসও। ইস্, যদি বুঝতে পারতাম, তাহলে আর ক’টা দিন বেশী থেকে মাধবীর সাথে সময় কাটিয়ে তারপর লন্ডনে আসতাম। আমি বোকা। মাধবীও বোকা। নাহলে নিজের জীবন কেউ এভাবে নষ্ট করে?
মাধবী তখন আপ্রাণ চেষ্টা করছিল, স্বামী আর শ্বশুরবাড়ীর লোকদেরকে আপন করে নিতে। আমাকে সে দূরে ঠেলেছে বুকে পাথর চাপা দিয়ে। মাধবী ভীষণ অবাক হয়ে স্বামীকে প্রশ্ন করেছিল,”আর তুমি?” মাধবীর বর তাচ্ছিল্য করে বলেছিল, “এখন তো আর কিছু করার নেই। বিয়ে তো হয়ে গেছে।” মাধবী উঠে দাঁড়ায়। নতুন বৌকে গাড়ী থেকে নামানোর সময় শ্বাশুড়ীর দেয়া গলার চেন, ননদের দেয়া চুড়ি, এনগেজমেন্টের আংটি – সব খুলে সে বিছানার উপর রাখে। তারপর নিজের ভ্যানিটি ব্যাগটা ঘাড়ে নিয়ে মাধবী বলে, “আমি চলে যাচ্ছি। বিয়েতে তুমি আমাকে যা যা দিয়েছ, সব আমি নিজে তোমাকে ফেরত দিয়ে যাব। আমি ভেবেছিলাম, তুমি আমাকে পছন্দ করে বিয়ে করেছ। তা যখন করনি, তখন শুধুমাত্র বিয়ে হয়ে গেছে বলে অনিচ্ছাসত্বেও আমার সাথে সংসার তোমাকে করতে হবেনা। আমি তোমাকে মুক্তি দিয়ে গেলাম। আমার বাবা-মা যদি আমাকে তোমার কাছে ফিরে আসতে বাধ্য করে, তাহলে দরকার হলে আমি আত্মহত্যা করব। তবু কিছুতেই তোমার কাছে ফিরে আসবনা। আমাকে তোমার পছন্দ না, সেটা বিয়ের আগে বললেই পারতে। পছন্দ না হলে বিয়ে করলে কেন?”
মাধবীর বিয়ে হয়ে গেছে। ও আর কোনদিনই আমার হবেনা – এই কথাটা তখন কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলামনা। সবকিছু ভেঙ্গে-চুরে চুরমার করে দিতে ইচ্ছে করছিল। মনে হয়েছিল, ওকে নিয়ে পালিয়ে যাই।
সেসময় আমি দেশে আসার পর বড় আপার বাসায় উঠেছিলাম। সকালবেলা ব্যাগ গোছাচ্ছি। মাধবীর খোঁজ নিতে যাচ্ছি। তখনও আমি ওর বিয়ের খবরটা পাইনি। আপা বললেন, “মাধবীর খবর কি?” আমি না বললেও আপা জানেন, আমি কোথায় যাচ্ছি। আমি আপার দিকে না তাকিয়ে ব্যাগে তোয়ালে ভরতে ভরতে বললাম, “এক মাস যাবৎ ওর সাথে যোগাযোগ হচ্ছে না। ও কি অবস্থায় আছে, আমি জানিনা।” আপা বললেন, “তেমন দেখলে ওকে নিয়ে চলে আসিস। তারপর দেখা যাবে।”
আমার চিন্তা ছিল বাবা-মাকে নিয়ে। বাবা সবসময় চাইতেন, আমি আমার এলাকার কোন মেয়েকে বিয়ে করি। আর মা ভয় পেতেন, আমি যেন হুট করে কোন ক্রিশ্চিয়ান মেম বিয়ে করে না বসি। মাধবীকে আমার পরিবারের সবাই পছন্দ করেছিল। তাই আমি এদিক থেকে নিশ্চিন্ত ছিলাম। ফলে ওকে তুলে আনলেও পরে পরিস্থিতি সামলানো কোন ব্যাপার ছিলনা।
মাধবী আমার সাথে দেখা করে ফিরে যাবার পর আমার আর আপার বাসায় ফিরতে ইচ্ছে করছিল না। কি বলব আমি সবাইকে? একদিকে মাধবীকে হারানোর কষ্ট, আরেকদিকে পরিবার-বন্ধুদের সামনে অপমানিত হওয়ার লজ্জা। আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছিল। আমি রাত-দিন কেঁদেছি। সুমন, বন্যা, লুনির সামনে। রাতে লুকিয়ে। আমার পুরো জীবনটা এলোমেলো হয়ে গেল। কি ভেবে এসেছিলাম, আর কি ঘটল! একেই বোধহয় ‘নিয়তি’ বলে।
আমি পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী ঘৃণা করি মাধবীর বাবাকে। উনি আমার কাছ থেকে মাধবীকে কেড়ে নিয়েছেন, সেজন্য নয়। অত শিক্ষিত, বিচক্ষণ একজন মানুষ নিজের মেয়ের মনের কথা বুঝতে পারেননি, বুঝতে চাননি, নিজের মেয়েকে সীমাহীন কষ্ট দিয়েছেন, সেজন্য।
মাধবীকে ছাড়া ফিরে আসার পর আমি বন্ধুদের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াতাম। কেউ যদি মাধবীর প্রসঙ্গ তোলে, তখন বিব্রতকর অবস্থায় পড়ব, সেই ভয়ে। আমি তখন বাসা পাল্টে বন্ধুদের ছেড়ে একা থাকা শুরু করেছিলাম।
একদিন সুলতান আমাকে ডেকে পাঠাল। আমি ‘যাবনা যাবনা’ করেও গেলাম। সুলতান জানতো, আমি এ কষ্ট সহ্য করতে পারবনা। আমাকে দেখে কোন ভনিতা না করে বলল, “দোস্ত, তোমার সামনে এখন দুইটা পথ খোলা। এক, মাধবীকে মাথা থেকে নামিয়ে নতুন করে বাঁচা। আর দুই, মাধবীর টাচে থাকা। একসময় না একসময় ও তোমার কাছে চলে আসবে। বেশীদিন ভাল থাকার অভিনয় করা যায়না। মাধবীকে আমি যতটুকু দেখেছি, চিনেছি, তাতে মনে হয়েছে, সেও তোমাকে ততটাই ভালবাসে, যতটা তুমি বাস।”
সুলতানের কথামত আমি কিছুদিন মাধবীর সাথে যোগাযোগ রাখতে চেষ্টা করেছিলাম। সরাসরি নয়, সুমনের মাধ্যমে। আমি সুমনের ঠিকানায় মাধবীকে চিঠি লিখতাম। সুমন সেটা পৌঁছে দিত মাধবীর হাতে। একটি চিঠিতে আমি লিখলাম, “তুমি বাচ্চা নিওনা। আমি জানি, তুমি বেশীদিন অন্য কারো সাথে থাকতে পারবেনা। আমি অপেক্ষা করে আছি। যেকোনদিন তুমি বললেই চলে আসবো।”
পরে জেনেছি, সুমন ওকে আমার চিঠিগুলো দেয়নি। একসময় সে আমার পত্রবাহক হতে অস্বীকৃতি জানায়। মাধবী তখনো চাকরীতে ঢোকেনি। ফলে ওর সাথে যোগাযোগের আর কোন পথ আমার সামনে খোলা ছিলনা। তাই আমি নিরুপায় হয়ে মাধবীর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেই। ধীরে ধীরে আমি ওকে ফিরে পাবার আশাও ছেড়ে দেই।
বিয়ের পর মাধবী ওর কষ্টের কথা আমাকে জানায়নি। জানানোর চেষ্টাও করেনি। চাইলে সুমনের কাছ থেকে আমার নতুন বাসার ঠিকানা নিয়ে যোগাযোগ করতে পারতো। করেনি। হয়তো আমার মতই ভেবেছে, আমি ওকে ভুলে গেছি। ভুলে গিয়ে ভাল আছি। বা সোমাকে নিয়ে মহাসুখে আছি। তাই আমাকে বিরক্ত করতে চায়নি। আমি মাঝে মাঝে ওর খবর নেবার জন্য ওর বাসায় ফোন করেছি। ফোনে ওকে পাইনি। মাধবী তখন ওর বরের সাথে আলাদা বাসায় থাকতো।
সুমনের ওপরে আমার খুব রাগ ছিল দু’টো কারণে। প্রথম কারণ ছিল, মাধবীর বিয়ের আগে ওকে মাধবীর খবর নিতে বলেছিলাম বার বার। ও যায়নি। গেলে হয়ত মাধবীর বিয়েটা আটকানো যেত। আর দ্বিতীয় কারণ ছিল, আমি চলে আসার পর ও চাইলে আমি মাধবীর সাথে যোগাযোগ রাখতে পারতাম। ওর কারণে পারিনি। তাহলে আজ আমরা যে জটিল পরিস্থিতিতে পড়েছি, সেটা পড়তাম না। অনেক আগেই আমরা এক হতাম। মাধবী আমার কাছে চলে আসতো।
আমি বুঝতে পারছিলাম, দোষটা আমারই। আমার উচিত হয়নি ওর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া। আমি ভেবেছি, মাধবী ভাল আছে। স্বামী-সংসার নিয়ে সুখে আছে। কিন্তু আমি বুঝিনি, কী অসম্ভব মানসিক কষ্ট নিয়ে সে দিনের পর দিন কাটিয়েছে। আমার কাছে ফিরতে চায়নি পরিবারের মানহানির ভয়ে। পরে সন্তান হবার পর ভেবেছে, “এবার সব ঠিক হয়ে যাবে।” যদিও কিছুই ঠিক হয়নি।
আমি যখন জানতে পারি, মাধবী কষ্টে আছে, তখন আমার মনে হয়েছে, ওকে একটু হলেও ভাল রাখা আমার দায়িত্ব। শত কষ্টের মাঝেও মাধবী ভাল ছিল শুধু আমার কারণে। আমার সাথে কথা বললে ও ওর সব কষ্ট ভুলে যেত। আমাকে ওর কষ্টের কথা বলে মন হালকা করত। আমারও ভাল লাগতো। সোমার কারণে আমিও ভাল ছিলামনা। ফলে আমরা ধীরে ধীরে দু’জন দু’জনের উপর মানসিক শান্তির জন্য নির্ভর করতে শুরু করি। ধীরে ধীরে আমরা নিজেদের অজান্তে আরো কাছাকাছি চলে আসি।
প্রথম প্রথম যখন আমাদের কথা হত, তখন মাধবীর বর ওকে সন্দেহ করত। ওর সাথে আরও খারাপ ব্যবহার করত। তখন ও কথা বলতে চাইতো না।
– আমাদের এক হওয়া সম্ভব নয়। তাহলে শুধু শুধু কথা বলে কী লাভ?
– তুমি ভাল থাকবে। আমিও। তুমি জান, আমি ভাল নেই। তোমার সাথে কথা বললে মনে হয় এখনও মারা যাইনি। এখনও বাঁচতে ভাল লাগে।
– বেশ। চল আমরা বিয়ে করি। তখন পরিবারের কারণে তোমাকে বিয়ে করতে পারিনি। এখন তারা কিছু করতে পারবেনা। কারণ এখন আমি ভাল জব করি। মেয়েটাও ছোট। তুমি রাজী থাকলে আমি ওকে নিয়ে তোমার কাছে চলে যেতে পারি। বা তুমিও স্থায়ীভাবে দেশে চলে আসতে পার। এভাবে লুকোচুরি না করে আমাদের উচিত একটা স্থায়ী সিদ্ধান্তে আসা।
আমি ওর কথায় রাজী হতে পারিনি। সোমা তখন অন্তঃসত্বা। নীল আসছে। তখন সোমাকে ছাড়ার কথা আমি ভাবতেও পারছিলামনা। আমাদের বাঙ্গালী মানসিকতা সহজে বদলায় না। আমারও বদলায় নি। তাই দোষটা আমারই বেশী। মাধবীর না। আমাদের মানসিকতা হল, একবার বিয়ে হয়ে গেলে তা সারাজীবনের জন্য। আমরা আলাদা হতে চাইনা। চরম অশান্তিতে থাকলেও না। এতদিন এদেশে থেকেও এদের কালচার আমি তখনও আপন করে নিতে পারিনি।
মাধবী কষ্টে আছে, ও কখনও আমার কাছে ফিরতে চাইবে জানলে আমি বাচ্চা নিতামনা। বাচ্চার জন্য আমাদের তেমন তাড়াও ছিলনা। অনায়াসে আরো কিছুদিন দেরী করা যেত। সোমারও যে খুব বেশী ইচ্ছা ছিল, তাও নয়। ভাবটা এমন ছিল, হলে হোক, নাহলে নাই। আমি সেসময় বুঝিনি, মাধবী তখনও শুধু আমাকেই ভালবাসতো। যেমন আমি বাসতাম।
আমার মোবাইল ফোনটা বাজছে। ইদানিং আমার তেমন একটা ফোন আসেনা। ঘুরে ফিরে তিন-চার জন ফোন করে। সোমার সাথে ডিভোর্সের পর কারো সাথে কথা বলতে আমার আর ভালও লাগেনা। কি হয়েছিল, কেন ডিভোর্স হল, ছেলেটার এখন কি হবে – এসব শুনতে শুনতে আমি ক্লান্ত। নাম্বারটা অচেনা। বাংলাদেশের কোড দেখাচ্ছে। বড় আপার নাম্বার আমি জানি। কে হতে পারে?
মাধবীর নাম্বার জানিনা। ও ফোন করবেনা। দিন পনেরো আগে আমি ওর অফিসে ফোন করেছিলাম। ও তেমন কিছু না বলেই ফোন কেটে দিয়েছে। আমার ধারণা, ও আর কখনও আমার সাথে কথা বলবেনা।
আমি ফোনটা ধরলাম। ওপাশ থেকে কোন সাড়াশব্দ নেই। আমি এই নীরবতা চিনি। আমার বুকের ভেতরে তোলপাড়! কী অসম্ভব ভালোলাগা!
– মাধবী বল, আমি শুনছি।
আমি মাধবীর কথা শোনার জন্য অপেক্ষা করছি। কি ভেবে ফোন করেছে, তাও বুঝতে পারছিনা।
– সোনা, কথা বল। বল কি বলবে? ভাল আছ তুমি?”
অনেকক্ষণ পর বলল, “আছি”। আমার দুই বছরের সব কষ্ট এক নিমেষে দূর হয়ে গেল। জীবনানন্দের কবিতা মনে পড়ে গেল-
পৃথিবীর সব ঘুঘু ডাকিতেছে হিজলের বনে;
পৃথিবীর সব রূপ লেগে আছে ঘাসে;
পৃথিবীর সব প্রেম আমাদের দু- জনার মনে……
আমি মনে মনে বেলিকে ধন্যবাদ দিলাম। বেলি মাধবীর খোঁজ নেবার পরামর্শ না দিলে আমি হয়তো আর কখনোই মাধবীকে ফোন করতাম না।
মাধবীর কণ্ঠস্বর মৃদু। প্রায় ফিসফিস করে বলল, “লাভ ইউ।”
অনেকদিন পর কথাটা আবার শুনলাম। বুকটা ভরে গেল। আমার গলা কাঁপছে।
– লাভ ইউ ঠু।
– নীল কোথায়?
– সোমার কাছে।
মাধবী কাঁদছে। আমি ওকে হালকা করার চেষ্টা করলাম।
-কাঁদছ কেন?
– ইস্! আমার জন্য তোমার এই অবস্থা হলো। সব দোষ আমার।
– তোমার দোষ কেন হবে? আমিই তো প্রথম তোমাকে ফোন করেছিলাম।
তাছাড়া আমি এখন ভাল আছি। বিশ্বাস কর, আগের চেয়ে অনেক ভাল আছি।
– নীলকে মিস্ কর না?
– করি।
– তাহলে ভাল থাক কীভাবে?
– আমি মাঝে মাঝেই নীলের সাথে কথা বলি। চাইলে দেখতেও যাওয়া যায়।
– সরি, সোনা সরি।
– সরি কেন? বললাম তো, তোমার দোষ না।
– ইস্, বেচারা নীল!
নিজের অজান্তেই আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। আবার চোখ ভিজে উঠছে। নীল! আমার নীল!!!
চলবে…
পরিচ্ছেদ ৬ অনেক রাতে ফিরেছিল কল্যাণ ওরফে শহীদুল।গাড়িটা শেডে রাখার পর দু’বার হালকা করে মা…..
পরিচ্ছেদ ৫ আকাশে এখন আর মেঘ নেই। হাওয়া হচ্ছে।কদিন পরেই বর্ষা নামবে।একদিন হাসপাতাল থেকে ফিরতে…..
পরিচ্ছেদ ৪ ভোর হয়ে আসছে।রাতে ভালো ঘুম হয়নি।ঘুমের ঘোরে মনে হচ্ছিল দম বন্ধ হয়ে আসছে।এরকম…..
পরিচ্ছেদ ৩ শীত শেষ হয়ে আসছে।রাঙ্গালীবাজনা ঢোকার মুখের রাস্তাগুলো পলাশ ফুলে ভরে গেছে।অথচ ঠান্ডাই।…..