পিঙ্গলা (পর্ব- এক)
পিঙ্গলা (এক) মসজিদের ঘাটলা দিয়ে নামার পথে তালের চারাটা বড্ড বেশি ঝুঁকে আছে। কুদ্দুস মনে…..
‘মাধবী’ নামটা ওর বাবা-মার দেয়া নয়। ওকে ভালবাসার পর আমি দিয়েছি। ওকে নিয়ে লেখা আমার গল্প-কবিতায় আমি এই নামটা ব্যবহার করি। যদিও ওকে আমি ডাকতাম অন্য আরেকটা নামে।
মাধবীর সাথে যে তিনদিন আমার দেখা হয়েছে, সুমন সাথে ছিল। আমরা কখনোই একা হতে পারিনি। ওকে দেখার পরের দিন থেকেই আমি মনে মনে ওকে মিস করতাম। লজ্জায় সেকথা সুমনকে বলিনি। ও কি ভাববে? তাছাড়া মাধবী আমার সম্পর্কে কি ভাবছে, সেটাও আমার কাছে তখনো পরিস্কার ছিলনা।
ক্লিনিক থেকে সুমনের রুমে আসার পর আমি সারাদিন রুমেই থাকতাম। তখনো আমার নাকে ব্যথা আছে। সুমন ক্লাস, নাইট ডিউটি নিয়ে বিজি ছিল। সে সময়টা আমি মাধবীকে খুব বেশী মিস করতাম। কথা বলতে ইচ্ছে করত। মনে মনে আশা করতাম, ও আমাকে ফোন করুক, দেখতে আসুক।
আমি ভাববার চেষ্টা করেছি, এত অল্প সময়ে ওকে আমার এত ভাল লাগার কারণ কি? এখন বুঝি, ওর মধ্যে জাদু ছিল। ওর ব্যক্তিত্বের একটা অসাধারণ আকর্ষণশক্তি ছিল। শুধু আমি না, যেই তাকে একটু কাছ থেকে দেখেছে, সেইই তাকে ভালবেসে ফেলেছে। আজীবন মনে রেখেছে। খুব সহজে, বিনা চেষ্টায় ও মানুষের মনে গাঢ় ছাপ ফেলে যেতে পারতো। ওর বুদ্ধিদীপ্ত কথা, চিন্তার ব্যাপকতা, সূক্ষ্ণ বিশ্লেষণ ক্ষমতা, মানুষকে খুব সহজে আপন করে নেবার সাবলীল, ব্যতিক্রমী যোগ্যতা ছিল ওর।
আজ সকালে সাইকেল চালিয়ে ভার্সিটি যাবার সময় দেখি, দু’টো গাড়ী এক্সিডেন্ট করেছে। বেশী ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ীটার চালক ছেলেটি গুরুতর জখম। আমি দেখলাম স্যুট-টাই পরা এক ভদ্রলোক, কোন অফিস যাত্রী হবেন, ছেলেটিকে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া গাড়ী থেকে একা টেনে বের করার চেষ্টা করছেন। ছেলেটি রক্তাক্ত। তাকে বের করতে গিয়ে ভদ্রলোকের পুরো শরীর রক্তে মেখে গেছে। আমিসহ আরো ক’জন এগিয়ে গেলাম। সবাই কাজ ফেলে আহত দু’জনের শুশ্রুষায় ব্যস্ত। মানুষের প্রাণ বাঁচানোর কি প্রাণান্তকর চেষ্টা! আমাদের দেশে হলে কিছু লোক পকেট থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে সরে পড়ত। কে যায় হাসপাতাল-পুলিশের ঝামেলায়?
আমার মনে আছে। একবার বাড়ী যাবার সময় রাতে রাস্তায় দূর্ঘটনাকবলিত একটি বাস দেখে ড্রাইভারকে থামতে বলেছিলাম। ড্রাইভার থামায়নি। উপরন্ত অন্য যাত্রীরা বলেছিল- “না না, দেরী হয়ে যাবে।” কি স্বার্থপর মানসিকতা! আমাদের কাছে জীবনের চেয়ে সময়, টাকা বা নিজের স্বার্থ বেশী মূল্যবান। আরো অনেক গাড়ীও নিশ্চয় একইভাবে পার হয়ে গেছে সেদিন। আহত মানুষগুলোর আর্ত-চিৎকার কেউ শুনেছিল কি?
আমি বুঝতে চেয়েছি – এর কারণ কি? রাস্তায় আহত মানুষ দেখেও কেন কিছু মানুষের মনে দয়া হয়না? খুব বেশী আত্মকেন্দ্রিকতা? নাকি পুলিশের হয়রানির ভয়? নাকি ব্যস্ততা? নাকি মানবিকতাবোধের অভাব? উত্তরটা এখনো আমার কাছে অজানা। এদেশে সবকিছু নিয়ন্ত্রিত, সুশৃংখল। মিনিট দশেক পরেই পুলিশের গাড়ী, এ্যাম্বুলেন্স এসে আহতদের নিয়ে গেল। আমাদের দেশটা এরকম হবে কবে?
আমরা কাছাকাছি আসিনি। কিন্তু আমি মাধবীর হাত ধরেছিলাম। সে ছিল এক স্বর্গীয় অনুভূতি! নৌকায় বেড়ানোর পর যখন নদীর খাড়া পাড় বেয়ে আমরা উপরে উঠে আসছিলাম, তখন একটু লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে হলেও মাধবী আমার বাড়িয়ে দেয়া হাতটা ধরেছিল। ওকে ছোঁয়ামাত্র আমার সারা শরীরে ভাললাগার এক শিহরণ খেলে যায়। আমি আজও চোখ বুজলে স্পষ্ট দেখি, লাজুক মায়াবতী একটি মেয়ে সাঁঝের আলোয় আমার হাত ধরে নদীর পাড় থেকে উঠে আসছে।
সেদিন সন্ধ্যায় মাধবীকে বিদায় দেবার সময় আমি ওর চোখে কষ্ট দেখেছিলাম। আমি কাল চলে যাব। আর আমাদের দেখা হবেনা। ওর বাসার সবচেয়ে কাছে থাকে মাসুম। তাই সেদিন ওকে বাড়ী পৌঁছে দেবার দায়িত্ব পড়ে ওর উপরেই। পরে মাধবী বলেছে, সেদিন ও চেয়েছিল আমি ওর সাথে যাই। বোকা মেয়েটা বলেনি। বললে লাজ-লজ্জার-মাথা খেয়ে সেদিন রিক্সায় আমি ওর পাশে বসতাম।
– বেশ কিছুদিন থেকে তোমাকে একটা কথা বলতে চাচ্ছিলাম।
ফোনের লাইনটা একটু পরেই কেটে যাবে। কার্ডের সময় প্রায় শেষ। কি মনে করে কথাগুলো বললাম।
– বল।
– বুঝতে পারছিনা, কিভাবে বলব।
– বলই না কি বলবে।
– না, ভাবছি, তুমি কি ভাববে।
– সিরিয়াস কিছু?
– হ্যাঁ।
– তাহলে থাক। পঞ্জিকা দেখে একটা ভালো সময় বের করে তারপর বলো। সিরিয়াস কথা সিরিয়াস টাইমে বলতে হয়। নাহলে কথার সিরিয়াসনেস মার খেয়ে যায়।
– আই লাভ ইউ।
সাহস করে বলেই ফেললাম। মাধবী চুপ। তারপর হেসেই খুন! ওর হাসিটাও অসাধারণ! প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা।
– তোমার মাথা খারাপ হয়েছে। কি বল পাগলের মত? তুমি আমার মুখটাও ভাল করে দ্যাখনি। আমি নিশ্চিত, তুমি বলতে পারবেনা আমার ফেসের ঠিক কোনখানে কাটা দাগ আছে। আর বলছ কিনা আই লাভ ইউ?
সত্যি বলতে পারিনি। ওকে ওভাবে দেখিইনি। তেমন সুযোগই হয়নি। হলে নিশ্চয়ই দেখতাম। এখন যেমন দেখি। খুঁটিয়ে খু্ঁটিয়ে ওর সবকিছু। ছবিতে।
এক চিঠিতে আমি লিখলাম, “এত অসাধারণ চিঠি তুমি কিভাবে লেখ?”
উত্তরে সে লিখলো: আমি লিখি আমার মত। খুব সহজ সাদামাটাভাবে। ভাষার অলংকরণ বা শব্দের কারুকাজ ছাড়া। তুমি আসলে চাচ্ছ, আমি লিখি। সেটা আমি এমনিতেই লিখব, আমার চিঠির মিথ্যে প্রশংসা না করলেও।
আমার বন্ধুরা ওকে দেখার জন্য উদগ্রীব। আমিও। অনেকবার বলার পর মাধবী ওর প্রথম ছবি পাঠিয়েছিলো। গাছপালা ঘেরা একটি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে মৃদু হাসি। আর সেই অন্তর্ভেদী চোখ। কী ভীষণ মায়ায় ভরা! আমার সবচেয়ে ফাজিল বন্ধু আওলাদ দেখে বলল, “দোস্ত, খাওয়া কমাইতে কও। না হয় চাউলের দোকান চেঞ্জ। নাইলে কোলে নিতে গেলে তোমার কোমর ভাঙবো কইলাম!” কোন মানে হয়? হলই না হয় একটু মোটা। তাই বলে এভাবে বলবে? আমার রাগ হলো। শালা দেখব, তুই কোন হুরপরী বিয়ে করিস্।
চলবে…
পিঙ্গলা (এক) মসজিদের ঘাটলা দিয়ে নামার পথে তালের চারাটা বড্ড বেশি ঝুঁকে আছে। কুদ্দুস মনে…..
ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১ ফ্লাশিং এর লাস্টস্টপে এসে ট্রেনটা থেমে গেল। প্ল্যাটফর্ম ভর্তি অসংখ্য…..
ইংরেজি ভার্সান এখানে >>> Welcome to the Pataquerical Night Show (Last Episode) পূর্ববর্তী পর্ব এখানে>>>…..
ইংরেজি ভার্সান এখানে >>> Welcome to the Pataquerical Night Show (Episode-5) পূর্ববর্তী পর্ব এখানে>>> শেষ…..