ইমন কল্যাণ
পরিচ্ছেদ ৬ অনেক রাতে ফিরেছিল কল্যাণ ওরফে শহীদুল।গাড়িটা শেডে রাখার পর দু’বার হালকা করে মা…..
নীল হবার পরের দিন সকালবেলা দু’জন ফিজিওথেরাপিস্ট এসেছেন সোমাকে ব্যায়াম করাতে। সন্তান জন্মাবার পর মায়েদের জরায়ূ বেশ খানিকটা বের হয়ে আসে। ওটাকে স্বস্থানে ফিরিয়ে দেবার জন্য বিশেষ কিছু ব্যায়াম। নাহলে মায়েদের দৈহিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে। সোমা বলল, সে ব্যায়াম করবেনা। থেরাপিস্ট দু’জন যেন আকাশ থেকে পড়ল। বলে কি?! এশিয়ার মানুষগুলো এত বোকা কেন?
আমাদের দেশে শরীরচর্চা ব্যাপারটা তেমন গুরুত্ব পায়না। ডায়েবেটিস, হার্টের সমস্যা বা এরকম কোন রোগ না হলে আমরা নিয়মিত হাঁটিওনা। আর মেয়েরা নিজেদের স্লিম রাখার চেষ্টা করে বিয়ের আগ পর্যন্ত। বলতে গেলে, আমাদের দেশে মেয়েরা পড়ালেখাও করে ভাল একটা বর পাবার জন্য। অথচ এদেশে ছোট-বড়, নারী-পুরুষ, বিবাহিত-অবিবাহিত, সুস্থ-অসুস্থ – সবাই শরীরচর্চা করে নিজের জন্য, নিজেকে রোগমুক্ত ও কর্মক্ষম রাখার জন্য। এদেশে সিজারিয়ান অপারেশন হয় কেবল তখনই, যখন কোন সমস্যা থাকে। তাছাড়া সিজারিয়ান অপারেশনে যে অষুধগুলো অবধারিতভাবে দিতে হয়, তার প্রভাবে মায়েরা মোটা হয়ে যান। তাই সৌন্দর্য্যপ্রিয় কেউই তা করাতে চাননা। মাধবীর দু’টো বাচ্চারই সিজারিয়ান বার্থ। তাই এখন মাধবী খানিকটা মোটা হয়ে গেছে। তবুও এখনও যথেষ্টই সুন্দরী।
– মাধবী ম্যাডাম বলছেন?
– জ্বি বলছি। কে বলছেন প্লিজ?
আমি নিজেকে ধাতস্থ করার চেষ্টা করছি। পুরো তিন বছর পর ওর গলা শুনছি। সুমনের গানের সেই বেলা বোসের মত, “দশ-বারোবার রং নাম্বার পেরিয়ে তোমাকে পেয়েছি। দেবনা কিছুতেই আর হারাতে…।”
বিয়ের পর স্বামীর সাথে আলাদা বাসায় চলে যাবার পর মাধবীর সাথে আর কথা বলা সম্ভব হয়নি। ওদের বাসার ল্যান্ড ফোনের নাম্বারটা আমার কাছে ছিল। এই তিন বছরে আমি অসংখ্য’বার ফোন করেছি এই আশায় যে, যদি কখনও ফোনটা মাধবী ধরে। ধরেনি। রিসিভার উঠানোর পর যখন বুঝতাম মাধবী নয়, তখন আমি চুপ করে থেকে শুনতাম, আশেপাশে থেকে মাধবীর গলা ভেসে আসে কিনা। দু’একবার তেমন বোঝার পর সাহস করে বলে ফেলতাম, “মাধবী আছে? ওকে একটু দেয়া যাবে?”
উত্তর না দিয়ে ফোন রেখে দিত। আমার মনে হয়েছে, মাধবীর মা আমার কষ্টটা বুঝতে পারতেন। আমি বার বার ফোন করি, কথা বলিনা, চুপ করে থাকি। আমার নীরবতা বলে দেয়, আমি কেন ফোন করেছি। বছরখানেক আগে মাধবীর মা ফোন ধরার পর আমি বলেছিলাম, “মাধবীকে একটু দিন প্লিজ। এক মিনিট কথা বলব।” ওনার বোধকরি দয়া হল আমার প্রতি। “মাধবী আর এখানে থাকেনা। বরের সাথে আলাদা বাসায় থাকে।” তারপরেও আমি ফোন করেছি। উনি কখনোই টেম্পার লুজ করেননি, গালি দেননি, ফোন করতে মানা করেননি।
সেদিন মাধবী চলে যাবার পর আমি খুব কেঁদেছিলাম। বন্ধু সুমন আমাকে সান্তনা দেবার চেষ্টা করেছে। আমার বান্ধবী লুনি এসেছিল খবর পেয়ে। ও তখন মাধবীর বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়তো। কলেজে পড়াকালীন লুনি আমাকে খুবই পছন্দ করত। আমি কখনও ওকে সেভাবে দেখিনি। সুমন বাইরে যাবার পর লুনি আর আমি বাসায় একা ছিলাম। লুনি আমার মনের অবস্থা দেখে নিজেও সেদিন কেঁদেছিল। আমরা পাশাপাশি বসে ছিলাম অনেকক্ষণ। লুনি চাইছিল, আমি ওকে স্পর্শ করি। আমার ইচ্ছে করেনি। আমি মাধবীর জন্য আনা সব উপহার ওকে দিয়ে দিয়েছিলাম। আমি লুনির কোন খবর জানিনা। কোথায় আছে, কেমন আছে – এবার দেশে গেলে ওকে খুঁজে বের করে জানব।
আমি জানি, শত বছর পরে হলেও আমার গলা চিনতে মাধবীর ভুল হবার কথা নয়। ও চুপ করে আছে। আমিও কথা বলছিনা ভয়ে। যদি লাইনটা কেটে দেয়! অনেক কষ্টে নানান জায়গা খুঁজে ওর বাসার নাম্বারটা জোগাড় করেছি। ওর অফিসেও ফোন করেছিলাম। আমি জানতে চাই, কেন ও আমার সাথে এমন করল? কি অপরাধে আমার জীবনটা নরক বানিয়ে দিল? আমি এখন বেশ জানি, আমাদের সম্পর্ক শেষ হয়ে গেছে। আমরা দু’জনেই এখন শিকড়সহ গাছ। চাইলেও আর আমরা এক জায়গা থেকে নড়ে অন্যকোথাও যেতে পারবনা। তবু কেন জানিনা, কোথায় একটা টান এখনো রয়ে গেছে। খুব লোভ হয়, কথা বলি। অন্তত জানি, ও কেমন আছে? আমাকে ছাড়া ভাল আছে তো? ওর বর কি ওকে আমার মত বোঝে? ভালবাসে? ওর মূল্য দেয়?
নীল দুষ্টামি করলে মাঝে মাঝে শাস্তিস্বরূপ সোমা ওকে বারান্দার গ্রিলের বাইরের বাগানে বের করে দিয়ে দরজা আটকে দিত। ও কাকুতি মিনতি করত, “সরি মামা, আর কব্বেনা। লেট মি কাম ইন, প্লিজ।” আমি বাসায় থাকলে ছুটে গিয়ে ওকে ভিতরে নিয়ে আসতাম। সোমা আমার উপর রাগ করে ছেলেকে মারত, শাস্তি দিত। কি যে নির্মম সে দৃশ্য! আমি কিছু বলতে গেলে আরো রেগে গিয়ে ভয়ংকর আচরণ করত। আমি ওর মনের অবস্থা বুঝতাম।
যেকোন মানুষই এটা মেনে নিতে পারেনা যে তার স্বামী বা স্ত্রী অন্য কাউকে ভালবাসবে। আমি হলেই কি পারতাম? নিশ্চয় না। আমার কিছু করার ছিলনা। অনেক চেষ্টা করেও আমি মাধবীর উপর থেকে মন সরিয়ে সোমাকে ভালবাসতে পারিনি। ওর প্রতি সব কর্তব্য করে গেছি একান্ত বাধ্যগত স্বামীর মত। কখনো কোন অসুবিধা হতে দিইনি। কিন্তু ভালবাসা?
সোমাকে বিয়ে করার আগে আমার মনে হয়েছিল, বিয়ের পর মাধবীকে ঠিক ভুলে যাব। পারিনি। ছেলে হবার পর ভেবেছি, এবার ছেলের জন্য হলেও মাধবীকে মাথা থেকে নামাব। তাও পারিনি। আজও মাধবী আমার মনের মধ্যে একই রকমভাবে আছে, যেমন ছিল আঠারো বছর আগে।
মাধবী কথা বলছেনা। আবার ফোন কেটেও দিচ্ছেনা। আমি উত্তেজনায় কাঁপছি। এতদিন পর ওর গলা শুনে ভীষণ ভালো লাগছিল। আবার একই সাথে ওকে হারানোর কষ্টটা আবার নতুন করে বুকে বিঁধছে। তবে মাধবীর অনুভূতি বুঝতে পারছিনা। খানিক পর বললাম, “কেমন আছ তুমি?” মাধবী নিশ্চুপ। বোধহয়, আশা করেনি যে আমি আবার কখনও ফোন করব। আমি আবার বললাম, “তুমি ভাল আছ?” মাধবী এবারও চুপ করে আছে। আমি প্রসঙ্গ পাল্টে বললাম, “তোমার মোবাইল নাম্বারটা দেবে? মাঝে মাঝে কথা বলব।” আমাকে চমকে দিয়ে এবার মাধবী বলল, “তোমার নাম গিনিস বুকে ওঠা উচিত।” আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “কেন?!” মাধবী বলল, “একটা ফোন করতে তোমার তিন বছর সময় লেগেছে বলে!”
শুনে আমি সব কষ্ট ভুলে হাহা করে হাসতে লাগলাম। কি বলব বুঝতে পারছিনা। মাধবী আবার বলল, “হাসো তো। জোরে জোরে হাসো। অনেকদিন তোমার হাসি শুনিনা।”
সোমা আমার এক বন্ধুর পরিচিত। সেই সুবাদে ওর সাথে আমার আলাপ হয়েছিল অনলাইনে। একটা সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটে। মাধবীর শোকে তখন আমার কোন কিছুই ভাল লাগতোনা। তখন সোমার সাথে কথা বলে সময় কাটাতাম। নিজেকে ভুলিয়ে রাখতাম। আমি তখন মনেপ্রাণে চাইতাম, কাউকে আমার ভালো লাগুক, যাতে মাধবীকে ভুলতে পারি।
সোমা বুদ্ধিমতী মেয়ে। শিক্ষিতা, দেখতেও খারাপ না। ধীরে ধীরে ওকে আমার ভাল লাগতে শুরু করে। আমি ওকে বিয়ে করতে চাচ্ছিলাম ওকে ভালবাসি বলে নয়। যাতে মাধবীকে ভুলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারি, সেজন্য। আমি জানতাম, মাধবীর ব্যাপারটা যেহেতু আমার আত্মীয়-বন্ধু সবাই জানে, তাই একসময় সোমাও সেটা জানবে। তাই এটা নিয়ে পরে যেন কোন ঝামেলা না হয়, সেজন্য সম্পর্কের শুরুতেই আমি সোমাকে মাধবীর কথা বিস্তারিত বলেছিলাম। ও আপত্তি করেনি। ফলে আমরা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেই।
আমি যখন বিয়ে করতে দেশে যাই, আমি মাধবীর কোন খোঁজ করিনি। ওর সাথে দেখা করা বা কথা বলার চেষ্টাও করিনি। আমি চেয়েছিলাম, যত দ্রুত সম্ভব বিয়েটা সেরে ফেলতে। আমি নিজেকে নিজেই বিশ্বাস করিনা। শেষ মুহূর্তে হয়ত বেঁকে বসব। তাছাড়া সোমাকে আমার পরিবার পছ্ন্দ করেনি। ওর থেকে অনেক ভাল মেয়ের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছিল বড় আপা। মেয়ে ডিএমসির ডাক্তার, দেখতে সুন্দরী। আমাকে ছবিও পাঠিয়েছিল। আমি রাজী হইনি। কারণ আমি সোমাকে কথা দিয়েছিলাম।
দেশে আসার তৃতীয় দিনের দিন সোমা আর আমি একটা রেস্টুরেন্টে মিট করি। অনেক কথা হয় আমাদের। দু’জনের পছন্দ-অপছন্দ, বিয়ের পরে সোমার ব্যাংকের চাকরী ছেড়ে আমার সাথে চলে যাওয়া- এইসব। সন্ধ্যার দিকে রিক্সায় যখন ওকে বাসায় পৌছে দিতে যাচ্ছিলাম, আমি তখন আচমকা সোমার ঠোঁটে চুমু খেয়েছিলাম। খুব লজ্জা পেয়েছিল বেচারী। ঐদিন যদি চুমুটা না খেতাম, তাহলে হয়তো আমি ওকে বিয়ে করতামনা।
বিয়ের পর সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। সোমাকে নিয়ে লন্ডনে ফিরে আসার পর বাধল বিপত্তি। আমি সকালে কাজে গেছি। বিকেলে বাসায় ফিরে দেখি সোমার মুখ গম্ভীর। কারণ জিজ্ঞেস করতেই আমার হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বলল, “এটা কি?” আমি দেখে চিনলাম। মাধবীর চিঠি। সেই সুন্দর ঝকঝকে হাতের লেখা, সেই প্রেমময় অভিব্যক্তি। আর চিঠির শেষে ওর ঠোঁটের ছাপ। লিপস্টিক দিয়ে চুমু এঁকে দিয়েছে। শেষ প্যারাতে লিখেছে, “ধর, তোমার অনেক কাজ। তুমি রাত জেগে বসে টেবিলে অনেক কাগজপত্র ঘাঁটছ। আমি চাইছি তোমার সাথে ঘুমাতে। তুমি উঠছনা। তখন আমি কি করব জান? পিছন থেকে তোমাকে জড়িয়ে ধরব। তোমার সারা শরীর শিরশির করে উঠবে। তখন আমি তোমার ঠোঁটে একটা গাঢ় চুমু খেয়ে বলব, গুডনাইট। যার অর্থ, জাস্ট গেট আপ রাইট নাউ।”
নতুন বৌ আনতে যাচ্ছি। তাই বাসা যতদূর সম্ভব পরিস্কার করে গুছিয়ে রেখে গেছিলাম। যখন একা থাকতাম, সব এলোমেলো পড়ে থাকতো। কিছুই করতে ইচ্ছে করতনা। যাবার আগে টয়লেট, কিচেন, খাটের তলা, সব দুইদিন ধরে সাফ করে রেখে গেছিলাম। মাধবীর চিঠি আর ছবিগুলো নষ্ট করতে পারিনি। মায়া হচ্ছিল খুব। অত চমৎকার করে লেখা! অত সুন্দর চিঠি আমি আর কারও পড়িনি। আমি নিজেও অনেক চেষ্টা করেছি। ওর মত লিখতে পারিনা। ওগুলো কাছে রাখা ঠিক হবেনা বলে বন্ধু লিপুর কাছে রেখে গেছিলাম। লিপু বিরক্ত হয়ে বলেছিল, “এখন এসব রেখে জটিলতা বাড়িয়ে কি লাভ?” আমি ওকে আশ্বস্ত করে বলেছিলাম, “ফেলে দেব দোস্ত। আপাতত রাখ।” ও বোধহয় মনে মনে ভাবল, “আর ফেলেছিস! তোকে চিনিনা? হাড়ে হাড়ে চিনি। ফেললে আজই ফেলতিস্।”
পড়বি পড় মালির ঘাড়ে ! ঐ চিঠিটা সোমা ঘর পরিস্কার করার সময় আলমারীর কাগজের নীচে পেয়েছে। সাথে মাধবীর একটা ছবিও। মেয়েরা নতুন সংসার পেলে সেটাকে নিজের মত করে সাজিয়ে গুছিয়ে নিতে খুব ভালবাসে। এখানে আসার পর খুব আগ্রহ নিয়ে সোমা ঘর গোছাচ্ছে। রোজ এটা সেটা কিনে আনে। গাছ লাগায়, ফুলদানি সাজায়, বিছানায় নতুন বেডশীট পাতে, আমার টেবিলের এলোমেলো বই গোছায়, পছন্দের খাবার রান্না করে। আমার বেশ লাগে।
এবার সে রাগী গলায় বলল, “আমি আসার আগে এগুলো সরাওনি কেন?” আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, “সরিয়েছি। ওটার কথা মনে ছিলনা। তাছাড়া ওটা থাকলেই বা কি, না থাকলেই বা কি? আমি এ চিঠি পড়িওনা, ওর ছবিও দেখিনা। তুমি চাইলে এটা ছিঁড়ে ফেলতে পার। আচ্ছা, আমিই ছিঁড়ে ফেলছি।”
কে শোনে কার কথা? আমার যুক্তি সোমার মোটেই পছন্দ হলনা। সে রাগ করে পাশের ঘরে চলে গেল। সেই থেকে শুরু হল মাধবীকে নিয়ে আমাদের ঝগড়া।
বিয়ের দিন পনেরো পরেই আমি বুঝতে পারলাম, বিরাট ভুল করে ফেলেছি! মস্ত বড় ভুল। যে ভুলের কোন সংশোধন হবার নয়। সোমাকে বিয়ে করা আমার উচিত হয়নি। সোমা আর আমি, আমরা দু’জন দুই বিপরীত মেরুর বাসিন্দা। আমাদের মন-মানসিকতা একেবারেই মেলেনা।
সোমা চাইলে হয়ত মাধবীকে আমার মন থেকে মুছে দিতে পারত। মাধবীর প্রসঙ্গ না তুলে আমরা আমাদের মত থাকলে হয়ত ধীরে ধীরে আমি সব ভুলে যেতাম। সোমা করত উল্টোটা। সব কথায় সে অকারণে মাধবীকে টেনে আনতো। অথচ মাধবীর সাথে তখন আমার কোনই সম্পর্ক ছিলনা।
ভীষণ ক্ষোভ, ঈর্ষা আর ঘৃণা ছিল মাধবীর প্রতি। “এই কবিতা তুমি মাধবীকে ভেবে লিখেছ। আর কোন নাম পেলেনা? ওর সাথে তোমার আরো অনেককিছু হয়েছে, যা তুমি আমাকে বলনি। ঐ ধুমসীটাকে তোমার কেন এত পছন্দ? ওর মধ্যে তুমি এমন কি পেলে যা আমার নেই?” – প্রতিনিয়ত এসব শুনতে শুনতে আমি হাঁপিয়ে উঠছিলাম। সোমার এসব কথাবার্তা আমাকে রোজ একটু একটু করে ওর কাছ থেকে দূরে আর মাধবীর কাছাকাছি নিয়ে যেত।
বিয়ের মাস চারেক পরে একদিন দুপুরবেলা আমি আমার ব্লগে পোস্ট করা কবিতায় পাঠকদের কমেন্টের রিপ্লাই দিচ্ছিলাম। সোমা আমার কবিতায় নর্তকীর রূপের বর্ণনা পড়ে বলল, “অভিজ্ঞতা না থাকলে এত নিখুঁত লেখা যায়?” যেন মহাপাপ করে ফেলেছি। অপরাধীর মত বলতাম, “কি মুশকিল! কবিতায় কবি যা ইচ্ছা লিখতেই পারে। তার অভিজ্ঞতা বা কল্পনা থেকে। সবই তার জীবনে ঘটতেই হবে, এমনতো নয়। লোকে কবির বক্তব্য না বুঝলেও অন্ততঃ বোঝার চেষ্টা করে। তোমার অবস্থা তো দেখি ভয়াবহ।” সে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলে, “তাইতো। আমি তো কিছুই বুঝিনা। সব তোমার মাধবী বোঝে। তারেই বিয়া করতা। আমারে করছ ক্যান?”
বিয়ের মাসছয়েকের মাথায় সোমার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে আমি আমার সারাজীবনের শখ ‘কবিতা’ ছেড়ে দিলাম। কবিতা লিখিওনা, পড়িওনা। আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সামনে একদিন মাধবীকে নিয়ে সোমা আমাকে চরম অপমান করল। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সে বলে ফেলল, “গেছিলা তো মাধবীরে বিয়া করতে। করতে পারছ?”
আমি লজ্জা-ঘৃণা-দুঃখে মাটির নীচে লুকাতে চাইলাম। ধীরে ধীরে বন্ধুদের সাথেও যোগাযোগ কমিয়ে দিলাম। আমার পরিবারের লোকেদের সাথেও আমার সম্পর্ক দিন দিন খারাপ হতে লাগলো। সোমার কারণে। আমি মাঝে মাঝে ওর কথা শুনে হতভম্ব হয়ে যেতাম।
আমার মেজ বোনের ছেলে বৃত্তি পেয়েছে শুনে আমি খুশী হয়ে আপাকে বললাম, “টাকা পাঠাচ্ছি। ওকে কিছু কিনে দিয়েন।” আট হাজার টাকা পাঠাচ্ছি দেখে সোমা বলল, “ছয় হাজার পাঠাও। আমি তাই দেব বলেছি।” আমি অবাক হয়ে বললাম, “কেন বলছ? তোমাকে কে বলতে বলছে? তাছাড়া দু’হাজারে এমন কি এসে যায়? আমাদের তো টাকার সমস্যা নেই। ভাগ্নের সাফল্যে না হয় একটু বেশীই দিলাম।” সোমা জেদ ছাড়েনা। শেষে ক্ষান্ত দিয়ে বললাম, “থাক। দিতেই হবেনা।”
বড় আপার বড় মেয়ে, নীপা। আমার বড়ই আদরের। আমাকে সে খুব মানে। যখন এখানে বার এট ল’ পড়তে আসে, কিছুদিন আমার বাসায় ছিল। আমি সোমার স্বভাব জানতাম। তাই ও যেন বিরক্ত না হয়, সেজন্য প্রায় সব কাজ আমি করতাম। বেশী করে বাজার করতাম। ছুটির দিনে বেশী করে রান্নাও করে রাখতাম। তারপরেও নীপার সাথে সোমা ভাল আচরণ করতনা। নীপা চলে যাবার দিন আমার খুব কষ্ট হয়েছে। এখনো আমি লজ্জায় ওর চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারিনা। এদেশেই থাকে। আমার কাছে আসেনা। এত ভাল সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গেছে।
চলবে…
পরিচ্ছেদ ৬ অনেক রাতে ফিরেছিল কল্যাণ ওরফে শহীদুল।গাড়িটা শেডে রাখার পর দু’বার হালকা করে মা…..
পরিচ্ছেদ ৫ আকাশে এখন আর মেঘ নেই। হাওয়া হচ্ছে।কদিন পরেই বর্ষা নামবে।একদিন হাসপাতাল থেকে ফিরতে…..
পরিচ্ছেদ ৪ ভোর হয়ে আসছে।রাতে ভালো ঘুম হয়নি।ঘুমের ঘোরে মনে হচ্ছিল দম বন্ধ হয়ে আসছে।এরকম…..
পরিচ্ছেদ ৩ শীত শেষ হয়ে আসছে।রাঙ্গালীবাজনা ঢোকার মুখের রাস্তাগুলো পলাশ ফুলে ভরে গেছে।অথচ ঠান্ডাই।…..