মাধবী সিরাপ

স্বপন রায়
কবিতা
মাধবী সিরাপ

হেরে যাওয়ার আগে, রাস্তা পেলাম, ডুবে যাওয়ার। আর ডুবে গেলাম। পেছল অন্ধকার, তানছাড়া মাছের কানকো, তাতে বিজবিজ জলশুদ্ধি। একষট্টিতে মনে হয়, বাষট্টি একটা বাগানবাড়ি। কাদম্বরী আগে, পিছে পিছে বস্তির ছেলে রোবে। গঙ্গার বিকেল জোয়ার পাঠাচ্ছে, কাদম্বরী আর রোবের ভেতরে ঝড় তোলার জন্য। ঝড়, তাহলে আঁচলকেও, ওই আঁচলকেও কিরিবুরু মেঘেতাবুরুর সেন্ট্রি মনে করে। উড়িয়ে দেয়। আমি আর ও ডুবতে ডুবতে দেখি, শ্যাওলা ধরেছে বাগানবাড়িটায়। মনে।পিচ রঙের আলংপালং সাঁতার, তুনাটুনা গান, ডুবলেই সহজ হয়ে যায়, ভাপা আর সেঁকা সেই দিনগুলো। বেলুনওয়ালা চলে যাচ্ছে, মনে নেই, আমি ডেকে উঠলাম। বই পড়ে গেল হাতের। সেই কবে থেকে আমি তোমার বই কুড়িয়ে দিচ্ছি। আজ ভেজা মনে হচ্ছে। হেরে যাওয়া, ডুবে যাওয়ার কাছে। কাঁদছ নাকি! আরে দেখো দেখো শুকতারা। কাদম্বরী, রোবে, বাগানবাড়ি ছাপিয়ে। একষট্টি হেরে যাচ্ছে। বাহান্ন হেরে যাবে। আমরা সাঁতারঘেরা বাড়ি বানাবো। তাতে জলকে চলা বেড়া, জানলায় শুকতারা, সারিতারা। রাস্তার ওপারে দুলালদার মনিহারি, বাঁদিকে সাপ্রুভাই দারুওয়ালা। জমে যাবে। বাষট্টি, তিপান্ন। আমাদের একটা বয়স ছিল, আরেকটাও খুব গভীর জলে নেই..

দুই.

যা দেখেছি, না দেখে, সেই যে ছায়ার পরেই মেঘে একদলা রাগ ফেলে দিল বিদ্যুৎ। কেঁপে উঠল ওপারের একতারা দুতারা তারারা, আকাশঝুড়িতে রাখা। মেঘ ব’লে রাতের চাদর টানাও আর দেখা যাচ্ছে না। তুমি সাঁকোস্বভাবের, আমি পায়চারি টাইপ। বৃষ্টি এলে আমরা আর ছাতার খোঁজ করিনা। সেই যুগটা ফিরে আসে। বল্কল বল্কল। গা বেয়ে চলে যায় সরীসৃপ নদী, গা মুছে চমকহানা বিজলি। আমার ঊনতিরিশ, তোমার কুড়ি, ন’টা বছর গেটপাসের অপেক্ষায়। কোকওভেনে চুল্লি আছে না? ঢুকেই শুরু হবে জ্বালানো। কারখানার ভোঁ মেঘ ডাকবে, বৃষ্টিকে লাই দেবে, আমি আর তুমি ছাদের গড়নে কিছু আবাসিক দূষণ রেখে ভাববো, রক্তজবা। কারখানার ব্লুম।

চলে গেল, বৃষ্টি বিষ্টি। আরো একটা রাত  ভোরের রোদে পড়ল, না বলেই। আমিই শুধু বললাম, কাল বৃষ্টিতে যা যা হল আজ শুকোতে হবে, আজ ড্রাই-ডে। তোমার চোখ ছিন্ন সেতুর উপাসনা, এখন পাকানো। রাউরকেলা একটা শহরের নাম, ব্যঙ্গালোর একটা নগরের নাম, আমার নাম স্বপন, তোমার শ্রীলা। আমাদের একটাই পৃথিবী। আমরা আদর করে ডাকি, দুনিয়া ও দুনিয়া..

স্বপন রায়। কবি। জন্ম ১৯৫৬। ভারতের দুটো ইস্পাতনগরী জামশেদপুর এবং রাউরকেলা স্বপন রায়ের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। প্রথমটি জন্মসূত্রে। দ্বিতীয়টি বড় হয়ে ওঠার সূত্রে। নব্বই দশকের শুরুতে 'নতুন কবিতা'র ভাবনায় সক্রিয় হয়ে ওঠেন। পুরনো, প্রতিষ্ঠিত ধারাকবিতা ত্যাগ করে কবিতাকে নানাভাবে...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..