মানুষ ভালো নেই
মানুষ ভালো নেই। মানুষের মুখে হাসির জোছনাধারা নেই।
কথামালায় সুখের সৌরভ নেই, অন্তরে প্রেমপদ্ম নেই।
মানুষের নয়নে নিভৃতে স্বপ্নসুন্দরের বদলে আগুনের আধিপত্য
দাউদাউ আগুন! দুঃচিন্তা চিতার দংশন, মগজে মগডালে।
নির্মল নিশিকে এখন কড়া পাহারায় রাখে অনিদ্রা অজগর
করে কিলবিল মানুষের বিছানায় রক্তখোর সহস্র ছারপোকা।
মানুষ আসলে ভালো নেই। মানুষের বুকে আশার রংধনুও নেই।
বাসনা বিহঙ্গের চঞ্চলতা নেই, টালমাটাল যৌবনের উদ্মাদনা নেই।
আমাদের রক্তে অভাববোধের রাক্ষস, চাই চাই- চাহিদার মুর্হুমুহ মিছিল
চোয়ালে মহাবিশ্ব চিবিয়ে খাওয়ার খায়েশ কারো কারো।
মানুষ আজকালে আঁতকে উঠে সামান্য ঝিমুনিতেও, অনিরাপত্তায়
সমস্বরে ডুকরে কেঁদে উঠে ঝাঁকুনিতেও, বড় অনিশ্চয়তায়।
মানুষের ভালো থাকা উবে গ্যাছে, করোনা- যুদ্ধে, খরা- বন্যার বিলাসিতায়
রাজনীতির নোংরামিতে, শিকড়অব্দি শোষণে ও দুঃশাসন দহনে।
তাই রূপসীর গালে টোলে আবেদনের ঢেউ নেই, নরম নীলিমামাখা দৃষ্টি নেই
স্বস্থি, সিম্ফনির সুবাতাস নেই এখন মানুষের চারপাশে।
সম্পর্কের সুদৃঢ় সেতু নেই, মরমে বিশ্বাসের বটবৃক্ষ নেই।
কোথ্থাও শুভ্র পায়রা নেই, এক টুকরো শান্তির।
মরে গাছে আমাদের বাসনা বাতিঘর, আকাঙ্খার রোদেলা আদর
স্বপ্নপালে হাওয়া নেই, কারো কোন দিকে।
শুধু কি মানুষ ভালো নেই?
কীট পতঙ্গও আরামের হারেমে নেই, গাছপালাও শান্তি সঙ্গমে নেই।
রাস্তার ধূলিকণাও অসুখে- অস্থিরতায়- অনিদ্রায় ধুঁকছে
খসা পালক- পাতাও দুঃস্বপ্নে ভুগছে আর থেকে থেকে ফুঁসছে।
বাড়াবাড়ি
চশমার পাওয়ার বাড়ছে, ডাক্তারের কাছে যাতায়াত বাড়ছে
প্রেসক্রিপশন এবং ঔষধের তালিকা বাড়ছে
বিধিনিষেধ আরও কড়াকড়ি হচ্ছে
আবেগ ও অস্থিরতা বানের পানির মতো বাড়ছে দিনকে দিন।
আরো ধবধবে সাদা হচ্ছে কাশবন করোটি
খসে পড়তে চাচ্ছে নড়বড়ে নানা দাঁত
বাপ- চাচাদের মতো চামড়া কেমন ঢিলেঢালা হচ্ছে!
মুখরা মুখে রুচির খুরধার কমছে, কানের কবাটে জং ধরছে
ক্লান্তির কালসাঁঝ নামছে এখন কাজে- অকাজে
নিঃসঙ্গতার সাথে নিভৃতে উঠাবসা বাড়ছে
অভিমান অমাবস্যায় সরে সরে যাচ্ছে ভালো থাকাগুলো।
শূন্যতায় শুয়ে থাকা বাড়ছে, আহাজারিও আজকাল
সেক্স পাওয়ার নিভে যাওয়ার আশংকা বাড়ছে
চব্বিশ ঘণ্টা কুট কুট কাটছে অনেক অসুখ ইদুর
হঠাৎ কোথাও মরে পড়ে থাকার ভয়ও বাড়ছে
তবু তারুণ্য- তরঙ্গ টিকে রাখার অবিরাম চেষ্টা কমছে কই?
বহুদিন বাদে
বহুদিন বাদে আজ একটু ভালো আছি, আশা আলোয় আছি
সারাক্ষণ তো ভালো না- থাকার আন্ধারে উবু হয়ে বাঁচি
শত শতাব্দী শেষে আজ কিছুটা নিজের মতো উড়াল পাখি
প্রতিপলে তো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদীর জীবনে মুক্তিমশাল ডাকি
আজ একটু অন্যরকম, সব কেমন অচেনা যেন অবাস্তব
হঠাৎ পেয়ে যাওয়া লটারির প্রথম পুরস্কারের মহোৎসব
চাঁদে মানুষের পা রাখার চেয়েও আজ অবিস্মরণীয় দিন
আজীবন কষ্ট কারবারি আমি বহুদিন বাদে বেদনা বিহীন
অভিমানের বরফ গলেছে, প্রতীক্ষা পাথরসমূহ চূর্ণবিচূর্ণ
পিছিয়ে পড়া, ঝরে পড়া স্বপ্ন- শখেরা পেখম খুলতে অগ্রগণ্য
তুমি আমি আজ হাহাকার করা বুকের- কোলের কাছাকাছি
অপমৃত্যু ঘিরে বহুদিন বাদে বেঁচে উঠার নান্দনিক নাচানাচি