প্রেম এবং অপ্রেমের কাব্য
এ-এক প্রেমের শহর, এ-এক প্রেমের শহর, এখানকার বাতাস প্রেমের সৌরভ বয়ে আনে। হাজারো প্রেমের কলি…..
মাহমুদ দারবিশ। ফিলিস্তিনের জাতীয় কবি। ১৯৪১ সালের ১৩ মার্চ ফিলিস্তিনের গালিলি প্রদেশের আল-বিরওয়াহ গ্রামে জন্ম। ১৯৪৮ সালে ইসরাইলীদের আক্রমনের ফলে মাত্র ছয় বছর বয়সে গভীর রাতে সপরিবারে লেবাননের পথে রওয়ানা করেন। এরপর থেকে আমৃত্যু কোথাও স্থির থাকতে পারেননি। কখনো মিশর, কখনো বৈরুত, কখনো প্যারিস, কখনো কায়রো, কখনো তিউনিস, আবার কখনো খোদ প্যালেস্টাইনে নিজভূমে পরবাসী হয়ে। সর্বশেষে ২০০৮ সালের ৯ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে মৃত্যুবরণ করেন। শৈশব থেকে মাহমুদ দারবিশ কবিতা চর্চা শুরু করেন। আরবি কবিদের মধ্যে যারা সংগ্রাম, স্বাধীনতা ও দেশের কবিতার জন্য খ্যাত ছিলেন তিনি তাদেরই অন্যতম। শুধু ফিলিস্তিন নয়, গোটা আরবজুড়েই তার সুখ্যাতি। সাহিত্য জগতে তাকে আরববিশ্বের কণ্ঠস্বর বলা হয়। অংশুমালীর পাঠকদের উদ্দেশে তাঁর পাঁচটি কবিতার কাব্যানুবাদ নিবেদন করলাম। – আদিল মাহমুদ
আমার মন কাঁদে—
আম্মার হাতের বানানো রুটি, বানানো কফি
এবং তার হাতের স্পর্শের জন্য।
দিনের পর দিন
আমার ভেতরে ছেলেবেলার স্মৃতি জেগে ওঠে
মৃত্যুর সময় আমার জীবনের দাম আছে
একমাত্র আমার আম্মার কান্নার জন্য
মৃত্যুর পর একদিন যদি আমি ফিরে আসি—
আমাকে তুলে নিও
তোমার চোখের পাপড়ি হিসেবে
ঘাঁসে ঘাঁসে ঢেকে দিও
আমার হাড়গুলোকে
আমাকে দুআ দিও
তোমার পদচিহ্ন দিয়ে
আমাকে বেঁধে রেখো
তোমার চুলগুচ্ছে
—অথবা বেঁধে রেখো
তোমার কাপড় থেকে লতিয়ে আসা সুতো দিয়ে।
যদি তোমার হৃদয়ের গভীরতাকে স্পর্শ করি
আমি অমর হয়ে যাবো
ঈশ্বর হয়ে যাবো।
আমি যদি ফিরে আসি—
আমাকে ব্যবহার করো
তোমার আগুনে চিলকাঠ হিসেবে
—কিংবা আমাকে বানিয়ো
তোমার ছাদের উপরের ক্লথলাইন
তোমার দুআ ছাড়া
আমি হীনবল দাঁড়াতেও অক্ষম।
বুড়ো হয়ে গেছি আমি
ছেলেবেলার নক্ষত্রের মানচিত্রটা
ফিরে দাও তুমি।
যেন মৃত্যুর পর ঐ পরিযায়ী পাখির মতো—
তোমার ঘরে ফিরে আসতে পারি
শুনে রাখুন! কবিতা হৃদয়ের রক্ত। রুটির লবণ। চোখের অশ্রু। লেখা হয় নখ দিয়ে। চোখের কোটর দিয়ে। খঞ্জর দিয়ে।
আর আমি তা অয়েটিং রুমে, বাথরুমে, আস্তাবলে, চাবুকের নিচে, হাতকড়ার নিচে, শিকলের সহিংসতায় উচ্চারণ করি—
লক্ষ লক্ষ পাখি। আমার হৃদয়ের ডালপালায়—সৃষ্টি করছে যুদ্ধংদেহি সুর।
আব্বা, আমি তোমার ইউসুফ
ও আব্বা!
আমার ভাইয়েরা আমাকে ভালোবাসে না
তাদের কাছে আমি যেত চাই না
ওরা আমাকে অযথা মারধর করে—
পাথর ছুঁড়ে মারে
অপমানের বন্যায় ভাসিয়ে দেয়
আমার ভাইয়েরা আমার মৃত্যু কামনা করে
ওরা তাই মিছেমিছে প্রশংসা বিলায়
আমার মুখের সামনে ওর—
তোমার দরজা বন্ধ করে দেয়।
আমি হয়েছি বিতাড়িত
তোমার জমিজামা শস্যখেত থেকে
ও আব্বা!
ওরা আমার আঙুরবন বিষে ভরে দিয়েছে
বয়ে যাওয়া বাতাস যখন আমার চুল নিয়ে খেলে
ওরা সবাই তখন হিংসায় মরে
তোমার আমার প্রতি ক্রোধ ছুঁড়ে মারে।
আব্বা, ও আব্বা!
আমি ওদের কি এমন ক্ষতি করেছি?
কোন অপকার করেছি?
প্রজাপতির দল আমার কাঁধে বিশ্রাম নেয়
গমখেত মাথা নত করে
পাখি আমার হাতের উপরে ঘুরে বেড়ায়—
আব্বা, আমি কি তাদের ক্ষতি করেছি!
কেন তবে এত লাঞ্ছনা?
তুমিই আমার নাম রেখেছো ইউসুফ!
ওরা আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিল—
গভীর কুয়ার অতলে
আর দোষ দিয়েছে চাপিয়েছে নেকড়ের ঘাড়ে
ও আব্বা! ওই যে নেকড়ে—
সেও আমার ভাইদের চেয়ে অনেক দয়ালু।
যখন আমি আমার স্বপ্নের কথা বলেছি
তখন কি কারো ক্ষতি করেছি?
কারো অসুবিধা করেছি?
আমি স্বপ্নে দেখেছি—
এগারোটি গ্রহ, চন্দ্র-সূর্য, আমাকে সিজদা করছে
বালিকার চোখজোড়া ফিলিস্তিন
ফিলিস্তিন তার নাম
তার পোষাক-পরিচ্ছেদ, দুঃখগুলো ফিলিস্তিন
মাথায় বাঁধা রুমাল, দু’খানি পা—
এবং অনুপম তনুমন জুড়ে কেবলই ফিলিস্তিন
তার কথা, তার নিরবতা—
তার জন্ম, তার মৃত্যু, সবই ফিলিস্তিন
আমি দেখেছি হত্যাযজ্ঞের নৃশংসতা। আমি একটি মানচিত্রের বলি। আমি সহজ-সরল শব্দের সন্তান। ঝিনুকের ওড়াউড়ি আমি দেখেছি। বোমার মতো শিশিরের ফোঁটা দেখেছি। আমার হৃদয়ের দরজায়—যখন ওরা খিল দিলো। অবরোধ গড়ে তুললো। সান্ধ্য আইন জারি করলো—
তখন আমার হৃদয় পরিণত হলো সঙ্কীর্ণ কুঞ্জপথে। পাঁজর পরিণত হলো পাথরে। আর সুগন্ধি রঙিন পুষ্প ফোটাতে শুরু করলো—
এ-এক প্রেমের শহর, এ-এক প্রেমের শহর, এখানকার বাতাস প্রেমের সৌরভ বয়ে আনে। হাজারো প্রেমের কলি…..
পতাকায় মিশে যায় ফেলানির নাম উড়তে থাকে কাঁটাতারে; মানুষের মনে জমে পুঞ্জিভূত ক্ষোভ বিকল্প মেঘের…..
প্রেমিক হয়তোবা তাকে আমি গড়তে পারতাম তার বুকের ভিতর এপাশ থেকে ওপাশে উল্টে নতুন একটা…..
চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..