মায়িশা তাসনিম ইসলামের একগুচ্ছ কবিতা

মায়িশা তাসনিম ইসলাম
কবিতা
Bengali
মায়িশা তাসনিম ইসলামের একগুচ্ছ কবিতা

বলয়গ্রাস ২১

প্রিয়তমা অন্ধকার

জীবন জাতিস্মর তুমি ছয়রঙিন
এ জনম আবেদনে
আত্মিক শাড়ি কারুকাজ

অন্ধ হয়ে তব জন্ম কোলাজে ধ্যানী
চোখের খুনে ছায়াঘর এক ঘোরতপ্ত জ্ঞানী

প্রিয়তমা অন্ধকার

শাড়ি ভাজে প্রেমিকাকে দেখো মোমবাতি সন্তান
শাড়ি ভাজে প্রিয়তমা আমার জলপ্রেম জন্মদান

তৎপূর্ববর্তী

আবারো সন্ধ্যা নামার আগে অন্ধ হই
অজস্র উল্কাপাতে
খোড়াপায়ে লাফাচ্ছে
স্বপ্ন-সংঘাত
কোন বিবর্ণ সিন্দুক হতে ডাকে হিদায়াত!

ঝিমানোর আগে রেটিনার কঠোর ওয়াদা
মরে যায়, ডাকে যখন পলায়ন পিপাসা

চোখবন্ধ সেই অনন্তের দাওয়াতে শুধাই
কইগো বকুলবনের স্রষ্টা সমাচার!
যার সঙ্গমে জেগে ওঠে ঈশ্বর পরিত্যক্ত ফুল
যে লিখে গেছে বন্ধ্যা গর্ভে জন্মান্তরের মূল…

যে বেদন তারপর পোড়ায় বহু করুণায়
তার হাতে ত্রিশুল তুলে দিয়ে কই গৌরবময়
“বড় দাহ্য আমি–
সন্ধ্যা নামার আগে অন্ধত্বের কসমে
আগুন কামাতুর অবোধ মরমে!”

আবারো সকাল, ক্ষুধা ও অবসাদের প্রতিযোগিতা

সূর্যের কেটলিতে ফুটন্ত রোদের কুমকুম সিম্ফনি
রাগিণী খেলায় দহন আমার অন্নের দাম জানেনি

হাড় বেরনো শরীর বুঝে না আত্মহত্যার ম্যাজিক
হাড় বেরনো চামড়ায় নেই পেটের সাথে হৃদয়ের শিরিক…

তাই যখন সন্ধ্যা হবো হবো করে
ডিপ্রেশনের ইমারতে চুমু খেতে আসে
ঝলসানো রুটির জোছনা!

সন্ধ্যা নামার আগে নিভে যায় রেটিনার ওয়াদা
সন্ধ্যা নামার আগে জগতের সব ঝিঁঝিরাও বোবা…

যে ঘরের ঘর নেই-৬


স্টোররুম পলাতক, অ-ব্যক্তিগত যখন বাক্স

কিচেনে কীট উৎসব, বাসি মদ দীর্ঘশ্বাস

শয়নঘর হাঁটায় রাজপথ
কালপুরুষ চিন্তায়
কিংবা রমণ দীক্ষায়

ডাইনিংয়ে চৌরাস্তার ফকির
ডিসভর্তি উচ্ছিষ্ট খাবার
তবু কামনা পাঁচ টাকার যুদ্ধ দরবার

দূরদর্শন অভ্যাস
গৃহিণী প্রেম পলিব্যাগ
৷৷৷ দর্শনে নকল জলসা লেবাস

স্নানঘর জানালায় অশ্রুঝুঁকি
জলের হাতে নির্জলা মুখ
এ্যাসিডিক কাণ্ড, বিমুখী বেসিন


লাইব্রেরি কারে বাঁধে পৃথিবী বধির
শব্দ অপব্যয়ে শুধু শুধু খেতাব পেলো কবির

ঘর উজাড় ঘর
বেঘোরে নাচে দিল দরিয়ার নর
ঘরকে যাচে বেঘর
পাষাণী বুকের পর্দা খুলে ধর!

ঘর সাধ রমণ বিবাদ
ঘরের কাঁধ পুরুষাঙ্গ নারীবাদ


হায় বেঘর উদ্যমী, কালপুরুষ অনুরাগ
ঘরহীন ঘোরের ব্রতধারী কোলাজ

বধির ভ্রমণে অশরীর গৃহী
অক্ষরজীবী কক্ষে তুমি বেপর্দা সরণি

অনিকেত দহন- প্রাশ্চিত্যহীন দ্বিভুজ

বুক অসহ্য পথে রাত সন্ধান
পথ কে বলছি মাস্ক পরে হাঁটো
গ্লাভস হাতে রাত ছুঁতে চাওয়ার মানে নেই
ভাইরাসের চেয়ে দহনের বেশি সংক্রমণ– শ্রেয় আততায়ী

শ্রেয় আততায়ী
উল্টে গেলো মধ্যমা আকাশ
মেঘজমাট আলমিরা কাঁদলো
এক্সপায়ারড টিস্যু বাক্স

বরষা তেলে রাঁধুনি সমুদ্রবোধ
চোখে উত্তীর্ণ মেয়াদ ঝাঁঝ
জীবাণু জীবনে করতালি বায়ু ঝড়

ক্যালেন্ডারে পূর্নিমা অন্বেষণ আকাশহীন
গোপন মৈথুনে সুস্মিতা চাঁদ

“বছরে বছরে বদ্ধ ক্ষয়ে জব্দ হলে কবি
এ আর এমন কি জোছনার অর্গাজম অপচয়!

আমি নই
পৃথিবী ও কবিরাই
অমাবস্যা অপরাধে রয়ে যাবে জন্মান্তরহীন অবচয়”

 

(নিসর্গ+জব্দ)^২


উপন্যাসে ডুবে থাকা রাত
ব্ল্যাকহোল চরিত্রায়ন
অচল ঘড়িবন্দী নিঃশ্বাসের ত্রিকন্টক

মেঘসমাজ কি আজ ঢাকবে উদ্ধত সূর্যের বুক?
জল বোরকায় জবান হারাবে আলোর চিবুক!


কোনো এক বুধবার সংগ্রামে গ্রীষ্ম আমার বুলেট নিলো প্রখর সিনায়
কোনো এক শ্রাবণ বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামলো তরুণ আত্মহত্যা সমবায়


শূন্যতা সেলারে সব ব্র্যান্ডেড রাতকালো মদ

আলোটা ঠিক জমে না
আলোচোখ দেহের নামতা জানে না


পাখিদের ঈশ্বর যে আকাশ
খুব ঈর্ষান্বিত–পূজারীর মত জানে না উড়াল
মেঘে গোছায় অন্ধ জলশকুন
তারল্যধর্মে গ্রাস চায় দ্বিগুণ

মৎস্য চোখ লোভাতুর
দেয়াল মাংস ক্ষুধাতুর

তাও গ্র্যাভিটি পাশে শোষণ পরাজয়
মাটিতেই সেই পাখিদের ঈশ্বর ক্ষয়

মায়িশা তাসনিম ইসলাম। কবি ও শিক্ষার্থী। জন্ম ও বাস ঢাকা শহরে। অনেকের মতো ছোটবেলা থেকে লেখালিখি শুরু করেননি, তবে দেরিতে হলেও তিনি বিশ্বাস করা শুরু করেছেন কবিতাই প্রথম উপাসনা এবং শব্দের পাঁপড়িতে ফোটা বোধের ফুল। তিনি এটাও বিশ্বাস করেন কলমের...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..