ফিরে এসো
আমার বাবা ছিলেন অত্যন্ত সাহসী একজন লড়াকু মনের মানুষ।শত অভাব অভিযোগেও তাকে কোনোদিন ভেঙ্গে…..
এক
মধু মাসি ফুটপাতের এক কোণে কোনোরকমে থাকে। তার কোনো ছেলেমেয়ে নেই।একদিন ফুটপাতে কুড়িয়ে পেলো একটা শিশুকে।তাকে ভগবানের দান মনে করে মানুষ করতে লাগলো।তারপর মাসি আরও চারজন অনাথ শিশুর খোঁজ পেলো। মাসি ভিখারী হতে পারে কিন্তু তার পড়াশোনার যোগ্যতা, বুদ্ধি ভালোই ছিলো। শিক্ষিতা রুচিশীল মাসি কি করে ভিখারী হলো, সে ঘটনা পুরো বলতে গেলে ইতিহাস হয়ে যাবে। যাইহোক স্বাধীনচেতা মাসি স্বামীর ঘর ছেড়ে ফুটপাতে আশ্রয় নিয়েছিলো বাধ্য হয়ে। মাসি এবার পাঁচ শিশুকে নিয়ে সরকারী অফিসে হানা দিতে শুরু করলো। একদিন এক সরকারী আধিকারিক বললেন,মাসি আপনার কোনো পরিচিতি নেই।আপনার অনাথ আশ্রমের কোনো জমি নেই। কি করে আপনি অনাথ আশ্রয় গড়ে তুলবেন।আপনার অর্থবল,জনবল কিছুই নেই।মাসি বললো,কিন্তু আমার একটা জিনিস আছে, তা হলো ইচ্ছাশক্তি। আমি আশ্রম গড়ে তুলবোই।আপনি দেখে নেবেন। আমার সে মনবল আছে।
পাঁচ শিশুকে নিয়ে মাসির পথ চলা শুরু হলো। তিনি ভিক্ষা করে অই শিশুদের পরিচর্যার ব্যবস্থা করলেন।পাঁচ শিশুকে দেখে একদিন অমরবাবুর মায়া হলো। তিনি মাসিকে বললেন, আপনার শিশুদের থাকার জন্য আমি ঘর তৈরি করে দেবো। আমি জায়গা দেবো। আমার যতটা সাহায্য করা প্রয়োজন আমি করবো। আইনের ঝামেলা আমি দেখাশোনা করবো।
মাসি জোড় হাতে অমরবাবুকে নমস্কার জানালো। কেতুগ্রামের ফাঁকা জমিতে ঘর তৈরি হলো প্রথমে দুটি। তারপর শুরু হলো মাসির বিজয় যাত্রা। তারপর সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের কাছ থেকে সাহায্য আসতে লাগলো। তৈরি হতে লাগলো আরও ঘর। বাউন্ডারি হলো। আর অনাথ শিশুর সংখ্যা বাড়তে থাকলো। প্রথমে শুকনো কাঠ কুড়িয়ে রান্না করা মাসি আজ গ্যাস ওভেনে রান্না করে নিজের শিশুদের জন্য।মাসিকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয় নি। কিন্তু বাদ সাধলো আর এক বিপদ। একদিন আশ্রম থেকে তিনটি শিশু চুরি হয়ে গেলো। মাসি পাগলের মত খুঁজতে শুরু করলেন শিশুদের। এক রাখালের কাছে খবর পেলেন, এক পাষন্ড তিন শিশুকে হাত পা বেঁধে রেখেছে চিলেকোঠার ঘরে। রাখালকে নিয়ে মাসি থানায় গেলেন। পুলিশের সাহায্যে ধরা পড়লো বিরাট শিশু পাচারকারী দল।রাখাল অই মালিকের কাছেই কাজ করতো। তিনজন শিশুকে কাঁদতে দেখে রাখালের সন্দেহ হয়। তারপর মাসি জিজ্ঞেস করাতে সব ছবি পরিষ্কার হয়ে যায়।রাখালকে মাসি অনাথ আশ্রমের এক অনুষ্ঠানে পুরস্কৃত করলেন।
এইভাবে মাসি এলাকার মানুষের কাছে মা বলে পরিচিত হলেন। তিনি এবার আর একটি আশ্রম গড়ে তুললেন শালারে। এইভাবে মাসির পাঁচ পাঁচটা আশ্রম চলছে সুন্দর পরিবেশে মানুষের সহায়তায়।
দুই
মা বলতেন, পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রাম থানার বড়পুরুলিয়া গ্রামে পুজোবাড়ি বিখ্যাত মন্দির।পূর্বে দুর্গাপূজা হত।এখন রাজরাজেশ্বর আছেন।তাঁর পুজো হয় নিয়মিত।দোলযাত্রার সময় নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে দোল উৎসব পালন করা হয়।
বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী, ফাল্গুনী পূর্ণিমা বা দোলপূর্ণিমার দিন আবির বা গুলাল নিয়ে রাধিকা ও অন্যান্য গোপীগণের সঙ্গে রং খেলায় মেতেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ । সেই ঘটনা থেকেই দোল খেলার উৎপত্তি হয়। দোলযাত্রার দিন সকালে তাই রাধা ও কৃষ্ণের বিগ্রহ আবির ও গুলালে স্নাত করে দোলায় চড়িয়ে কীর্তনগান সহকারে শোভাযাত্রায় বের করা হয়। এরপর ভক্তেরা আবির ও গুলাল নিয়ে পরস্পর রং খেলেন। দোল উৎসবের অনুষঙ্গে ফাল্গুনী পূর্ণিমাকে দোলপূর্ণিমা বলা হয়। আবার এই পূর্ণিমা তিথিতেই চৈতন্যদেবের জন্ম বলে একে গৌরপূর্ণিমা নামেও অভিহিত করা হয়।
দোলযাত্রা উৎসবের একটি ধর্মনিরপেক্ষ দিকও রয়েছে। এই দিন সকাল থেকেই নারীপুরুষ নির্বিশেষে আবির, গুলাল ও বিভিন্ন প্রকার রং নিয়ে খেলায় মত্ত হয়।
পুজোবাড়িতে বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বসন্তোৎসব পালনের রীতি আছে।গ্রামের লোকেরা সকলে একসাথে আনন্দভোজন করেন মুখার্জি পরিবারের নিমন্ত্রণে। দোলের পূর্বদিন খড়, কাঠ, বাঁশ ইত্যাদি জ্বালিয়ে এক বিশেষ বহ্ন্যুৎসবের আয়োজন করা হয়। এই বহ্ন্যুৎসব হোলিকা দহন বা ন্যাড়াপোড়া নামে পরিচিত।
আমাদের গ্রামে ন্যাড়াপোড়া চাঁচড় উৎসব নামে পরিচিত।
মা বলতেন তার মায়ের কথা।মধুমাসি সকলের কাছে মা নামে পরিচিত।তিনি বলতেন,ডোবাপুকুরের শানবাঁধানো সিঁড়িতে থমকে গিয়েছিল। তবু ছোট পিসির প্রশ্রয়ে দরজাঘাটে তাল কুড়োনোর বেলা, ঘেটো রুই ধরার পালা, মাকে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছিল। কিছুটা ডানা মেলে ওড়া,কিছুটা বাবার বাড়ির স্বাদ। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাবার মত মা নতুন পুকুর সাঁতরে এপাড় ওপাড় হত। শাড়ি পরে মায়ের সাঁতারকাটা দেখে কাকা আর পিসি অবাক হত। তারাও মায়ের পিঠে চেপে সাঁতার শিখত। কাকা আর পিসির মাতৃস্নেহের অভাব মা অনেকটা পূরণ করে দিয়েছিল। আমার মা তাদের মানুষ করে তুলেছেন সন্তানের আদরে। অভাবের ঘরে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। তবু ঠাকুরদা হাসিমুখে মায়ের হাতের রান্না তৃপ্তি করে খেতেন। সকলকে খাওয়ানোর সময় মায়ের খেয়াল থাকত না নিজের খাওয়ার কথা। ঠাকুরদা বলতেন,তোমার ভাত কই? মা হাসিমুখে জল খেয়ে দুপুরে মাটির দোতলা ঘরে বিশ্রাম নিত। এরকম কত রাত দিন যে কেটেছে তার ইয়ত্তা নেই। তবু হাসিমুখে মা আমার সংসারের সমস্ত কাজ সেরে বর্ষার উদ্দামতায় সাঁতরে পেরোতেন সংসার নদীর এপাড়, ওপাড়।
তারপর একদিন ঘোর অমাবস্যায় ঢেকে গেল মায়ের অন্তর কাকার মৃত্যুতে। পিসিও চলে গেলেন। বাবা চলে গেলেন। মা আর সাঁতার কাটেন না। তালপুকুরে তাল পচে যায়। ঘেটো রুই ঘাটে আসতে ভুলে যায়। না হেঁটে মায়ের পায়ের জোর কমে যায়। এখন ছেলেদের আশ্রয়ে তাঁর সংসার নদী পারাপারের একান্ত সাধনায় স্মৃতিগুলোই হাতিয়ার।
তিন
মধুমাসির আশ্রম থেকে বড় হওয়া কুসুম পড়াশুনা করত।আর পাঁচজন বালিকার মত তারও জীবন অতিবাহিত হয়েছে সাধারণ বালিকার মত।
ভুটানের গ্রাম থেকে দলে দলে মানুষ আসেন বিন্দুতে বাজারহাট সারতে। প্রয়োজন মুছে দেয় রাজনৈতিক সীমারেখা। এখানে বিন্দু নদী জলঢাকায় মিশেছে। নদীর গা থেকে খাড়াই উঠে গেছে ভুটান পাহাড়। আকাশ পরিষ্কার থাকলে বিন্দু থেকে হিমালয়ের বরফশৃঙ্গ দেখা যায়। বুধবারে ঝালং-এ আর বৃহস্পতিবারে বিন্দুতে হাট বসে। শিলিগুড়ি থেকে বিন্দুর দূরত্ব ১০৪ কিমি। ঝালং থেকে বিন্দু ১৩ কিমি। ঝালং থেকে দলগাঁও হয়ে রঙ্গো বেরিয়ে নেওয়া যায়। প্যারেন থেকে ঘুরে আসা যায় তোদে।
এছাড়াও চালসা থেকে কুমানি, গৈরিবাস হয়ে পথ গিয়েছে ঝালং-এ। ঝালংয়ের কোল ঘেঁষে বয়ে চলেছে জলএই পর্যটন স্পটটি 99 কিলোমিটার দূরে শিলিগুড়ি এবং জলপাইগুড়ি থেকে 77 কিমি।[9] ঘন কাঠের বনভূমি এবং পটভূমিতে ভুটানের বিস্ময়কর পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত, ঝালং নিঃসন্দেহে প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য এক স্বর্গরাজ্য।
দ্য পাহাড় স্টেশন কাছাকাছি অবস্থিত ইন্দো-ভুটান তীরে সীমানা জলdাকা নদী, পথে বিন্দু। জলধাকা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের উপর জলdাকা নদী এই অঞ্চলে একটি প্রধান আকর্ষণ। পাখি প্রেমীরা পার্বত্য পাখির পাশাপাশি বৈচিত্র্যময় সংগ্রহ উপভোগ করতে পারেন জলের পাখি। আছে জলঢাকা নদী। বনবাংলোর পাশে ঝোলুং ঝোরা এঁকেবেঁকে গিয়ে মিশেছে জলঢাকা নদীতে।
সামনে জলঢাকার ওপর ব্রিজ। ঝালং থেকে পাহাড়ি পথে ছোট্ট গ্রাম প্যারেন হয়ে ভুটান সীমান্তে ভারতের শেষ জনপদ বিন্দু। পথে পড়বে ঝালং-এ জলঢাকা হাইডেল পাওয়ার প্রজেক্ট, প্যারেনে রঙিন রঙিন কাঠের বাড়িঘর আর রাস্তার ধারে কমলালেবুর বাগান। ছবির মতো পাহাড়ি গ্রাম বিন্দু। রঙিন কাঠের বাড়ির জানলায়, বারান্দায় টব আলো করে রয়েছে ফায়ারবল, পিটুনিয়া, গ্ল্যাডিয়োলা আর অর্কিডের ফুল। বিন্দুতে জলঢাকা ব্যারেজের ওপারে ভুটান। বাঁধের ওপর পায়ে হেঁটে ওঠা যায়, ছবি তোলা নিষেধ। হেঁটে আসা যায় ওপারে ভুটানের চৌহদ্দি থেকেও। হাটবারে ভুটানের গ্রাম থেকে দলে দলে মানুষ আসেন বিন্দুতে বাজারহাট সারতে।
প্রয়োজন মুছে দেয় রাজনৈতিক সীমারেখা। এখানে বিন্দু নদী জলঢাকায় মিশেছে। নদীর গা থেকে খাড়াই উঠে গেছে ভুটান পাহাড়। আকাশ পরিষ্কার থাকলে বিন্দু থেকে হিমালয়ের বরফশৃঙ্গ দেখা যায়। বুধবারে ঝালং-এ আর বৃহস্পতিবারে বিন্দুতে হাট বসে। শিলিগুড়ি থেকে বিন্দুর দূরত্ব ১০৪ কিমি। ঝালং থেকে বিন্দু ১৩ কিমি। ঝালং থেকে দলগাঁও হয়ে রঙ্গো বেরিয়ে নেওয়া যায়। প্যারেন থেকে ঘুরে আসা যায় তোদে।
কুসুম ভাবে, কয়েকদিন ওখানে কাটিয়ে আমরা ফিরে আসি।কিন্তু ঝালং এর প্রকৃতির শোভা মানসপটে ভেসে ওঠে বারেবারে। আর ভেসে ওঠে অসিমের কাতর মুখের ছবি।
কুসুম জানে,অসিম এই পাঁচবছর পরেও বিয়ে করে নি।কুসুম ভাবে,এবার বাবার বাড়ি গেলেই অসিমদাকে বিয়ের কথাটা বলব।
অসিম এম এ পাশ করে কম্পিউটার কোর্স শেষ করে।চাকরি পেয়ে যায় টি সি এস কোম্পানিতে।টিসিএস কোম্পানি তাকে কাজের জন্য টরেন্টো পাঠিয়েছে।কুসুমের বিয়ে হয়েছে ।তাই ভালো লাগছে তার।
অসিম ভাবে,যদি হঠাৎ করে কোনোদিন কুসুমের সঙ্গে দেখা হয় তাহলে খুব ভালো হয়।
কুসুম এদিকে বরের সঙ্গে সুখে আছে।সে ভাবে,অসিম আর যোগাযোগ রাখে না।মোবাইলে সিম পাল্টে দিয়েছে বর।যদি কোনোদিন অসিমের দেখা পাই, কথা বলব অনেকক্ষণ। কিন্তু বর কি পারমিশন দেবে।নিশ্চয় দেবে না।এক্স বয়ফ্রেন্ডকে স্বামীরা ভয় পায়।যতই আড়াল করে রাখা থাক, চোকাচুখি রোখা যাবে না।যে গরু গু খায় সে তার স্বাদ ভুলতে পারে না।
কুসুম ভবিষ্যত ভাগ্যের উপর ছেড়ে দেয়।
বলতেন, কি করে যে একটা একটা করে রাত, দিন পার হয়ে যায়, বোঝাই যায় না। তবু বুঝতে হয়, মেনে নিতে হয়।অসিম বলে, একটা ঘুঘু পাখি তার স্বামী মরে যাওয়ার পর থেকেই এবাড়িতে আসে। আম গাছের ডালে বসে আপন মনে কত কথা বলে। ঘুঘুর ঘু,ঘুঘুর ঘু। সবিতাদেবীর সঙ্গে পাখিটার খুব ভাব।তার মনে হয় স্বামী, ঘুঘুর রূপ ধরে আসেন। তিনি আম গাছের তলায় খুদকুড়ো ছিটিয়ে দেন। ঘুঘু পাখিটা খায় আর গলা তুলে কবিতাকে দেখে । কিছু বলতে চায়। তিনি বোঝেন। আর আপনমনেই পাখিটার সঙ্গে বকবক করেন। পুরোনো দিনের কথা বলেন। ছেলের বৌ বলে,বুড়িটা পাগলী হয়ে গেছে। প্রতিবেশীরা অতশত বোঝে না। হাসাহাসি করে। শুধু তার ছেলে বোঝে মায়ের অন্তরের কথা, ব্যথা। ঘুঘু পাখিটা সারাদিন ডেকে চলে। এবার আয়, এবার আয়। কবিতার বয়স হল আশি।
একদিন সবাই দেখলো, বুড়ি ফুলশয্যার রথে শ্মশানে গেলো বোধহয় স্বামীর কাছে। ঘুঘু পাখিটা ডেকে চলেছে তখনও,, ঘুঘুর ঘু…।
কুসুম বলে,তোর মা বাবা দুজনে এখনও একসাথেই আছেন।আমরাও মরার পর একসাথেই থাকব দেখিস।অসিম কুসুমের মুখ চেপে ধরে।সে বলে,ওকথা বলতে নেই।তোর বিয়ে হবে বিদেশে।তুই রাজরাণী হবি, দেখিস।
অসিম বলে চলে,কিশোরবেলায় একটা রঙীন বাক্স ছিলাে জানিস পড়ার ঘরে। তার ভিতরে দুটি রবীন্দ্রনাথ একটা জীবনানন্দ আর কয়েকটা বাল্যকালের খেলনা ছিল। মন খারাপ হলেই পুরী থেকে আনা, নকশা কাটা পেন ও হলুদ কাশীরাম দাস বের করতাম বাক্স থেকে ।তখনই প্রভাতী সূর্যের ভালবাসা দখল করত আমার মন। তারপর বন্যা এলো, মাটির বাড়ি ভেঙ্গে পড়ল। জীবনের তোয়াক্কা না করে আমি ভেসে যাওয়া বাক্স ধরার চেষ্টায় বিফল হলাম। ভেসে চলে গেলে আমার স্বপ্ন। বাবা আমার কান্না দেখে নতুন বাক্স কিনে দিলেন। তারপর বড় হলাম। চাকরি পেলাম। আরও নতুন বাক্স কিনলাম। কিন্তু হায় সেই প্রভাতী সূর্যের ভালোবাসা আর পেলাম না।
কুসুম জড়িয়ে ধরে অসিমকে।সে বলে,কবি আমি তোকে ভালোবাসি রে।
কুসুমের বিয়ে হয়ে গেলো বিদেশে।সে এখন টরেন্টোয় বরের সঙ্গে। নতুন সংসার।বেশ মানিয়ে গুছিয়ে নিয়েছে কুসুম।বর বিরাট ধনী।রাতে তার সোহাগ উথলে ওঠে। কিন্তু কুসুমের মনের খবর কে রাখে?
কুসুম ভাবে,বাবার বাড়িতে থেকে সে এম এ পাশ করেছে। অসিমের সঙ্গে যাতায়াত করত। কী সুন্দর ছিল দিনগুলো।তার ভাবনার সুতো ছিঁড়ে বর বলে ওঠে,প্লিজ তারাতাড়ি খেতে দাও ডার্লিং। অফিস যেতে হবে।হাতে একদম সময় নেই।কুসুম বেশির ভাগ একা একা থাকে আর ভাবে পুরোনো দিনের কথা। তার মনে পড়ে,পাড়ার মধু মাসি ফুটপাতের এক কোণে কোনোরকমে থাকত। তার কোনো ছেলেমেয়ে নেই।একদিন ফুটপাতে কুড়িয়ে পেলো একটা শিশুকে।তাকে ভগবানের দান মনে করে মানুষ করতে লাগলো।তারপর মাসি আরও চারজন অনাথ শিশুর খোঁজ পেলো। মাসি ভিখারী হতে পারে কিন্তু তার পড়াশোনার যোগ্যতা, বুদ্ধি ভালোই ছিলো। শিক্ষিতা রুচিশীল মাসি কি করে ভিখারী হলো, সে ঘটনা পুরো বলতে গেলে ইতিহাস হয়ে যাবে। যাইহোক স্বাধীনচেতা মাসি স্বামীর ঘর ছেড়ে ফুটপাতে আশ্রয় নিয়েছিলো বাধ্য হয়ে। মাসি এবার পাঁচ শিশুকে নিয়ে সরকারী অফিসে হানা দিতে শুরু করলো। একদিন এক সরকারী আধিকারিক বললেন,মাসি আপনার কোনো পরিচিতি নেই।আপনার অনাথ আশ্রমের কোনো জমি নেই। কি করে আপনি অনাথ আশ্রয় গড়ে তুলবেন।আপনার অর্থবল,জনবল কিছুই নেই।মাসি বললো,কিন্তু আমার একটা জিনিস আছে, তা হলো ইচ্ছাশক্তি। আমি আশ্রম গড়ে তুলবোই।আপনি দেখে নেবেন। আমার সে মনোবল আছে।
পাঁচ
মধুমাসি সময় পেলেই গল্প বলেন আশ্রমের বাচ্চাদের।তিনি বলেন, সাপ নিয়ে গল্প লেখেন নি এমন লেখকের সংখ্যা কমই আছে বলে মনে হয়। কিন্তু আমি যে কাহিনী শোনাবো সেটি একেবারে সত্য ঘটনা আমার জীবনে।জীবন সংগ্রামে পরাজিত হয়ে আমি মাঝ মাঠে সাপেদের ডেরায় একটা ইঁটের ঘর করে আমার সংসার সাজিয়েছিলাম।ঘরের ভিতরে প্লাষ্টার নেই,বাইরেও তাই।আশেপাশে পাড়া বলতে একটু দূরে নন্দনপাড়া। আমি রাতে চিৎকার করলেও কেউ শুনতে পাবে না। একদিন রাতে ঘুম ভাঙ্গলে দেখি চার দেওয়ালে চারটি চিতি সাপ। আমাকে দেখে থমকে গেলো।এক জায়গায় টর্চের আলো ফেলি তো আর এক জায়গায় অন্ধকার হয়। তখন সাপগুলো নিচে নামার চেষ্টা করে। আমি মশারির ভিতরে চুপ করে বসে থাকি। পাশে ছেলে, স্ত্রী। হঠাৎ স্ত্রীর ঘুম ভাঙ্গলে দেখে সাপ। ভয় পেয়ে যান উনি।বাধ্য হয়ে আমি একটাকে মারতে পারি। কিন্তু বাকিগুলো পালিয়ে যায়। এইভাবে রোজ সাপের মুখোমুখি হতাম আমরা।
তারপর পাশে একটু জায়গা ।সেখানে আরও একটা ঘর তৈরি হলো। রান্নাঘর হলো।ডাইনিং হলো।কষ্ট করলে যে কষ্ট মিলে যায় একথা ষোলোআানা সত্যি। কিন্তু আরও ঘটনা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলো। পাশের ঘরে এবার আমি একা শয়ন করতাম। পুরোনো বড় ঘরে মা আর ছেলে। এখন ভেতর বাইরে সব প্লাষ্টার, রং হয়েছে। অসুবিধে নেই।
আবার একদিন আমার শোবার ঘরে রাত একটার সময় ঘুম ভেঙ্গে যায়। রান্নাঘরে মুড়ির টিন,চালের টিন সব গড়িয়ে পড়ে যায়। আমি মশারির ভিতর থেকে টর্চ নিয়ে বাইরে আসি। দেখি সব পড়ে আছে।এতক্ষণ শব্দ শুনছিলাম। ভাবছিলাম কোনো চোর ঢুকেছে। চোরকে দেখলে বলবো,ভাই যা নেবার নাও। কিন্তু মেরো না আমাকে। কি করে জানবে চোর নয় স্বয়ং যম ঢুকেছে আমার ঘরে। দেখি রান্নাঘরে বিরাট ফণা তুলে বিশাল দৈর্ঘের একটা গোখরো। দেখেই আমি দরজা খুলে বাইরে এসে ওদের ডাকি। ওরাও উঠে দেখে। তারপর চিৎকারে চলে আসে রাতে ওঠা দু চারজন। তখন আশেপাশে বাড়িঘর হয়েছে। তারা এসে বললেন,মা ঢুকেছেন ঘরে। মেরো না। পাপ হবে। আমি আর কিছু করতে পারলাম না। কার্বলিক অ্যাসিড ঘরে ছড়িয়ে দিলাম। কিছুতেই সাপ বেরোয় না। সারারাত জেগে কাটালাম। সকাল হলে সাঁড়াশি নিয়ে চলে এলো ওঝা। মুখে মদের গন্ধ।আমি বললাম,আপনি ঠিক করে দাঁড়াতে পারছেন না। সাপ ধরবেন কি করে? ওঝা বললেন,আমি তালে ঠিক আছি।আপনার চিন্তা নেই।পাঁচশো টাকা দিলে আমি খুব খুশি হব।
তারপর শুরু হলো সাপ ধরার পালা। সাপটা একটা গর্তে ঢুকেছে। সিমেন্টের মেঝের ফাঁকে।খুঁড়ে বের করলো সাপ। ফণা তুলে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। আমি বাধ্য হয়ে সাঁড়াশি কেড়ে ফণাটা চেপে ধরলাম। লেজে ধরলাম আর একটা সাঁড়াশি দিয়ে। তারপর ওঝার হাতে ধরিয়ে দিলাম। আর তার পকেটে গুঁজে দিলাম টাকা। উনি মহানন্দে চলে গেলেন জঙ্গলের দিকে। আমরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।
সম্পদ প্রধান। আমি বলি পিসি।কাটোয়া মহুকুমার সিঙ্গিতে বাড়ি।বয়স প্রায় পঁয়ষট্টি বছর।ভোরবেলা উঠে তিনটি বাড়িতে বাসন ধোয়ার কাজ করেন। তারপর খবরের কাগজ বাড়ি বাড়ি দিয়ে আসেন। সকলের ফাই ফরমাশি শুনে কাজ করে দিয়ে মাসে আয় করেন তিন হাজার টাকা। ছেলেদের কিছু দেন। বাকিটা নিজের জন্য আর একজন পালিত পুত্রের জন্য রাখেন।তিনি বলেন,শুধু আমার আমার করলে হবে না। অপরের জন্যও চিন্তা করতে হয়।
অবসর সময়ে খবরের কাগজ, বই পড়েন। বিকেলবেলা আবার কাজ। বিয়ে হয়েছিলো বাল্য বয়সে। স্বামী আর নেই। ছেলেরা নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত।তবু কোনো অভিযোগ নেই। কাজই তার মন্ত্র। কাজই তার ধর্ম।
এবার সপ্তমীর দিনে আমরা পাঁচ বন্ধু অট্টহাস সতীপীঠ গেছিলাম। বস্ত্র বিতরণ উৎসব।সোনা মহারাজ বললেন,আমরা পুজোয় মানুষকে সেবা করার চেষ্টা করি। প্রায় দুলক্ষ টাকার বস্ত্র বিতরণ করা হলো।ডঃসৌমেন্দুবাবু আমাদের নিয়ে গেছিলেন টাটা সুমো গাড়ি করে।তিনি অধরা পত্রিকার সম্পাদক।এখানে এসে আমরা মায়ের পুজো দিলাম। বস্ত্র বিতরণে অংশগ্রহণ করলাম।এখানে প্রসাদ খাওয়া ও রাতে থাকার সুবন্দোবস্ত আছে।একান্ন পীঠের এক পীঠ এই অট্রহাস। পাশে বয়ে চলেছে ঈশানী নদী। কাটোয়ার ২০নং ওয়ার্ডের নন্দনপাড়ায় সনাতন মাঝির বাড়ি।গান বাজনায় ওস্তাদ লোক।সারাদিন রিক্সা চালান আর গানের সুর রপ্ত করেন মিহি সুরে।একদম মাটির মানুষ সনাতন বাবু গানের আড্ডায় বসলে আসর জমিয়ে দেন। বৈশাখ মাসে হরিনাম হয় তারই নেতৃত্বে। সারা বৈশাখ মাস স্টেডিয়াম থেকে প্রান্তিকপাড়া হয়ে নন্দনপাড়ায় হরিনামের দল নামগানে মুখরিত করে তোলে সনাতনবাবুর হরিনামের দল।একদিকে সংসারের চিন্তা আর একদিকে সংগীতের সাধনায় তার সময় কাটে সুন্দর। কোনোদিন তার মুখে কোনো দুঃখের কথা শুনি নি। দুঃখকে জয় করে চলার নামই জীবন। তিনি আরও বলেন,অনেক মানুষের সঙ্গে মিশতে পারলে মন ভালো থাকে।মানুষের মধ্যেই তার অধিষ্ঠান গো…
আমার বাবা ছিলেন অত্যন্ত সাহসী একজন লড়াকু মনের মানুষ।শত অভাব অভিযোগেও তাকে কোনোদিন ভেঙ্গে…..
ভার্সিটির বাস ধরতে হয় আমাকে খুব সকালে। বাড়ি থেকে একটু হেঁটেই রিকসা। তারপর বাস। হাঁটা…..
আজকের সন্ধ্যাটা থমকে যাওয়া মেঘেদের। ঝিরিঝির বৃষ্টি ছিল দিনভর। ঢাকা শহরের পথঘাট জল কাদায় মাখামাখি।…..
জোছনা করেছে আড়ি আসে না আমার বাড়ি গলি দিয়ে চলে যায়, গলি দিয়ে চলে যায়…..