চেয়ারম্যান সাহেব খুব অনেস্ট
মাকেন্দো গ্রামে ভীষণ বিপর্যয় নেমে আসে। এ গ্রামের কৃষক ও কারিগরেরা শ্রমে-রক্ত-ঘামে যে টাকা-পয়সা…..
মেয়র নির্বাচনের দিন ইলেকশান ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রায় আর্তনাদ করে ওঠেন, “আপনারা কেবল ভোটার আসেনি আসেনি বলে মাতম তুলছেন কেন! ভোটারেরা কী আমার ছাত্র যে, তাদের বাসায় বাসায় গিয়ে খোঁজ করে ভোটকেন্দ্রে ধরে নিয়ে আসবো! ভোট কেন্দ্রে আমার ছাত্ররা দেখুন ঠিকই আছে; প্রিজাইডিং অফিসার আছে, পোলিং অফিসার আছে, দুটি পুলিশ আছে; তারা ‘উপস্থিত স্যার’ বলেছে সবাই”।
এক টিভি রিপোর্টার উপাচার্যকে বলে, স্যার আমরা তো আপনার ছাত্রদের মতোই সকাল সকাল ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হয়েছিলাম। বিশ্বাস করুন আমরা প্রায় দশজন রিপোর্টার দশটা ক্যামেরা তাক করে বসে ছিলাম, ভোটারের একটা বাইটের জন্য।
কিন্তু, “সে তো এলো না
কেনো এলো না
জানি না
হারালো কি আঁধারেতে
নিভে গেল দীপ যে
কেন জানি না।।”
অডিওপাঠ শুনুন এইখানে-
উপাচার্য উদাস চোখে তাকান। বুকের মধ্যে প্রত্যাখ্যানের বেদনা চিন চিন করে। এতো আয়োজন, ভোট দেবার সুবিধার জন্য ঘটা করে ছুটি দিয়ে দেয়া হলো ভোটারদের। যাতে একটা দিন তাদের কাজে যেতে না হয়; চড়ুইভাতির আনন্দে সকাল সকাল ঘি ছিটিয়ে খিঁচুড়ি খেয়ে ভোট দিতে আসে তারা। অথচ তারা ছুটি পেয়ে বাসায় ঘুমিয়ে রইলো; ভোটকেন্দ্রে এলো না। মানুষ এতো নিষ্ঠুর কেন!
রিপোর্টার কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেলে, আরেকবার একটু খোঁজ নিতে একটি ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারকে ফোন করেন। ফোনের রিং বাজে; কিন্তু কেউ ফোন ধরে না। উপাচার্যের মনে স্বপ্ন উঁকি দেয়। হয়তো এখন অনেক ভোটারের ভীড়; ভোট নিতে ব্যস্ত প্রিজাইডিং অফিসার। জীবনে এই প্রথমবার কারো ফোন ব্যস্ত পেয়ে পুলকিত হন তিনি।
এবার একটু টিভি চ্যানেলগুলোতে চোখ বুলিয়ে নেন। একটা টিভি রিপোর্টে দেখা যায়, উনি একটু আগে যে প্রিজাইডিং অফিসারকে ফোন করেছিলেন, সে ভোটকেন্দ্রে টেবিলে মাথা রেখে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। এটা দেখে প্রথমে খুব রাগ হয়ে, পরে ভাবেন, প্রত্যাখ্যানের বেদনায় কেউ
শুধু জেগে থাকে; কেউ ঘুমায় কেবলি, দুটোই বড় পরিতাপের বিষয়।
উপাচার্য অস্থির হয়ে কক্ষের মাঝে পায়চারি করতে থাকেন। মনের মধ্যে বাজতে থাকে হারানো দিনের বেদনার গান,
“জানিনা কী দোষে এ জীবনও
দিয়ে গেল ফাঁকি।
ভুল করে তারে মনটি দিয়েছি
আমি যে কী নিয়ে থাকি”
পিরিচ দিয়ে ঢেকে রাখা পানি গ্লাস থেকে ঢক ঢক করে গলায় ঢেলে বেদনায় শুকিয়ে যাওয়া মনটাকে বাগে আনতে চেষ্টা করেন। চারিদিকে এতো উন্নয়ন; আকাশ থেকে তাকালে যে শহরকে লস এঞ্জেলেসের মতো দেখায়; সে শহরের মানুষ একটা ভোট দিয়ে অন্ততঃ ধন্যবাদ জানাবে না; এ কী করে হয়!
উপাচার্য মহোদয় তার এক পুরোনো বন্ধুকে ফোন করেন; যিনি কখনো উপাচার্য হবার চেষ্টা করেননি; কেবল নিজের বিবেকের কাছে পরিষ্কার থাকতে নিয়ত সততার পরীক্ষা দিয়েছেন; যিনি বড় গাড়ি-বাড়ির স্বপ্ন না দেখে এমন সুখের অনুসন্ধান করেছেন, যাতে মালিন্য নেই। উপাচার্যের মনে হয়, এই বন্ধুটি কখনো মন জুগিয়ে কথা বলেনি; আবার মন ভেঙ্গে দেয়া কথাও বলেননি কখনো; তাকেই প্রয়োজন আজ।
–হ্যালো; তোমাকে বিরক্ত করলাম নাকি বন্ধু!
–না না; আজ ভোটের কারণে ছুটি পেয়ে ছেলে-মেয়েরা এসেছে; বাড়িতে রীতিমত পার্টি চলছে। আমি নাতিদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছি। জানোই তো বুড়ো বয়সে মানুষ শিশু হয়ে যায়। আমার স্টাডি-রুম আজ শিশুস্বর্গ হয়ে উঠেছে।
–খুব ভালো লাগছে বন্ধু; মনে হচ্ছে এক্ষুণি চলে আসি।
–চলে এসো; আজ বাড়িতে ভুনা খিঁচুড়ি রান্না হয়েছে।
–তা বন্ধু তোমার ছেলে-মেয়েরা কেউ ভোট দিতে যায়নি।
ওপাশের বন্ধু কিছুটা নীরব হয়ে থাকেন। উপাচার্য হ্যালো হ্যালো করেন। বন্ধু কথা বলে ওঠে,
–কী যে বলি; কী যে বলা যায়; তুমি মন খারাপ কোরোনা বন্ধু।
–তুমি নিজের ভোটটা দিয়েছো!
আবার বন্ধুটি নীরবতায় হারিয়ে যায়। একটু পরে ফিরে আসে,
–রাতে একটা সুন্দর স্বপ্ন দেখলাম জানো। আমি রাতের বেলায় ভোট কেন্দ্রে গিয়েছি; পুলিশ আমাকে স্যালুট দিয়ে ভেতরে নিয়ে গেলো। সেখানে ভোটারেরা বসে চড়ুইভাতির আনন্দে খিঁচুড়ি খাচ্ছে। আমাকে দেখেই প্রিজাইডিং অফিসার বললেন, আসুন আপনি সিনিয়ার সিটিজেন; আমার চেয়ারে বসে খিঁচুড়ি খান। একটা অদ্ভুত আনন্দে মনটা ভরে গেলো। তোমাকে বোঝাতে পারবো না; কী সুন্দর রূপকথার মতো মধ্য রাতের ভোটার’স পিকনিক।
–তারপর কী করলে ভোট দিলে!
আবার নীরবতা। একটু পরে বন্ধুটি উত্তর দেয়,
–স্বপ্নের ঘোরে কিছুতেই ব্যালট বক্স অব্দি যেতে পারলাম না। একটা কক্ষের মধ্যে আমি যে চেয়ারে বসেছিলাম সেখান থেকে সামনে টেবিলে বড় জোর সাড়ে তিন হাত দূরে টেবিলের ওপর পড়ে থাকা ব্যালট বক্সের দিকে সেই যে হাঁটতে শুরু করলাম; কিন্তু মনে হলো যেন দীর্ঘপথ হেঁটে চলেছি; তবু সেই সাড়ে তিনহাত দূরত্ব অতিক্রম করতে পারছি না। শেষে দৌড়াতে শুরু করলাম; কিন্তু দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লান্ত হয়ে পড়লাম; ব্যালট বক্স থেকে মাত্র সাড়ে তিন হাত দূরত্ব যেন সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার হয়ে গেলো। শেষে তোমার ভাবির ধাক্কায় ঘুম ভাঙ্গলো। স্বপ্নের ঘোরে আমি নাকি ঘরে মধ্যেই হাঁটতে শুরু করেছিলাম। ঘরে মধ্যে লাটিমের মতো ঘুরপাক খাওয়ার সময় তোমার ভাবি আমাকে এসে ধরে আবার শুইয়ে দেয়। এরপর ও বোধ হয় আধখানা ঘুমের ওষুধ দিয়ে খাইয়ে দিয়েছিলো। সেই যে ঘুমিয়ে পড়লাম, পরে নাতির ধাক্কায় দেরি করে উঠলাম। তারপর নাতি আমাকে গ্রেফতার করে ওর সঙ্গে বারান্দায় ক্রিকেট খেলতে লাগিয়ে দিলো।
উপাচার্য কী বলবেন বুঝতে পারেন না। বেদনাহত হয়ে বলেন,
–তোমার স্বপ্নে যে বার বার সাড়ে তিন হাত দূরত্বের কথা বললে, ওটা তো কবরের দৈর্ঘ্য। এটা কী ভোটের মৃত্যুর কোন রূপক।
বন্ধু সরল শিশুর মতো খিল খিল করে হেসে ওঠে।
–ওভার থিংকিং করোনা। শরীর খারাপ হবে। আসলে গণতন্ত্রে ভোটারই তো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেই ভোটারেরা দীর্ঘ অবহেলার কারণে অভিমানী হয়েছে। ঐ যে কথায় কথায় বলেনা, নীরব প্রতিবাদ; এই হলো ক্ষমতাহীন-উপায়হীন ভোটারের নীরব প্রতিবাদ। জনমতের অন্তঃসলিল প্রবাহকে অনুসরণ করলে, তাদের প্রত্যাখ্যানের সুর স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দ্যাটস লাইফ; তুমি মুষড়ে পোড়ো না যেন বন্ধু।
ওপাশে বন্ধুর নাতি এসে দাদাকে ধরে টানছে,
–ফোনটা ছাড়ো দাদা। একটু পরে তো চলেই যাবো। চলো না দাদা খেলি।
উপাচার্য সম্বিত ফিরে পেয়ে বন্ধুকে বলেন, তোমাকে আর ডিস্টার্ব না করি বন্ধু; দাদাভাই পেরেশান হয়ে যাচ্ছে; ওর সঙ্গে খেলো।
বন্ধু বলে, ঠিক আছে রাখছি, কিন্তু কথা দাও, ওভার থিংকিং করে শরীর খারাপ করবে না। কেবল জনমনের স্ট্রিম অফ কনশাসনেসটাকে একটু অনুসরণ করো।
ফোন রেখে উপাচার্য জানালা দিয়ে বারান্দার দিকে তাকান। মনের মধ্যে বাজতে থাকে হারানো দিনের গান,
“এত জানা তবু আজও।
মন তার কেন জানা গেলনা।।
চোখেরও দুয়ার থেকে
মনেরও আঙিনা বলো কতদূর।”
মাকেন্দো গ্রামে ভীষণ বিপর্যয় নেমে আসে। এ গ্রামের কৃষক ও কারিগরেরা শ্রমে-রক্ত-ঘামে যে টাকা-পয়সা…..
এক রাজার রাজ্যে কিছু চাল ব্যবসায়ী একজোট হয়ে ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতার কাছে গিয়ে বললো,…..
স্ত্রী তার নির্বাচন বিশেষজ্ঞ। ঐ একবার মঈন মামাকে দুটি ঘোড়ামন্ত্রে বশ করে ওপাড়ার প্রণব সাধু…..
জোছনা করেছে আড়ি আসে না আমার বাড়ি গলি দিয়ে চলে যায়, গলি দিয়ে চলে যায়…..