মুক্তমনা

কুম্ভকর্ণ
মুক্তগদ্য
Bengali
মুক্তমনা

নিজের ঘরে খাটে শুয়ে আছে শুভায়ু। ধপ ধপে সাদা চাদরে ঢাকা পুরো শরীরটা, শুধু মুখটা দেখা যাচ্ছে। রক্ত চন্দনে কপালটাকে আঁকা হয়েছে খুবই এলোমলো ভাবে। বুকের উপর হাজার রজনীগ্ধার মালা আর মাথার কাছে ধুপজ্বলছে হু হু করে। নীরালা আবাসনের পরিচিত মুখ শুভায়ু দত্ত, একমাত্র সন্তান চিরন্তন আর স্ত্রী অরিত্রিকা নিয়েতার তিন কামরা সংসার। আজ সকালে হেঁটে এসে সেই যে একটু বিছানা বসলেন আর উঠলেন না। চিরন্তন নিজেবড় ডাক্তার তবু তার পরিচিত ডাক্তারদের ডেকে এনেছেন “বাবা হয়তো এখনও বেঁচে আছে” এই আশায়। আবাসনের লোকজনরা ভীড় জমিয়েছে, শুভায়ু শেষ বারের মতো দেখার জন্য।

অরিত্রিকা নিশ্চুপ, চোখদুটো জবা ফুলের মতো লাল। শুভায়ুর মৃত্যুর পর সে কি যেন খুঁজে চলেছে। চিরন্তনের ব্যাপারটা বেশ দৃষ্টিকটু লেগেছে কিন্তু এই সময় মা কিছু সে বলতে চায়নি। চিরন্তন ফ্ল্যাটের ড্রয়িং রুমে তার বন্ধুদেরসাথে বসে “ব্রেন-ডেথ” এর আপেক্ষায়। ভিতর থেকে মায়ের ডাক-

-চির একবার ভিতরে আয়।

তাদের বাড়ির এই ঘরের নাম “বই-ঘর”। নানা রকমের নানা ধরনের বই, বাপ-ব্যাটার অনেক কালেকশন। ঘরে ঢুকতেই অরিত্রিকা একটা সাদা খাম এগিয়ে দিলো।

-এটা কি মা? খামটা হাতে নিয়ে বললো চিরন্তন।

-নিজেই দ্যাখ। তোর বাবা শেষ ইচ্ছে।

খামের ভিতরের কাগজগুলো বার করে বেশ ক’বার পড়লো সে।

-না মা এটা হতে পারে না। আমি কখনই এটা মেনে নেবো না। চিরন্তনের দু চোখে সব কিছুর হারিয়ে যাবার চিহ্ন।

-কিন্তু শুভ তো কথা দিয়েছিলো। খুব দৃঢ়ভাবে কথা গুলো বললো।

-দিক অনেকেই দেন। এইতো কিছুদিন আছে এক বিখ্যাত লেখকের সাথেও তাই হয়েছিলো।

-হতে পারে। কিন্তু শুভ আর আমি তোকে অনেক মুক্ত ভাবে মানুষ করেছি।

-মুক্তমনা মাই ফুট। আমাদের কোনো সন্মান নেই।

অরিত্রিকা খুব শান্ত ভাবে কথাগুলো শুনলো তারপর বললো

-এত ভালো একটা মানুষের সাথে থেকে কিছুই শিক্ষা নিতে পারিস নি। ওই নরকের ভাষা এখনও বয়ে নিয়েচলছিস।

চিরন্তন একেবারে চুপ হয়ে গেল। শুভায়ু তখন তার বাবা হয়নি তার বাবার বন্ধু শুভায়ু কাকু, বাবার কলেজের বন্ধু। তার বাবার ক্যানসারের খবর জানাজানি হতেই শরিকদের হিংসা দাঁত, নখ সবই বেরিয়ে এসেছিলো। মামার বাড়িতেমন জোরালো না হওয়ায় তার মায়ের পক্ষে এ যেন অসম লড়াই। সে সময়ে শুভায়ু কাকু পাশে না দাড়ালে তারাহয়তো ভেসে যেত।

সমাজ, নিজের পরিবারের তোয়াক্কা না করে সে তাদের নিয়ে এখানে চলে আসে। তার মা কে স্ত্রীর মর্যাদা আর তাকেছেলের। কাকু কথন যে তার বাবা হয়ে গেছে সে নিজেও বোঝেনি।

ঘোরটা কাটলো তার মায়ের গলার আওয়াজে।

-কি রে? কি ভাবছিস?

ফোনটা বার করে নম্বার ডায়াল করলো।

-হ্যালো। মুক্তমনা NGO?

-আমি চিরন্তন দত্ত বলছি।আমার বাবা শুভায়ু দত্তের বডি ডোনেট করা ছিলো…।

অরিত্রিকা চোখে জল…। এ জল যেন তৃপ্তির অশ্রু।

কুম্ভকর্ণ (ছদ্মনাম)। লেখক। জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। পেশায় প্রকৌশলী।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ