মুখোশ

তীর্থপতি গুপ্ত
কবিতা
Bengali
মুখোশ

রাঙিয়ে দিয়ে যাও

ফিনকি দেওয়া রক্ত যখন গাছের গায়ে লাগে
ফুল হয় লাল
বুঝি, বসন্ত এসে গেছে
যখন মৃত্যু এসে ছুঁয়ে দেয় পাপড়ি
ফুল হয়ে ওঠে নীলাভ
বুঝি, বসন্ত চলে গেছে
যখন ধর্ম এসে গ্রাস করে জীবন
নালায় সাঁতার কাটে লাশ
বুঝি, বসন্ত চলে গ্যাছে
একদিন থেমে যাবে সব
সভ্যতাও শব হয়ে খুঁজবে নালা
আধপোড়া চৌকাঠে আটকে শাঁখা পলা
কবরে দেওয়ার পথে কফিনে ঢাকা বিয়ের বেনারসি
চিতার আগুনে রঙ্গিন দোল খেলা।
শেষ হবে একদিন
সব শেষে বৃষ্টি নামবে খুব!!
কালবৈশাখী!
আধপোড়া লক্ষ্মীর পট যত্নে তুলে রেখে নামাজে বসবে জাহানারা খাতুন
কোরানের ছেঁড়া পাতা সিংহাসনে রেখে পুজো করবে বিউটি হাজরা
আমরা গাইবো
রাঙিয়ে দিয়ে যাও যাও যাওগো এবার যাবার আগে…
এসো হে বৈশাখ….

 

মুখোশ

এতকাল পেড়িয়ে, চুপে, এসেছে সময় পরার
পুরানো মুখোশ, অভ্যাস, উপহার পাওয়া জুতো
আধখালি কৌট, জীবনের, মৃত্যুর। একটা পাখি,
জ্ঞানী, কথা বলেনা, শোনে কিনা বোঝা যায়না। ভাবি।
ছেড়ে যাওয়া বাতিল স্বভাব আজও একাহাসে
পাল্টায়না কেউই। শুধু সময় তারিখ সাল
ঘোরে, চোখ জ্বালা করে। ভয় পাই আয়নাকে আজ
যদি খুলে দেয় মুখোশ সবার অলক্ষে, নীরবে।

 

সৌখিন জীবন

আমি ঘরে আছি
আকাশে মৃত্যু রঙে তুলির টান
অ্যাপসে ছবি আঁকি
বাইরে ঝোড়ো হাওয়া আম্ফান

খিচুড়ি গন্ধ ভাসে
থালাতে ধোঁয়া ওঠে ঘীয়ের স্নান
আচার দিও পাতে
জিও গুরু উল্লাস হ্যাভ ফান

ওখানে ছাদ ওরে
এখানে পানীয়তে আইস কম
ওখানে গাছচাপা
হাজার মানুষের আটকে দম

ওখানে দেহ সব
সেটুকু চলে গেলে শব বাকি
ওখানে খিদে মানে
সময় ক্যানভাসে রক্ত আঁকি

ওখানে চলে যাব
পারিনা না ডেকে নেয় চাদর ওম
জীবন ছোট জানি
গণ্ডি টেনে রেখে মিথ্যে জ্বালি মোম

পারলে ক্ষমা কর
আমি নই এ পৃথিবীর কাছের লোক
নাহয় শাস্তি দাও
সৌখীন জীবনের অকাল মৃত্যু হোক

 

এলোমেলো স্মৃতির পথে

দূর থেকে ভেসেও আসে নাড়ির টান
কোন জন্মের? স্মৃতির ঘরে ঢুকে পথ হারাই
কলমে কালিতে শব্দে শুধু ঋণ থেকে যায়
আমি শুধু ঝিনুক কুড়াই
সমুদ্র ফেরত মাঝিদের গায়ে আরব সাগরের লোনা হাওয়া।
আমি ওদের কাছে খোঁজ নিই আগের জন্মের।
ওরা হাসে। আমি খুঁজি গত জন্মের কাজলা দিদিকে।
ওরা বলে, এখন ভাটার টান জোয়ার এলে আবার যাব,
তখন তোমার খবর আনব।
আমি সমুদ্র আঁকি নৌকা আঁকি, অমনি হঠাৎ,
রেলগাড়ি দেখবি অপু….
বলেই এক নিমেষে হাত ধরে
দূর সমুদ্রের ঢেউ পেরিয়ে কাশের বনে… আস্তে আস্তে চাঁদের নৌকায় মিলিয়ে যাই আমি।
রতন ডাকে, যুক্তাক্ষর শেখাবে না আমায়?
এলোমেলো স্মৃতির পথে ঘুরি
ফিরব না বলে।

তীর্থপতি গুপ্ত। কবি ও চিকিৎসক। পেশায় ফিজিওথেরাপিস্ট হলেও নেশায় কবিতা, ক্যামেরা, কালার। নিজেকে যখন দমবন্ধ লাগে তখন কবিতাই প্রাণ দেয়। মুর্শিদাবাদ জেলার সদর শহর বহরমপুরেই জন্ম কর্ম ও বেড়েওঠা। তাঁর মতে, একটু ভালো থাকা একটু ভালো রাখার জন্যই বেঁচে থাকা,...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..