মুখোশ

ইমেল নাঈম
কবিতা
Bengali
মুখোশ

সীমান্ত…

মিথ্যে রচনার শেষে পড়ে থাকে একবিন্দু জল
শান্তির আসরে কেবল শুনছি মনগড়া গান
একই বৃত্ত ঘুরে এসে জানান দিচ্ছি নিজেকে—
পুনরায় ঘুরে আসছি আদিতে পরিক্রমা মেনে…

নির্বাসন লিখছি— ভুলের পুনরাবৃত্তে ঝুলছে নাম
প্রান্তিক সুখে ঝরছে দিনান্তের সব আয়োজন
উড্ডীন ঘুড়ির মুখোশে সুখবাড়িতে দিচ্ছি হানা,
নির্বাক আলস্যে নিজের জন্য লিখছি প্রহসন

খুলছে দরজা! প্রবেশাধিকার নেই! দিচ্ছি উঁকি!
দেখছিনা কিছু, মায়াবী সময়ে রাখছিনা ইচ্ছে
ভুলের সাথে পেরিয়ে যাচ্ছি সীমা, বিনিময়ে
দূরত্ব মাপছি চোখের, মনের কিম্বা শরীরের…

উড়ে যাচ্ছে ভুল সময়ের লাল নীল প্রলোভন
নিজেকে নিয়েও ভাবতে মানা আমাদের এখন
মোসাহেবি সময়, করতলের ঘর্ষণে বিমূর্ত
মানুষেরা আরো অস্পৃশ্য হয়ে যায় আড়ালে
ক্ষান্ত দিচ্ছি, মলিন নিজেকে টেনে নিচ্ছি

সামনে যা কিছু প্রকাশিত তার কাছে ঋণ
বিনির্মাণে কেটে যাচ্ছে নহর, দাগহীন সীমান্তে।

অপেক্ষা

মুগ্ধতার শেষ বিন্দুতে, রেশ থাকে বিবর্ণ ব্যথার…
মাশুল গুনতে গুনতে হারিয়ে যাচ্ছে দূরে
আশাহীন কিছু প্রদীপ জ্বলে ওঠে দূরত্বের,
বাতিঘরে, আলোর উচ্ছ্বাসে নাচছে সমুদ্রের স্রোত।

ঘুংগুর পায়ে ছুটছে বোঝাপড়ার নিরন্তর অস্ত্র
নীরবে ছুটে চলেছে একমুঠো গান, অভ্যন্তরীণ
গল্পরা জেগে থাকে মলিন ক্যানভাসে—

রুক্ষতার ভাষায় লিখে রাখি ক্রমাগত রূপান্তর
নীরবে ছুটে যাচ্ছে আমাদের চাঁপা ক্রোধ
ভ্রান্তি জাগিয়ে ছুটে যাচ্ছে ভুলের ইতিহাস

বিশ্লেষণে টিকে থাকে প্রান্তিক ইতিহাস
বইয়ের ছেঁড়া পাতায় লিপিবদ্ধ সময়
রুগ্ন হয়ে জানান নেয় জীর্ণতার ভাষা

আমাদের ছুটে চলার কোনও অধ্যায় নেই
কেবল প্রলয়ের অপেক্ষায় বসে আছি,
হাতঘড়িতে বিবর্ণ সময় হাসে জানালায়।

 

ব্যক্তিগত মুহূর্ত

থেকে যায় দৃশ্যমান ছবির কল্পনা, বিভ্রমে কাটছে দিন।
ছুঁড়ে দিচ্ছি উড়ন্ত বিষাদ, স্বাদহীন সময়ের ফাঁকে
নিরবচ্ছিন্ন সুখের মহড়া আদিম, অথচ সত্য—

মেঘের কিছু কথা থাকে দেয়ালের ও’প্রান্ত জুড়ে,
উড়ে চলা প্রহসনে স্বপ্নবিচ্ছেদে লেখা হয় সুর লিপি
ভাষারা মৌন হয়, সাধকের মতো ধ্যানমগ্ন
হয়ে শিখে নিচ্ছে নীরবতার পাঠ পরিক্রমা—

চোখের ভাষাটাও অচেনা। ধ্রুব সত্যকে এড়াতে
গিয়ে পেরিয়ে যাচ্ছি চৌকাঠ, ফেরি করছি শব্দগুচ্ছ
অসত্য প্রলেপে আটকে ফেলছি দূরবর্তী নিদর্শন

প্রভাতের নিজস্ব রঙ থাকে, ধূসর চোখও সবুজকে
পালটে দিতে পারে সাদাকালোতে, পুরনো কার্নিশে
জুড়ে দেওয়া গল্পগুলো যেন ভ্রাম্যমাণ নাবিক মাত্র

সকলেই সুন্দরের আলোয় রাঙিয়ে নিচ্ছি চারপাশ,
অবাধ্য সময়কে ছুঁড়ে দিচ্ছি দৃষ্টিসীমার বাইরে
স্নিগ্ধতার ভাষা পাঠ শেষে হেসে ওঠে জীবন।
বক্রোক্তির মতো প্রকাশ্যে আঘাত করে— শব্দহীন

মানে বদলাতে গিয়ে হারিয়ে ফেলছি চেনা জায়গা
থাকছে ব্যক্তিগত মুহূর্ত অপঠিত বইয়ের ফাঁকে।

 

ভুলের ইতিবৃত্ত

ব্যস্ততার পরেও শরত আকাশ রাঙাচ্ছে নিজেকে।
প্রশ্নবোধকের কবলে আড়াল থাকছে সহজাত হৃদ্যতা
অদৃশ্য কিছু ইঙ্গিত রেখে দিচ্ছে প্রলয়ের সংজ্ঞা
অসাবধানতায় চলে যাচ্ছি সীমারেখার অনেক বাইরে।

দোটানা মনে পেরিয়ে যাচ্ছি চোখের ব্যাকরণ
যতিচিহ্নের ভুলে পেরিয়ে যাচ্ছি চেনাজানা স্টপেজ
থামছি অনাকাঙ্ক্ষিত সব জায়গায়, অতঃপর
চারপাশে তাকিয়ে দেখি আটকে গেছি ভুল বৃত্তে।

সমীকরণ মস্তিষ্কের কিছু অনুরণন। সিগন্যাল দিচ্ছে
দেহের প্রতিটি কর্নারে, বিনিময়ে জানিয়ে দিচ্ছে
সকল প্রকারের স্পর্শগুলো, অহেতুক কিছু মুখকে
ছুটি দিয়ে মিলিয়ে দিচ্ছি গোপন হিসাবের আড়ালে।

আমিহীন পৃথিবী, ছুটে চলে আপন কক্ষপথে
বদলে যায় ঋতু, বদলে যায় পাখির ডাক,
পরিযায়ী এসে আবার চলে যায় নিজের দেশে
পঞ্জিকার পাতায় লিখা হয় নিঃসঙ্গের অভিমান।

অভিনয়ের কালগ্রাস খেয়ে নিচ্ছে উষ্ণতার ভাষা
কেবলই ছুটে যাচ্ছি দূর এক মরীচিকার পিছে
শূন্যতার ভাষায় বোঝাপড়াতে কাটছে জীবন…

 

মুখোশ

মূর্ছনা থেমে যাক। ভুলের প্রাচীর টেনে আটকে
ফেলেছি দূরে— নিজেকে আর কোনো প্রশ্ন নয়
ছিঁড়েখুঁড়ে এড়িয়ে যাচ্ছি মহাকালের পথে
ভুল বানানে ভালোবাসার জয় দেখে খুব ক্লান্ত।

নিজস্ব ভাষাগুলো অপঠিত, স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বরে
করুণ কিছু মুহূর্ত উড়ে যাচ্ছে দুনির্বার আক্রোশে
রেখে যাচ্ছি দূরের পথ— মেঠোপথ উড়ছে—
নিজস্ব আঙ্গিকে ধুলোর পাশে ধুলোর সহবাস।

হলুদ পথের গোপন মাহাত্ম্য, পেরুচ্ছি ঝাউবন
বিভ্রান্ত মুহূর্তকে মুঠো বন্দি করছি অবচেতন মনে
ভ্রান্তি জাগানিয়া সুর, বিব্রত করছে সকাল
ছুঁড়ে ফেলছি নির্বাক কথামালা, মূকের ভঙ্গিমা।

শিহরণের ভাষারা অচ্ছুত ভদ্রলোকের বিন্যাসে
নির্বাক হাতেখড়িতে কাটে গোপন অভিলাষ
কথারা মূর্ত, বিমূর্ত কিছু কল্পনাকে বন্দী করছি

হারিয়ে যাবার প্রাক্কালে কেউ পাশে থাকে না
দূরত্বগুলো তৈরি করে মায়াবী মায়াজাল,
মিথ্যে ফানুশ ওড়ে মুখ আর মুখোশের ভিড়ে…

ইমেল নাঈম। কবি। জন্ম ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৮৬। বসবাস চট্টগ্রাম শহরের হালিশহরে। পড়াশোনা: বিবিএ, এমবিএ শেষ করে বর্তমানে সিএ পড়ছেন। তার পাশাপাশি কর্পোরেট জবও করছেন। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা তিনটি। প্রকাশিত বইঃ দেয়ালের ও'প্রান্ত পেরিয়ে (২০১৫, চৈতন্য প্রকাশনী), দূরবীন চোখ (২০১৮, চৈতন্য প্রকাশনী), সুদূরে শূন্যস্থান (২০১৯, স্বরচিহ্ন প্রকাশনী)।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..