মুজিব ইরমের ৯টি কবিতা

মুজিব ইরম
কবিতা
Bengali
মুজিব ইরমের ৯টি কবিতা

বন্দনা

প্রথমে বন্দনা করি গ্রাম নালিহুরী। ছাড়িয়াছি তার মায়া যেন কাটাঘুড়ি\ পরেতে বন্দনা করি আকাশ পাতাল। পিতামাতা দেশ ছাড়া হয়েছি মাতাল\ পুবেতে বন্দনা করি নাম তার মনু। এমনি নদীর রূপ উছলে ওঠা তনু\ উত্তরে বন্দনা করি শ্রীহট্ট নগর। সে তো থাকে মন মাঝে অনন্ত অনড়\ পশ্চিমে বন্দনা করি লেখাবিল নাম। এজীবন তার তরে তুলেছি নিলাম\ দক্ষিণে বন্দনা করি নাম শ্রীমঙ্গল। দেখিয়াছি টিলারূপ কুহকী জঙ্গল\ মৌলভীবাজারকথা কী কহিবো আর। সে তো জানি প্রাণসখা বন্দনা অপার\ চারদিক বন্দি শেষে মন করি স্থির। ধরিয়াছে এই দেহ দেশের জিকির\ বন্দনা করিয়া সারা মধ্যে করি ভর। আসো গো কবির সখা বৈদেশ নগর\ ভিনবাসে ঘুরিফিরি তিষ্ঠ ক্ষণকাল। পয়ারে মজেছে মন বাসনা বেহাল\ পদ্য বাঁধি গদ্য বাঁধি সুরকানা আমি। ইরম হয়েছে ফানা জানে অন্তর্যামী

 

 ইতিবৃত্ত: পূর্বাংশ

 তুমি কোন মুল্লুকের মৌলভী গো? তোমার আলখাল্লায় লেগে আছে সিঁদুরের দাগ, তোমার সফেদ পাঞ্জাবীতে ধূপধুনি আতরের ঘ্রাণ, তোমার গলায় ওঠে কীর্তন জিকির, তুমিও পীরের দেশে পীর হয়ে কাটিয়েছো দিন, তুমিও বৈষ্ণব হয়ে বৈষ্ণবীর খুঁজে গাঁয়ে গাঁয়ে গেয়ে গেছো বেদনার গীত, তুমি দেখি ধরে আছো নানা কিসিমের বেশ, নানা উপাধি, তুমি কি গো এই গাঁয়ে পরদেশী পীর? পরদেশী সন্নাসী ফকির? তোমার দোতারা কার ইবাদতি করে গো হযরত? তোমার তসবিদানা কোন মন্ত্র জপে? মন্দির মসজিদে তুমি করো যাতায়াত, আজান ও উলুধ্বনি একি কণ্ঠে ধরো, এ কোন দেশের মুসল্লি গো তুমি? তোমার দেশের নদী ধরে বুঝি আল্লার জিকির, ধরে বুঝি দেবতার স্তুতি?

তোমাকে দেখেই আমি বুঝে গেছি এ এক এমনি দেশ, এমনি তার রীতি, একই নদী ভরে ওঠে পানি ও জলেতে, এক জলসা রাঙ্গা হয় আদাবে সালামে!

 

রোল কল

 : মুজিব ইরম? : উপস্থিত!

 কে আমারে ডাক পাড়ে, কে আমারে নাম ধরে রোল কল করে? আমি তো পরীক্ষা ফেল, লাস্টবেঞ্চ, দেরি করা লোকরেজিস্টারে কাটা নাম কেনো তবে বারবার উচ্চারিত হয়, কেনো তবে বারবার মনে পড়ে রোল নং, অস্তিত্ব আমার! এত যে তুলেছি হাত, দূর থেকে, এত যে বাড়াই গলা আছি, তুমি কি শুনিতে পাও ওহে শিক্ষিকা আমার?

আমি তো আউট পড়া লোক, সেই কবে রোল নং ভুল করিয়াছি, হাজিরা খাতার নাম ভুল করিয়াছি।

 

জাতক

 কতো না ঘুরেছি পথ ছদ্মবেশে, দেশে দেশে, নগরে নগরেএই ভেক, এই মিছা আবরণ খুলে ফেলোএই নামে ডাকো তুমি ডাকিবার ইচ্ছা যদি হয়তুমি তো ডেকেছো কতো মায়াময় নামেকতো রূপে হয়েছি হাজিরকতো নামে সাড়া দিতে হয়েছি অধীরআমাকেও ডাকো তুমি নকলী অভিধায়মনে লজ্জা পাইআমাকেও দেখে কেউ বাস করি বৈদেশ নগরআমাকেও দেয় খোঁটা সোনা ছেড়ে খাদ বাছি, ছেড়ে আসি বাস্তুভিটা, ছেড়ে আসি ঘরএত এত ডাকনাম, এত এত রূপে ডাকাডাকিইতা আমি লিখে রাখি তেমনি আবার। আর কোনো নাম নাই লেখা এই বুকে, আমিও সিলট্যা লোক জানে সর্বলোকে!

বৈদেশী

হঠাৎ টুটেছে নিদ্রা রাত্রি কতো দূর, নিজেই পেঁতেছি ফাঁদ নিজেই বিভোর। যদি না কপাল ফাটা রেজারতি রয়, নিজ দেশ রাখি বুঝি পরদেশী হয়! পরবাসী পরবাসী কান্দে তনুমন, হেলায় ভুলেছো পথ কহে গুরুজন। এমত বংশের লোক ডেকে কয় ওরে, যা ফিরি, অজ্ঞান তুই, যা রে ফিরি ঘরে! আমি কী ফিরিবো আর নাই কোনো পথ, উজাইয়ের মাছ আমি পুষেছি অপথ!

 কুক্ষণে ধরেছি মায়া বিদেশ বিভ্রম, পয়ার প্রবন্ধ রচে মুজিব ইরম।

 

লীলাসূত্র

শব্দ বড়ো যাদু জানে যাদু জানে গো!

দিবসরজনী আমি ফানা হয়ে থাকি। আসবে বলে আমার কুঞ্জে কান্না ফেরি করি। নৌকাবিলাসে হঠাৎ মত্ত হয়ে দেখি, বিরহে কেটেছে দিন শব্দ শব্দ জপি! আর কি হবে না নদী জলে টলমল? আর কি হবে না লীলা বন্ধুসহচর? তাহাকে দেখিতে মন রজনী পোহায়, নাজানি কার কুঞ্জে থেকে আমাকে কাঁদায়!

তোমাকেই নিত্য জপে নির্ধনিয়ার ধন, ইরম করিছে সঙ্গি রজনীরোদন।

 

 

মনোবাস

মনোবাসে আছি আমি মনোবাসে আছি, অজানা স্রোতের টানে নাই হয়ে বাঁচি\ দেশছাড়া খেশছাড়া ভিনবাসী মন, হারানো মানুষ আমি করহ যতন\ পাঁচবেলা মজে থাকি জপি প্রেমনাম, নিন্দুকেরা দেখে শুধু দেহভরা কাম\ ইবাদতি করি মনে নিত্যানন্দ থাকি, দেখিয়া অনেক ছায়া এই কায়া আঁকি\ কাছে থাকি পাশে থাকি বাওসারা লোক, আমার হয়েছে দেখো মায়ার অসুখ\ তুমিও রাখিও কাছে রাগঅনুরাগে, আমাকে বাঁধিও তুমি মালকোশ রাগে\ ভাবঘোরে ঘিরে রেখো যতো ভুলচুক, ইরম করিছে দাবি এই মায়া হোক\

 

আমার নাম মুজিব ইরম

আমি একটি কবিতা বলবো

মুজিব ইরম-এর জন্ম মৌলভীবাজার জেলার নালিহুরী গ্রামে, পারিবারিক সূত্র মতে ১৯৬৯, সনদপত্রে ১৯৭১। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: মুজিব ইরম ভনে শোনে কাব্যবান ১৯৯৬, ইরমকথা ১৯৯৯, ইরমকথার পরের কথা ২০০১, ইতা আমি লিখে রাখি ২০০৫, উত্তরবিরহচরিত ২০০৬, সাং নালিহুরী ২০০৭, শ্রী ২০০৮, আদিপুস্তক...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..