মুনশাইন এক পেগ

এইচ বি রিতা
কবিতা
Bengali
মুনশাইন এক পেগ

মৃন্ময়

(ক)

একটা বেলী ফুলের মালা
আর এক মুঠো সোনালী আবেশ
আমার সিঁথিতে ছড়িয়ে দাও
তারপর,
তোমার বাউন্ডুলে এলো চুলের গন্ধ শুঁকে শুঁকে
মরে যাই ।

(খ)

অশ্লীল অভিলাসে ধূর্ত চোখ
নিবিড় আলিঙনে লজ্জ্বার মাথা কাটে।
জৈব ক্ষুদার ঘাম তিরতির করে মগজ বেয়ে গ্রীবায়,
চুম্বনের অনাধিকার চাষে হ্নদয় ক্ষতবিক্ষত
জলের সংগমে জলের তৃষ্ণা বাড়ে;
একবার ছুয়ে দাও মৃন্ময়, তারপর মরে যাই।

(গ)

বয়ঃসন্ধির বিপ্লবী আগুনে
নিষেদের প্রাচীর গুঁড়িয়ে, সহস্রবার
একটি সংসার দেবো বলে বুকের ভিতর জীবন্ত কষ্ট।
স্পর্শকাতর নিঃশ্বাসে বিষ ঢেলে,অগ্নিঝড়া উত্তাপে
প্রবল তৃষ্ণায় প্রেম জাগে মনে;
মৃন্ময়,তোমার বুকের উপর বসে আছি ভালবাসার তলোয়ার হাতে।

(ঘ)

একদিন পিপীলিকা হবো
তোমার বুকের জমিন মাড়িয়ে, এ প্রান্ত হতে ও প্রান্তে
ভোগবাদী সম্রাজ্ঞী হবো।
পাখি হবো,ঘাসফড়িং হবো, লজ্জ্বাবতী লতা হবো;
অপেক্ষায় পথ চেয়ে তীর্থের কাঁক হবো।
একদিন তোমায় ভালবেসে বেসে,
অন্ধকারে চিৎকার করে মরে যাবো।

(ঙ)

মায়ার সংসারে, তোমার স্পর্শহীন ছায়া
যেন জমিনে পুঁতে থাকা শত বছরের পুরনো শেকর।
বিপুল বিস্ময়ে পৃথিবীর দিগন্ত রেখায় অলিন্দ্য কষ্টনীলা,
হৃদয়ের সীমান্ত জুড়ে অনাদি কালের দহন!
শিবঅশ্রু হয়ে দুষ্প্রাপ্য রুদ্রাক্ষের মত,
ভালবাসা হয়ে তুমি
গড়িয়ে পরতে পরতে প্রেম জাগাও মনে।
মৃন্ময়, শুনেছি ভালবাসার আজ দারুন ক্ষরা।

 

মুনশাইন এক পেগ

অনাহুত বিভ্রান্তিতে আকাশ ছোঁয়ার অভিপ্সা ব্যত্যয় সময়ের নেশাগ্রস্ত ধুম্রজাল, নদীর উল্টোপথে বয়ে যাওয়া স্রোত টেনে ধরারবৃথা আস্ফালনে; ঘূর্ণয়নে পুরো নগরী ডুবে যায়।

অন্ধকার ঘেঁটে নিজ প্রতিবিম্ব দেখে কেঁপে উঠতেই বুঝে নেই বিষাদের রঙ বড় পানসে ধূসর। উড়ে যায় দুধ রঙ্গা বকের সারি; যেতেযেতে শূন্যতা পুতে রেখে যায় নগরীর বুকে।

অভাবী মানুষ গলা অবধী ঢেলে দেয় মুনশাইন মধ্যরাতে, নেশা জমে গেলে চোখের চারপাশে খেলা করে নগ্ন নর্তকীর দল! জীবনভোগে আর ত্যাগে সে কি বিরক্তিকর বিভ্রান্তি, পতনের নিজস্ব শব্দময়তায় একা একা জ্বলে যায় যে নগরী, তার চোখে কেবলনেশার জমকালো আয়োজন।

বিমর্ষ নগরী ক্রমশ নীল হয়ে উঠে বুক ছিড়ে ফিনকি রক্তপাতে নীল ধুয়ে লাল জলছাপ!
মুনশাইন অভ্যস্ত নগরী জানতো কি ম্যাথানল দখল করে ছিলো অপটিক নার্ভ সারারাত!

 

ফুলটি ঝড়ে গেল

ব্যাঙ্গাচীর খেলায় উন্মত্ত বিরহ শেষে
শিরিষের ডাল ভেঙ্গে,
সাদা ফুলটি ঝড়ে গেল ভীষণ উত্তাপে
সে রাত্রি ছিল ঘুটঘুটে কালো
আজন্ম লালিত ক্লান্তিতে একটি কুকুর;
শুধু গেয়ে গেল শেষ কীর্তনের গান।

তার গায়ে দগদগে ঘা ছিল
দুর্গন্ধময় লাবন্যতা আকাশ ফুঁটো করে গেল
তখনো কেউ তীব্র যন্ত্রনায়,
শব্দের সাথে শব্দ সঙ্গমে ব্যাস্ত ছিল
কেউ প্রেমিকার কামিজের বোতাম ছুঁয়ে
কেউ সিদ্ধি মাদকতায় বেসুরা জীবনের সুর খুঁজে;
বেঁচে ছিল।

চুপচাপ ফুলটি ঝড়ে গেল
ধূসর বিবর্ণ বেহাগের সুরে,
এক মুঠো ভাতের দাবী অন্ধকার ছাড়িয়ে গেল
লোকটি চুপচাপ মরে গেল।

 

দিকভ্রান্ত পথ

দুর্জ্ঞেয় পথের অনেকাংশ ক্ষননে নাভিমূল ছিঁড়া
পদ্ধপাতা সে
ঋতুর মতোই পরমায়ু বৃদ্ধিতে নিজেকে মেলে ধরে;
রাস্তায়, অফিসে, কোলাহলময় বাজার; রণক্ষেত্রে
ভাবুক স্বাধীনতা পেশীতে গুঁজে নিয়ে দিন শেষে
রাতের আঁধারে কষ্ট নদীর প্রশস্ততা দ্বিগুন বাড়িয়ে নেয়!
এমনি সে,
নষ্ট হয়ে যাবার সব উপকরণ ছিল যে হাতে
সে হাত কেবল হ্নদপিন্ড মুঠি করে চেপে রেখেছিল বুক
অতপর, আচমকা
বদলে গেল দৃষ্টপট
লড়াইয়ের অন্তিম স্পৃহাটুকু!
পোড় খাওয়া হ্নদয়ে একান্ত সংগোপনে
রয়ে গেল কিছু মায়া, অনুতাপ
এখন কেবল,
হামাগুড়ি দিয়ে বেঁচে থেকে পৃথিবীকে জন্মের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন
স্বাধ নেই, শ্লাঘা নেই, উচ্ছাসে ভরা মধ্য বিকাল নেই
তবু বেঁচে থাকা অবশেষে; খুব প্রয়োজন।

এইচ বি রিতা। কবি, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষক। জন্ম বাংলাদেশের নরসিংদী জেলায়। বর্তমান নিবাস কুইন্স, নিউইয়র্ক। তিনি নিউইয়র্ক সিটি পাবলিক স্কুল শিক্ষকতায় জড়িত রয়েছেন দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে। পাশাপাশি কাজ করছেন দৈনিক প্রথম আলোর উত্তর আমেরিকা ভার্সনে। এছাড়াও নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..