মৃত্যু ভেলা

মেহেরুন্নেছা
ছোটগল্প
Bengali
মৃত্যু ভেলা

সবে সন্ধ্যার সমাপ্তি শুরু হয়েছে। আঁধার ঘনিয়ে এসেছে চারদিকে। মাগরিবের আযান ভেসে এলো। কুলসুমের ব্যাথাবিহ্বল শীর্ণ মুখখানিতে চাপা নিঃশ্বাস। অজু করে নামাজে বসে সে।

ইদানিং মারাত্মক ঝিমুনিতে পেয়ে বসেছে তাকে। সারাবেলা ঘুমঘুম ভাব। অথচ বিছানায় পিঠ ছোঁয়ানো মাত্র ঘুম উবে যায়। এ এক অসহ্য যন্ত্রণা! শরীরের উপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই যেনো!

পলেস্তারা খসা দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে আধবোজা হয়ে আছে এখন । মুখটা উর্ধমুখী। বিশ্রী রকমের হা হয়ে আছে। নাক ডাকার শব্দ জানান দিলো, কুলসুম ঘুমের রাজ্যে বিভোর। পরনের আধময়লা মেক্সিখানা দেয়ালের জীর্ণতার সাথে মিতালি পাতিয়েছে।

কলিংবেল এর পুনঃপুন কর্কশ স্বর জাগিয়ে দিলো তাকে। আজকাল হঠাৎ কাঁচা ঘুম থেকে জাগলে নিজের অবস্থান ঠাওর করতে বেশ বেগ পেতে হয়। বুকটা ধুকপুক শুরু করে।

….কে…কে..?

….আমি!

….আমি কে?

…..আরে আমি!

রাগত স্বরে দরজার ওপার থেকে ছেলে রিশাদের প্রতিউত্তর এলো। দরজা খুলে দিলে রিশাদ গম্ভীর মুখে মায়ের দিকে না তাকিয়ে ঝড়ের বেগে তার কক্ষে চলে যায়।

কুলসুম দেয়াল ঘড়ির দিকে ফ্যাকাসে চোখে তাকায়। রাত প্রায় বারোটা। তার মানে মাগরিবের পর দীর্ঘ সময় সে নামাজের বিছানায় ঘুমিয়ে ছিলো। মনে পড়লো আজতো রান্না হয়নি। রাতে কি খাবে ভাবতেই শরীরটা আরো কাঁপতে লাগলো। আগামীকাল দুপুরের খাওয়ার যোগাড়ও রাতেই করতে হবে।

কুলসুম বেসিনে গিয়ে কল ছেড়ে মুখটা ভালো করে ধুয়ে নেয়। এক্ষুণি রান্নাঘরে ঢুকতে হবে।

রান্নাঘর মানে তার শোয়ার ঘরও বটে। ময়লা চাদর বিছানো খাটে নোংরা মশারি আধাআধি গুটানো। তেল চিটচিটে বালিশ দুটো ঘরের দারিদ্র্যকে উন্মোচন করে যাচ্ছে। একপাশে মেঝেতে পাটি বিছিয়ে মা-ছেলে খাওয়া-দাওয়ার পর্ব সারে। তবে এখন আর ছেলে খাওয়ার সময় মায়ের সান্নিধ্য চায়না। এমনকি প্রয়োজন ছাড়া কথাও বলেনা। রিশাদের সহপাঠীরা সব কলেজে পড়লেও রিশাদ নবম শ্রেণীতে ওঠার পর লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে।

পাশের একচিলতে কক্ষে রিশাদ থাকে। একদা ছোট্ট রিশাদকে নিয়ে আদরে-যত্নে কুলসুমের দিন কেটে যেতো। সেই দিনগুলো এখন নিছক রূপকথার গল্প বৈ কিছু নয়।

কি রান্না করবে ভাবতে ভাবতে পুরনো টিনের কৌটায় কয়টা ছুরি শুটকি পেলো। তরকারির ঝুড়িতে তিনটা বেগুন আছে। বেগুনে পোকা না থাকলেই হলো। আর সামান্য মশুরের ডাল চড়াবে। শরীরটা ভীষণ দুর্বল লাগছে। কতক্ষণ পরপর হেঁচকি উঠছে।

মেঝেতে পা ছড়িয়ে কুলসুম বেগুন কাটতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। হাত-পা আর চলেনা। বিকেলের ঘটনা মনে হতেই মাথাটা ঝিম মেরে ওঠে। মনটা তড়পায়। চোখের পানি ওড়নার আঁচলে মুছে।

শীতের রাত। রান্না শেষ হতে একটার উপর বেজে গেলো। আশে-পাশে ঘরের বাতি নেভানো। জেলা শহরের মানুষেরা এতো রাত অবধি জেগে থাকেনা। কেবল রাস্তার ধারে পৌরসভার বাতিগুলো ঘন আঁধারের ভয়াবহতাকে মুচকি হাসিতে লঘু করে চলেছে। কোথায় একটা জমকুলি গা হিম করা সুরে ডাকছে। কুলসুমের কাছে এ ডাক শোকের আগমনী বার্তা; চল্লিশোর্ধ কুলসুমের আহাজারির মতোই।

কুলসুম ছেলের কক্ষে উঁকি দেয়। রিশাদের মুখ বেয়ে পড়া লালায় বালিশ ভিজে একাকার। রোগা লিকলিকে শরীরখানায় চোখ-মুখ গর্তে বসে গেছে। শ্রীহীন-অসুস্থ সন্তানের মুখাবয়ব মাতৃহৃদয়কে খন্ড-বিখন্ড করতে লাগলো। ছেলের গায়ে অনেক মশা। লেপটাও গায়ে দেয়নি। পুত্রের পদযুগল খাটে উঠিয়ে শরীর জুড়ে লেপ মুড়িয়ে দিলো। মশারি টাঙ্গাতেও ভুল করলোনা।

যে সন্তান একদা বেঁচে থাকার ভেলা হয়ে এসেছিলো সে সন্তান আজ সাক্ষাৎ মায়ের মৃত্যুর ভেলা। রিশাদ পাড়ার খারাপ ছেলেদের সাথে মিশে নষ্ট হয়ে গেছে।

গাঁজা-ইয়াবা-লাম্পট্যপনা এসবই তার নিত্যসঙ্গী।

মায়ের কাছে প্রায় দিন সে টাকা চায়। টাকা দিতে দিতে কুলসুম নিঃস্ব। একপর্যায়ে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সে মাকে লাথি মারে, শলার মুঠা দিয়ে আঘাত করে, ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। ঘরের আসবাবপত্র ভাঙ্গচুরতো আছেই।

কুলসুমের ভাইয়েরা ভাগিনাকে নেশার ছোবল থেকে মুক্ত করতে অনেক চেষ্টা করেছে। বহুবার মাদক নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে চিকিৎসা করিয়েছে। কিন্তু চিকিৎসা শেষে রিশাদ আবার আগের মতো হয়ে যায়। পাগলামি করে।

দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে কুলসুম। ভাবছে রিশাদকে খেতে ডাকবে কিনা। কুলসুম জানে ডেকে লাভ নেই। কিছুক্ষণ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগে অবশেষে নিজেকে নিবৃত্ত করলো। ডাকতে গেলে হয়তো এতো রাতে আবার ঝামেলা শুরু হতে পারে।

কুলসুম নগেনপুর হাইস্কুলে মাস্টার রোলে চাকুরী করে। রিশাদের বাবা একই স্কুলে গণিতের শিক্ষক ছিলো। রিশাদ হওয়ার একমাসের মাথায় রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়। বড় ভালো লোক ছিলো রিশাদের বাবা। বিয়ের পর কুলসুমের মনে হয়েছিলো, আদরে-যত্নে সুখের সাগরে ভাসছে সে।

রিশাদকে নিয়ে রিশাদের বাবার ছিলো অসম্ভব রকমের মাতামাতি। পুত্র হওয়ার ছয় দিনের মাথায় ‘ছদিয়া’ অনুষ্ঠানে স্কুলের সবাইকে দাওয়াত করেছিলো। সে এক লংকাকান্ড বটে!

সুখগুলো ঝাঁক বেঁধেই এসেছিলো; আবার ঝরা পাতার ন্যায় ঝরেও গেলো! সন্তান কোলে কুলসুমের আশ্রয় হয় বাবার বাড়ি। বাবা করিম শেখ চেয়েছিলো নাতিকে নিজেদের কাছে রেখে কন্যাকে পুনরায় পাত্রস্থ করতে। কিন্তু কুলসুম সাফ জানিয়ে দেয়, বিয়ে মানুষের জীবনে একবারই হয়। রিশাদকে সাগরে ভাসিয়ে তার পক্ষে বিয়ের পিঁড়িতে বসা সম্ভব নয়। এই সন্তান আঁকড়েই কুলসুম বাকী জীবন পার করবে।

নগেনপুর স্কুল কর্তৃপক্ষ রিশাদের বাবার প্রতি সদয় হয়ে কুলসুমকে অফিস সহায়কের চাকুরী দেয়। আর কুলসুমের বাবা জীবিত থাকাকালীন মেয়েকে দুইকক্ষের এই আধাপাকা ঘরটি দিয়ে যায়। ভাই-ভাবীরাও লাউ টা, কুমড়ো টা দিয়ে বোন-ভাগিনাকে সহযোগিতা করে।

মাসখানিক আগে রিশাদ মায়ের কাছে আবদার করেছিলো হোন্ডা কিনবে। কুলসুম অপারগতা জানায়। এতো টাকা সে কোথায় পাবে! কিন্তু রিশাদ নাছোড়বান্দা। এ নিয়ে ঘরে তুমুল ঝগড়া-ঝাটি-মারা-মারি। শেষে টিকতে না পেরে কুলসুম আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধার আনে। ছেলের হাতে হোন্ডা কেনার জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা তুলে দেয়।

টাকাটা পেয়েই রিশাদ লাপাত্তা। কোথায় যে হারিয়ে গেলো কেউ খোঁজ দিতে পারলো না।! তিনদিন পর এলোমেলো চেহারা নিয়ে ফিরে আসলো। ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে কুলসুমের চৈতন্য বেদনার ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়ে।

রিশাদের নিঃশ্বাসে সে অন্ধকারের নিনাদ শুনতে পায়। কখন কি ঘটে এই দুশ্চিন্তায় থাকতে থাকতে তার শরীরে কগাছি হাড় ছাড়া এখন আর কিছুই দৃশ্যমান নয়।

কুলসুম জিজ্ঞেস করে, ” কই ছিলি?”

রিশাদ কথা বলেনা। ক্ষুব্দ ভঙ্গিতে চোখ কটমটিয়ে মায়ের দিকে তাকায়। ছেলের উগ্র হাবভাব দেখে কুলসুমও কথা বাড়ায়না। পরে জানতে পারে, রিশাদ বন্ধুরাসহ কক্সবাজার গিয়েছিলো।

আজ বিকেলের ঘটনায় কুলসুম আরো মুষড়ে পড়ে। অসহায়ত্ব ঘিরে ধরে তাকে। সে তখন মাত্র স্কুল থেকে ফিরেছে। এমন সময় ঘরের পাশে অদূরে ব্যাপক হৈ-হুল্লোড়! কেউ কাউকে মারছে। কান্নার ধরণে মনে হচ্ছে রিশাদের কান্না। আসলেও তাই! কুলসুমের বড় ভাই হাজী আতাউল্লা রিশাদকে অনবরত মারছে। মারধোরের তীব্রতা কুলসুম ঘর থেকেই শুনতে পাচ্ছিলো। রিশাদ নাকি কার দামী মোবাইল চুরি করেছে। আতাউল্লার কাছে নালিশ এসেছে। রগচটা আতাউল্লার মেজাজ খারাপ হয়। রাগে গরগর করে নেশাখোর ভাগিনার উপর সে হামলে পড়ে।

কুলসুম দৌড়ে যায় ছেলেকে রক্ষার জন্য। চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। ঝাঁপিয়ে পড়ে ছেলেকে ছুটাতে। ভাইয়ের পা জড়িয়ে আকুতি-মিনতি করে।

অবশেষে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে রিশাদকে আতাউল্লার হাত থেকে ছাড়িয়ে নেয়। রিশাদকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে ঘরে ঢুকায়। কুলসুমকে বলে, দরজা লাগিয়ে দিতে।

কুলসুম দরজা লাগালো বটে ; কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই রিশাদ দরজা খুলে বেরিয়ে যায়। শোকাচ্ছন্ন কুলসুম আজ আর ছেলেকে আটকাতে চেষ্টা করেনা। কেবল কম্পিত হাতে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে দেয়।

বাইরের সুপ্ত পৃথিবী বড্ড বেশি নির্বিকার। কুলসুমের উত্তাপহীন দেহ ক্রমাগত কুঁকড়ে যাচ্ছে। ভেতরে চলছে কঠিন সংগ্রামের নীপিড়ন! ভাত খেতে গিয়ে মুখে রুচলোনা। না খেয়েই কুলসুম শুয়ে পড়লো।

সারাটা রাত কুলসুমের চোখে একদন্ড ঘুম ভর করেনি। চতুর্দিকে সে অন্ধকারের নৈরাজ্য দেখছে। স্বপ্নেও ভাবেনি জীবন এই পর্যায়ে এসে ঠেকবে। নৈরাশ্য তাকে গ্রাস করে ফেলেছে। অস্পষ্টভাবে বুকটা বারবার কাঁপছে। সে হেঁটে চলেছে এক তপ্ত মরুভূমির মাঝে। কর্তব্যের ডাকে নয়, বেঁচে থাকার আকুলতায় নয়, নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাস তাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে চলেছে। কুলসুমের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে, এখানেই শেষ নয়। তার জন্য ধেয়ে আসছে আরো সহস্র কান্না।

বিপদ যতই জমে উঠুক না কেনো জীবনের চাকা চলতে থাকে। রাতের প্রবাহমানতা কুলসুমের অনিদ্রাকে ভ্রূক্ষেপ না করেই ভোরের মোহনাকে আলিঙ্গণ করে। বেলা বাড়ে। দুপুর গড়ায়।

কুলসুমের হৃদয় যেটা নিয়ে শংকিত ছিলো বিকালে তাই ঘটে গেলো। রিশাদ আবার মায়ের কাছে দশহাজার টাকা চাইলো। এবারও সে হোন্ডা কেনার অজুহাত দেখায়। পঞ্চাশ হাজার টাকায় নাকি কুলোবেনা। তার আরো দশহাজার টাকা চাইই চাই।

কুলসুম রাগে ফেটে পড়ে। অসহায়ের মত কাঁদতে কাঁদতে ছেলের কাছে অনুনয়-বিনয় করে বলে, তার পক্ষে আর একটা টাকাও দেয়া সম্ভব নয়।

কে শোনে কার কথা! ছেলে শলার মুঠা দিয়ে মাকে অন্যান্য দিনের মত মারতে শুরু করে। আজ যেন কুলসুমের কি হলো! অন্য সময় সে পাড়া-প্রতিবেশীর কথা ভেবে কিংবা মান-সম্মানের কথা ভেবে চুপ করে থাকে। আজকে সবাইকে ডাকা-ডাকি শুরু করলো। মা-ছেলের চেঁচামেঁচি শুনে মানুষজন এগিয়ে এলো। বড়ভাই আতাউল্লাও দৌড়ে এলো। এসেই রিশাদকে কোথা থেকে একটা রড দিয়ে পিটানো শুরু করলো। সে এক কেয়ামত! মায়ের কান্না, সন্তানের চিৎকার, মামার উচ্চস্বরে গালিগালাজ, পাড়াপ্রতিবেশীর হট্টগোল!

আজকেও পাড়া-প্রতিবেশিরা রিশাদকে টেনে বের করে দূরে নিয়ে যায়। একসময় এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির যবনিকাপাত ঘটে। থমথমে ভাব স্তিমিত হয়ে আসে।

আতাউল্লা বোনের দুর্গতিতে দিশেহারা। তার সন্তানাদি নেই। তবে রিশাদকে নিয়ে বোনের আর্তনাদ দেখে মাঝে মাঝে সে নিজেকে এই বলে প্রবোধ দেয়, অবাধ্য সন্তানের চেয়ে নিঃসন্তান থাকা ভালো।

রাতে আতাউল্লার বউ ননদের জন্য ভাত-তরকারি নিয়ে আসে। টিফিন-ক্যারিয়ার হাতে কুলসুমের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। পুরো ঘর অন্ধকার। সামনের মেহেদী গাছটা নিঃসঙ্গ ভূতুড়ে যেনো। কুলসুম হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে। রিশাদের নাম ধরে, কুলসুমের নাম ধরে অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করলো। শেষে টিফিন-ক্যারিয়ার সিঁড়িতে রেখে দরজায় নক করতেই খুলে গেলো। এতোক্ষণ সে ভেবেছিলো দরজা বন্ধ। আসলে দরজা আবজানো ছিলো। ঘরে ঢুকে সুইচে চাপ দিতেই আতাউল্লার বউ যা বুঝার বুঝে গেলো। নামাজের বিছানায় কুলসুম দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছে। মুখে প্রচুর ফেনা! পাশেই মুখ খোলা একটা বোতল কাত হয়ে পড়ে আছে। বোতলের মুখটা খানিক দূরে।

পরদিন পাড়া-প্রতিবেশীরা দেখলো, কুলসুমের লাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মসজিদ মাঠ থেকে। মায়ের লাশ বহনকারীদের সাথে সামনের কাতারে রিশাদও আছে। চোখ-মুখ ফোলা। কান্নার ছাপ সারা মুখে।

বিকালে কবর দিয়ে এসে খালি ঘরে মায়ের কথা বলে চিৎকার করে কান্না শুরু করলো। প্রতিবেশিরা ভাবলো, তবুও যদি ছেলেটা ভালো হয়। রিশাদ মামাদের ঘরেই কদিন খাওয়া-দাওয়া করে। তারপরে সে আতাউল্লার নিষেধ সত্ত্বেও দূরে কোন জায়গায় রাজমিস্ত্রীর কাজ নেয়। প্রতি ভোরে কাজে যায়, একদম রাতে খেয়ে-দেয়ে বাসায় ফেরে। আতাউল্লা ভাগিনার পিঠ মুছে আর বলে, “হায়রে ভাগিনা! মারে কবরো শোওয়াইয়া সেইতো পথে আইলি!”

মাসখানিক পরে একদিন আতাউল্লা একটা ফোন পেয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে। ফোনটি এসেছে থানা থেকে। শ্যামপুর বাজারে নাকি একজন কিশোরকে মোবাইল চুরির দায়ে জনগন পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। পুলিশ জানতে পেরেছে এই কিশোরের অভিভাবক আতাউল্লা। পুলিশ আতাউল্লাকে একবার থানায় এসে লাশ সনাক্ত করার অনুরোধ জানায়।

আতাউল্লা আতঙ্কিত হয়ে পড়লো। কি বলছে পুলিশ! আতাউল্লা রিশাদকে ফোন করে। ফোনটা বন্ধ পায়! বিধ্বস্ত আতাউল্লা থানার দিকে ছুটে। থানায় গিয়ে সাদা কাপড় সরিয়ে যার মুখ দেখলো সে মুখটা সত্যিই রিশাদের! কিশোর ভাগিনার মুখখানাতে জায়গায় জায়গায় কালশিটে দাগ। ঠোঁটের কিনারায় রক্ত কালচে হয়ে বসে গেছে।

মেহেরুন্নেছা। গল্পকার ও শিক্ষক। জন্ম ও বাস বাংলাদেশ। পেশাগত জীবনে তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ