ফিরে এসো
আমার বাবা ছিলেন অত্যন্ত সাহসী একজন লড়াকু মনের মানুষ।শত অভাব অভিযোগেও তাকে কোনোদিন ভেঙ্গে…..
যারা দ্বন্দ্বে বাঁচে চিরকাল!
কাঁচের বন্ধ ঘরে সারাদিন যাপন। অস্পষ্ট মুখ! অসম্পূর্ণ আবেগ। বাহ্যিক আদর গুলোকে আড়াল করে রেখেছে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কেবিন আর বৈভবচেতনা। যন্ত্রণার কথা ভিজিয়ে দেয় মরসুমি বৃষ্টি। তবু ওরা আমায় আর স্পর্শ করে না। ইচ্ছে, জীবিকা আর পরিবার এই আজব ত্রিকোণমিতির মাঝে দোদুল্যমান সদ্য তিরিশে পা দেওয়া যুবক।কি ভালোই না হত এই তিনটে বিন্দু যদি সমরেখ হত। যত বড় হওয়া যায় তত বেশী দূরত্ব বাড়ে অতীতের সাথে। অস্বচ্ছ হয়ে পড়ে দর্পণ। স্মৃতিভার আড়ষ্ট করে মনকে। সেকেন্ড, মিনিট, দিন ও বছরের অভিলেখ ছাড়িয়ে সেই দূরত্ব স্পর্শ করে আলোকবর্ষ। এই স্থানাঙ্কেই কেটে যাচ্ছে সময়। মুক্তিবেগ জোগাড়ের চেষ্টা করছি ঘুমোতে যাওয়ার আগে। ঘুমন্ত লাশের স্বপ্ন কখন যে গড়ে আর কখন যে ভাঙে তা বোঝা একপ্রকার দুঃসাধ্য। সকাল হতেই সাজানো স্বপ্নগুলো অদৃশ্য হয়ে যায়। পরিধির ভেতর ঢুকে যেতে হয় রাত্রের দামাল কল্পনাগুলোকে। আরেকটা দিন। যন্ত্রঘরে বন্দক রাখতে হয় সময়। জীবনটা আসলে কোন অদৃষ্টের হাতে তৈরি হওয়া নির্ভুল প্রোগ্রামিং। চাইলেই সব কিছু করা হয়ে ওঠে না। সত্যি কি তাই! ব্যতিক্রম কি কিছু নেই! না কি সবাই সেই সাহস অর্জন করতে পারে না। এই অনুবর্তনের অংশভোগী তো আমরাই। স্ক্রিন ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে খুন হয়ে যাওয়া আমারই ছায়াজাত চরিত্র। আগুন চোখে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে।নিস্পলক ও নিরাকার। এই বেচারার না আছে মৃত্যু না আছে জীবন। আমি ওকে সান্ত্বনা দিই এই বলে “এমনটাই তো হতে চেয়েছিলাম!”
দুই
নিজের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে অসত্য বলা যায় না। প্রতিবিম্ব ঠিক ভুলের পার্থক্য করে নিতে জানে। আবরণ সরিয়ে বেরিয়ে আসে বাস্তব। তবে সত্যি কি এমনটাই চেয়েছিলাম! হ্যাঁ বা না এ সব কিছুর উত্তর দেওয়া যায় না। জ্যামিতিক গোলযোগে আমাদের মন ছিন্ন ভিন্ন হয়ে ছিটকে পড়ে আছে এই গোলার্ধের এদিকে ওদিকে। সব টুকরোকে এক জায়গায় করে নিয়ত রূপ দেওয়া কি আর সহজ কাজ! নিজেকে ভেঙে চুরে নূতন ভাস্কর্য তৈরি করতে যে সুবিশাল হৃদয়ক্ষরিত বেদনা সহ্য করতে হয় সেই অনির্বচনীয় ক্ষমতার অধিকারিই বা ক জন হয়! মন সহজাত ভাবে চঞ্চল। স্থিতি তার ধর্ম নয়। এক অধ্যায়ে বেশী সময় কাটানো সহ্য হয় না মনের। গুড়োবাতাস অস্পষ্ট করেছে দৃষ্টিপথ। নিজের শহর ডাকছে হু হু করে। তবে নিজের শহরের থেকে আগের মত প্রশ্রয় আর পাই না। মুখোশটা চামড়ার সাথে এমন ভাবে আটকে গেছে আজকাল ভ্রম হয় কোনটা মুখ আর কোনটা মুখোশ। ভালো থাকার সমার্থক শব্দ গুলো আসলে পাল্টে যায় সময়ের সাথে। ক্রমশ অনুভব করছি মনের বাইরে আর কিছু নেই। মন কখনও অলৌকিক ক্ষমতার ভরকেন্দ্র আবার কখনও অস্তিত্বের দুর্বলতম স্থান। সেই মন নামক অদৃশ্য বাহনে সওয়ার হয়ে আমি ছুটে বেরিয়েছি এক শহর থেকে অন্য শহরে। এক মানুষ থেকে অন্য মানুষে। এক পোশাক থেকে অন্য পোশাকে। এক প্রেম থেকে অন্য প্রেমে। কেমন আছ মেঘবালিকা!
তিন
জমতে জমতে পাললিকের ভাজে হারিয়ে যায় অভিমানগুলো। ভুলে থাকাটাও তো একটা অভ্যেস। সমুদ্রস্রোতে মিশে যায় শেষ সময়ের অধঃক্ষেপ গুলোও। চাইলে সম্পর্ক সহজ নদীর মত। আবার চাইলে সম্পর্ক রুক্ষতম পাহাড়ের ঢাল। তবে ভুলে থাকাটা কোন জটিলতম রোগের সাময়িক প্রতিস্থাপন মাত্র। নিজের সাথে মুখোমুখি হলেই সেই আবৃত স্মৃতিদাগ বেরিয়ে আসে। নরম ভাবে মিশে যায় শরীরে। আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয় মনের দুধার। এক ছাদ, এক সংসার, এক উঠোন পরিবৃত করে থাকত যে বাগান সেখানে এখন পলাশ পোড়া গন্ধ। আঙুলগুলো এখনও ছুঁয়ে আছে সাংসারিক চিতাভষ্ম। মেরুদূরত্ব তুচ্ছ মনের দূরত্বের কাছে। মাঝরাত্রের বিভাজিকা বেয়ে নেমে আসে গভীর রাতের কক্ষচ্যুত কথাদের স্রোত। মানুষের মৃত্যু আছে। কথাদের নেই। প্রিয়তম অনুভূতি গুলো তীব্র গতিতে ছুটতে থাকে চতুষ্কোণের ভেতর। স্মৃতির প্রাচীরে ধাক্কা খেয়ে বারবার ফিরে আসে আমার কাছে।প্রতিফলনের নির্দিষ্ট সূত্র আছে। আমরা সবাই সেই সূত্রের কাছে বন্দক রেখেছি নিজেদেরকে। তীব্র গতিশক্তিতে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। মেঘবালিকা ক্রমশ জীবন্ত হতে থাকে। পর্দা অতিক্রম করে সম্পূর্ণ মনটাই দখল করে নেয় সে। কিউবিজমের আর্টের মত প্রেমটাও তো বিশেষ অনুভূতি গুলোর থ্রি ডায়েমনশনাল ইকুইভ্যালেনট। সেই বিশেষ মেঘবালিকারা কি অত সহজে হারিয়ে যায় কৃষ্ণগহ্বরের ভেতর!
চার
শুধু কি মেঘবালিকারাই হারিয়ে যায়! এই যে এক বুক জলে ডুবে যাচ্ছে পরিবারের অলিন্দ নিলয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সম্পর্কগুলো। যেন আমাদের একেকজনকে ঘিরে একটি করে নির্দিষ্ট চক্রব্যূহ রয়েছে। শৈশবের পরিচিত চেহারাগুলো বয়স বাড়ার সাথে সাথে ক্রমশ ঝাপসা হয়ে গেল। কাষ্ঠদহনের তাপে পুড়ে গেল অজস্র সর্বনাম। শুকনো গাছের তলায় বসে একা একাই করছি কালযাপন।শব্দকোষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে একেকটা অক্ষর। যৌথ থেকে নিউক্লিয়াস।তারপর একসময় সেই নিউক্লিয়াসের আকর্ষণটাও ফুরিয়ে আসে। ইলেকট্রনগুলো বেরিয়ে যায় কক্ষপথ থেকে। তারা ছড়িয়ে পড়ছে দেশ বিদেশের বিভিন্ন শহরে।জীবনের কারণে। জীবিকার কারণে। সমাজ একে ডায়াস্পোরা নামেই জানে। ক্রমবিভাজিত হতে হতে একসময় ছিঁড়ে যায় বন্ধনগ্রন্থি গুলো।কোন অখ্যাত শহরের ছোট ফ্ল্যাটবাড়িতে শেষ নিশ্বাস ফেলে একটা প্রজন্ম। খরস্রোতা এভাবেই ভাসিয়ে নিয়ে যায় টুকরো কাঁচচূর্ণগুলো। উইকএন্ডে বসে আমি হিসেব কষে মিলিয়ে নিই ভাজ্য ভাজকের টানাপোড়েনে প্রায় ফুরিয়ে যাওয়া অবশেষগুলোকে।
পাঁচ
পাথর ক্ষয়ে ক্ষয়ে বেরিয়ে আসে একেকটি মহা নির্বাণের গল্প। শতাব্দী প্রাচীন প্রস্তর খণ্ড লিপিবদ্ধ করতে থাকে আধুনিক জীবনের শিলালিপি। এগুলোও পুরনো হবে একদিন। দিন ছোট হয়ে আসছে। হেমন্ত মিশে গিয়েছে শীতে। কর্মযোগীদের ক্লান্ত হতে নেই। শিরা প্রশিরায় যে দ্বন্দ্ব চলছে সে খবর রাখে কে! সবকিছুই এখন মাপা হয় পারফরম্যান্সের প্যারামিটারে। বর্ষার সময় যে খরস্রোতা এসে সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল সে ও এখন শান্ত। অশান্তি চিরস্থায়ী নয়। শান্তিও নয়। এ এক অসীম পর্যাবৃত্ত। মুহূর্তের বাস্তুখোপে মন খারাপ গুলোকে লুকিয়ে রাখি। এ মেট্রো শহরের জন সমুদ্রে আমিও তো এক ক্লান্ত পদাতিক। সবটুকু আয়ু খরচ করে বের করে আনি সাফল্য। সাই সাই করে বাড়তে থাকে অ্যাপ্রাইসাল স্কোর। দিনান্তে আমরা সবাই যেন একটা প্রোডাক্ট। প্রবল ঘূর্ণির মধ্যে সাজিয়ে রাখি প্রেমিকার আদর। লুকিয়ে রাখি অসময়ের বলিরেখা। জিভের তলায় রেখে দিই মনভোলানো অ্যানটাসিড। মাস ফুরলে সেই ছোট ছোট ক্ষয় গুলো রূপ নেয় একটা বড় সংখ্যায়। শেষ তারিখে মোবাইলে একটা বিপ শব্দ প্রশমিত করে দেয় সারা মাসের এই অনিয়ত অশান্তি গুলোকে। অথচ এই সংখ্যায় পৌছতে গিয়ে অ্যালজাইমারসে আক্রান্ত মাকে দেখতে যাইনি প্রায় ছ মাস হল। মেঘবালিকাকে চিঠি লিখিনি একবারও। এককালে যেগুলো ছিল নিতান্ত অবহেলা যোগ্য ফাটল, সে গুলো দিয়ে বেরিয়ে আসছে ফুটন্ত লাভাস্রোত। পেরিয়ে গিয়েছি হাইবারনেশনের শেষতম পর্যায়।
আমার বাবা ছিলেন অত্যন্ত সাহসী একজন লড়াকু মনের মানুষ।শত অভাব অভিযোগেও তাকে কোনোদিন ভেঙ্গে…..
চৌদ্দ পনেরো বছর আগের কথা; আমি বসে আছি একটি দোকানে, দোকানটি মূলত আমাদেরেই। দোকানের সামনে…..
ভার্সিটির বাস ধরতে হয় আমাকে খুব সকালে। বাড়ি থেকে একটু হেঁটেই রিকসা। তারপর বাস। হাঁটা…..
১৮ মার্চ ২০১৯ মধ্যরাত! চারদিক অন্ধকারে ঢেকে আছে শুধু বাড়ির চারিপাশে বিদ্যুতের বাল্বগুলো জ্বলছে তাদের…..