মেঘ কথা দিয়েছিল

চৈতালী মুখার্জী
কবিতা
Bengali
মেঘ কথা দিয়েছিল

সূর্য্যমুখী

টিপটিপ বৃষ্টি ঝরে পড়ে আমার চোখে মুখে।
বড়বড় ফোঁটা চিকচিক করে।
বড় ভালবাসি আমি বৃষ্টি।
দু হাত পেতে নিই অঞ্জলী ভরে।
তারপর ঢেলে দিই একটু একটু করে,
জুঁই, চামেলি, মল্লিকার গায়ে।
বলি নাও আরও সুন্দর হও।
চমকে উঠে সুর্য্যমুখী বলে না, না, আমায় দিও না।
জিনিয়াও বলে তাই।
ডালিয়াও বলে আমায় দিও না ভাই।
আমার সব রঙ যদি ধুয়ে যায়!
আমি হাসি, বলি না,না, ভয় পেওনা।
আমার ভালবাসার অঞ্জলীতে,
তোমরা হবে আরও রঙিন, আরও সজীব তাই।
নতমুখে ডালিয়া বলে বেশ তবে দাও।
জিনিয়া বলে তাই হোক দাও রাঙিয়ে আমায়,
তোমার ভালবাসায়, বৃষ্টি ছোঁওয়ায়।
বলে অঠে সূর্য্যমুখী, ক্ষমা কর আমায়।
আমি রইবো সূর্য্যের প্রতীক্ষায়।
আমার রূপ, আমার রঙ, শুধু তার ছোঁওয়ায়।
বৃষ্টি দিওনা আমায়।
জীর্ন, শীর্ন মরি তার প্রতীক্ষায় সেও ভালো।
দয়া করো বৃষ্টি দিওনা আমায়।

 

নারী

নারী তুমি কবিতা, শিল্প শিল্পীর।
নারী, জগৎব্যাপী বিস্তার তোমার।
যতদূর চোখ যায় প্রসারিত হয় ভাবনা।
প্রসারিত সে সুদূরে তোমার ছায়া।
তুমি সুন্দর, তুমি লাবণ্যময়ী, তুমি মায়া।
গর্ভে ধারণ করে যে বীজ তুমি ঢেকে রাখো।
সকলের আড়ালে, সযত্নে, লালন,পালনে কর সম্পুর্ণ।
যতদূর দৃষ্টি যায় এ চরাচরে!
বিস্তারিত সাম্রাজ্য তোমার!
কে বলে, এ ধরিত্রী পুরুষের অর্দ্ধেক ভাগ!
তোমার নগ্ন সৌন্দর্য্য কোথাও বাসনা, কোথাও কামনা,
কোথাও শিল্প, কোথাও সাধনা।
যে গাছ ফুল দেয়,ফল দেয়,
যে নদী জল দেয় তৃষ্ণার।
সে মা।
মাতৃরূপে জগতের কল্যাণ,
অক্লান্ত সাধনা।
নারী তুমি যুগে, যুগে অধরা কল্পনা,
তাই নিত্য ধরার বাসনা।

অস্তিত্ব

আমার অস্তিত্বটাকে শিরদাঁড়ায় বয়ে বেড়াই।
নুয়ে পড়ে শিরদাঁড়া, তবু পথ চলি।
ঝুঁকে পড়ি ভাড়ে
মুখ থুবড়ে পড়ে যাওয়ার ভয়।
হোঁচট খেতে,খেতে আবার উঠে দাড়াই।
একটু নড়ে চড়ে আবার বোঝাটাকে তুলে নিই ওপরে,
এক পা,দু পা করে এগিয়ে যাই,
লক্ষ্য অস্পষ্ট তবু আছে।
জানিনা কোথায় ?
কিসের টানে বয়ে চলি নিজের অস্তিত্বটুকু!
প্রমাণ করি জগতের বুকে আমি আছি।
ঝুঁকে পড়া পিঠে, তবু আছি নিজের অস্তিত্বটুকু বাঁচাতে।
দিনরাত লড়াই করি নিজের সাথে।
পৃথিবীর কোনও মাথাব্যাথা নেই তাতে।
সামান্য অস্তিত্বটুকু হারিয়ে গেলে,
হারাবেনা বিশেষ কিছু এ জগতে।
কারও কোনও ক্ষতি হবেনা তাতে।
তবু কেন কে জানে!
নিজের অস্তিত্বটুকু বাঁচাতে হাঁফ ধরা বুকে,
লড়ে যাই পৃথিবীর সাথে,
কিংবা নিজের সাথেই অজান্তে।

 

মেঘ কথা দিয়েছিল

মেঘ কথা দিয়েছিল আমাকে।
সে আসবে বৃষ্টিতে ভিজিয়ে দিতে আবার।
কথা রেখেছিল সে।
এসেছিলো সাদা হাসের পালকে চড়ে জানালার ধারে।
চোখেমুখে বৃষ্টি- ছোঁয়া,
সে ডেকেছিল বজ্রগম্ভীর স্বরে।
আমি শুনতে পেয়েছিলাম,
তবু ভয় পেয়েছিলাম,
দরজাখুলে নগ্ন পায়ে ধরা দিতে তার কাছে।
তাই লুকিয়েছিলাম জানলার পাশে।
করুন আকুতি তার অস্থির করেছিল আমাকে।
সে ঝর,ঝর ভিজিয়ে দিয়েছিল গাছপালা, পাখী, সবুজ ঘাস আর মাটিকে।
আমি লুকিয়ে দেখেছিলাম তাকে।
একটা দমকা হাওয়ার সাথে হঠাৎ ঢুকে পড়েছিল আমার জানালায়।
এলোমেলো করে দিয়ে আমার খোলা চুল,
পাগলের মত আদর করেছিলো আমাকে।
আমি শিউড়ে উঠেছিলাম লজ্জায়,
কুঁকড়ে গিয়েছিলাম শীতে কিংবা তার স্পর্শে!
আর তারপর…
পাগলের মত দুহাত বাড়িয়ে ছুটে গিয়েছিলাম তার আলিঙ্গন আশে।
সে তখন শ্রান্ত।
শান্ত বরষন শেষে।
এঁকে দিয়েছিল টিপ,টিপ বৃষ্টির চুম্বন,
আমার কপালে,বুকে।

চৈতালী মুখোপাধ্যায় (কণা )। কবি, বাচিক ও সংগীতশিল্পী। জন্ম ৩০ শে আগস্ট ১৯৬৬ ভারতের পশ্চিমবঙ্গরাজ্যের কলকাতা। বর্তমান নিবাস মহারাষ্ট্রের নাগপুর। প্রকাশিত বই: 'সুবেদিতা' (কাব্যগ্রন্থ, ২০১৯)।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..