মোস্তফা মহসীনের সাতটি কবিতা

মোস্তফা মহসীন
কবিতা
Bengali
মোস্তফা মহসীনের সাতটি কবিতা

মুখোশে বৈশাখ

রোদভেজা শরীরের একটি বিকেলে
ওই অতটুকু পথ বেশ ভোগায় তোমাকে।
‘অল্পতে বুড়িয়ে যাচ্ছো‘
ভাবো এই সর্বজন ভাবনার
বয়সন্ধি হামলে পড়বে;বছরের ভাঁজে?
কপালের টিপ সূর্য হলে ঠোঁট নাচে
রঙের কল্লোলে; চেয়ে দেখো রমনার বটমূলে
মর্মে মর্মে প্রাণের উত্তাপ
নাগোরদোলাতে চড়ে উত্তরসূরিরা
যেমন আগলে রাখে সুদিনের সুবাতাস!
সেইপথে হেলেদুলে তুমিও জেনেছো
এই বাঙলার কৃষ্টি-অভিসার!

রাজস্ব রহস্য ছুঁয়ে এসো খুঁজে ফিরি মাটির বন্ধন
তোমার নশ্বর দেহে এসে আলিঙ্গন দিবে- মহামতি আকবর!
জানি তুমি ভালোবাসো- পূর্বজর রীতিরেওয়াজ
ঝড়ো বাতাসের বুকে তুষারকণার হুটোপুটি
ফসলের মাঠে ডানা ঝাপটানো আওয়াজ
সমতলে ইতিউতি মুখোশে বৈশাখ।

নোটিশ

কিছু দুঃখপূর্ণ নোটিশে ঝুলিয়ে রাখি
অপরাধবোধ
গর্বে ফেঁপে ওঠা অন্য নাম- বিদগ্ধ কলম
সদ্য আমাকে জানান দিচ্ছে, আমি নাকি
শরীরময় বয়ে বেড়াচ্ছি এই পৃথিবীর
অগুনতি দোষের স্বাক্ষর;
গরম নিঃশ্বাস তুলোধুনো করে শিমুল তুলোর
কোল বালিশের দিবা- স্বপ্ন ভাঙ্গি-গড়ি
উত্তেজনা ছুঁড়ে দেওয়া দূরের মাঠে… শূন্যে কাঁদে
ফেলে রাখা ফুটবল। আরো দূরে
ঝরনার ঠোঁট -ফাঁক গলে বইছে নহর
আজ গোধূলিতে ঘুরে ঘুরে শুধু; ধরবো তাঁহারে!
সোজাসুজি ঢুকে পড়ে;_হ্নদয়ের মাঝবরাবর!

অবিনশ্বর

চাঁদের মতোই কি অবিনশ্বর; একা?
আমি চাক্ষুষ দেখেছি
রূপসী মেঘের স্কার্টে আলবৎ খোঁচা মারছিলো
ঈশ্বরের পিছল পা;
তার্কিক তুমিই এখন বলছো, হিমালয় নয় ওটা
ছিলো খোলা হাওয়ায এক দাপুটে শেরপা
সেই খুশিতে সাঁতার কাঁটার জন্য
সমুদ্রের বুকে আপাততঃ রাখি নাই কোনো নৌক!

বাছুর কাহন

জিজ্ঞাসুর চোখে সে তখন রীতিমতো চুপ
আস্তাবল খুঁজে হয়রান ছিলো
হারানো দিনের এক খয়েরি বাছুর।
বাছুরটার মনে পড়েছে
ঘটনার ঘনঘটা;
ক্ষেতপাকা ধান তছনছ করে
এক দুপুরে ভুলের হাঁটা।
চুপিচুপি কেন যে সে জেনে নিতে চেয়েছিলো_
গৃহস্থের আগাপাশতলা!
যেথায় পৌঁছালে ছন্নছাড়া বাছুরটা
দেখলো, বসন্ত ফুলের রঙিন দোলনায় মাতোয়ারা কিছু
ক্যালরী বঞ্চিত নির্বোধ জনতা
তির্যক চাহনিতেই ব্যারিকেড দিলো পথের নিশানা!
বাছুর তো শিশু এ সত্য বুঝে না, কিভাবে কিভাবে
মনিবের আলপথ ডিঙ্গিয়ে বর্ধিষ্ণু হয়_দারিদ্র্যের রেখা?

চক্ষুষ্মান

বর্তমান এক মুখোশজড়ানো ভূত
ভবিষ্যৎ -এর পায়ে নেই সোনার নূপুর
হাতড়ে নেতিয়ে নিঃশেষ না হয়ে দেখি_
নয়নাভ ধোঁয়াশায় ক্রীড়ারত রক্তস্নাত গ্ল্যাডিয়েটর

শুকনো মরুর মতো বুক
কাঁধে নিয়েছি অযুত আকাঙ্ক্ষার দায়ভার
বেদনায় শরীর ভেজালে পাবো অন্য আকাশের খোঁজ; চক্ষুষ্মান?
অচেনা আলোর গোলকধাঁধায়
চাঁদের ওপিঠে জড়ায় আরেক চাঁদ

ভাবি এই রাত্রি যাবে সুবহে সাদেকে
এই লোনা জল জমে জমে
বরফ হয়েই ছুঁয়ে দিবে জিবরাইলের ছয়শত ডানা
আমার ভেতরে তোলপাড় করে
ভিন্ন ভিন্ন মানুষের ছায়া
এবঙ এর উপমাপ্রবণ জটিলতা!

এজলাস

আইনরক্ষকদের এজলাসে
সংখ্যালঘু আমি
মননের মধু বয়ে
আকাশে আকাশে ভাসছি একলা
বিঞ্জদের সদ্য প্রকাশিত বিভ্রান্তিতে পরাভূত না হয়েও ভাবি_
হ্নদয় বন্ধক রেখে, কে কবে ছুঁয়েছে : বৃষ্টির ঝাপটা?

আজ মনটা মেঘলা, গলাটা একটু ভাঙ্গা
টোক্কর খেয়েছে দাঁতে দাঁত
সঙ্কোচবশত
জজসাহেব কুঁকড়ে যান;
কপাল কুঁচকে লোকজন গমগম করছে ভেতরে
আইনরক্ষকদের এজলাসে
আজকের সূর্যোদয়ে
ঘুরছে ভাবনা_
কে তবে পাল্টেই দিলো
আগের রাতের লেখা
ভারডিক্ট পাতা!

সঙ্কোচবশত জজসাহেব
ভেজামুড়ি হয়ে গেলে
ফিসফাঁস: শুনি কানে কানে

আইনরক্ষকদের এজলাসে রাষ্ট্রীয় কল-কবজা ঘুরছে না!

লাভডুব

জীবের ভাবনা নেই
গ্রীষ্মের সীমানা ভেঙ্গে
সংঘাতে জড়াবে
জলসুখ

আমার আকাশে দিশাহীন রোদ
ভাসাবো ভোকাট্টা
নয়নে নয়নে
রেশমি কাগজ

সুতায় মাখাচ্ছি আঠা
সংঘাতে জড়ালে
ঈগলের ডানা!

ভাসাবো ভোকাট্টা
জেগে দিতেছি পাহারা
বাঙলার নীলিমায়
দীপিত সম্ভ্রম

অনেক গুঞ্জনে-গুজবে প্রশস্ত
ওই লাভডুব
কে জানে কতোটা কাল আর
অধীর ফানুস বয়ে নেবে বাতাসের রথ?

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ