কলঙ্কভূম
হ্যাঁ হ্যালো স্যার আমি মসিউর বলছি।মসিউর রহমান।।
হ্যাঁ বলো।
স্যার ভালো আছেন?
হ্যাঁ আছি।গলাটা কেঁপে উঠলো ফয়সালের। তিনি মনে করতে পারছেন না এতদিন পরে তার ছাত্র উত্তরবঙ্গ থেকে ফোন করছে।প্রিয় ছাত্রদের মধ্যে মসিউর একজন।
মসিউর বলছে স্যার একবার আসতে পারবেন এখানে আলমপুরে।আমরা এখানে একটা ছোট রিইউনিয়ন টাইপ করছি আপনি আসতে পারবেন?এই মার্চে।আমাদের স্কুলের সভাপতি তাহের আলি সাহেব সব ব্যাবস্থা করে দেবেন।
না গো আসতে পারবো না। আসলে আমার ছেলে অসুস্থ। মার্চে ওকে ব্যাঙ্গালোরে নিয়ে যাবো একটা মাইনর অপারেশন হতে পারে। প্রায় একমাস থাকবো।এরপর আরও দুচার টা কথার পর ফোন রেখে দেন ফয়সাল।ফয়সাল অনেককিছুই মনে করতে পারেন।দুহাজার পাঁচ সালে মালদা থেকে আলমপুরে জয়েন করতে এলে এখানকার বেশকিছু রাজনৈতিক নেতা আর স্কুলের তৎকালীন সভাপতি জহির আলি সাহেব তাকে জয়েন করতে দেননি।শেষ পর্যন্ত কোর্টের অর্ডার এনে জয়েন করতে হয়।জয়েন করার পরেও সমস্যা মেটেনি। নানা ধরনের প্রব্লেম তৈরি করে তার এখানে থাকা একরকম অসম্ভব করে তুলেছিলেন জহির আলি। তার একটাই প্রস্তাব তার সদ্য কলেজপড়ুয়া মেয়ে নীলুফাকে বিয়ে করতে হবে।ফয়সাল রাজি হয়নি শেষমেশ তাকে অপবাদ দেওয়ার একটা চেষ্টা হয়।তার আগেই সব ব্যাবস্থা করে পুনরায় মালদাতেই ফিরে আসা।এক লহমায় সবকিছু মনে পড়ে যাচ্ছিল।সবার জীবনই কলঙ্কহীন হতে পারে না।মাঝেমধ্যে কলঙ্ক এসে ছিন্নভিন্ন করে দিয়ে যায় রাতদিন।কলঙ্ক কাকে বলে ফয়সাল জানে।আল্লাহকে লাখো শুকরিয়া জানায় ফয়সাল। না আর কোনোদিনই সে ফিরতে চায়না কলঙ্কভূম আলমপুরে।
নার্শিসাস
প্রথমবার জলপাইগুড়ি থেকে বেড়াতে এসেছে সুমন আর নৈঋতা।তারা এসেছে জগৎবাড়িয়ায় সেখানকার পুরানপুকুরের পাশে।পাহাড়ি চা বাগানের পাশে এক গ্রাম। অল্প কিছু বাঙালী মুসলিম আর হিন্দুদের বসবাস।বাকি সবাই আদিবাসী। এখানকার সবকিছুই দুজনের ভালো লাগছে। তারা দুজনেই প্রেমিক প্রেমিকা। দুই বাড়ির সকলে জানে তাদের বিয়ে হবে।এখানে জগৎবাড়ি আসার পরে দুজনেই একদিন পাহাড়ে উঠলো হাঁঁটতে হাঁঁটতে।পাহাড়ের নৈসর্গিক দৃশ্যাবলীতে তারা আপ্লূত হলো। দুজনেই পাহাড় থেকে নেমে এলো পুরানপুকুরের জলে হাত পা ধুতে। জলের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে অবাক হয়ে নৈঋতা নিজের প্রতিবিম্বকে দেখতে পেলো জলে। দূরে দাড়িয়ে সুমন দেখছে তার প্রিয় নারীকে যেন সে সূদুর মিশরের সেই নারী যাকে পুরুষ দেখেছে জীবনানন্দের কবিতায় আর নৈঋতা নিশ্চল হয়ে তাকিয়ে আছে পুরানপুকুরের জাদুই জলে।সেখান থেকে উঠে আসছে যেন এক মোহময়ী চিরকেলে এক নারী যার পোশাকী নাম নৈঋতা।
ফেরা
অনেকদিন পরে হেঁটে হেঁটে কলেজে যাচ্ছিল নূপুর। রেজাল্ট আনতে। এর আগেও কলেজে অনেকদিনই যাওয়া হয়নি।শ্বশুরবাড়ি থেকে এসে শেষ কটা এক্সামের এসাইনমেন্ট গুলো জমা করেছে। আজ কলেজে যাওয়ার সময় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বার বার নিজের চোখগুলো দেখে নিচ্ছিল নূপুর কিন্ত হতাশা কষ্টগুলো তবুও যেন ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে। প্রথমবার কলেজেই দেখা হয়েছিল রূপমের সঙ্গে। রূপম খন্দকার। চশমাপরা মেধাবী ছেলেটি এসে একদিন প্রপোজ করেছিল কলেজের ক্যান্টিনে।বলতে চেয়েছিলো অনেকদিনই কিন্তু বলতে পারেনি।বাংলা অনার্স ছিলো দুজনেরই। টিউশন থেকে ফেরার পথে কথা হত।বাসস্ট্যান্ডে কথা হত অনেকসময়। নূপুর কি ওর চোখের চাহনি বোঝেনি?বুঝেছিল। মেয়েদের সিক্সথ সেন্স থাকে। সব বুঝতে পেরেছিল নূপুর। একদিন দিদির দেওরের সম্বন্ধ এলো, নিজের নয়,মামাতো দেওর।ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টে চাকরি করে। শেষদিন ভীষণ কেঁদেছিল রূপম,ক্যানটিনের সামনে নূপুরের হাত ধরে।
আজ আবার কলেজে ফেরা। তিনমাসের মধ্যেই হটাৎ হাজব্যান্ড বন্য প্রাণীর আক্রমণে মারা যায়।
আজ আবার কলেজে ফেরা। আবার কি দেখা হবে রূপমের সঙ্গে?রূপম কি খুশি হবে আগের মতো সেই নূপুর কে দেখে?
নূপুরের ভীষণ কান্না বুক ঠেলে উঠে আসে। হাসিটুকু তবু ঠোঁটে এনে হাসতে থাকে নূপুর। বিজয়ীনি নূপুর।।
সৌভাগ্যের রজনী
শবেবরাত এর দিন। সোহেল আর আসিফ বেরিয়েছিল রুটি খেতে। রুটি আর হালুয়া। আজকে অনেক বাড়িতে রুটি হালুয়া খেয়ে ফিরেছে। আসার সময় কি মনে করে ওরা দুজনে ঢুকে পড়ে রুকসানা দের বাড়িতে।আজকের দিনটি অত্যন্ত পবিত্র। আজকের দিনেই রাতে শবেবরাত পালন করে এক বিশেষ মুসলিম সম্প্রদায়। এই পবিত্র রাতেই নাকি সৌভাগ্য বণ্টন করা হয়ে থাকে এমনই বিশ্বাস। আর এটাই শুনে এসেছে সোহেল। সে তার ভাগ্যকে যাচাই করতে হঠাৎই ঢুকে পড়ে রুকসানা দের বাড়িতে। রুকসানার মা ওদের যত্ন করে রুটি হালুয়া খেতে দেয়। ওরা দুজনেই খেয়ে ওঠে। রুকসানার মা বলে “বাবা তোমরা দুজনে এসে ভালোই করেছ।আমি খুব খুশি যে রুকসানা তোমাদের ডেকেছে। ” “মা আমি ওদের ডাকিনি।”উদ্ধত ভঙ্গিতে বলে রুকসানা।তারপর সোহেলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।
সেই রাতে অনেকদেরি করে বাড়ি ফিরছিল সোহেল। এত অপমান তার সহ্য হয়নি। সৌভাগ্যের রজনীতে ইশ্বর তার ভাগ্যে লিখেছিল এক বোতল মদ।
ম্যাজিশিয়ানের গল্প
বুবুনদের স্কুলে ম্যাজিশিয়ান আসবে। বুবুন হেব্বি খুশি। বাড়ি এসে কাকুকে জানাল।কাকু রোজ বুবুনকে আনতে যায় স্কুলে। সেদিন বুবুন আর কাকু দুজনে বসে অনেকক্ষণ ম্যাজিক দেখলো।ম্যাজিকওলা জুতো আর কোট আর ঝালর অলা একটা পোশাক পড়ে ম্যাজিক দেখালো। বুবুন তো অনেক ছোট তাই ম্যাজিক অলার সব ট্রিকস গুলোকে সত্যিকারের ম্যাজিক ভেবে বসেছিল।
ফেরার পথে কাকুকে সে জিজ্ঞেস করে বসলো, কাকু ম্যাজিশিয়ান কি সত্যিই ম্যাজিক করে সব করতে পারে?
তাইতো দেখলাম রে বুবুন। কাকু উত্তর দেয়।
বুবুন বলে, আচ্ছা কাকু,ম্যাজিশিয়ানের জুতোগুলো পুরোনো, কোট পুরোনো ছেড়া আর ম্যাজিশিয়ানকে দেখেও তো মনে হয় সে খেতে পায়না।তাহলে ম্যাজিশিয়ান ম্যাজিক করে নতুন জুতো জামাকাপড় আর অনেক খাবার এনে খেতে পারেনা কেন??