যাপনের সাক্ষ্য প্রমাণ

অতনু বন্দ্যোপাধ্যায়
ধারামুক্ত কবিতা
Bengali
যাপনের সাক্ষ্য প্রমাণ

উচ্চারণ

তোমাকেই নীলরং মানায়। টেরেস বিশেষজ্ঞরা অন্তিম ভুলে যাচ্ছে। ডানার আঁশ
ভুলে যাচ্ছে নিরামিষ ছেড়ে বেরিয়ে আসার দিন।

ভো কাটাকাটি এবার থাকুক। জুতো খুলে রেখে যাওয়া মুখোমুখি সেইতো বিসর্জন।
হাতের গোপনে রাখা পরের ছাউনিতে।

ম্যাগ্নোলিয়া নিয়ে কথা হয়েছিল কাল। হয়েছিল আয়ু থেকে নেমে আসা শ্রবণের নোঙর নিয়ে।

ভাসায় কিনা হয় পরী ফিরে এলে।

গান হয়।গীতি হয়।রাণওয়ে থেকে সবেরা যখন কিছুটা স্বপন চরাচর জমা রেখে চলে যাওয়া চোখের গ্রহণ।

আপাতত এভাবেই ফিরে তাকানো। খানিকটা উঠোন ধুয়ে দিলে জলে। পাখিরাও
উবে যেতে পারে গাছে হাত রেখে।

মেয়েরা এরপর পশ্চিমের সবাই । নতুন পুব কথায় চিরুনিতে আয়না বসাতে।

শিস্‌ এর কথা

রোশনাই মেদুর হলে প্রভাত তাড়া করে। জানালার সিক্রেট খুলে সে জানাতে চায় প্রিয় অর্বাচীন।
কাঁঠালপাতারা উড়ে এসে পাইপারে পড়তে শুরু করেছে।

আর উল্লাস।

আমরা শিশু নিয়ে বসেছি রাতের তারায়।

এখনো বিবাহ নিয়ে কিছু লিখিনি কারণ তুমি ভিজতে ভিজিতে মন্দির আবার।

আমাদের মেয়ে আজ অনেকটাই বড় হয়ে গেল।
মেয়ের চোখেই দেখা প্রতিদিন বিবাহবার্ষিকী

পায়ের কথা

এইসব পায়ের কথায়

একটা গ্রামের বেদানা থেকে কিছু রস
চেহারা বদলের প্রস্তাবে সুরিখানার দরজা তখন বন্ধ হয়ে গ্যাছে।

বৃষ্টির কপাল থেকে এইযে উনুনের গন্ধ তাদের
স্নেহ সব শুয়ে আছে মেঘ নিয়ে। মাঠের শিশিরে।

চিনতে পারছি নাভির গুদামঘর। ভেতরের মানুষটিকে।

সেই লালা পড়ে আছে জঙ্গল জুড়ে। লাশের চাতালও টের পাচ্ছে রুমালের শব্দ।
পাচ্ছে ওয়াচটাওয়ার থেকে ফিরে আসা মানুষের মানচিত্রপাঠ।

এভাবেই আহ্বান আর আমাদের জাতীয়সংগীত।

কে যেন পরামর্শ হয়ে উঠছে আবার।ষড়যন্ত্র করতে করতে আমিও মিশিয়ে দিলাম রক্তপাত।
বেঁধে রাখা শরীরে কাঁটাতার পেরোনোর ভয়ার্ত চিহ্নগুলি।

উঠোনের কথা

ছাতার এইপাশ থেকে দৃশ্য হচ্ছে চেয়ার। পছন্দ নাইবা রাখলাম হরিণ দেখবো বলে।
হয়তো এই সময় নদীতে চাদর বিছিয়ে দিচ্ছে গ্লাস আর তুমির চেয়ে সাইকেলের যাবতীয় মিথ্যে পাইন।

রং এর প্যাডেল চাই। তাকালেই যেন হাসিমুখ গানের সারা বোতাম। একবার
শুধু একবার আমাদের মোড় চেঞ্জ হোক। আঙুলের রেজাল্ট উলটে বলুক এখনো পাট্টায় খানিকটা কম। যেন মেয়েরা জানতেই পারলো না আঙুরে তখনো টুকরো লেগে আছে।

পশমের পালকি হঠাৎ বানানের মেয়ে নিয়ে পড়েছে দুয়ারে। তল্লাশী চালাচ্ছে ভেতরের মায়া আর রোদের অ্যালার্ম।

আমরা এখনো পরিযায়ী। আমাদের কোনো বিনুনী ছিল না ঘুম ঝড়ানোর।

গ্লাসের কথা

তার বিজন ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া পথ।গানের প্রকৃত স্মৃতির এই হেঁটে চলে যাওয়া।
ডাকতে ডাকতে কিছু ভোর
মুছে যাওয়া মুখের দুইফালি আর
ফালি থেকে উঠে আসা না ফ্রেমের মাথায় দেখ হঠাৎ মেয়েটার কোনো কাগজ বসানো।

তুমুল চিত্র থেকে তুলে রাখা এইতো পালকের টোকা। কষ্টের মেহেন্দি নিয়ে নদীকে জ্যোতিষ ভেবেছিল।

চুমুকের কথা

একদিন যন্ত্রের স্বর বালক জানালা কথা পাখিদের অংক শেখাবে

মুখের বদল হাইওয়ে পেরিয়ে আসছে তারিখবালাদের আরো আরো লাইন

আলাপের ছায়ায় বসে থাকা সেইসব গালের গরিমায় প্রতি কাঞ্চন লিখতে লিখতে
উড়ে গেল জিভের শহরে। দৃশ্য বরফের এইসব রুমেলা টুকু যুদ্ধের আগে আর পরেও মেটেনি।মেটেনি রাগের বাহির থেকে নেমে আসা ফেরতের পর্দা তালিকা

হাঁটতে হাঁটতেই একদিন এতসব শৈশব ছিল।
আর খুনি হতে হতে যাকিছু দেখেছিলাম তাকে নদীটার দৃষ্টি ভেবেছি

ভেবেছি ওইতো এসে গেল তালিকাপুরাণ।এবার জল হয়ে যাব।বিচরণে বিন্দু থাকিবে শুধু দামিনী ভ্রমণে

জঙ্গলের কথা

গান ফেলে যারা নেমে গেছে জঙ্গলের দিকে তাদের ফিরে তাকানোটা আমার এখনো মনে আছে। মনে আছে তখন সন্ধ্যা আসবে আসবে করছে। আর একটা চিল গোল হয়ে ঘুরেই যাচ্ছে আমাদের মাথার ওপর। অনেক নীলের সাথে ওকে একটা বোমারু বিমান মনে হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল এইবুঝি মুখ থুবড়ে নেমে আসবে আমাদের ওপর। মনে হচ্ছিল ভীষণ গুলি বর্ষণএর পরে ওদের মধ্য থেকে কেউ একজন জ্যোৎস্নার আলোয় হঠাৎ উঁকি মেরে উঠে আসবে কাদাজল মেখে।

চকচক করতে থাকবে মানুষটার চোখ দুটো। অনেকদূর থেকেই আমরা দেখতে পাবো কপাল থেকে গড়িয়ে পড়ছে রক্ত। আর ঠোঁটের কাছাকাছি এসে ওরা জিভের সাথে কথা বলছে।

ভাবতে ভাবতে কোথাও আবার আগুন জ্বলে উঠলো। স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি রোহি নেমে যাচ্ছে কারু কারু র গলা বেয়ে।সীমানা ছাড়িয়ে। আর অন্ধকার। ম্যাপ খুলে বসতেই টের পেলাম পোড়া মাটির গন্ধ।ছিঁড়ে যাওয়া কাঁটাতারের বড়াই আর নেই কোথাও। একটা নতুন পথ তৈরী হয়ে গেছে আপনমনেই।

পাখিদের কথা

এই আঁচ গায়ে এসে লাগতেই গোটানো নিগম চিনে ফেলেছে স্রোতের শব্দ। হাজার হাজার পাখি আর পাখির বাচ্চাদের ভীড় সেখানে। ভীড় করেছে সমান তালে মানুষ আর মানুষের বাচ্চারাও।

এভাবেই মৃত্যুকে জয় করার সমস্ত রং তখন জলের হ্যান্ডমেড। শিরোনাম দেবার কথা ভাবছেন সেই কাদামাখা মানুষটি। যিনি শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকার কথা ভেবেছিলেন নিজের অজান্তেই। যার হাত ধরে হয়তো কোথাও ঠিক খুঁজে পাওয়া যাবে সদ্যজাত সেই শিশুকে।

হাসতে হাসতে ওরা ফিরে যাবে নিজেদের গ্রামে। বন্দরে। হয়তো আবার কেউ ফিরে তাকাতেই সালাম জানাবে বেপোরোয়া চিলটাও। সামনে এসে বসে পড়বে প্রস্তাবিত ডানা মেলে।

উড়ানের এই আধো আধো সুর আবার পড়িয়ে দিচ্ছে সবুজ। জিভ থেকে যে লালা বেড়িয়ে এলো তার কোনো উষ্মা নেই। খালি অনবরত।

আমরা কাঁদছি। কেঁদেই যাচ্ছি এইসব চার্জশিট দেখে। কপাটহীন সদর দেখে।

আমার কথা

এখন ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাকিয়ে থাকতে চাওয়া। চৌকো আঁকতে গিয়েও পিছিয়ে এসেছি কারণ সীমিত ক্ষরণেও তার টের পাওয়া বাদামি সংকেত কিছু ধরা পড়ে যায় আকাশের কাছে। মানুষের বানানো রেওয়াজে। মূলত এমনই সব সার্কাস। রিং থেকে বেরিয়ে গিয়েই আরেকটা রিং এর ভেতর বাঁধিয়ে রাখা মাইলস্টোন। যেভাবে ওটি করে ফিরে আসতে আসতে আমার বন্ধু ডাক্তার ভেবেছিল আর বোধ হয় ওর চোখটা ঠিক হয়ে উঠবে না কোনদিন।

ভীষণ। নিজের চাইতেও বেশি করে বুঝতে পারছি এই দৃষ্টি এখন আর আমার নেই। সবটাই চলে গেছে ক্যানভাসের ফসল সামলাতে। আমাদের আলেখ্য সামলাতে।

ছোট্টছেলেটা পেইন্টার হতে চেয়েছিল। অলীক স্বীকারের কাছে তার সামান্য মন আর দেওয়াল আবদার।

পুরানো মানুষ সব ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। প্রিয় শরীর থেকেও হারিয়ে যাচ্ছে চোখ।
চোখের ব্যথায় রাখা অবধারিত অসুখের আচমকাগুলি।

বহুদিন পর

(এক)

লেখায় ঢুকে যাচ্ছে প্রণাম

চোখের সামনে এখন
আমারই মুখোশ

বৃষ্টিতে ভিজবো বলে

তোমাকেই দেখে ফেলেছিলাম

(দুই)

ছাপাখানা থেকে
বেরিয়ে এল রাস্তা

পাতারা উলটে যাচ্ছে

বাঁধাই-এ পড়ে আছে
একটা শূন্য

ভরা উঠোন থেকে
আঙুল ফিরে এল
নতুন সাজঘরে

(তিন)

কানের কাছাকাছি লাল
ঠোঁটের চারপাশেও

আমরা চুলের বেণী করা শিখলাম

আমাদের শরীর থেকে
বেরিয়ে আসছে এখন
দূরের গন্ধ

(চার)

শাড়ির জমিন থেকে ফিরে আসুক খিদে।
নাভিতে এসে শেষ হোক ছুটির গল্প।

আমাকে আর কেউ আটকে রাখে না বৃষ্টির কাছে।
প্রথম ঘুমের কথাও বলে না কেউ।

এবার একটা অন্ধ লিখব।

মেয়েটার শরীর জুড়ে খুলে যাবে ঈশ্বর
রঙের বাগান।

অতনু বন্দ্যোপাধ্যায়। কবি। লেখালেখি শুরু ৯০ দশক। সম্পাদিত কাগজ, ‘এরকা’ (৯এর দশকে) ও ‘এখন বাংলা কবিতার কাগজ’ (২০০৪ সাল থেকে)। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ- 'দেওয়ালে মথ সুন্দরী', 'রৌদ্রস্নাত জলাভূমি', 'এটুকুই পারি', 'নেশাতুর অ্যাভিস কোলন', 'সহবাস শিবির', 'গ্রহণ বরাবর', 'সেলাই অপেরা' এবং 'সূর্যাস্তের শহর'

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ